১৩১
আমি দেখেছি যা আঁখিমেলে
কী মায়াভরা ছায়াশ্যামলে
বঙ্গোপসাগরের কূলে।
আমি জন্মেছি যেই গৃহতলে
বাংলাদেশের মাটির কোলে
আসতে চাই পুন জন্মালে—
বঙ্গোপসাগরের কূলে॥
কোথায় এমন ঋতুর বদল
কোথায় এমন প্রকৃতির দখল
কোথায় এমন ঝরনা অবিরল
বয়ে ছলছল কী মধুর সুরে—
বঙ্গোপসাগরের কূলে॥
আমি বাংলামায়ের সন্তান
মা মাটি আমার কত মহান
আমি কী যে ভাগ্যবান।
দেখেছি মায়ের সৌন্দর্য হাজারখান
আমি চাই না আর মঙ্গলে স্থান
এ মাটিতে মিশে থাকবে প্রাণ—
আমি কী যে ভাগ্যবান॥
কোথা এমন বৃষ্টিবাদল হলে
কোথা এমন নদীকলকলে চলে
কোথা এমন পাখিদের উতরোলে
দেখা পাবে স্বর্গ ঘরে-ঘরে—
বঙ্গোপসাগরের কূলে॥
২৪ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১৩২
আহা কী সুন্দর কত মনোহর বাংলার মাঠঘাট বাবুর কুলায়
আমি বারবার যেন ফিরে আসি—আসিতে চাই এই বাংলায়।
বাংলা আমার ভাষা বাংলা আমার দেশ বাংলা প্রাণোদ্দীপ্তরবি
আমি যেখানে যাই ফিরে পেতে চাই বাংলার মুখোজ্জ্বল ছবি—
হিজলের বন ডাহুকডাকাসন্ধ্যা বলাকার সারি বাঁশের ঝুলনায়।
আমি বারবার যেন ফিরে আসি—আসিতে চাই এই বাংলায়॥
গাঙডুবি ঢাকী হাঁড়িধোয়া আঠারোবাকি মুগ্ধ করেছে যারে
শত জনমে এসেও ভরিবে না মন সিনানি বাংলারত্নাকরে।
বনবনানী পাহাড়পর্বত খালবিল মেঠোপথ পাখপাখালির রব
এই দেশে জন্ম আমার ধন্য আমার জন্ম দেখে অপূর্বতা সব—
খেয়াতরী পারাপার কী সুদৃশ্য হাট হট্টগোলে বটের ছায়ায়।
আমি বারবার যেন ফিরে আসি—আসিতে চাই এই বাংলায়॥
২৬ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১৩৩
হে জননী জন্মভূমি আমার
জন্ম নিলাম কোলে তোমার
ভোগ করলাম সুবিধা যতটারে
ততটা দেয়ার কর্তব্যে পড়ে—
ক্ষমা করো মা সন্তানেরে॥
তোমার মাটির বেড়েছে সম্মান
কত সাধুসাধক পিরমুর্শিদান
এলো-গেল যুগেযুগে কালেকালে
তুমি কী ভাগ্যবতী হলে—
ক্ষমা করো মা সন্তানেরে॥
এলো হিন্দুত্বে এলো মুসলিমত্বে
এলো বৌদ্ধত্বে এলো খ্রিস্টত্বে
এলো এলো এলো এলো গাইল একত্বে
তোমার শানমানের গান সকলে
তুমি কী ভাগ্যবতী হলে—
ক্ষমা করো মা সন্তানেরে॥
সুসন্তান যত ভালো চিন্তিত
ভাগ্যছাড়া এলো আর গেল
দিতে চেয়েও পারেনি কিছু দিতে
হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ ধরাতে—
ক্ষমা করো মা সন্তানদেরে॥
সবাই তো আর হতে পারে না
ভাগ্যবান ও কপাল চওড়া
মায়ের স্তনের কাছে ঋণগ্রস্ত থেকে
চলে যেতে হয়—যায় দুঃখ রেখে—
ক্ষমা করো মা সন্তানদেরে॥
তবু যে যতটুকু পারির
করে যাব সেবা মাতৃভূমির
সব সময় দরকার স্বদেশোন্নতির
তবেই জেনো নিজের উন্নতি করলে
চলে যেতে হয়—যায় দুঃখ রেখে—
ক্ষমা করো মা সন্তানদেরে॥
২৮ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১৩৪
আবার পৃথিবীতে আসার
বড়ই ইচ্ছে হচ্ছে প্রভু,
‘আসার কোনো সুযোগ নেই’
তা তো জানি সবও।
তবে দেখে এদের কাণ্ডকারখানা
মনে বড় জাগছে আসার কামনা
পরের কথা ছেড়ে দিলাম
পর তো ধোঁকা দেবু।
আবার পৃথিবীতে আসার
বড়ই ইচ্ছে হচ্ছে প্রভু॥
আপনজনেরা এমন কেন
জানার খুবই ইচ্ছা,
যা জেনেছি শেষপ্রান্তে এসে
জানানো গেল না কিচ্ছা।
তবু এই এতটুকু বলে যাচ্ছি—
নিজের কথা মনে রাখবে সবি
নিজের জনেরা যা দেবে ব্যথা
মরতে পারবে না শুধু।
আবার পৃথিবীতে আসার
বড়ই ইচ্ছে হচ্ছে প্রভু॥
২৯ ফাল্গুন, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
১৩৫
গান
তাদের গেয়ে যাও মন
আমার মতো না যাদের জীবন,
চোখের জলে যারা ডুবেছে আজীবন।
শান
তাদের প্রচার কর সারাক্ষণ
যারা আঘাত পেয়ে সহ্যে অতুলন,
নৈঃশব্দে চলতে পারে পিতার মতন।
গান
তাদের গেয়ে যাও মন॥
মন বড় যার তার উন্নতি বড়
ছোট মনের গতি সব সময় পড়,
মান
তাদের বাড়ে যারা ছোট হন।
গান
তাদের গেয়ে যাও মন॥
জন
গেয়ো না গীত তাদের
আপন হয়ে লুঠে সম্ভ্রম আপনের,
যাদের কাছে কোনো দাম নেই পরের।
ধন
যাদের কাছে প্রিয় সন্তানের
তাদের কাছে মর্যাদা নেই মায়ের,
দূরে থাকা ভালো কাছ থেকে ওদের।
জন
গেয়ো না গীত তাদের॥
স্বার্থপরের সাথে থাক বন্ধুত্ব করা
এক পা চলাও হবে বোকামি করা,
জান
দেওয়ার বন্ধুও থাকে কিছু জন।
গান
তাদের গেয়ে যাও মন॥
১ চৈত্র, ১৪২৭—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম