Posts

চিন্তা

আমি এক ব্যর্থ নির্বাণ—

April 22, 2024

Muntaka Azmain Muhi

Original Author মুনতাকা আজমাইন মুহী

573
View
এই শতাব্দী’র পুরোনো নক্ষত্রের পাথেয় রেখা ধরে বহুদূর পথ অতিক্রান্ত হয়েছে আমাদের। ক্ষয়িত জীবনে এখনো বেঁচে থাকার উপমায় তুমি র’য়ে গেছো। ঢের সহস্র আকাঙ্ক্ষার ভিড়ে আলাদা আলাদা জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার কসরত— অপার্থিব র’য়ে গিয়েছি কেবলই আমি। 

শহরের শীতলতম দিনে মৃত লাশের মতো তোমার অস্তিত্ব বয়ে নিয়ে যাচ্ছি উদ্দেশ্যহীন এক পথে। নিত্যনৈমিত্তিক আলোচনায় আমাদের শহরে কলরব বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু নিজের কাছে অপ্রকাশিত থেকে কখনো কি কিছু ঠিকভাবে বুঝোতে পেরেছিলেম কাউকে? এতসব গভীর দর্শনের মাঝখানে আমার বসবাস অস্বস্তিজনক, বলেছিলে একদিন— অথচ, হৃদয়ের চেতনাবোধে এখনো সুদিনের প্রেম বিদ্রোহে কড়া নাড়ে তোমার জীবনে।

দরজার কোনোপাশে কেউ নেই। পৃথিবীর সকল ছায়া অনন্তনক্ষত্রবীথি ধ’রে চিরকাল কাউকে আগলে রাখতে পারে না। মানুষের কাছে জীবনের চে’য়ে ঢের ভালোভাবে বেঁচে থাকার অভ্যেস আমার হাতের সেই প্রজ্বলিত সিগারেটের মতো। আমিও সব মাযহাব ছেডে তোমার হৃদয়ের প্রার্থনায় জেগে থাকি পুরো এক জীবন। এতোসব দীর্ঘ প্রলাপে তুমিও বিষম গুমোট অন্ধকার সাথে নিয়ে ঘুমোতে যাও প্রতি রাতে, অথচ, তুমি কখনো জানলেই না, পৃথিবীর সব লেখা ভালোবাসাকেন্দ্রিক হতে গিয়ে তোমার কাছে ফিরে আসে বারংবার।

বৈতরণী পেরিয়ে আমাদের দেখা হবে একদিন। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একা ঘরে ফেরার তাড়নার ম’তো ছুটে এসে তোমার সাথে দেখা হবে আমার। এসব ক্যাকোফোনির ঝঞ্ঝাট আমাদের হাতছানির কাছে পরাজিত হবে, আমরা জানি। আমার পৃথিবীর সকল পিছুটান সেদিন শেষ হবে কেবল তোমার দিকে একবার অপলক তাকানোর মাধ্যমেই। কফির পেয়ালার সুঘ্রাণের সামনে মুখোমুখি আমাদের সকল কথারা দৃষ্টিভ্রমের দিকেই ছুটে যাবে সেদিন। কাঞ্চনফুল গুঁজানো চুলে তোমার দিকে চোখ পড়তেই আমার ইতস্ততবোধ তোমায় মনে করিয়ে দেবে— “ভালোবাসা, এভাবেও বাঁচাতে পারে কাউকে।”

শীতের আত্মহত্যায় তুমি বাঁচাও আমাকে, অথচ– অগাধ ঘেন্নার ভালোবাসায় বাঁচো তুমি নিজেই। অনন্তের আয়ুরেখা ধরে পৃথিবীর বুকে চিরকাল র’য়ে যাবার ইচ্ছে জাগবে আমাদের। রন্ধ্রেরন্ধ্রে বয়ে নিয়ে যাওয়া সীমাহীন দুঃখেরা তখন আমাদের খুঁজবে না। নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে করুণাভরা চোখে তুমি জানাবে আমায়: “পৃথিবীর সকল ফিরে আসার উপলক্ষ হারিয়ে যাওয়া নয়।” 

এখন আমাদের সমসাময়িক দুঃখে র’য়ে যাওয়া প্রেমের স্ফুটিত মরশুম উপভোগের সময়, বলে– তুমি বিষাদের মোহে নিশ্চুপ নিস্তব্ধ থাকবে। উজ্জীবিত মুহূর্তের অন্তরালে আমাদের কিছু শূন্যতা একান্ত নিজেরই থাকুক। আমাদের মাংস, রক্ত, শরীরের প্রতি জমা পড়ে আছে অগাধ ঘেন্না। শিরায় আমাদের বিপ্লবের নিস্তেজতা। মস্তিষ্কে পড়ে আছে হৃদয়ের থমকে যাওয়া কলরব। করুণার অন্তর্বাসে আটকে আছে আমাদের জীবন। পৃথিবীর সকল দর্শন পেরিয়ে তুমি আমার কাছে পৌঁছোবার আগেই ঈশ্বর আমাকে ডেকে নিবে সিসিফাসের মুক্তিদান ভেবে। এরপর তুমি? কয়েক জীবন অনুশোচনা আর গ্লানির ব্যবধানে আমাকে ভুলে থাকা গেলেও প্রসঙ্গক্রমে আমি সবসময়ই প্রাসঙ্গিক র’য়ে যাবো তোমার কাছে। 

ক্ষুদ্রতম কর্মের শাস্তিস্বরূপ ভালোবাসাহীন বেঁচে থেকে আমার দিনযাপনে লেগে আছে বিষাদের নিনাদ। এখানে এখন যা কিছু অবশিষ্ট পড়ে আছে, তার সবকিছুই ধ্বংসস্তূপ। ধ্বংসযজ্ঞ পেরিয়ে হৃদয়ের শাসনে তোমার মস্তিষ্ক ডুবে যাবে আদিম নিশীথের অন্ধকারে। রক্তের মতো গাঢ় এক সমুদ্রের নিষ্ফলতার আখ্যানে সময়ের ব্যবধানে পড়ে থাকবে তোমার কিছু বিস্তৃত প্রলাপ। এই বেঁচে থাকার অবৈধতা দীর্ঘজীবী হবে তোমার অপ্রাপ্তি জুড়ে। জীবনের প্রতি হাজার অভিযোগের অন্তরালে এখনো ঘরে ফেরার গানে প্রতি সন্ধ্যেবেলা আত্মহত্যা লুকিয়ে তুমি পরাজয় মেনে নিতে শিখবে নতজানু হয়ে।

Comments

    Please login to post comment. Login