আজব এক লোক। আমার পাশে বসা। ধর্মের গেটে একজনকে বসিয়ে রেখে চাইনিজ খাচ্ছেন। পারেনও বটে!!
আর এদিকে আমি খিচুড়ি অর্ডার দিয়ে বসে আছি। সাথে পাকিস্তানি কক। তবে কক নয়, আইটেম কার্ডে লেখা আছে সোনালিকা। এই নামটাই সুন্দর। এখানে বিশিষ্ট লোকজন আসে, বসে, খায়। রেস্টুরেন্টও পর্যটন কর্তৃপক্ষের। তাই অশ্লীল কক শব্দটা ছেটে দিয়ে সোনালিকা দিয়ে ভরে দিয়েছে। সুন্দর হলেও দূর্জন ও অশ্লীলতা উভয়ই সমহারে পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত। কর্তৃপক্ষ উচিৎ কাজটাই করেছে। তাদেরকে মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারিনা।
আজব লোকটা ফোনে কথা বলছিলেন। কলটা কি তিনি দিয়েছেন, নাকি অপর পক্ষ থেকে এসেছে সেটা নিশ্চিত নই। ঠিক ঐ সময় আমি কক আর সোনালিকার মধ্যে মিল ও অমিলের প্যাচে পড়ে ছিলাম। ধরে নিলাম, আমার পাশের লোকটাই ফোন দিয়েছেন। এটা মনে করার কারন হলো, ধর্মে ঢোকার দরকার এই লোকেরই। দরকার না হলে কেন ধর্মের গেটে একজনকে বসিয়ে রেখেছেন! আমার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। গরু ঘাস খায়, অপরদিকে মানুষ গরু খায়। তাই মানুষ ঘাস খায়, যুক্তিবিদ্যার এই থিউরির চেয়েও আমারটা শক্ত ও মজবুত।
কুরবানির ঈদে গরু জবাইয়ের পর ভূড়ি পরিস্কারের সময় এক গাদা পোকা বের হয়ে কিলবিল করে। আমার পাশের লোকের কথা শুনে আমার মনেও কিছু কথার পোকা কিলবিল করে উঠলো বলে।
খাওয়ার পরে তিনি ধর্মে ঢুকবেন। ধর্মের গেটে থাকা সেই লোককে এই লোকটি জানালেন। তারমানে উনি একরকম স্বীকার করলেন, উনি অধর্মে আছেন। সেই আজব লোক ও আমি পাশাপাশি টেবিলে বসা এবং প্রায় কাছাকাছি কর্মে নিযুক্ত। শুধু পার্থক্য এটুকুই, উনি খাচ্ছেন চাইনিজ, আমি গিলছি সোনালিকার নামে কক। যুক্তিবিদ্যার নিয়মে বলতে হয়, আমিও উনার পথেই আছি। এমনকি আশেপাশে যারা চাইনিজ বা কক খাচ্ছিলেন তারাও আমার মত অধর্মেই পড়ে আছেন।
হয়ত তাদের মধ্যে অনেকের নিয়াত আছে ধর্মের পথে যাওয়ার। এমনও হতে পারে পাশের সেই আজব লোকের চেয়েও অন্যরা দ্রুত ধর্মে পৌছাতে পারবেন। হতে পারে পাশের সেই লোকটাকে ধর্মে ঢুকতে টিকেট কাটতে হবে। শুধু টিকেট কাটলেই হবেনা, কেন যাচ্ছেন তার পাই পাই কৈফিয়ত দিতে হবে। হতে পারে অন্য লোকজন বিনা হিসেবে চলে যাবেন।
এদিকে ধর্মে ঢোকার কোন পরিকল্পনা নিয়ে আমি এখানে আসিনি। সেখানে যাওয়ার দুতরফা জাবেদা হিসাবও করা হয়ে ওঠেনি। যদিও জানি, দুইজন গোয়েন্দা সারাক্ষণ নজরদারি করে গোয়েন্দা রিপোর্ট আসল জায়গায় পৌছে দিচ্ছেন। সেই লোকের ফোনের আলাপ আমাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। আমি যাব সড়ক-সেতুতে। সেখানে গিয়ে ঠিক কি হবে তার হদিসও রাখিনা। ধরলাম সেখানে গিয়ে সুন্দর সড়ক-সেতু নির্মান হবে। আর ওসব দিয়ে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি হবে হয়ত। কিন্তু আরও একটা প্রশ্ন রয়ে যায়। সেই সড়ক-সেতু কি ধর্মের গেটে পৌছে দেবে?
সেই উত্তর আমার জানা নেই।
২।
বেশ কয়দিন আগের ঘটনা। সচিবালয়ে একটা মিটিং আছে। মিটিং এর আগে ক্যান্টিনে খেতে বসেছি। ওই সময় পাশে বসা এক লোক ফোনে কথা বলছিলেন। খাওয়ার পর তিনি যাবেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। ফোনের অপর পাশের লোককে তিনি বলছিলেন, খাওয়া শেষ হলে ধর্মে মানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ঢুকবেন। মন্ত্রণালয় গেটে তাকে অপেক্ষা করতে বললেন।
ঘটনা আসলেই সামান্য।
খাওয়া শেষ। বের হচ্ছি। এমন সময় কেউ একজন বলছেন, ধর্মের কি খবর? মনে হলো যেন আমাকেই বলে গেল। তাকালাম। কাউকে নোটিশ করতে পারলাম না।
ধর্ম কিংবা ধর্মের গেটের কোন খবর নেই। বেশ চলে যাচ্ছে দিনকাল!!
(রংপুর, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩)