পোস্টস

পোস্ট

সালমান শাহ মোড়ের অপমৃত্যু: হন্তারক সড়ক ও জনপথ!

২৯ জুন ২০২৪

সাজিদ রহমান

মূল লেখক সাজিদ রহমান

সালমান শাহ এর মত অপমৃত্যু ঘটে সালমান শাহ মোড়েরও। ২৭ বছর ধরে এই ঘটনা তাঁর হাজার হাজার ভক্তদের কাছে এখন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। সালমান শাহ মোড় নামকরণে জড়িত একজন প্রত্যক্ষদর্শী এই তথ্য জানান। ঘটনাস্থল দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পৌরসভার রহমতনগর নামক মহল্লার ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া পার্বতীপুর-সৈয়দপুর সড়কের কফিল মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন মোড়। 

 

রহমত নগরের একটা অংশে রেলওয়ের কলোনী, বাকী অংশে স্থানীয় জনগন বসবাস করেন। সেখানে কফিল মাস্টারের বাড়ির দেয়াল ৯০ ডিগ্রি ঘুরে সড়কে একটি মোড় সৃষ্টি করে। সেই মোড়ে ছিলো মুকুল স্টোর নামে একটা মুদির দোকান।

১৯৯৬ সালের কথা। কলোনী ও পাড়ার একদল ছেলে তখন খুব ফুটবল খেলত আর সুযোগ পেলে জোট বেধে হলে সিনেমা দেখতে যেত। কখনও উত্তরা টকিজে, কখনওবা সাগর টকিজে। ততদিনে রবি ঠাকুরের কথামতে 'আধমরাদের ঘা মেরে' রুপালী পর্দায় হাজির শাবনাজ-নাঈম,মৌসুমী-ওমর সানী ও সালমান শাহ-শাবনুর জুটি। তাদের মধ্যে সালমান শাহ-শাবনুর জুটি উপহার দিতে থাকে একের পর এক সুপার ডুপার হিট সিনেমা। দেন মোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, জীবন সংসারসহ আরও কত নাম সেসব সিনেমার। সাথে এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, কনক চাপা, আগুনের কন্ঠে সালমান-শাবনুরের লিপে কত সব কালজয়ী গান।

 

একদিন বিকেলে রকি, রেজা, রাসেল, মাসুম, সাজেদুর সহ স্কুল পড়ুয়া উঠতি বয়সের জনা কয়েক ছেলেপেলে কলোনীর মাঠে ফুটবল খেলা শেষে জানতে পারে সালমান শাহ আর নেই। সংবাদ শোনা মাত্র সকলের মনে কয়েক মনি পাথর চেপে বসে। এদের মধ্যে কেউ কেউ গ্লিসারিন ছাড়াই অশ্রু ঝরাতে থাকে। প্রিয় নায়কের চিরবিদায়!! কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। হায় সালমান, হায় সালমান বলে জিকির ওঠে। দেশে ছায়া কারবালার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই শোকের ছায়া রহমত নগরে এসে পৌঁছায়। পোলাপাইনের মনে তীব্র বাসনা, কিছু একটা করতে হবে। বিনা চিহ্নে মহানায়ককে বিদায় দেয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত হলো, সেই মোড়ের নাম রাখা হবে সালমান শাহ মোড়। 

 

যেই ভাবা সেই কাজ। বাজার থেকে চুন, আঠা কিনে আনা হলো। আনা হলো বড় ব্রাশ। চুন ও আঠা পানির সাথে মিশিয়ে নেয়া হয়। বড় একটা বালতিতে। এই আয়োজন দেখে আরও অনেক সালমান ভক্ত খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসলো। সন্ধার পর গাড়ির চাপ কম থাকে। কফিল মাস্টারের দেয়ালে, মুকুল স্টোরের পাশে বড় বড় করে লেখা হয়, “সালমান শাহ মোড়”। এবার রাস্তার উপরও একই কায়দায় লেখা হল। চুন শুকানোর আগে যাতে গাড়ি উঠতে না পারে সেজন্য কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হলো। 

 

একটু আধটু করে নাম ছড়াতে লাগলো। রহমত নগরে আছে “সালমান শাহ মোড়”।

 

২।

পোলাপাইন গুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মের জন্য, শিক্ষার জন্য ছড়িয়ে পড়লো। ঈদে পার্বনে বাড়িতে ফিরলে সালমান মোড়ের গল্প উঠত। চল সালমান শাহ মোড়ে যাই। চা খাই, ইত্যাদি... কিন্তু একদিন সালমান শাহ মোড়ের অপমৃত্যু হলো। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সেই মোড়ের বাকা রাস্তা সোজা করে ফেললো। সেখানে আর মোড়ই রইলো না। সালমান শাহের মত সালমান মোড়কেও অকালমৃত্যু হল। সালমান শাহর অপমৃত্যু দিবসে সালমান ভক্তদের এই কথা জানানো খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না। 

তবে মোড় অপসারণ ও রাস্তা সোজা হওয়ায় ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অনেক অপমৃত্যুর সম্ভাবনাও কমে যায়। 

 

একারনে মোড় অপসারণ করলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগকে হন্তারক বলাও সমীচীন মনে হয় নয়। 

 

 

৩।

পুরা ঘটনার মধ্যে বিন্দু পরিমান মিথ্যা নেই। কারন সেই প্রত্যক্ষদর্শী ও মোড়ের নামকরণে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলাম আমিও। 

 

 

সাজিদ

০৯-০৯-২০২৩