প্রত্যেক মানুষের একান্ত নিজের এক গল্প থাকে।একেকটা সাময়িক জীবনের গল্প। যেখানে এক কাব্যের লেখক নিজের অজান্তে অন্য অনেক কাব্যে চরিত্র বনে যায়।পৃথিবীর উপলক্ষ্যে গল্পগুলো প্রবাহিত হয় মানুষ থেকে মানুষের কাছে।সেখানে জীবিতরা মারা যায়, গল্পরা বেঁচে থাকে সাক্ষী হয়ে।তেমনি এক খ্যাত লেখক আমার মহাকাব্যে এক অধ্যায় হয়ে আছে।যার নাম মার্থা।পৃথিবীতে এক অপূর্ব চরিত্রের নাম।এমন কি হত, যদি আমার কাব্যে সবটুকু জায়গা করে নিত মার্থা।কিন্তু তা হয় না, বিচিত্র মন শুধু আবেগ ভালোবাসে।বিবেকের আদালতে যত ভালো মন্দের গুণবিচার।কাব্য এ দুটোই চায়।আমি বারবার চেয়েছি মানুষের ভালো গুণ বেশি করে দেখতে, যতটা দেখলে খারাপগুলো সূর্যের আড়ালে তাঁরা হয়ে যায়। পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি সহস্রবার। যেভাবে সূর্য ব্যর্থ হয় দিনশেষে রাত ঢাকার।আমি তাকে দেখেছি কোন এক মৃত্যু পোড়ানোর দিনে। দূরে দাঁড়িয়ে সব নারী যখন বাড়ী ফেরার অভিপ্রায়, নিশ্চুপে সে একা উড়ন্ত ধোঁয়া দেখে। সমাজের রীতি তাদের বিভক্ত করে শ্মশানের যাত্রায়, নারীকে খন্ডিত করে অনুচিত বিধবায়।এরপর অনেকদিন তার দেখা পাইনি।কিছুদিন আগে কালো খয়রী শাড়িতে যে নারীর মুখে ক্লান্তির পরেও হাসি দেখেছিলাম, তিনি আজ শুধু সাদা শাড়ি পরিহিত।তার সিঁদুরের কৌট, আয়নায় লাগানো তিন-চারটে লাল টিপ, হাতের শাঁকাজোড়া সব বাক্সবন্দী।মানুষ বাহ্যিকতা এতই ভালোবাসে যে, সৃষ্টিকর্তাও সেখানে পরাজিত হয় স্বর্গ দেখাতে।দুদিন পর স্বরস্বতী পূজা ছিল।জর্জ আর কয়েকজন মিলে আমরা লুকিয়ে অন্য গ্রামের প্রতিমা দেখতে বেরিয়েছিলাম।অনেক প্রতিমা দেখা শেষে তর্ক বিতর্কের পর সিদ্ধান্তে এসেছিলাম এবার নোয়াপাড়ার প্রতিমা প্রথম হবে।ঠিক হয়েছিলও তাই।বাড়ি ফেরার পথে আমি মার্থাকে দেখি বাজারে।কি যেন সমস্যায় ছিল তখন।দেখলাম মটোর মেকানিক ইচাপি দাদাকে চার্চের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আমি দাদাকে পিছন দিক দিয়ে হাঁক দিলে তিনি আমাকে তার সাথে চার্চে নিয়ে যান।মার্থা এখানেই থাকে, চার্চের সিস্টারদের কাছে। শুনেছি কোন এক রোববার প্রার্থনার শেষে সিস্টার মেরিকুট্টি তাকে চার্চের মূল ফটকে জরাজীর্ণ ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।সেদিন থেকে মার্থা ঐ চার্চেই আছে।