Posts

চিন্তা

ছেলেটা ভালো ছিল

July 2, 2024

সাজিদ রহমান

Original Author সাজিদ রহমান

108
View


'ছেলেটি ভালো ছিল'। মজা করার জন্য প্রায়শই এ কথা বলি। একজনকে পচানোর জন্য বলে থাকি, "আহারে, ছেলেটা কত ভালো ছিল, ইন্নালিল্লাহি......" এরপর হয়ত চলে একচোট অট্টহাসি। অথচ যাকে নিয়ে এই মশকরা, এই যুগে এসে যার নাম হয়ে গেল ট্রল, সে কি করবে ভেবে পায় না। অনেকে সেই ট্রল নিতে পারে না। এভাবে অনেকের বন্ধুত্ব নষ্টও হয়ে যায়।

আমরা যাদের সাথে নিত্যদিন চলি, উঠি, বসি, সবাই আমাদের বন্ধু হয় না। এদের মধ্যে বন্ধু থাকে, অবন্ধু থাকে, পিছন থেকে ছুরি চালাতে চায় এমন মানুষও থাকে। প্রতিবেশী যেমন বদলানো যায় না, চাইলে নিত্যদিনের সেই মানুষেদের সবাইকে আপনি বদলাতে পারবেন না। নিজ ঘরের গৃহিণীর মত তাঁদের নিয়েও একরকম ঘর সংসার চলে। সেই প্রাচীন সম্রাট, বাদশাহ, রাজাদের আমল থেকে এর শুরু। এক ভাই আরেক ভাইকে, পুত্র পিতাকে কতল করে সিংহাসনে বসে গেছে। 

নিজের সামান্য অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করতে পারি। স্কুল পাশ দিয়ে ঢাকা যাই। সেও দুই যুগ হল। তখনও উত্তরা ৩ নং সেক্টরের জসিমুদ্দিন রোড, রাজলক্ষ্মী বা আমির কমপ্লেক্সের পাশের জমিতে ধান চাষ করা হত। সেই উত্তরা আর এখন নেই। সময়ের সাথে বদলে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। ঢাকায় গিয়ে দুই চার জন বন্ধু জোটে। বিকেলে সন্ধ্যায়, ছুটির দিনে দেখা সাক্ষাৎ হয়। তাদের কেউ কেউ কথার এদিক ওদিক হলেই খোঁচা মেরে দেয়। এলাকার বন্ধুরা তো অমন না, এরা কেন খোঁচা মারে। এসব ভেবে কষ্ট পাই। কিন্তু ওদের ছাড়া গতিও নেই। উপর থেকে নামলেই ওদের সাথে দেখা হয়। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। না হয়ে উপায়ও ছিল না। 

এরপর আস্তে আস্তে বুঝতে শিখি। মানুষকে সমালোচনার মাঝে বেড়ে উঠতে হয়। যে সমালোচনা সইতে পারেনা, তাঁর মাঝে বিশাল অপুর্নতা আছে, ধরে নেয়া যায়। কিন্তু সমালোচনা শেষ পর্যন্ত "সমান ভাবে আলোচনা" থাকে কিনা সেই প্রশ্নটা ও এর উত্তর জানাটাও খুব জরুরী। ভিন্ন ভিন্ন মত সহ অবস্থানের নাম গণতন্ত্র। উলটো করে বলা যায়, গণতন্ত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত সম্মানের সাথে অবস্থান করে। মানুষকে একটা দেশ কল্পনা করা যায়। সেখানে (মানুষের মনে) অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করার জায়গা তৈরি করতে হবে। আরেক জনের সাথেআমার মত মিলেনা বলেই সে খারাপ, এটা একেবারেই অবান্তর। এরই সূরে বলা যায়, যে বা যারা সব সময় জি ভাই, একমত ভাই, সহমত ভাই বলে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছে, তাঁকে আপনার শুভাকাঙ্খি ভাবার সময় সতর্ক হোন।

আসল কথায় আসি। ছেলেটা ভালো ছিল। হঠাৎ করে দেখতে পাই, সে আর আগের সে নেই। এরপর আমরা বুক চাপড়াই, আর বলি, হায় হাসান, হায় হোসেন। শুধু ছেলে নয়, মেয়ের বেলায়ও এটা প্রযোজ্য। আসলে কোন কিছুই একদিনে অর্জন হয়না। হয়ত একদিন সেই অর্জনের খবর আসে। ঠিক একইভাবে একদিনে ভালো ছেলেটি খারাপও হয় না। ধীরে ধীরে, যেভাবে বনি আমীন বলে থাকেন, সেভাবে ভালো ছেলেটি উচ্ছনে যায়। 

সময় গেলে সাধন হয়না, গুরু ছাড়া শিস্যের পুর্নতা আসেনা। তেমনি কারও না কারও প্রশ্রয় ছাড়া নষ্ট হওয়ার সাহসও করেনা। সেই ভালো ছেলেটি। কাউকে নষ্ট বলার আগে নিজের দায় আছে কিনা খেয়াল করুন। আবুলের ক্ষেত্রে নেই বুঝলাম, কিন্তু কাবুলকে তো ঠিকই ষড়যন্ত্রের মন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি মদ বেঁচে দুধ খাবেন, কিন্তু আপনার বিক্রিত মদ তো ঠিকই অন্যকে খেতে বাধ্য করছেন। 

একটা হালকা জোকস দিয়ে শেষ করি। সিনেমা হলে ঢুকেই একজন বুঝতে পারলেন, পেটের অবস্থা খুব খারাপ। সমানে গ্যাস মারছেন। সেই কি দুর্গন্ধ। আশেপাশের লোকের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তারা সিনেমা আর কি দেখবেন, গন্ধের ঠেলায় বেসামাল। আর যিনি একের পর এক পাদ মানে গ্যাস মেরে যাচ্ছেন, সেও সিনেমা ছেড়ে যেতে পারছে না। 

ভাই, ভালো হচ্ছেনা। আশেপাশের লোক সহ্য করতে না পেরে তেড়ে আসলেন। অনেক লোকের অভিযোগ। গ্যাস দাতা ভয় পেয়ে গেলেন। 

ভাই, অনেক চেষ্টা করছি। এর চেয়ে আর ভালো হচ্ছেনা। এই বলে অন্যদের কাছে মাফ চাইতে লাগলেন। কিন্তু সিনেমা হল ছেড়ে গেলেন না। 

পচা খাবার খেয়ে যে গ্যাস বের হবে তাতে "গোলাপ ফুলের সুবাস" আশা করা যায় না। সেই লোকের মতই বলতে হবে, ভাই, এর চেয়ে আর ভালো পারছিনা। 

ভালো থাকুন। সুস্থ চিন্তা করুন।

Comments

    Please login to post comment. Login