ভদ্রলোক নতুন চাকরিতে জয়েন করেছেন। চাকুরী পরিবর্তন করে খুবই চিন্তায় পড়ে গেছেন, এমনই চিন্তা যে সেটা মানসিক এবং পারিবারিক জীবনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। আমার সাথে যোগাযোগ করলেন সেই কারনেই। ভদ্রলোক জানালেন, তার ডিপার্টমেন্টাল হেড খুবই ডিমান্ডিং, সেটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে তিনি সন্ধ্যা ছয়টায় কোন না কোন কাজ দিবেনই এবং অফিস থেকে বের হয়ে যাবেন। রাত দশটায় অফিসে ফিরে সবাইকে তার ডিপার্টমেন্টে দেখতেই হবে, তা না হলে যত রাতই হোক ফোন করে জিজ্ঞেস করবেন, তিনি অফিসে এসে কেন উনাকে পান নি এবং বাজে ভাষায় এমন কথাবার্তা বলবেন যে পুরো রাতের ঘুম তো যাবেই আর কোন কিছুতেই কোন কাজে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হবে না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ডিপার্টমেন্টের অন্যরা এটা এতদিন মেনে নিচ্ছে কিভাবে?
তিনি জানালেন, এই ডিপার্টমেন্টে যারা আছে তারা সবাই আনম্যারেড এবং জুনিয়র। বসের কাজের স্টাইলের সাথে তারা বাধ্য হয়েই মানিয়ে নিয়েছে কারন তাকে কেউ কিছু বলবে এরকম সাহস অর্গানাইজেশনে কারও নাই। তার প্রবলেম হচ্ছে, তিনি ম্যারেড পার্সন এবং ফ্যামিলিতে তাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হয় কিন্ত তিনি সেটা করতে পারছেন না বলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। প্রতি রাতেই দেরি করে বাসায় যাওয়ায় তার স্ত্রী তাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে, তার কথা মাসে এক-দুইদিন রাত এগারোটা বাজতেই পারে কিন্ত সপ্তাহের প্রতিদিন কেন এটা হবে? হয় বন্ধুদের সাথে তিনি সময় কাটাচ্ছেন অথবা অন্য কোন ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
ভদ্রলোককে আমি কোন পরামর্শ দিতে পারিনি কারন তার বসের যেই ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্সের অভাব সেটা তার সিনিয়রদের বোঝা উচিত এবং অফিসের যেই নিয়ম কানুন আছে সেটা মেনে চলার জন্য উৎসাহ দেয়া উচিত। আমি শুধু বলেছিলাম, বসের সাথে কথা বলে আপনার পয়েন্ট অভ ভিউটা তাকে জানান এবং এভাবে আপনার জীবনে কি সমস্যা হচ্ছে যতটুকু পারুন বলুন, তাতে যদি কিছু না হয় তাহলে এই বসকে ছাড়ার চিন্তা করুন। ভদ্রলোক পরের অপশনটা আগে থেকেই চিন্তা করছিলেন, আমার সাথে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে চলে গেলেন। তার তিনমাস পর আবার আমার সাথে যোগাযোগ করলেন, খুবই খুশি এবং আমাকে ধন্যবাদ দিলেন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার জন্য এবং তার লাইফ এখন ভাল চলছে। আমিও খুশি হলাম, জিজ্ঞেস করলাম "কোথায় জয়েন করলেন? " আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি জানালেন তিনি আগের বসের সাথেই আছেন। তিনি আরেকটা চাকরি পেয়েছিলেন কিন্ত চিন্তা করলেন রেজিগনেশন দেয়ার আগে বসকে আমার কথামতো তার সমস্যাগুলো বলে দেখা যাক কি হয় কারন দুই মাসের মধ্যে চাকরি পরিবর্তন করা তার ক্যারিয়ারের জন্যও পজেটিভ কিছু হবে না। আশ্চর্যজনক ভাবে বস তার কথাগুলো খুবই পজেটিভলি নিয়েছেন এবং এখন অফিস টাইমের পর কাউকেই তিনি অফিসে থাকতে বাধ্য করেন না এবং নিজেও থাকেন না। তার বসের এই পরিবর্তনে অফিসের সবাই ভদ্রলোককে খুবই বাহবা দিচ্ছেন এবং গত দুই মাসে ডিপার্টমেন্টের সকল প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে গেছে! ভদ্রলোকের বসকে আমার নিজেরও পছন্দ হচ্ছিল না কিন্ত যখন বুঝলাম যে তিনি ফিডব্যাক নিতে পারেন এবং নিজেকে পুরোপুরি ভেঙে গড়তে পারেন তখন তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। সময়ের প্রয়োজনে নিজেকে পরিবর্তন করাই প্রফেশনালিজম।