পোস্টস

নন ফিকশন

লিলিপুট মিটস গ্যালিভার

৬ জুলাই ২০২৪

সাজিদ রহমান

মূল লেখক সাজিদ রহমান

দেশের রাজধানী ঢাকায় একটা একটা সমুদ্র আছে।

 

বিন্দু বিন্দু জলের মত লাখো কোটি মানুষ দিয়ে সেই সমুদ্র তৈরি। সেই সমুদ্রের নাম জনসমুদ্র। সেই সমুদ্রের সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তুপ্রানও সেই মানুষ। শহরের প্রাণকেন্দ্রে যান, প্রশস্ত সড়কে যান, অলিতে গলিতে যান, চিপায় চাপায় যান, মানুষ আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। আপনি বেশি লম্বা হলে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে (ফুটবলে যাকে নাটমেগ বলে), বেশি খাট হলে ঘাড়ের উপর দিয়ে, বসে থাকলে মাথার উপর দিয়ে, হাঁটতে গেলে পা পাড়া দিয়ে, একটু দাঁড়ালে সিনা দিয়ে ধাক্কা মেরে মানুষ চলে যাবে। সময় ও স্রোতের মত জনস্রোতও কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অন্য কারও তোয়াক্কা করে না।

আমরা মফস্বলে থাকি। তবুও মাঝে মাঝে সেই শহরে আমাদের যেতে হয়। কাজে যাই, আকাজে যাই। কমপ্লান বয়ের মত এমনি এমনিও যাই। যাই ঠিকই, কিন্তু মফস্বলের গতিহারা এই আমরা রাজধানীর গতিতে খেই হারায়ে ফেলি। সেই জনসমুদ্রে পড়ে সাঁতার না জানা বালকের ন্যায় প্রায় হাবুডুবু খাই। ডুবতে ডুবতে একটু করে ভেসে উঠি। সেই জনসমুদ্র যাত্রায় আমি এক লিলিপুট হয়ে থাকি।

দিন কয়েক আগে সেই জনসমুদ্রের শহরে গিয়েছিলাম। বেশ কিছু কাজ ছিল। আমাকে সংগ দেয় ওস্তাদ Khair Bhuiyan । কাজ শেষ হলে আমরা একটা কফি শপে ঢুকি। কফিশপ নয়, যেন জনসমুদ্রের উপর সাক্ষাৎ একটা বিলাসবহুল জাহাজ। সেই জাহাজে উঠলে জনসমুদ্রের গর্জন স্তিমিত হয়ে আসে। বাইরের হাউকাউ ভিতের আসার অনুমতিও নাই।

 

লিলিপুটের গ্যালিভার সাক্ষাৎ 

সেই নীরবতার আয়েশটুকু পেতে হলে অবশ্য চড়া মূল্য দিতে হয়। নরম কেদারায় পা চেগিয়ে আরাম করে এক কাপ কফি খাওয়াই যায়। তবে সেই এক কাপ কফির দাম একজন মজুরের সারাদিনের মজুরির সমান। এখানে এসেই আমার হিসেবটা আর মিলে না। ইউরোপ মেরিকায় Starbucks, Costa, Caffe Nero, Harris Hoole, KFC তে কফি খেতে সেই দেশের একজন শ্রমিককে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট কাজ করা লাগে। রাজধানী ঢাকায় সেই মজাটা নাই। কফি খেতে খেতে আশেপাশের মানুষের মুখের ছবি দেখার চেষ্টা করি। না, বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছে। মুখে কষ্টের ছাপ নেই। থাকলেও বুঝিনা।

সেই সময় প্রায় ২০ বছর পর একজন মানুষকে দেখতে পাই। তাঁর পাশে দাঁড়ালে যে কাউকে লিলিপুট মনে হয়। শরীফ ভাই হলেন সেই গ্যালিভার। যিনি আমার চেয়ে মাত্র এক ফুট লম্বা। এক সময় তিতুমির হলে তিনি থাকতেন, ২ রুম পরে আমিও থাকতাম। পা বের হয়ে যায় বলে হলের চকিতে এক্সট্রা কাঠ দিয়ে লম্বা করতে হয়েছিলো। আর এই এক্সট্রা লম্বা হওয়ার কারণে সেই সময়ে বাস্কেট বলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী চ্যাম্পিয়ন ছিল তিতুমির হল।

শরীফ ভাই ছিলেন অমায়িক মানুষ। ২০ বছর পর সেই অমায়িক মানুষকেই দেখতে পেলাম। সোজা সরল, তেমনি হাস্যোজ্জল। পাশ করার পর প্রথম চাকরির সুযোগও তিনি করে দিয়েছিলেন। সেটা ছিল একটা মিশরীয় ফার্ম। যদিও ১ মাস ১৭ দিন সেই চাকরি করেছিলাম। কিন্তু সেই চাকরির কল্যাণে মাস তিনেক পরে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যাই।

 

এভাবে লিলিপুট সাজিদের সাথে গ্যালিভার শরীফ ভাইয়ের দেখা হয়ে যায়। লিলিপুট সেই মুহুর্তকে স্মৃতিবন্দি করতে ভুল করেনা।