১৬০০ সালে ভারতবর্ষে বাণিজ্যের জন্য ইংল্যান্ডের একদল বণিক East india company গঠন করে। তারপর ১৬০৮ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইংরেজরা সুরাটে প্রথম বাণিজ্যিক কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। ধীরে ধীরে ১৭১৫ সালে মোঘল দরবার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, অতঃপর বাণিজ্যের নাম করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ইংরেজরা কর্তৃত্ব বিস্তার করে। অবশেষে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদৌলা কে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত করে ০২ জানুয়ারি ১৭৫৭ সালে এই স্বাধীন বাংলা দখল করা হয়।
ইংরেজরা দীর্ঘ ২০০ বছর East india company 'র নামে ভারতবর্ষ শাসন করার পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিলুপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে। এই ইতিহাস গুলো তো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। তবে একটি ব্যাপার হঠাৎ আমাকে ভাবিয়ে তুললো ;
আমরা জানি ব্রিটিশরা কোম্পানির স্বার্থে এবং সুবিধার জন্য এই ভারতবর্ষে অনেক গুলো Act বা আইন প্রণয়ন করেছিলো তেমনই একটি আইন ছিলো-
১৮৩৫ সালে অফিস-আদালতে ইংরেজি কে প্রধান ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা বা আইন প্রণয়ন করা। আর এই আইনের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে এই ভারতীয় উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে ইংরেজি ভাষা।
পৃথিবীর এই উঁচু নাকওয়ালা জাতি অর্থাৎ ব্রিটিশরা যেখানে শাসন করেছে সেখানেই তাদের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। আমি সাধারণত এই ব্যাপারটা কে বলি :
The pre-planned blueprint of the British.
তো যাই হোক, ইতিহাস থেকে জেনেছিলাম :
২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে এই বীর বাঙালী বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্দোলন করে এবং সে আন্দোলনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে অনেকেই শহীদ হোন। অতঃপর ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ অবধি এই ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটি তে বীর বাঙ্গালী বাংলা ভাষার কথা স্মরণ করে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়, খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটে, ফেসবুকে পোষ্ট দেয় এবং সারা বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই দিনটিকে উদযাপন করা হয়। আর বাদ বাকি ৩৬৪ দিন এই বীর বাঙালী ব্রিটিশদের গোলামী করে যাচ্ছে নিজের বাংলা ভাষা কে অবমাননা করে যাচ্ছে ;
যেমন ধরুন -
শিক্ষিত হতে হলে ইংরেজি জানতে হবে অথবা যিনি ইংরেজি ভাষা জানেন তিনি অনেক শিক্ষিত একজন ব্যক্তি।
চাকুরী পেতে হলে ইংরেজি ভাষা জানতে হবে।
উঁচু সমাজের সাথে চলতে হলে ইংরেজি আয়ত্ত করতে হবে।
দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে, সেইসব বিদ্যাপিঠ গুলোতে যারা অধ্যায়ন করেন সে-সব শিক্ষার্থী বাঙালি হয়েও বেশির ভাগই ঠিকঠাক বাংলা বলতে পারেন নাহ।
Because they are damn serious about English & They’re so proud for they can speak fluently in English language.
আপনি কলেজে অধ্যায়ন করেন অথচ ইংরেজি বলতে পারেন নাহ ঠিকমতো, তাহলে আপনি গণ্ডমূর্খ আপনি গেঁয়ো, আপনি আনস্মার্ট।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে নূন্যতম পাশ মার্ক না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বলবে :
You are not eligible to study at our university.
আপনি স্নাতক ( Graduation ) সম্পূর্ণ করেছেন অথচ আপনি ইংরেজি বলতে পারেন নাহ তাহলে আপনি কিসের শিক্ষিত হইলেন?
এই যে স্কুলে ১০ বছর, কলেজে ২ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর মোট ষোলো বছর অতিবাহিত করলেন অথচ ইংরেজি বলতে পারেন না, তাহলে কী ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা করলেন, আপনার শিক্ষা জীবনটাই তো বৃথা আপনি ছাত্র হিসাবে একজন ভ্যাগাবন্ড।
ইংরেজি তে কথা বলতে পারলে আমাদের বাবা-মা আত্মীয় স্বজনের বুক ফুলে পাঁচ হাত চওড়া হয়ে যায়।
স্কুল কলেজে স্যার ম্যাডামরা অনেক ছাত্রের মেধা মূল্যায়ন করে থাকেন, আলাদা যত্নের চোখে দেখেন তার ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা দেখে।
বীর বাঙালী কে যতটা জোর পূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে English Grammar শেখানো হয় তার অর্ধেকও বাংলা ব্যাকরণ শেখানো হয় না।
ইংরেজি চর্চার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
( English language club, English debating club, English literature club, English spoken club, English writing club ) নানান রকমের সুব্যবস্থা রয়েছে।
কোনো একজন ইংরেজি বলতে পারলে, তাকে আমরা বলি “ভদ্রলোক”
Because the British people call themselves gentlemen.
ব্রিটিশ উচ্চারণে ( Britsh Accent ) কথা বলার জন্য আমরা কত কষ্টই না করে থাকি।
আফসোস! আমরা চায়নীজ দের মত নিজেদের ভাষা এবং জাতিকে স্বতন্ত্র করতে পারি নি,
আফসোস! আমরা জাপানিজ দের মত নিজের ভাষাকে শ্রদ্ধা করতে পারি নি, জাপানিজ'রা তাদের লেখায় একটি শব্দের ভুলকে লজ্জাজনক মনে করে আর আমরা বাঙালীরা বাংলিশ লিখি প্রতিনিয়ত, হাজার শব্দের ভুল হলেও লজ্জাবোধ হয় না আমাদের।
আফসোস! আমরা বাংলা কথোপকথনের সময় বাক্যের মাঝে ইংরেজি বলাটাকে সৌন্দর্য মনে করি।
আফসোস! বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমাদের শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারিতেই মনে পরে।