পোস্টস

সমালোচনা

Give and Take

৬ জুলাই ২০২৪

রেজওয়ান আহম্মেদ

Give &Take অথবা দেয়া-নেয়া ;
এই শব্দ দুটোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 
আচ্ছা বলুন তো এই পৃথিবীতে এমন কয়টা সম্পর্ক রয়েছে যেখানে এই দুটো শব্দের প্রভাব নেই?

মায়ের ভালোবাসা থেকে শুরু করে সমাজের নানা সম্পর্কের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে এই শব্দ যুগল। 
তবে কিছু ক্ষেত্রে Give & Take  খুব ইতিবাচক এবং সৌন্দর্যের প্রতিক। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই Give & Take বড্ড হাস্যকর এবং নিচু মানসিকতার প্রতিক। ইতিবাচক Give & Take ব্যাপার টা আমরা সবাই বুঝি এবং জানি। এই যেমন ধরুন বাবা-মায়ের ভালোবাসা, পরিবারের ভালোবাসা, সবচেয়ে ভালো বন্ধুর ভালোবাসা, সহধর্মিণীর ভালোবাসা। অনেক ক্ষেত্রে এই ভালোবাসা গুলো বা এই সম্পর্কের দেয়া-নেয়া গুলো নিঃস্বার্থভাবে হয়ে থাকে।

কিন্তুু আমরা সাধারণত যা অনুধাবন করিনা তা হচ্ছে... 
একটু খেয়াল করলে দেখবেন আপনি এই সমাজে অনেক সম্পর্কের সাথে ওঠাবসা করেন। বেশির ভাগ সম্পর্ক 
Give & Take এর উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে বা সুগঠিত রয়েছে। এই যেমন ধরুন আপনার বন্ধু কে যদি আপনি
কল/মেসেজ দিয়ে খোঁজ খবর না নেন সে কিন্তুু কিছুদিন পরে আপনার খোঁজ নিবে না। আবার বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ার যুগে আপনি যদি আপনার বন্ধু কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা না জানান তাহলে বিরাট সর্বনাশ। বন্ধুত্বের মাঝেই দাগ পরে যাবে। আপনি তার জন্মদিনে কেক কিনবেন পরবর্তীতে সেও আপনার জন্মদিনে কেক কিনে নিয়ে আসবে। আপনি তার জন্মদিনে 
দামি উপহার দিবেন সেও অনুরূপ আপনার জন্মদিনে আপনাকে উপহার দিবে। বলাবাহুল্য আপনি আপনার বন্ধুর পেছনে পাঁচ টাকা ব্যয় না করলে সেও আপনার পেছনে পাঁচ পঁয়সা ব্যয় করবে না।

একটা সময় আত্মীয় বলতে আমরা বুঝতাম আত্মার সাথে যার সম্পর্ক সেই আত্মীয়। আর এখন আত্মীয় স্বজনেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখবেন তেলা মাথায় তেল দিতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ ঐ যে Give & Take...  যে আপনাকে ১ কেজি সরিষার তেল দিলো আপনি তাকে এক কেজি সরিষার তেল দিতে না পারলেও অন্তত আধা কেজি তেল দেবার চেষ্টা করবেন। 
সমাজের ভাই-ব্রাদার, চাচা-মামা, যুবা-বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রে একই অবস্থা। এখন সম্পর্কে ভালোবাসার থেকে অর্থের দাম বেশি।

 

একটা সময় গুরু-শিষ্য অর্থাৎ শিক্ষক এবং ছাত্রের মাঝে একটা সুন্দর এবং সম্মানের সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো। এখন কিন্তুু খুব ব্যতিক্রম না হলে গুরু-শিষ্য এই ব্যাপার টা আর চোখেই পরে না। শিক্ষকতার ভিতরে ঢুকে গেছে ব্যবসা আর ছাত্র-ছাত্রীর ভিতর ঢুকে গেছে বিশৃঙ্খল মনোভাব এবং উশৃংখল আচরণ। সম্মান-শ্রাদ্ধাবোধের জায়গা টা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

যুবক যুবতীর প্রেম ভালোবাসার কথা কি আর বলবো; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখবেন দুপক্ষেই অসীম এক চাওয়া পাওয়া বিরাজমান থাকে। আর এই চাওয়া পাওয়ার ব্যত্যয় ঘটলেই সম্পর্কের ইতি ঘটে যায়।
অনেকদিন আগের কথা তখন আমাদের সমাজের সম্মানিত চিকিৎসক বৃন্দ অনেক আন্তরিক এবং মানবিক বোধ সম্পূর্ণ ছিলেন। বর্তমান সময়ে তাদের সম্মান একই রয়েছে বরং তারচে বেশি কিন্তুু সময়ের আদলে তাদের আন্তরিকতা এবং মানবিক বোধ এবং দায়িত্ববোধ যথেষ্ট Give & Take এর আদলে জরিয়ে গেছে।

দিনদিন পৃথিবীর সৌন্দর্য গুলো হারিয়ে যাচ্ছে, 
মানুষের মানবিকতা লোপ পাচ্ছে, 
মানুষ অর্থের পেছনে, সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে দিনরাত ছুটে চলেছে। এখন সম্পর্কের ভালোবাসা থেকে স্বার্থের দাম বড্ড বেশি। মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে, অন্যের আবেগ-অনুভূতি, সম্মান, ভালোবাসা তার কাছে বেশ তুচ্ছ। লেনদেনেই অভ্যস্ত হচ্ছে আমাদের জীবন।