পোস্টস

ফিকশন

" দ্বৈত সত্তা এবং সিজোফ্রেনিয়া "

৭ জুলাই ২০২৪

রেজওয়ান আহম্মেদ

সিজোফ্রেনিয়া " শব্দ টি  অনেকের কাছেই হয়তো নতুন। তবে নতুন শব্দ হলেও এই রোগটি অপ্রচলিত নয়। রোগটি একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের “সিজোফ্রেনিয়াক” [Schizophreniac] বলা হয়।

সিজোফ্রেনিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ “সিজো” এবং “ফ্রেনিয়া” হতে। গ্রীক শব্দ “সিজো” অর্থ দুই। আর “ফ্রেনিয়া” শব্দের অর্থ মন। অর্থাৎ দুইটি মন।

যেহেতু দুটি মন, সেক্ষেত্রে একটি প্রসঙ্গ চলেই আসে। 
What does entity mean?
সত্তা বলতে কী বোঝায়?
সত্তা হলো এমন কিছু, যার পৃথক এবং আলাদা অস্তিত্ব আছে। তবে এখানে অস্তিত্ব পার্থিব নাও হতে পারে। অর্থাৎ সত্তা ব্যাপারটি শুধুমাত্র জাগতিক এমন টা নয়।

সিজোফ্রেনিয়া শব্দটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় “দ্বৈত সত্তা”। বলা হয়ে থাকে :
Human mind is a complex maze.”
মানুষের মন জটিল একটা গোলকধাঁধাঁ।
এই কথাটিকে সত্য প্রমাণিত করেছে সিজোফ্রেনিয়া নামের রোগটি।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে দুইটি সত্ত্বার জন্ম নেয়। ব্যাপার টা এরকম ;
দুটো আলাদা মানুষ একই শরীরে আটকা পড়েছে। দুটো আলাদা ব্যাক্তিত্ব, দুটো আলাদা চিন্তাধারা
কিন্তুু একটাই শরীর। ব্যাপারটা খুব ভয়ঙ্কর তাই নাহ?

[ Chemically altered brain , two completely different entities, with full consciousness, but you don't know which one is you!! ] ©

রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত মস্তিষ্ক, কিন্তুু সম্পূর্ণ চেতনা সহ দুটি ভিন্ন সত্তা, কিন্তু আপনি জানেন না যে এই দুটির মাঝে কোনটি আপনি!!

আসলে আপনার মন দুটি সত্তাকে বয়ে বেড়াচ্ছে যারা পৃথক এবং যাদের কর্মপক্রিয়াও পৃথক। এক্ষেত্রে দুটি সত্তার মাঝে আপনি যদি নিজেকে খুঁজে বের করতে চান তাহলে আপনার গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন। অনুসন্ধানে যে সত্তা টি কে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় বা Active খুঁজে পাবেন। সে সত্তা টি কে আপনার প্রধান সত্তা হিসেবে ধরে নিতে পারেন। 

 

দ্বৈত ব্যক্তিত্ব, প্রকৃত পক্ষে বিরল এবং বিপরীত ধর্মী মানসিক অবস্থা যেখানে নিজস্ব স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বময় গুণাবলীগুলো বিলুপ্ত হয়ে দুই বা ততোধিক ভিন্নধর্মী স্বাধীন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে।
একে বহুরূপী ব্যক্তিত্বের লক্ষণ বা
Multiple Personality Syndrome (MPS) বলা যায়।
এখন আপনার স্বাভাবিক মনে প্রশ্ন জাগতে পারে-

আমরা যখন শিশুদের মাঝে থাকি অথবা বাবা-মায়ের সাথে বা সহপাঠিদের সাথে কিংবা বয়োজেষ্ঠ্যদের সাথে কিংবা অশিক্ষিত মানুষদের সাথে অথবা  মেয়েদের সাথে বা উচ্চ পদস্থ ব্যক্তির সাথে- আমরা সাধারণত বহুমুখী আচরণ করে থাকি। তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের সবারই কী সিজোফ্রেনিয়া রোগ রয়েছে?
বস্তুুত সৃষ্টিগত ভাবেই ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের মানুষের সাথে ভিন্ন ভিন্ন রকম আচরণ করে থাকি আমরা। আমাদের আচরণ, উপস্থাপন ভঙ্গি এমনকি প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত নির্ভর করে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতা, বা সম্পর্কের ভিন্নতার উপর। 
তারমানে কি এই যে আমরা দ্বৈতস্বত্বা বা বহু-স্বত্বার স্বীকার? একদমই ব্যাপারটা তা নয়। এসব আমাদের দৈনন্দিন এবং স্বাভাবিক আচরণ।

Split Personality বা দ্বৈত-স্বত্বা/বহু-স্বত্বা কে বুঝতে গেলে আমাদের ব্যক্তিত্ব কে আগে চিনতে হবে।

ব্যক্তিত্ব মূলত সচেতনতার একটি প্রবাহ যেখানে প্রশ্নাতীতভাবে কোন একটি বিশেষ অবস্থা স্থির বা স্বাভাবিক বা প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় থাকবে। শারীরিক নিদর্শন এখানে কোন ভূমিকা রাখেনা যদিনা তা কোন না কোন ভাবে মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
সিজোফ্রেনিয়া কি ভয়ংকর কোন রোগ?
আসলে এটা কতটা ভয়ংকর তা নির্ভর করবে রোগীর আচরণের ওপর। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক হত্যাকান্ড ঘটেছে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের হাতে। এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে যেহেতু দুইটি সত্ত্বা থাকে এর মধ্যে একটি সত্ত্বা খারাপও হতে পারে। এমনকি একজন খুব সৎ এবং ভালো মানুষের মধ্যেও জন্ম নিতে পারে এরকম একটি খারাপ সত্ত্বা। ধরা যাক একজন ভাল মানুষের মধ্যে খারাপ একটা সত্ত্বা জন্ম নিল। এক্ষেত্রে তার ভাল সত্ত্বাটি তার খারাপ সত্ত্বার সম্পর্কে কখনোই জানতে পারবে না। যদি কখনো খারাপ সত্ত্বাটি কাউকে খুনও করে ফেলে তবুও ভাল সত্ত্বাটি জানতে পারবে না।


কি করে বুঝবেন আপনি সিজোফ্রেনিয়াক কিনা?
আসলে একজন সিজোফ্রেনিয়াক কখনোই বুঝতে পারেন না যে তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কারণ তার ভেতরে গড়ে ওঠা সত্ত্বা দুইটি কখনোই অপর সত্ত্বার কথা জানতে পারে না। তার আশেপাশে থাকা মানুষজনই কেবলমাত্র বুঝতে পারে ব্যাপারটা।
কিছু সাধারণ ব্যাপার যেমন : 
🔺নিজের সাথে নিজের কথা বলা,
🔺কিছুক্ষণ আগেই করা কাজ বা বলা কথা ভুলে যাওয়া, 
🔺অসংলগ্ন কথাবার্তা, অসংলগ্ন আচরণ, শখ বা রুচিতে পরিবর্তন, 
🔺রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটা,
🔺 মাথাব্যাথা বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ব্যাথা অনুভব,
🔺সময়ের অবহেলা বা অপচয়,
🔺মনুষত্যহীনতা,
🔺স্মৃতিশক্তিহীনতা,
🔺 বিবেকহীনতা/আবেগহীন,
🔺অতীত দূর্ঘটনা বারবার মনে করা,
🔺ব্যাখ্যাতীত কোন ভয়,
🔺কারণ ছাড়াই হঠাৎ রেগে যাওয়া,
🔺মানুষজনকে এড়িয়ে চলা,
🔺প্রায়শই কোন কাল্পনিক ভয়ে আক্রান্ত হওয়া,
🔺কাল্পনিক কোন ব্যক্তিকে দেখা এবং আপন মনে কথা বলা।
এসব লক্ষন দেখে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে সনাক্ত করা যায়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে : মানুষ যখন মানসিক আঘাত পায় কিংবা কোন বিষয় নিয়ে মানসিকভাবে প্রচন্ড চাপে থাকে তখনই মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে দ্বৈত সত্ত্বার জন্ম নেয়। কখনো কখনো জেনেটিক বা বংশগত কারণেও মানুষ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

যাইহোক অনেক কথাই বলে ফেলাম, আপনাদের কাছে বার্তা এটাই - আপনাদের কারো মাঝে উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে নিঃসংকোচে  মানসিক ডাক্তারের কাছে যান এবং কাউন্সিলিং করুণ।