Posts

সমালোচনা

" শিক্ষা, অপশিক্ষা এবং অপসংস্কৃতি "

July 7, 2024

রেজওয়ান আহম্মেদ

সহজ ভাবে বলতে গেলে আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন হলো শিক্ষা। শিক্ষা হলো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ
বিকাশের অব্যাহত অনুশীলন। তবে শিক্ষিত হওয়ার চেয়েও ভালো মানুষ হওয়া যে খুব বেশি প্রয়োজন এতে সন্দেহ নেই। 
কারণ - "প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, মন না থাকলে মানুষ হয়না।"

দিন দিন যে হারে শিক্ষিত শ্রেণির সংখ্যা বাড়ছে ; সে হারে কী সুশিক্ষিত মানুষ তৈরী হচ্ছে?
সুশিক্ষিত মানুষ হওয়ার জন্য যে মানবীয় গুনাবলী, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের একটা সমন্বয় প্রয়োজন ; সেই প্রক্রিয়া কতটুকু অব্যাহত আছে?


পৃথিবীর সবদেশের দুর্নীতিবাজ বা বড় অপরাধীদের বিশ্লেষণ করলে দেখবেন সংখ্যাটা অশিক্ষিত বা মূর্খ মানুষের চেয়ে শিক্ষিতরাই বেশি।
আসলে শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে এবং বিকশিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।  বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা আপনাকে দক্ষ এবং জ্ঞান দান করছে ঠিকই ;  কিন্তু এর সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা না থাকলে আপনি  কোনদিন ভালো মানুষ হতে পারবেন না। মনুষ্যত্ব না থাকলে বাস্তবিক এই শিক্ষা সমাজ বা মানুষের কল্যাণে কাজ করে না। তখন নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিহীন শিক্ষিত মানুষ, অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা কাজ করে না, কারো উপকারে এগিয়ে আসে না, মানবতার কথা চিন্তাও করেনা।

শিক্ষা- সুশিক্ষার প্রসঙ্গ সূত্রেই সমাজে অপশিক্ষার কিছু কথা না বললেই নয়। দিন দিন সমাজে অপশিক্ষা ছড়িয়ে যাচ্ছে, মানবিক গুনাবলী লোপ পাচ্ছে। ব্যতিক্রম আছে স্বীকার করি। কিন্তুু ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য সভ্যতার আদলে আমাদের শিক্ষার ভেতর এমন অনেক শিক্ষাকে চর্চা করা হচ্ছে  যা না শিখলে আমাদের ক্ষতি নেই তবে সেই শিক্ষা চর্চা করলে আমাদের মনন, মেধা এবং চিন্তা নিম্নগামী হওয়ার সম্ভবনাই বেশি থাকে। এবং কুরুচি শীল মনোভাব জাগ্রত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এটি অনেক  বিস্তারিত আলোচনা,

সে জন্য অপশিক্ষা বিষয়ক দ্বিতীয় পর্বে আমি এটি সম্পর্কে পরিষ্কার করে বলবো ইনশাআল্লাহ!

এবার আরেকটি বিস্তারিত বিষয় - সংস্কৃতি এবং অপসংস্কৃতি এই দুটো বিষয় আমি ছোট্ট করে আলোচনা করতে চাই।
সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা। " অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নৈমিত্তিক প্রচেষ্টাই সংস্কৃতি " আর অপসংস্কৃতি হলো এর বিপরীত। আত্মার মৃত্যু ঘটিয়ে অসুন্দরের উপাসনা করে, অকল্যাণের হাত ধরে বেঁচে থাকাই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে অশ্লীলতার দিকে ঠেলে দেয়।

জীবনের সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সমাজে বসবাসরত মানুষের প্রত্যেকটি কার্যকলাপই তাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। কোনো সমাজই তাদের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না। মূলত সংস্কৃতি এবং জীবন একে অপরের পরিপূরক।
কিন্তুু একটু ভেবে দেখুন আমরা দিনদিন আমাদের মূল সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। আমরা অনুকরণ করছি পাশ্চাত্যের ঘৃণিত অনেক সংস্কৃতি কেই, যে সংস্কৃতি আমাদের বেশভূষা, পোশাক পরিচ্ছদ, ভাষা, নানা ধরনের অযৌক্তিক দিন উদযাপন এবং  অবাধ স্বাধীনতার নামে নোংরা মানসিকতাকে প্রভাব বিস্তার  করছে এবং আমাদের সুন্দর সংস্কৃতি কে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। 
বলাবাহুল্য মানুষ সুন্দরের পূজারি। তাই আমার আহ্বান মানুষ হিসেবে আমাদের অবশ্যই সুশিক্ষিত হওয়া উচিত এবং অপশিক্ষা এবং অপসংস্কৃতি কে বর্জন করে নিজেদের মনন মেধা এবং চিন্তাকে বিকশিত করা সবারই কর্তব্য।

শিক্ষা ও অপশিক্ষা পর্ব  [০২ ]

শিক্ষা- সুশিক্ষার প্রসঙ্গ সূত্রেই সমাজে অপশিক্ষার 
কিছু কথা না বললেই নয়।দিন দিন সমাজে অপশিক্ষা ছড়িয়ে যাচ্ছে, মানবিক গুনাবলী লোপ পাচ্ছে। ব্যতিক্রম আছে স্বীকার করি।কিন্তুু ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য সভ্যতার আদলে আমাদের শিক্ষার ভেতর এমন অনেক শিক্ষাকে চর্চা করা হচ্ছে  যা না শিখলে আমাদের ক্ষতি নেই তবে সেই শিক্ষা চর্চা করলে আমাদের মনন, মেধা এবং চিন্তা নিম্নগামী হওয়ার সম্ভবনাই বেশি এবং কুরুচিশীল মনোভাব জাগ্রত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।  

আপনাদের চর্মচক্ষু দিয়ে বিবেচনা না করে একটু অন্তরচক্ষু দিয়ে বিবেচনা করে দেখুন- প্রতিনিয়তই একদল স্বার্থান্বেষী দল তাদের নির্দিষ্ট  লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে  আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে শিক্ষার নামে আস্তে আস্তে অপশিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে। 


আজ কিছু প্লাটফর্ম নিয়ে আলোচনা করবো যে প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করে শিক্ষার নামে অপশিক্ষা কে দিনদিন সুকৌশলে প্রমোট করা হচ্ছে।
প্রথমেই আলোচনা করা যাক বাঙ্গালী জাতির হাজার আবেগে ভরা চারুকলা বা Fine Arts নিয়ে।

চারুকলা বা ললিতকলা [ Fine Arts ] : শিল্পকলার বেশ কিছু ধারার একটি দলকে বোঝায়, যার মধ্যে অঙ্কন, ভাষ্কর্য, স্থাপত্য, সঙ্গীত, কাব্য, মঞ্চনাটক, নৃত্য, আবৃত্তি 
ও অভিনয় অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে, ললিতকলায় চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি, ধারণাগত_শিল্প,ও প্রিন্টমেকিং যুক্ত হয়। 
বলাবাহুল্য চারুকলায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিষয় প্রতিভার বিকাশ কে প্রস্ফুটিত করে। আর এই প্রতিভা ব্যাপার টাকে কাজে লাগিয়ে একদল স্বার্থান্বেষী দল সমাজে নগ্নতা এবং যৌনতাকে প্রমোট করছে। আর শিল্পীর সৃষ্টির শৈল্পিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু কোটেশন ব্যবহার করা হয়, যেমন:

" শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা কোনো বাঁধা নিষেধ মানে না, নিয়ম- শৃঙ্খলা মানে না, শিল্পী তার মনের স্বাধীনতায় আঁকেন অপূর্ব সব সৃষ্টিকর্ম " 


এরকম আরো অনেক মতবাদে শিল্পী ভাই-বোনেরা পাশ্চাত্যের আদলে নিজেদের মস্তিষ্ককে দিনদিন বিকৃত ও অসুস্থ করে ফেলছে সেই সাথে সমাজের মানুষকেও।

সাধারণ ভাবে একটি কথা চিন্তা করে দেখুন তো.. আপনার শিল্প কর্মকে ভিন্ন রুপে ফুটিয়ে তুলতে বা মানুষকে বোঝানোর জন্য নগ্ন অথবা যৌনতা বিষয়ক কোনো কিছুকে সৃষ্টি করতে হবে?

 মনে রাখবেন -
 " সৃষ্টিশীলতা তখনই পূর্ণতা পায়,  যখন সৃষ্টিশীলতা রুচিশীল এবং শ্লীল হয়ে থাকে " 
আমাদের সমাজে এই শিল্পী ভাই-বোনেরা নিজের সৃষ্টি কর্মকে সঠিক বলে দাবী করার জন্য সুকৌশলে কয়েকটি উক্তি ব্যবহার করে থাকেন, যেমন :

“মানুষ কে ভালো-মন্দ প্রামাণ করতে করতে শিল্পীর নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছুটে যাবে”


“শিল্পীর তৈরী নগ্ন ছবির কনসেপ্ট সবাই বোঝে না”
“সাধারণ মানুষ শিল্পীর তৈরী নগ্ন ছবিকে যৌনতা হিসাবে দেখে”
“মানুষের নগ্ন দেহ সৃষ্টিকর্তার সুক্ষ ফাইন আর্ট যে কারণে শিল্পীদের উচিত সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে মানুষের সামনে তুলে ধরা সেটা নগ্ন ছবিই হোক অথবা যৌনতা”
“মানুষের নগ্ন শরীর একটা সুক্ষ আর্টের বিষয় বস্তুু"
“সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নগ্ন করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এবং নগ্ন করে পৃথিবী থেকে নিয়ে যাবেন”

এমন হাজারো অযৌক্তিক অশ্লীল কথা বলে মুক্তমনা ভাইবোনেরা  মানুষদের কে বুঝিয়ে দিচ্ছে নগ্ন ও যৌনতা সৃষ্টি কর্তার মহান রহস্যময়ী সৃষ্টি বলে সমাজে উম্মুক্ত ভাবে নগ্নতা কে প্রমোট করে যাচ্ছে। 
মানুষ দিনদিন কতটা ব্রেনওয়াশড এবং বেহায়া এবং সীমালঙ্ঘনকারী হচ্ছে তা নিচের স্ক্রিনশট গুলো দেখলে একটু আঁচ করতে পারবেন।

ব্যবসায়গত বিদ্যা ( Business Study’s ) :
আধুনিক ব্যবসায় বা প্রতিযোগিতা মূলক পূঁজিবাদী বিশ্বে একটি হালাল জিনিস কে নানান উপায়ে হারাম করে ফেলা হচ্ছে  যেমন ধরুন - ব্যবসার নামে অনায়াসে সুদ_ঘুষ, অবৈধ_পণ্য, এডভার্টাইজমেন্ট, নারীকে_ভোগ্য পণ্য হিসাবে উপস্থাপন করা,  খেলাধুলার নামে জুয়াকে প্রমোট করা - ব্যবাসায়ের নানাবিধ বিজনেস পলিসি বা নীতি যা কিনা পশ্চিমাদের দ্বারাই আপগ্রেডেট করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং খুব সুকৌশলে উক্ত বিষয়াদি আমাদের শিক্ষার বিষয় বস্তুু হিসেবে যোগ করা হচ্ছে। যা অবশ্যই অপশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

সাহিত্য অনুশীলন জ্ঞান [ Literature ] : 

সাহিত্য হলো সমাজ ও মানব জীবনের দর্পণ বা প্রতিচ্ছবি। মানবজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। সাহিত্যে মানব জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এবং মানব জীবনের শ্বাশত এবং চিরন্তন অনুভূতি প্রতিফলিত হয়। কিন্তুু আঠারো-উনিশ শতকে এই সাহিত্য খাতেও অনেক আধুনিক লেখকগণ ধীরেধীরে মুক্তমনা লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে এই সাহিত্য ক্ষেত্রেও কুরুচিশীল বিভিন্ন কবিতা, গল্প উপন্যাসের জন্ম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। আর দিনদিন সেসব কুরুচিপূর্ণ সাহিত্যের ছাপগুলো আমাদের পাঠ্যক্রমেও অর্ন্তভুক্ত করা হচ্ছে। যা আমাদের মনন, মেধা এবং চিন্তাকে নিম্নগামী করছে।

জাদুবিদ্যা [ Necromancies ] : 

আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু বলে ; খুব বেশি একটা দেরি নেই মানুষ উম্মুক্ত ভাবে জাদুবিদ্যা চর্চা করবে এবং তা সমাজের উপর প্রভাব ফেলবে।

নাস্তিকতাবাদ [ Atheism ] : 

এই শব্দটি একটি মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা এবং একই সাথে সীমালঙ্ঘনকারীদের একটি শব্দ। বর্তামানে এই শব্দের ধারকগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা সোস্যাল মিডিয়া, মাস মিডিয়া এবং বই লেখনীর মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে এবং ঈশ্বরবাদীদের নীতি নৈতিকতাকে ভূলন্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। 
সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই মানুষ হিসেবে আমরা উন্নত মস্তিষ্কের প্রাণী তাই আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো উন্নত হওয়া উচিত, অশ্লীল নয়। 
যে জিনিস সত্য তা ১০০ জন মানুষ মিথ্যা ঘোষণা করলেও তা সত্যই। এটাই সত্যের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

Comments

    Please login to post comment. Login