পোস্টস

নন ফিকশন

জাফরের মীরজাফরি

১৮ জুলাই ২০২৪

মিলু

মূল লেখক কৌশিক মজুমদার শুভ

শাবিপ্রবিতে আন্দোলনের সময় মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা 'আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ভালো নেই' থেকে কিছু লাইন উদ্ধৃত করছি-

"যতবড় পুলিশ বাহিনীই হোক তারা ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তালোর আগে একশবার চিন্তা করে। এখানে সেটা হয়নি, শটগান দিয়ে গুলি পর্যন্ত করা হয়েছে, বিষয়টি আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা। পুলিশের চৌদ্দ পুরুষের সৌভাগ্য যে সেই গুলিতে কেউ মারা যায়নি।"

 

আজ পুলিশের গুলিতে এতো জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও অগণিত আহত হওয়ার পরে ওনার বর্তমান অবস্থান আমরা দেখতেই পাচ্ছি। উনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে তাদের প্রতি যে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করেছেন সেই বিতৃষ্ণা তার প্রকাশ করা উচিত ছিলো ক্ষমতাসীন দলের উপরে। কেননা রাজাকার শব্দটির ক্রমাগত জায়গা বেজায়গায় অপব্যবহারের ফলে শব্দটি ক্রমাগত গুরুত্ব হারিয়ে একটি খেলো শব্দে পরিণত করেছে তারাই। অথচ তিনি শিক্ষার্থীদের স্লোগানের শানে নুজুল এড়িয়ে গেলেন(এড়িয়ে গেলেন কেন বললাম যে এই ব্যাপারটা একজন সাহিত্যিকের পক্ষে বোঝা কষ্টকর না যে বিষয়টা একটা আয়রোনি)। 

অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ বলতে একটা কথা আছে, যে রাজাকার শব্দটার প্রতি তার এতো ঘৃণা তার নিজের নানা ছিলেন একজন স্বীকৃত রাজাকার। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন ধরুন তার ভাই কিংবা মা তার রাজাকার নানাকে নিয়ে কিন্তু পজিটিভ ধারণা পোষণ করতেন। দুজনই তাদের লেখায় এ নিয়ে সাফাই গেয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদের ‘আমার আপন আঁধার’ থেকে কিছু লাইন উদ্ধৃত করছি- 

‘’আমাদের আশ্রয় সুরক্ষিত করার জন্যেই মিলিটারীদের সঙ্গে ভাব রাখা তিনি(নানা) প্রয়োজন মনে করেছিলেন।……………….শান্তি কমিটিতে থাকার কারণে মিলিটারীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কত মানুষের জীবন তিনি রক্ষা করেছেন সেই ইতিহাস আমি জানি….''

 

তার মা একটি বইয়ে লিখেছেন, "আমার বাবা স্বেচ্ছায় শান্তিবাহিনীতে যোগ দেননি, আমাদের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে যাবার তার কোনো জায়গা ছিল না, তাই সেনাবাহিনীর অশুভ শক্তির সামনে তাকে সেই কলঙ্কের টীকা পরে থাকতে পরে থাকতে হয়েছিল। তিনি সেনাবাহিনীর সাথে কোনো সহযোগিতা করেননি, বরং অসংখ্য মানুষকে তিনি প্রাণে রক্ষা করেছেন।….

তাই শুধু আমার বাবার জন্যে রয়েছে আমার বুকভরা ভালোবাসা।
কিন্তু যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল তাদের আর কারো জন্যে আমার কোনো ভালোবাসা নেই॥"

এইভাবে তারা শান্তিকমিটির নেতা দাদা ও বাপের পক্ষে বাজে অযুহাত দেখিয়েছিলেন। হয়তো রক্তের এই কালিমা ঢাকতেই রাজাকার, শান্তিবাহিনী এসব শব্দ আসলে ওনারা অন্যদের বেশি রিএক্ট করতেন, সম্ভবত নিজের বাতকর্মের দুর্গন্ধ ঢাকতে মানুষ যেমন অন্যের উপর চিল্লাপাল্লা করে ব্যাপারটা কিছুটা তেমনই। এবার আসা যাক তারা যেভাবে তার নানাকে পাকপবিত্র দাবী করছেন ব্যাপারটা কতটা সঠিক। গতিধারা প্রকাশনীর ‘নেত্রকোণা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’' বইয়ে লেখক বলেছেন- “মোহনগঞ্জ থানার প্রভাবশালী দালাল ছিল দৌলতপুর গ্রামের আবুল হোসেন শেখ(এই প্রথম নামটিই জাফর ইকবালের নানা), নুরুল ইসলাম ও বরিউল্লাহ।*****মোহনগঞ্জে উপর্যুক্ত দালালদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী অনেক হত্যাকান্ড ও অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছিল। মোহনগঞ্জ থেকে হানাদার বাহিনী পলায়ন করলে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ কয়েক জন দালাললে পিটিয়ে হত্যা করে। সেদিনের গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিল আবুল হোসেন শেখ(জাফর ইকবালের নানাজান), নজরুল শেখ, নুরুশেখ, আবদুল।”

শুধু তার নানাজানই নন তার পিতাকে নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি যখন পাকিস্তান সরকার অচল করতে অসহযোগী হয়ে অফিস আদালত বয়কট করেছিলো তখন তিনি(জাফর ইকবালের বাবা) পাক সরকারের প্রতি আনুগত্যসূচক অফিস করে যাচ্ছিলেন। এছাড়াও কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সমর্থ হলেও দুজনের কেউই যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হননি ইত্যাদি।

 

একটুখানি চিন্তা করলে মালুম করতে পারবেন জাফর ইকবাল স্যার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কতখানি আবেগী আর কতখানি আবেগী সেটা বিক্রির ব্যাপারে। আপনি নিশ্চয়ই জিনিসের দুর্নাম করবে এমন বিক্রেতার জিনিস কিনতে যাবেন না। সুতরাং, যে লোক মুক্তিযুদ্ধের বই লিখে টাকা আয় করেন, তার ব্যক্তিগত কেচ্ছা যদি আপনি ঘেটে এসব পান অথবা তাকে যদি আপনি মুক্তিযুদ্ধের সাথে দূরবর্তী ভাবতে শুরু করেন তাহলে তার বই আপনি কেন কিনতে যাবেন? যে লোকের দুধে ভেজাল তার ঘোল কেউ খাবে কেন? এটা আমার কাছে তাই একটা ব্যবসায়ী পলিসি মনে হয়। 

যাইহোক লেখার শেষের দিকে চলে এসেছি, এটা যেহেতু কোনো প্রবন্ধ না তাই ভনিতা করে শেষ করার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু যারা এই আন্দোলনে আছেন তাদের কাছে আবেদন আপনারা নিরাশ হবেন না, একজন লোক যার নিজেরই মোরালিটিতে ঘাটতি আছে তার একটা বক্তব্য নিয়ে আপনার নিরাশ হতে যাবেনই বা কেন? বরঞ্চ তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন আপনি আমাদের নেসিসিটি না, বরং আমরা না থাকলে আপনি অসহায়।