একবার পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে গেছেন স্বনামধন্য রম্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। তার মনে অনেক দিনের সাধ পুরীর জগন্নাথ দেবকে দর্শন করবেন।
মন্দিরের পুরুত মহাশয় জিজ্ঞেস করলেন- তোমার নাম কি বাবা?
উত্তর দিলেন- সৈয়দ মুজতবা আলী।
পুরুতের কাছ হতে উত্তর এলো- মন্দিরে তো বিধর্মীর প্রবেশ নিষেধ।
মনে মনে সৈয়দ মুজতবা বললেন, জগন্নাথ যদি সত্যিই ভগবান হন, তাহলে তাঁর কাছে পুরুতও যা, আমিও তো তাই।
তিনি সমুদ্র তীরে গিয়ে মাথা মুন্ডন করে তাতে টিকি রাখলেন। পৈতে ধারণ করলেন, গেরুয়া পরলেন। কপালে তিলক কাটলেন। হাতে কমন্ডুল ও পায়ে খড়ম। উনার গভীর সংস্কৃত জ্ঞান ও স্পষ্ট সংস্কৃত উচ্চারণ। গৌর বর্ণ, দীর্ঘদেহী, টিকলো নাকের মুজতবা ঘন্টা দুয়েক বাদে ঐ পোষাকে যখন সংস্কৃত শ্লোক আওড়াতে আওড়াতে পুরীর মন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন, পুরুতরা ভাবলেন যে, হিমালয় থেকে নিশ্চয়ই কোন মহাসাধক এসেছেন। তারা প্রায় পাঁজা কোল করে মুজতবাকে জগন্নাথের সামনে নিয়ে গেলো।
মুজতবা লিখেছেন- "আমার গায়ে চিমটি কেটে পুরুতরা যদি বুঝতে পারতো, আমি বামুন, কায়েত না মোসলমান, তাহলে বুঝতুম জাত-পাত- ধর্মের একটা মানে আছে। অথচ অদৃশ্য এই বস্তুটি নিয়ে আমাদের কত হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি চলছে, হয়তো চলবে।