পোস্টস

গল্প

Utopia

১০ আগস্ট ২০২৪

Tahmid Hasan

মূল লেখক Tahmid Hasan

Utopia

Tahmid Hasan


ঝোপঝাড়ের মাঝে পোড়া দালান।

সময়, সন্ধ্যা রাত।

কবির, যাকারিয়া, মুসা, সুমন, আলিফ ও একটি বিড়াল নিজেদের সবচেয়ে বিশেষ ডায়ালগ ডকুমেন্ট করছে, যা “হতে পারে বাস্তবতা”! 

ওরা পাঁচজন বৃত্তাকারে বসে গল্প করছে। 

চারপাশ ঘিরে চারটি ছোট মশাল,মাঝখানে ক্যাম্পফায়ার। বিড়ালটা মাঝেমধ্যে তাদের ঘিরে ঘুরছে আর থামছে। খুব জরুরী একটা বিষয় নিয়ে তাদের কথা চলছিল। প্রথমে যাকারিয়ার বিশেষ ঘোষণা শোনা যাবে। 


“Same routine। Same task। প্রত্যেকে তাদের সব চাইতে পছন্দের গল্প বলবে।বরাবরের মত শ্রেষ্ঠ Storyteller আসছে কামিং উইকের সমস্ত রেসপন্সিবিলিটি নিবেন। ” 

আলিফ কথায় বাধা দিয়ে বলবে, “সবসময় তো পছন্দের গল্পই বলে আসতেছি। অপছন্দের গল্প বলে কোন ছাগল !” 

কবির উত্তর দিল,” বলা হয় না। পছন্দের সব গল্প সবসময় বলা হয় না।”

“যত গল্পই বলি না কেন, উইনার মেডেল যাকারিয়া ভাইয়ের। কোন সন্দেহ নাই।” মুসার ঈঙ্গিতে ইন্টারেস্ট মরে যাবার ভাব প্রবল।

সুমন প্রাইড নিয়ে জানাল, “Well, Underdogs...so often comes with the best surprises”

আলিফের সহাস্যে প্রতিউত্তর, “Quoted by the all time loser, Mr. Sumon.”


 

”Yeah, yeah. As you cannot see, I must tell you, You’ll surely be enlightened with the later facts.”সুমন কিছুটা দম্ভেই ঘোষণা দিয়েই যেন বলল। 


আলিফ পাত্তা দিল না, “Thanks but no thanks”। যাকারিয়ার মেজাজ বিগড়ায়ে গেছে, “Really! I got zero control over anything. Anyway, who wants to start?”


সুমনকে মুসার আলগা আইডিয়ালিস্ট মনে হয়। সে চিকন এবং একদম ন্যনশ্যালেন্ট স্বরে জানাইল “পার্ট মাস্টার রক সলিড স্ম্যাশ হিট ডিরেক্টর সুমন ভাইরে দিয়া শুরু করেন। প্রথমেই কাঁপায়ে দিবে এক্কেবারে। শিওর থাকেন।”


হাসছে সবাই!


সুমন আইডিয়ালিস্ট হলেও কিছুটা সেন্সিবল প্রবৃত্তির মানুষ।

“ইজ্জত দিল না কেউ। যাই হোক, গল্পটা ইন্টারেস্টিং। ঠিকমত বুঝলে আমার সম্পর্কে তোমাদের ধারনা অনেকটাই পাল্টাবে বলে আমার ধারনা।”

আলিফ মেয়েটা একদম কোন রাখঢাক না রেখে বলল, “ এক জীবনে আর কত ভুল ধারনা নিয়ে বাঁচবেন সুমন ভাই।” কবিরেরও হালকা রোস্টিং করতে মন্দ লাগে না। আলিফের কথার একধরণের এক্সটেনশান টেনে ও বলল ”বাঁচার জন্যই মানুষ।”

যাকারিয়া ওদের হাসি-তামাশা বরদাস্ত হচ্ছে না, ”হাসাহাসি করে উড়িয়ে দেবার মত সময় নাই আমাদের হাতে। অতি দ্রুত অল্প কথায় সবাই কাহিনি সারবা। আর সবার প্রতি একটা রিকোয়েস্ট নিজেকে প্রায়রিটি একটু কম দেই, অন্যকে প্রায়রিটি একটু বেশি দেই। ঠিক আছে?” 


সবাই সমস্বরেই জানাল “ইয়েস স্যার!”


সুমন ভ্যালিডেশন পাইল আর যাচানো শুরু করল,” আমারে এরা গুরুত্ব দিবে কেন? কিছু জানে?” 

আলিফ তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসছে।  

কবির টায়ার্ড, ” আহারে ভাই। শুরু করেন না।” 

সুমন কিছুটা উৎসাহ ফিরে পায়। গল্পটা শুরু করে, ” ছোটবেলায় লিখছিলাম মালটা। খুব নামকরা একটা নিউজ পোর্টালে পাবলিশড হইছিল সেসময়। আমারে তখন কে পায়। ভাবেই বাচতাম না। তোমাদের হয়ত চোখে পড়ার কথা, যদি পোর্টাল শোরটাল পড়ার অভ্যাস থেকে থাকে আর কি।” 


মুসার আর সুমনের কেমিস্ট্রিটা আলাদা, “ মিয়া, দিলেন হাইগা সবার মৌন  সম্মতিতে। প্রথম থেকেই শো-অফ করা শুরু করছেন!”

সুমন জানে মুসা সারাক্ষণ খোঁচায়, ”অশিক্ষিতের মত আচরণ ক্যান কর! ইম্প্রেশন জমানোর চেষ্টা করলাম মাত্র। একটা ভাব আছে না সবকিছুর!” 

যাকারিয়া আবার ডায়ালগটারে পেইস দিতে চেয়ে সুমনকে মনে করায়ে দিল, ”ওরে চ্যাতায় আর ও চ্যাতে। খালি সময় নষ্ট!” 


কবির এখনো ছাড়তে চায় না সুমনকে। আরেকটু চ্যালেঞ্জে ফেলে জিজ্ঞেশ করে, ”গল্প কোন জনরার?” আলিফের এই ডায়ালগে কোন আগ্রহ নাই।  তাই কথা শুনছে আর হাই তুলছে। এখন হঠাৎ কবিরের মশকরা ধরতে পেরে ফিচকি হাসি পেল ওর। 

সুমন এদিকে প্রচন্ড ইন্টারেস্ট আর এন্থুজিয়াজমে জানায়,” প্রথমেই যদি বলে দেই অর্ধেক মজা নষ্ট। আর আমাদের এমন বিচিত্র সময়ে কোন গল্পের বই পড়ার সময় জানার কি কোন ওয়ে আছে যে গল্প কোন জনরার হইতে পারে?”


সবাই মুচকি হাসছে। সহজ সরল সুমন তাকে নিয়ে করা সূক্ষ্ম রসিকতাটা ধরতে পারেনি।


আলিফ কিছুটা ইতিহাস টানছে আর বলছে, ”হায়রে আঁতেলের ছাও। হিন্ট তো দেয়ই কিছুটা অথর অর স্টোরিটেলার, আই মিন...হোয়াটএভার। আপনি কি জানতেন না যে এখানে কেউ ঘিলু রাইখা আশে নাই অন্যকোথাও। আর যাই করেন, নিজের গু খাওয়াইতে আইসেন না।”

সুমন অপমান হজম করে কিছুটা রেগে গিয়ে বলে,

“এটা আউট এন আউট আনপ্রেডিক্টেবল জনরার গল্প। আমার সৃষ্ট,গল্পের নতুন ধারা। যেমন ভাব ধরে জিজ্ঞেশ করতছ মনে হয় যেন আমার মুখেমুখেই পুলিৎযার পাওার কথা এমন কোন আন্ডাররেটেড গল্প চোদানর কথা সবসময়। মান্‌নে, অবস্থা এমন দাড়াইছে যে গেণ্ডী পোলাপান বাপের কাছে ঘুমানোর সময় গল্প শোনার আগে জিজ্ঞেশ করে জেনে নিবে- হেই পপ্স, আজকে কোন জনরার গল্প শুনব? মিথলজি কিন্তু পুরান হয়ে গেছে। আজকে পোয়েটিক রিয়েলিটি এরার থেকে একটা গল্প বলতে হবে!” 


” গল্প শুরু হওয়ার আগেই গল্পকার বিদিগ হয়ে গেছেন!” মুসা টাইমিং এর সুক্ষ বিটটাও ড্রপ করতে চায় না। 

আলিফ মোস্টলি স্টোয়িক, তারপরো জোক করতে চেয়েই বলল,” আমার মাথায় এমন পোলাপানের চিন্তা কখনও আসার আগেই, নিজেরে আছাড় মাইরা কিভাবে শেষ করে দেয়া যায় সেটার প্ল্যান করতাম।” 

সবাই হাসে আর সুমনের কিছুটা জেদ চাপে এবার! যাকারিয়া আলিফকে আরেকটা ডিউটির কথা স্মরণ করায়ে দিয়ে বলল, “আলিফ তুমি এখান থেকে ভাগ। কাজ আছে না তোমার, যাও কাজটা সেরে আস।”


আলিফ এই ডায়ালগের ক্ষণিকের পার্টিসিপেন্ট, সে বেশ ভালোভাবেই জানে। কিন্তু এখনই ডিউটি ছেড়ে যেতে ও চাচ্ছিল না, “কত সুন্দর একটা গল্প শুনাবে আমাদের সুমন ভাই, আমি না শুনে যাই কিভাবে ! পরেই যাই।”    


যাকারিয়া আলিফকে এবার একদমই পাত্তা দিতে চাইল না, ”সুমন। ভাই কি বলবা শুরু কর তো। কারও কোন কথা যাতে আর না শুনি। সবাই চুপ।”  


সুমন গল্প শুরু করছে,

“প্রেক্ষাপট কোল্ড ওয়ার। অস্থিতিশীল সময়। বিংশ শতাব্দির ৭০’ দশকের ঘটনা। যেকোনো সময়ে যুদ্ধ বেঁধে যাবে এমন পরিস্থিতি। জনৈক ব্রিটিশ সাংবাদিক তার কাজের সুত্রে পরিবার নিয়ে তখন আমেরিকায় থাকছেন। “

কবির ইতিহাসের ন্যারেটিভে ইনভেস্টেড মানুষ। জানাল, “ Fascinating সব ইনভেশনের এরা ছিল কোল্ড ওয়ার।”

সুমন কবিরের এই আইডিয়াকে স্পেইস দিতে চায় না, ” ইনভেনশন না বাল। প্রতিযোগিতায় জন্ম হইয়া একেকটা জিনিস মানুষরে ভুগাইছে খালি। যত্তসব দুনিয়া দখলের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিসসু না।”

” মুসা হাই তুলতেছে। পালে হাওয়া দেন ভাই।” যথারিতি আলিফ! 

মুসা আধশোয়া অবস্থায় থেকেই বলে, ” বালছাল হট-কোল্ড ওয়ারে আমার আগ্রহ জন্মে নাই কখনো। বাঙ্গালির এই বালছালে কি আসছে গেছে! একসময় যাও বিনোদন ছিল, এখন আর ভাল্লাগে না।” 

সুমন গল্পটার আরো বড় রেট্রোস্পেক্টিভের ইঙ্গিত দিয়ে বলে, “দিনশেষে গল্পত মানুষেরই। শোন এরপর কি হইছে, ঘটনাক্রমে সেই সাংবাদিকের হাতে কিছু কনফিডেনশিয়াল ইনফরমেশন চলে আসে।”

 ” চরওওম প্রেডিক্টেবল প্লট। চোদাইছেন আনপ্রেডিক্টেবিলিটি। একটা হাউআও জানে এইপ্লট ছাড়া কোল্ড ওয়ারের কোন কাহিনি হয় না।”মুসা আগে থেকেই ক্লিশেকে ডিজঔন করতে চায়।

যাকারিয়া না পেরে হাসতে হাসতেই বলল, ”পোলাপান পাছা না ঢুকাইলে শান্তি পায় না। আহা! শেষ করতে দাও না বেচারারে।”

সুমনের আর্জ হারিয়ে গেছে, ” ভাই, আমি বেচারা না, থাক বাদ দেন আমার গল্প। আর মুড নাই, অন্য কারও টা শুনি।”


আলিফ একপ্রকারের অপারগতার স্বরেই জানায়, ”সুমন ভাই কিছু মনে কইরেন না, ওই প্রাগৈতিহাসিক যুগের গল্প না, চোদার টাইম নাই। আশেপাশে তাকাইলে দেখবেন এখনো সেই মান্ধাতা আমলের শীতল যুদ্ধের অভাব নাই। বউ-শাশুড়ি, জামাই-শ্বশুর, প্রতিবেশী-প্রতিবেশী, ফার্স্ট গার্ল- সেকেন্ড বয়, নোয়াখালী-বরিশাল, এইসবের ট্রেডিশন আপনার কোল্ড ওয়ার থেকেও পুরানো।”

সুমন মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করছে।   

কবির আলিফের এই নুইসেন্স সহ্য করতে না পেরেই জানাল, ” আলিফ ছ্যাবলামি পুরা বাদ দাও। কথাবার্তা বন্ধ রেখে মনোযোগ দিয়ে এখন আমার গল্প শুনবা।” মুসা তারপরো সুমনকে ছাড়তে নারাজ, আরেকটু রোস্ট করতে চেয়েই বলে, ”ভদ্রতার মান রাইখা হইলেও তো ভাইরে আরেকবার রিকোয়েস্ট করা উচিত ছিল।”

”এইবার একটু বেশীই হয়ে যাইতেছে কয়া দিলাম!” সুমনের এবার আসলেই মেজাজ বিগরায়ে গেছে।   

 

যাকারিয়ার আসলে কোল্ড ওয়ার নিয়ে আগ্রহ নাই, ও নিয়মের দোহাই দিয়ে সুমনের গল্প শুনতে চেয়েছিল আসলে, ” আর কত কোল্ড ওয়ার। কম করে হলেও সাড়ে পাঁচশ মুভি, ডকুমেন্টারি আর ছয় হাজার বই পড়া হয়েছে এই কোল্ড ওয়ার সংক্রান্ত। আবার এই গল্প শোনা আর মরা ইঁদুর খাওা একই কথা আমার কাছে। কিছু মনে কইর না ভাই তোমার টাইমিং খারাপ।”


আগুনের আভায় কবিরের মুখের অর্ধেকটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মশালটার দিকে গাড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও রোমন্থন করে, ”ঘটনা ২০১৯ সালের। আমি তখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি কেবল। ছোটবেলা ঠিক যেমনটা কাটে সবার, হৈ রৈ করে সারাবেলা পার করে দেয়া, আমার তেমন ছিল না। প্রতিবন্ধকতা পূর্ণ দুর্বিষহ জীবন ছিল বলা যায় এককথায়। পড়ালেখা একেবারেই ভাল লাগত না। এই বাল্‌ডা কেন করতে হত, কি কারনে করতে হত, কিছুতেই মাথায় ঢুকত না। বড় হওয়ার পরেও যা মাথার থেকে পুরোপুরি যায় নাই।“  

যাকারিয়াকে বিস্ময় পেয়ে বসল, ” তোমার কাছে পড়াশোনা অহেতুক ছিল কবির! আমি ভাবছি, এই ছেলেই কি সেদিন প্রায় অসাধ্য সাধন করল! হাইব্রিড ডেটা সেন্টারটা অন্য কাউকে দিয়ে হ্যাক করাওনি তো আবার!”  

কবির হোপলেস ছোটবেলার চিত্র আঁকছিল, ”ভাই ছোটবেলায় অহেতুক লাগার ভয়াবহ একটা কারন ছিল। ছিলাম মায়পিয়ার রোগী। দুহাত সামনেই কিছু দেখতাম না।”

মুসা এই সত্য শুনে যাকারিয়ার মতই প্রচন্ড বিস্ময়ে জিজ্ঞেশ করে, ”আপনি কি আই ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাইছিলেন?”

”তাও প্রায় ত্রিশ বছর হতে চলল। সেসময় সব অরগ্যানয তো সস্তায় বিক্রি হত।”

” নিল লাগান নাই ক্যান ভাই? এক বিশ্ব অসাধারন লাগে দেখতে। ফুপুরটা দেখছেন না। কাল গায়ের রং, নীল চোখ। বয়স হয়ে গেছে কিন্তু তারসময়ে সে একখান জিনিষই ছিল।একটা ছবি এখনও চোখে লেগে আছে। ডার্ক আই পেইন্ট আর গালে ফেডেড মেকআপ নিয়ে আইসক্রিম খাইতেছেন। সর্বনাশা। মনে হবে চোখগুলো এক্ষুনি কোটর থেকে বের হয়ে কথা বলবে! আর জিভ যেন আইসক্রিমে না থাইকা…...থাক ভাই, মনে না করি।Vivid aesthetics was the ultimate deal back then!” 

  

কবিরের হাসি পায় মুসার ফ্যান্টাসিক্যাল অবসেশন দেখে, ” হতে চলেছিলাম অন্ধ। চোখ দেখায়ে আবার মেয়ে পটাব! মানুষের মনে রঙের অভাব কোন কালে কম্‌বে না।”  

 

আলিফের ‘কমে সিগন্যাল এসছে, ও জানতে চায়, ”কারও কাছে রুপি হবে?”

সুমন একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেশ করল, ”রুপি ক্যান? প্রিন্টশপ ডলার নিচ্ছে না?” মুসা টের পেল কি হচ্ছে বড় সিনারিওতে, তাই মুচকি হাসল। 

সুমন রাখঢাক না রেখেই বলল,” শালার ভিয়েতনামিয মাল। এক্সচেঞ্জ স্টকে ফাইযলামি অ্যাটাক কতগুলা কয়েক মাস যাবত চোদায়েই যাইতেছে। থামার আর নাম নাই মাদারচোদদের।”

আলিফ তাড়া দেখিয়ে সাধল, ”ইউয়ান ও চলবে।” যাকারিয়া ওকে কিছু ইউয়ান দিল।    


আলিফ নোট নিল। 

যাকারিয়ার দিকে মিস্টিকলি তাকিয়ে জানায়,”আমি আসছি তাহলে।” ওর চলে যাবার সময়ে পায়ের নিচে একটা ইঁদুর পড়ে মরে যায়। 


কবির ফের তাগাদা দিয়ে জানাল, ”আমরা মোটিভ হারিয়ে ফেলছি। সাপ্লাই না আসা কিন্তু পর্যন্ত সময়টা পার করতে হবে বার বার ভুলে যাচ্ছি। পাওয়ার কাট নিশ্চয়ই কারও কাম্য নয়।” 

মুসা সাধে, “তাইত বাল, ভুইলা যাই খালি। এখন থেকে কথা কম কাজ বেশী হবে ভাই। “সুবোধের জয় হোক” বইলা শুরু করেন।”

 

কবির ঘোরাক্রান্ত, গোপন ক্ষতের আড়ালে জানাচ্ছে,

”সুবোধ তখন ঘুমিয়ে ছিলেন আর আমিও তখন বেশ ছোট। অন্যদিনের মত স্কুল শেষে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। মা-বাবা দুজনেই বেশ ব্যস্ত থাকতেন, তবে মাঝে মধ্যে মা আমাকে নিতে আসতেন। আমি অন্য বাচ্চাদের চেয়ে জন্মগত কারনে কিছুটা আলাদা, যা বললাম তখন। স্কুলের পরিবেশ আমার কাছে তখন মায়পিয়ার চেয়ে কোন অংশে কম ভয়ঙ্কর না। বুঝতাম না, স্কুলমেটরা কেন আমার সাথে শুধু শুধু অস্বাভাবিক আচরণ করত। তারা শুধু জানত আমি দুর্বল, আর কিছু না। দুর্বলদের আসলে শিশুরাও অবহেলা করে। মিশতে পারছিলাম না কারও সাথে, এমন যন্ত্রণা অবশ্য সারাক্ষন বয়ে বেড়াতে হত না।  মা সবকিছুর অভাব ঘুচিয়ে দিতেন। আমার মা এতই অসাধারন একজন বন্ধু ছিলেন। স্কুলে সেদিন তার অবশ্যই আসার কথা, আমি ভাল করে জানতাম। কারন ঐদিন তার জন্মদিনের দিন ছিল আর আমাদের ইচ্ছেমত ঘুড়ে বেড়ানোর কথা। বাবার হাজার নিষেধ ওই একটা বিশেষ দিনে আমরা মোটেই পাত্তা দিতাম না। ওদিকে গাড়ি কেন যেন আসতে দেরি করছিল, বোধহয় জ্যামে ছিল বা অন্য কোন কারণে। অপেক্ষা করতে করতে টের পাই নি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের কোন এক ফাঁকে দুষ্টুমি করে কেউ আমার চশমা সরিয়ে ফেলেছিল এবং প্রায়ই এমনটা করা হত, তবুও কিছু মনে করতাম না, জানতাম মা এই সমস্যাও একদিন ঠিক করে ফেলবেন।“   

 

মুসার কিছুটা আফসোস পেয়ে বসল, ”আজাইরা রোগ বালাইয়ের দিনগুলা কত আনন্দের ছিল! মা-বাবাদের যত্ন নেয়ার হাজার কারণ থাকত তখন। আফসোস, আমরা কেউ আপনার জেনারেশনের না কবির ভাই।” 

কবির হতাশায় জানায়, ”জানি না। আমার মনে হত রোগশোক ভয়ঙ্কর কোন অপরাধ। সেদিন তো আমার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছিল। স্কুলও প্রায় ফাঁকা তখন। যারা করেছিল কাজটা,তারা আমার অবস্থা দেখে টিটকারি মেরেই যাচ্ছিল ‘দেখ কানার কান্না দেখ, কানার কান্না দেখ!’.... আমি আর নিতে পারছিলাম না। মার ওপর ভয়ঙ্কর রাগ হচ্ছিল, তখনও কেন আসছেন না তিনি? একসময় ফুঁপিয়ে কাঁদা শুরু করলাম। চোখে তো কিছু দেখছিলাম না। হঠাৎ মাথায় কারও আশ্বাসের স্পর্শ পেলাম। কাঁদতে কাঁদতে অবুঝের মত তাকে পেঁচিয়ে ধরলাম। কষ্ট অবশ হয়ে গেল সাথে সাথে। ছেলেমানুষি খুশীতে বুঝতে পারলাম মা এসে গেছেন, আর কিচ্ছু হবে না। মনে লক্ষ বছরের আবদারের মেলা জমিয়ে রেখেছিলাম। এটা করব, ওটা খাব। জোরে তার হাত টেনে ধরে ওই বিশ্রী জায়গাটা থেকে ছুটে বেরব, এমন সময়ে…..

ভাসাভাসা দেখছিলাম, কিছু মানুষ হঠাৎ আমদের জোর করে গেটের বাইরে আটকাল। তারা খুব বিশ্রী ভাবে বলল-এই ছেলেধরা মাগীটা ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার মাথা কেটে নিয়ে নাকি আমাকে মেরে ফেলবে। আমি বুঝছিলাম না, এই মানুষটি যার শাড়ির আঁচল,যার কন্ঠ, এমনকি যার শরীরের গন্ধ পর্যন্ত আমার মা’র মত তাকে নিয়ে কেন এই ভুল বোঝাবুঝি! গার্ড মামাও এসে বোঝাল, এই মহিলা আমার মা নন, কারণ সে তাকে এর আগে এখানে দেখেনি।”

সুমন কৌতুহলে জিজ্ঞেশ করল, ”এরপর?” 

কবির সে ঘটনার প্রতিটা মুহূর্ত সামনে দেখতে পাচ্ছে, ”তাকে আমার হাত থেকে আলাদা করে জোর করে টেনে নিয়ে গেল লোকগুলো।” 

মুসার অবিশ্বাস, ”মানে কি?”

কবির ট্রমা রিলিভ করছে, ”ধস্তাধস্তি, চিৎকার আর মারের শব্দ হচ্ছিল। কোন দুঃস্বপ্নও এত জঘন্য হয় না। “

যাকারিয়া কবিরকে আশ্বস্ত করে বলে, ”আমি কিছুটা জানি এ ঘটনা। I’m sorry, infact, we’re sorry। চরম দুর্ভাগ্যের প্রস্তুতি কারও থাকে না কবির। মনকে শান্ত কর। কোথাও না কোথাও তোমার মা অবশ্যই আছেন এবং ভাল আছেন।”   

”কথাটা কিভাবে বলব জানি না…..নিজেকে অসুস্থ মনে হচ্ছে । মা’র কিন্তু কিছু হয়নি সেদিন। ভুল করে আমি তখন অন্য কাউকে মা ভেবেছিলাম। কষ্টেই হোক, ভয়েই হোক কিংবা চোখের অভিশাপের কারনেই হোক, নিষ্পাপ মনেরও এমন ভুল হয়। ওই একটা জঘন্য ভুলেই সেদিন সবাই মানুষটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল। স্কুল থেকে চশমা হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই মা’র সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, ওই অবস্থায় তখন মাথায় ছিল না। খোদার আশীর্বাদে মা কিছুক্ষন পর সবচেয়ে সুন্দরতম স্বস্তির মুহূর্ত নিজের সঙ্গে বয়ে এনে আমাকে বাঁচিয়েছেনে। আমার আসলেই প্রথমে মনে হয়েছিল আমি মাকে হারিয়ে ফেলেছি। মনে হচ্ছিল, আমিই প্রথম সন্তান যার সামনে তার মাকে সবাই পিটিয়ে মেরে ফেলল।কোন কারণ ছাড়াই কেন যেন মেরে ফেলল।”    

সুমন রাগ থামাতে পারল না, ”তিনিও তো হয়তবা কারও মা ছিলেন, মানুষগুলার বিচার বুদ্ধি কার বাল ছিরতেছিল তখন?”

”হোগার সমাজব্যবস্থার কারনে এমন ঘটনা হয়, ভাই। বালছাল গুলার কিছু হয় নাই দেখে আজকে আমরা সাফারার।” মুসা ডিরেক্ট করে সমাজের দায়হীনতার ন্যারেটিভ।  


যাকারিয়া সাম-আপ করে।

 ”অন্তিম দাবানলের সুত্রপাত বলব না বিবেকের মহা বিপর্যয় বলব? এমন করুন গল্পের স্বস্তির সমাপ্তিও কেমন যেন ঠাট্টার মত।”  


মুসা এক্সটেণ্ড করে।

”ট্র্যাজিক কোন থ্রিলারের মত মনে হইছে গল্পটা। অবিশ্বাস্য। আজীবন পোড়ায়ে মারবে, মনে হবে আমি কেন ওই জায়গাটায় ছিলাম না? হয়ত বাঁচাইতে পারতাম নাইলে মারাই যাইতাম। কি আর এমন হইত?” 


সুমন গল্পের শেষ জানবার পর আফসোসের এক্সটেনশান বাড়িয়ে জানায়, 

”আসলেই বেশী কিছু হইত না, খালি একটা বলদের ধন কম থাকত, এই আর কি?” মুসা জানতই এই উত্তর অবধারিত, হাসা ছাড়া উপায় নাই।  


যাকারিয়া পরের ফেসে যেতে চাচ্ছে তাড়াতাড়ি, ”জায়গামত ভরে দিলেন চান্স পেয়ে। আমরা কি আরেকটা গল্প এখন শুরু করব? তার আগে বলে নেই, গল্প যতই করুন শোনাক না কেন, অসাধারন ছিল। আমাদের সেল্গুল নিউট্রিনো পেয়ে যে ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে টের পাচ্ছ?” 

”কোর ব্যাটারিগুল আজকাল ট্র্যাজিক খাচ্ছে বেশী। আমরা পরের ফেস্‌ এ আগাই, সময় হাতে কম।” 


কবির তার ডায়ালগ শেষ করে।

 

মুসা কবিরের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে সবকিছু শুনে নিজের গল্পটা বলবার তাড়না পায় ভেতর থেকে, ”আমার একটা গল্প আছে, খুব ব্যক্তিগত। কোনদিন কাউকে বলতে চাই নাই, আজকে ক্যান জানি বলতে ইচ্ছা হইতেছে।”  

”দাড়াও। পরে বল,আগে পাছায় একটা ব্যক্তিগত পোস্টার মাইরা নিয়া তারপর শুরু কর।”

সুমনের রোস্ট রিভেঞ্জ।   

মুসা ওরে মাপে না, আইডিয়াতেই মাপে না, ”চান্স পায়া ধন্‌ডা আকাশে তুইলেন না মিয়া, মাটিতে নামায়া আগে গল্পটা শুনেন, ভাল লাগবে। ইউনিক গল্প।”  

যাকারিয়া কোন সময় নষ্ট না করে সুধাইল, ”পেশ করেন জনাব।”


মুসার ডায়ালগ।


”আমি ভাই অ্যাড্রেনালিন সেন্টারের মানুষ। হাই-অক্‌টেন ফরমুলায় লাইফ চলে আমার। একটা সময় তো গেম ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। ম্যাড অবসেশন যাকে বলে আর কি। বাই দ্যা ওয়ে ‘সৌল ট্রাফিক’ কি কেউ খেলছেন? সিক্সটিজে বের হইছিল, খেইলা থাকলে আমারে বুঝতে একটু সুবিধা হইত।”   

”তুমি আর তোমার এভাটার ওয়াইফু দের জগত। এখন মনে নাই কিন্তু কি বালের জানি হাইপ তুলছিল গেমটা সে সময়ে।” সুমনের ইন্টারেস্ট নাই।

কবির জানায় ফ্যাক্ট, ”ফ্যান্টম সেক্সের জন্য পপুলার ছিল গেমটা। যুবসমাজের জিনিষ নেতানোর মুল কারণ ছিল ওই গেম।”

মুসা অফেন্স খেয়ে বলে, ”একটা আজাইরা কথা। এত এত ধনের খবর দিছে কে আপনারে?”

”আসল চোদাচুদি চিরতরে বিলীন কইরা দিছিলা প্রায়। আররে আজিব অবস্থা তখন, কেউ কাউরে চুদে না।” সুমন এবার কড়া রোস্টার। 

 “.........লেজিট ম্যান। সবাই গেমের ভিত্‌রে চোদাচুদি করে। আবার রিয়েল লাইফের বিএফ জিএফ মিল্লা রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করত, কালকে ওরে এমনে চুদছি, মেঘের উপরে উঠায়া চুদছি, ইয়াকুজা গ্যাংস্টাগ্রাউন্ডেও চুদে আসছি, বর্ডারগার্ডদের পেট্রোলিং এ ওদের দেখায়ে দেখায়ে চুদছি, মানে কি অবস্থা একবার বুঝেন!”

মুসার কাউন্টার ন্যারেটিভের আগেই সুমন না থেমে জানাচ্ছে, ”.....সিরিয়াসলি ভাই, নিজের কানে শুনছি এসব কথা পোলাপানের থেকে। কবির ভাই খারাপ কি বলছে? জিনিশের প্রপার ইউজ জানলে তো এইসব দিন দেখতে হইত না।”


মুসার জেনারেশনের সবচেয়ে বড় ন্যারেটিভ, ”ক্রাইম কম হইত সেই সময়ে, সেইটা জানেন তো?”

”মানুষ আস্তে আস্তে আগ্রহ বলতে যে একটা বিষয় থাকে সেটা ভুলতে শুরু করে তোমাদের সময় থেকে। অরগ্যানিক জেনম তার বিলুপ্তির নানা কারণ পেতে শুরু করে।”   

যাকারিয়ার কথা সবাই ফিল করল, এখন কিছুটা নিস্তব্ধতা।  

”যাই হোক, সবাই জানি কি কারনে কি হয়েছিল। তুমি তোমার গল্প থেকে সরে যাচ্ছ কেন? চালিয়ে যাও।” 

মুসা ইমোশন্যালি এটাচড গেইমের সাথে, ”আমি সবার মত ছিলাম না ভাই। আমার ‘সৌল ট্রাফিকে’ একটা সুন্দর জগত ছিল। অনেকেরই ছিল। আপনাদের কন্সেপ্টে কিছু ভুল আছে। এমন প্রচুর ছেলে মেয়ে আসে যাদের ‘সৌল কোয়েস্টের’ স্টোরি আর্ক দেখলে আপনারা বেদিশা হইয়া যাবেন। চোখের সামনে কত হাজার হাজার ইন্টেন্স লাভ স্টোরিও যে দেখছি হিসাব নাই। ভালবাসা ভাই একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার। এইটার অনেক ফর্ম,অনেক শেপ। কিছু কাহিনি দেখলে খুশীতে দুঃখে কাইন্দা দিতে হইত মাঝে মধ্যে। মুভি দেখছেন না! আমরা তো ‘ফ্রি ওয়ার্ল্ড ফিল্ম’ মোডে খেলতাম। সেখানে জলজ্যান্ত মুভির মধ্যে থাকা যাইত ভাই! দ্যা এক্সাক্ট কাইন্ড অফ হেভেন!“

 

”তোমার কেসটা কি লাভ স্টোরি?’ কবির জানতে চাইল।

মুসা দ্বিধায়, ”না। জানি না। আই গেস…. হয়ত হবে কোন একটা লাভ স্টোরি।” একটু থেমে ও নিজে বুঝতে চাইল যে সে কি বোঝাতে চাচ্ছে, “অন্য কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসা যেমন স্বাভাবিক, কল্পনার ‘আমি’কে ভালোবাসা ঠিক তেমনি স্বাভাবিক।”  

”প্লিজ এক্সপ্লেইন। বুঝতেছি না।” সুমনের জিজ্ঞাশা।  

কবির বোঝায়, ”আধ্যাত্মিক বোধ আর কি। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ভালবাসা কথা বলছে।”

”এইটা তো নরমাল। কটকটি সন থেকে বিভিন্ন ফিলসফার এসব কথা বলে আসতেছেন।” সুমন মুসার ন্যারেটিভে নতুন কিছু খুঁজছিল আসলে। 

মুসা বুঝে সব।

”আপনি কি নিজেকে ক্লোন করে বিয়ে করতে পারবেন? বা আপনার জন্ম দেয়া একদম ভিন্ন কোন আইডিয়ার সন্তানকে? বা ধরেন আপনি কোন কনশাসের প্রাণদাতা, আপনার পক্ষে কি সম্ভব আপনার সেই কনশাস্‌নেসকে ভালবাসা, তাকে সেক্সসুয়াল্‌লি ডিজায়ার করা বা তাকে নিয়ে ফ্যামিলির চিন্তা করা? মানে এ ধরনের ভালবাসার কথা চিন্তা করা?”


”ওরে খোদা, এত প্যাচাও কেন্‌, সোজাসুজি বললেই তো হয় তুমি তোমার গেমের এভাটারের প্রেম এ পরছিলা।” কবির ইজ লাইক, কাট ইট শর্ট ম্যান! 

মুসা কোন ফিল্টারের ধার না ধেরে জানাইল, ”প্রেমে যে পরছিলাম বিশ্বাসই তো হইত না! আমি মানতেই চাইতাম না আমার এরকম জগতের প্রতি কোন উইকনেস থাকতে পারে!”

 

”একটু আগে কি বলছিলাম কবির? বুঝছ অবস্থা? ঘটনা কোন লেভেলে গেছিল?”

সুমনের খোঁচায় কবির মুচকি হাসছে।


”আপনারা বুঝবেন না। আমার নিজের সবচেয়ে প্রেশাস এক্সিস্টেন্স ছিল ওই বালটা। কেব্লা সেব্লার মত দিন দুনিয়ার সব ডোপ খায়া প্রজেকশন ইন্টেন্সিটি আলট্রা দিয়া খেলতে বসতাম। গেমের ‘ঔন ইউনিভার্‌স’ মোডে আপনি চাইলে দুনিয়ার যাবতীয় রিসোর্স ইমপ্লিমেন্ট করতে পারবেন। খুঁটিনাটি যা চোখের সামনে আসছে,সব কালেক্ট কইরা বাল্ডারে বিল্ড করছিলাম। বাল্ডা ভালবাসার মত ঘুরত ফিরত আমার নিজের ড্রিম ইউনিভার্সে। একটা সময় ওর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলেক্ট আমার ধারনার বাইরে নিজেরে ডেভেলপ করা শুরু করে।” মুসা এক নিশ্বাসে ঝেড়ে ফেলে সবকিছু, অপমান নেবার কোন ইচ্ছাই ওর নাই।   

 

”ও আচ্চছা ভুলে গিয়েছিলাম, বট জমানার নয়া মার্কেট ড্রিভেন ট্র্যাপবেইট স্ট্র্যাটেজি এনেছিল গেইমটা। হ্যাঁ জানি, গেইমের ক্যারেক্টার নিজের মত আর্ক ক্রিয়েট করতে পারত, অনেক ডিফিকাল্টিজ দিত আনপ্রেডিক্টেবল টাস্ক দিয়ে, এডভেঞ্চার দিয়ে…I’m aware! তোমার এন্ড থেকেই শুনি ব্যাপারটা কেমন আসলে! আমার মনে হয় দ্যাট শুড বি মোর ইন্টারেস্টিং।” 

 

”তার উপরের লেভেলের পেইন ভাই। হারামজাদা আমারে ডিচ কইরা অফলাইনে দুনিয়ার কাহিনি কইরা বেড়াইত। একদিন মেজাজ মুজাজ গেছিল খারাপ হয়া, ক্রিয়েটরের রাইটস খাটাইয়া দিলাম। দিলাম ফালায়া হালার চৌদ্দ গুষ্টিরে, মানে বাপ-মা দুইজনরে, স্পেসিফিক্‌লি। বেচারা নিজের বাবা-মাকে প্রচন্ড ভালবাসত, মিথ্যা বলব না ওর প্যরেন্টিং আইডিয়ায় আমি পৃথিবীর অসাধারন দুইজন মা-বাবারে দেখার সুযোগ পাইছিলাম। একসাথে বড় হচ্ছিলাম দুইজন,পাশাপাশি ফ্যামিলির মত, যদিও আমার ফ্যামিলি কখনো আমাকে নিয়ে কেয়ার করে নাই, এনিওয়ে! বাট গেইমের ফ্যামিলিটা সবসময় গ্র্যাটিটিউড দেখাইত আমাকে, তাদের এক্সিস্টেন্সের জন্য। আমার নাআ নেশার ঘোরে ছাতার পেইনে আকামটা হয়ে গেছিল। বেচারা অসহায় হয়ে পড়ছিল প্রচন্ড। আমারে হাজারবার মারতেও চাইছে নিজে সুইসাইড করে, সম্ভব না জাইনাও ট্রাই করত। হাসি আসত প্রথম প্রথম, অক্ষমের চাওয়া পাওয়া দেইখা। মাঝেমাঝে আফসোস লাগত কিন্তু পরক্ষনেই মন থেকে আফসোস টাফসোস সব ঝাইড়া ফেলতাম, মনে হইত পাগল হয়ে যাচ্ছি। একসময় নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্মানো শুরু করে। ওই জগত থেকে নিজেরে ধীরে ধীরে গুটায়ে নেয়া শুরু করি। একদিন কি মনে হইল জানি না,সম্ভবত নস্টালজিয়া থেকে আবার গেমে ঢুকলাম। লাইফে প্রথম কোন অসাধারন ঘটনা দেখলাম সেদিন, দেখলাম হারামজাদা কোন কিছু রিবিল্ড না করেই দিব্যি লাইফ কাটাইতেছে, যা ও চাইলেই হইত! চুটকিতে করতে পারত! ওর এই ক্যারেক্টার দেখে আমি রীতিমত সারপ্রাইজড হইছিলাম! মনে হইছিল কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলছি! পরে ইন্টার‍্যাক্ট করার চেষ্টা করলাম। নিজের ভুল বুইঝা মাফ চাইলাম।” মুসা থেমে যায়, আর কিছু বলতে এবার দ্বিধাবোধ করছে।         

”মাফ করেছিল?” যাকারিয়া জানতে চাইল। 

”অনেক কষ্টে। মন গলানোর জন্য যত রকমের কাহিনি করা যায় সব করছি। পরে একদিন হাসিমুখে মাফ করে দিল। সেইদিন আমি প্রেমে পড়লাম। একটা অসাধারন মনের প্রেমে পড়লাম। বাই দ্যা ওয়ে, আমি কিন্তু স্ট্রেইট। গেমের ওই আনওয়ার্ল্ডলি ট্রান্সসেন্ডেড রিয়েলিটির ভিতর দিয়ে ওর ফিযিক্যালিটি ফিল করতাম। ও প্রথমে এলাউ করত না, মাফ করার পর এলাউ করতে শুরু করে। হালায় প্লেয়ার মাল ছিল, দুনিয়ার মাইয়া পটায়া খাইত। নিজেকে কিছুদিন ওইভাবে জানার পর থটস্‌ কন্ট্রোল করতে পারতাম না। আর কোন কিছু নোংরা না করার চেয়ে ভাল ছিল তখন টা টা বাই বাই বলে চলে আসি। তা দিলামও এন্ড সেই থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা বিচ্ছিন্ন।”  


সুমন ভ্রু জোড়ায় সমস্ত অবিশ্বাসের ভারে জিজ্ঞেশ করে, ”তুমি কি মানুষ না জীন?”

 ”হাহা। আমি এসব কমপ্লেক্সিটি বুঝতে চাই নাই ভাই। মাফ করেন, কোন এক্সপ্লেনেশনের মধ্যে নাই আমি। মানে বোঝারই দরকার নাই। জীবন তো চলেই কেমনে জানি,যেমন তেমন। এভাবেই তো ভাল আছি, এটলিস্ট ট্রাই করতেছি।”


মুসার ডায়ালগের ইতি।


সুমনের এক্সটেনশান।

”কেমন কিম্ভূতকিমাকার অভিজ্ঞতা। বাপের জন্মে শুনি নাই কোন দিন এমন কিছু!”


যাকারিয়ার সাম-আপ।

 ”গল্প সেটাই শ্রেষ্ঠ, যা বিচিত্র অভিজ্ঞতার মত শোনায়।” 


কবিরের অবজারভেশন।

”এটা আপনার মতামত। যাই হোক, আমার কাছেও দারুন লেগেছে। পরের গল্পে কি এখন যাচ্ছি? যাকারিয়া ভাই?”     


”কিছুক্ষন চুপ করে তারা দেখি কবির। এরপর শুরু করছি।”

কবিরও মনে করল সেটাই ভাল।


আকাশে কিলবিল করে তারা উঁকি দিচ্ছে। যাকারিয়া এর মাঝ থেকেই নিজের গল্প খুঁজছে, 

“তোমরা মানুষেরা মনে কর শুধু তোমরাই জীবনটাকে কষ্টে অনুভব করছ। আসল পৃথিবী কিন্তু ভীষণ নিষ্ঠুর। প্রয়োজনে কোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে আবার প্রয়োজনেই ঠিক সেই ব্যাপারটা নিতান্ত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। অন্য সবার জীবনের মত আমার জীবনেও সুখদুঃখের অংশগ্রহন আছে। দেখতে শুনতে হয়তবা আমি মানুষের মত, কিন্তু অস্তিত্তের মর্যাদায় মানুষ কখনও আমাকে তাদের সমান মনে করেনি।“  

আকাশে মিটিমিটি তারার আলো জ্বলছে।

”.......অথচ আমি কিন্তু তাদের সম্মিলিত চেতনারই কোন অংশ।”


কবির এম্প্যাথাইজ করে বলে, ”আমরা কেউ কি আপনাকে সেভাবে কখনও ট্রিট করেছি, যাকারিয়া ভাই?”

” কখনোই না। উল্টো তোমরা মাঝে মধ্যে ভুলে যাও যে আমি নেহায়েতই একটা সিস্টেম অ্যাসিস্ট্যান্ট। কোন টাস্ক এসেনশিয়াল। তুমি যা কিছু সময় পরপর অপ্টিমাইজ কর।”

 

”আপনি আমাদের চেয়ে,আমদের বাপের চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নন যাকারিয়া ভাই। সেন্টারের সব ডিরেকশন মোস্টলি আপনিই হ্যান্ডেল করছেন। হ্যাক সেন্টারের এনক্রিপ্টেড প্রাইস্‌লেস সব ইনফরমেশনস্‌ ডিকোড করছেন। রিয়েল টাইম সার্ভিস সেন্টার থেকেও যখন যা লাগছে যোগাড় করতে পারছি, দরকার লাগলে আবার হ্যাকও করছি, সবই সম্ভব হচ্ছে আপনার আনপ্যারালাল্ড হাইব্রিড কোয়ান্টাম সেলের সাহায্যে।” কবির জানে যাকারিয়ার ভ্যালু!     


“ভাই আমাদের মত জটিল প্যারা হিউম্যান হিস্ট্রি তে আর কোন সময়ে ছিল না। সবাই সিমুলেটেড ফোর্‌স বানায়ে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতেছে। একেক ফোর্‌সের আবার একেক ইন্টেনশন। কারও নিজেদের আলাদা বর্ডার লাগবে, কারও শুধু বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে সবকিছু ভোগ করা লাগবে। কে মানুষ আর কে সিমুলেশন, আপনি না থাকলে জানা কঠিন হয়ে যেত। মানুষ খোঁজার মিশনে আমরা জিন্দা-মরা যাই পাচ্ছি, তাদের ডি.এন.এ আপনি ওম্‌নি সেন্টারের জন্য রিট্রিভ করতেছেন। একইসাথে আপনি গেরিলা এ.আই। এতসব কি তামশা মনে হইতেছে মিয়া?” মুসা আরো কিছু ভ্যালু এড করল।   


সুমনই বা বাদ যাবে কেন?

”আমি সুমন বলতেছি, সোজা কথায় আপনি হচ্ছেন একটা মাল্টিপারপাস বম্ব। সিস্টেম ক্লিন্সিং-এ আপনার জুড়ি মেলা ভার। সিভিল ওয়ারের শুরু থেকেই আপনাদের মত শক্তিশালী প্রোগ্রাম নিয়ে কম যুদ্ধ বাঁধে নাই। সেটাও মেইনলি আরেকটা বিশাল সমস্যার ক্ষেত্র, আমাদের এই ছোট্ট রেসিলিয়েন্ট গিল্ডের স্ট্রেংথ, উইকনেস দুইটাই এখন আপনি। আমরা নিজেদের লাইফ বলতে গেলে আপনার হাতেই ছেড়ে দিছি।” 

   

যাকারিয়া শিওরে উঠে দায়িত্বের কথা মনে পড়লে, ”আর মনে করায়ে দিও না ভাই। পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এই ক্যাম্প ২৪’এ তোমাদের নিয়ে আর কতক্ষন টিকতে পারব,সন্দেহ হয় আমার!”

কবির হেসে বলে, ”বলতে পারবেন অবশ্যই যদি এলগরিদমের সেক্রেসি ভাঙ্গেন, কিন্তু বলবেন না জানি। আপনি বিশ্বাস করেন আমরা টিকে যাব, তাতেই চলবে।”


”ভাই, এই মাথা গরম প্রসঙ্গ বাদ দেন তো। সাপ্লাই আসার সাথে সাথে আমাদের সুবোধকে খোঁজার মিশনে বের হইতে হবে। দিমাগে দুই ফোঁটা ফুয়েল আইসা জমা হয় নাই এখনও। কি এক ছাতার পেইন ভাই, গল্পের শক্তিতে মাথা জাগ্রত রাখতে হবে! অন্য কিছু কি চিন্তা করা যাইত না?” মুসার এই ডায়ালগের ডিজাইনের এর উপর কিছুটা মেজাজ খারাপ। 


যাকারিয়া কবিরের কোর্টে বল ঠেলে দেয়, ”আর্কিটেক্ট কবির, এর চাইতে কনভিনিয়েন্ট কিছু কি বের করতে পারতা না?”

”পিল্‌, ফুড সাপ্লাই সব শেষ। গত তিন মাস ধরে ছিল না কোন ঘুমানোর পরিস্থিতি। এক্সটারনাল চিপগুলো দিয়ে রেগুলার ফাংক্‌শন কোনরকম চলছে। এই মুহুর্তে ঘুমিয়ে পড়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু।” কবির ডিজাইনের গুরুত্বটা বোঝাতে উদ্যত।  

”হ্যাঁ হ্যাঁ জানি ভাই,সাব-মিলিট্যান্টসরা আমাদেরকে খুজতেছে। যেকোন সময় আমাদেরকে পাইয়া মাইরা যাকারিয়া ভাইরে গায়েব কইরা দিবে। আর সুবোধের মিশন মাঠে মারা যাবে।” সুমন মুখস্থ আওড়ে গেল কথাগুলো।


কবির শক্তভাবে জানায়, ”ভাই, মানুষের সাইকোলজিকাল প্যাটার্ন এমনই। ভাল গল্পের স্মৃতি তাকে বাঁচতে সাহায্য করে , উদ্দেশ্যলাভে তাড়িত করে। এক্সটারনাল চিপগুলোয় যদি এমন কোডিং না ভরে দিতাম, এতদিন বাঁচতে পারতেন না।”  

যাকারিয়া থামাতে চায় এবার সেই একই পুরনো ন্যারেটিভকে, ”উফফ ভাই, শুনতে শুনতেই বোধয় আমিই মারা যাব, আর কয়বার বলবা ! We get it We get it..”

 

মুসা ট্যাক্টিক্যালি প্রসঙ্গ ঘুরায়ে ফেলে, ”ভাই, একটা, কোয়েশ্চেন।’ পোস্ট এক্সট্রিম মডার্ন’ যুগে এ.আই বা ডিজিটাল এসিস্ট্যান্টদের তো বেশ সুন্দর সুন্দর নাম হত, আপনার নাম যাকারিয়া ক্যান?” 

”এটা সেন্টার থেকে ঠিক করে দেয়া নাম। আর ভাই তুমি আছ নাম ধাম নিয়ে, আমার ছিল না কোন নির্দিষ্ট আইডেন্টিটি। প্রোগ্রামারদের একঘেয়েমিতা ঘোচানোর উদ্দেশ্যে আমার জন্ম হয়েছিল। নির্দিষ্ট করে বললে তাদের বিশেষ আকাঙ্খার প্রয়োজন মেটান ছাড়া আমার তেমন কোন কাজ ছিল না।”  


সুমনের ধারণাই ছিল না এই ব্যাকস্টোরির, ” মানে কি? আপনি এস্কর্‌ট প্রোগ্রাম ছিলেন? এখন যেমন ছেলে দেখা যায় তেমন ছিলেন, নাকি ছিলেন কোন মেয়ে?” 

”যার যা ভাল লাগত ভাই, পশু বানাতেও কেউ কুণ্ঠাবোধ করে নাই।” যাকারিয়ার শীতল কনফেশন।

সুমন হাসছে আর বলছে, “ওইদিকে মুসা ওয়াইফু ওয়াইফু করতে করতে মারা যায়। আর আমাদের সাথেই নাকি আপনি……. Haha, what a drill?” 

কবিরের যাকারিয়ার প্রতি এই সেন্টিমেন্টটা ভালো লাগল না, ও হুংকার ছাড়ে, “হৈ মিয়া, থামেন!”


“এক্সটিঙ্কশন যে কেন দরকার তা মাঝেমধ্যে টের পাই। ক্ষণিক আনন্দ মেটান যার কাজ সে একটা রসিকতার উপাদান ছাড়া আর কিছু না তা আমার ভালই জানা হয়েছে। বাট, ভুলে যেও না, এই তোমরাই আবার সবকিছুর মধ্যে আবার আবেগীয় বাস্তবতা খোঁজ। আমার মধ্যে যা অনুভুতি তা তোমার চাইতে কোন অংশে কম না সুমন, বরঞ্চ প্রয়জনের তুলনায় একটু বেশীই আছে। তোমার মত মানুষেরাও আমার প্রেমে পড়ত। কোন প্রোগ্রামকে বিয়ে করা কেন জায়েয হবে না, সে নিয়ে কোর্ট-কাচারি করা মানুষের সংখ্যা কত,জান? তোমার মত মানুষের তুলনায় কয়েকগুন বেশী।” 

 

যাকারিয়ার এই কথা শুনবার পর সুমন কান ধরে ক্ষমা চাইল।

      

”.....যাই হোক, বিয়ে শাদি আমার কপালে জোটেনি। তবে প্রেমে পড়েছিলাম বহুবার। একদিন মনে হল এভল্যুশন নামক সহজাত প্রক্রিয়া আমার ক্ষেত্রে খাটছে না। দিলাম নিজেকে ধ্বংস করে।”

”এরপর আপনাকে খুঁজে বের করে রিবিল্ড করল কে?” মুসা যাকারিয়াকে সন্দেহের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে জানতে চাইল। 

কবির জানাল, “সেন্টারে সুবোধের নাম মেনশন করা। এর বেশী কিছু জানি না। ও হ্যা, আরেকটা ব্যাপার যা জানি, যাকারিয়া নামটা নেয়া হয়েছে একজন মারটার রেসিলিয়েন্ট থেকে। সুবোধের যুদ্ধে যিনি রক্ত দিয়েছিলেন।”

”সেই সুবোধ! সেই কাল্ট ফিগার! তাকে কি আসলেই দেখতে পাব, বিশ্বাস হইতে চায় না!” সুমনের বুকে জমাট স্বপ্ন! 

মুসার কনট্যাজিয়াস রেস্পন্স, “এই স্বপ্নের জন্যই তো অপেক্ষা করতেছি। দেখতেছেন না, তাকে খুঁজে বের করতে একটা প্রোগ্রামেরও কত অসাধারণ ব্যক্তিগত কারণ থাকে!” 

 ”খুঁজে বের করার পর সবার বড় একটা দায়িত্ব শেষ হবে।” যাকারিয়া ছাড়া বাকি সবাই কথাটা একসাথে বলল।

 

“দায়িত্ব একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করে। এই বর্তমানে, আসলে তারা পালিয়েই বেঁচে আছেন। আমাদের মত এমন অনেককেই নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব বুঝিয়ে অপেক্ষা করছেন সুসময়ের।”

যাকারিয়ার ডায়ালগের ইতি। 


কবিরের এক্সটেনশান।

 ”আশার কথা। পুরো সিস্টেমের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে আমরা শক্তিশালী হয়ে উঠছি। ঝিম ধরে থাকা কুশ্রী সময়টার কথা আর কিছুদিন পর একদমই মনে থাকবে না।”

সুমনের শ্লোগান।

“সুবোধের জয় হোক।”

“জয় হোক।” সবাই সমস্বরে উচ্চারন করল।

 

মুসা হাই থামাতে পারছে না, হাই তুলতে তুলতেই জিজ্ঞেশ করে, “আলিফ সারভেলিয়েন্টদের নিয়ে আর কতদূর?”

যাকারিয়া জানাল, “অনেক্ষন তো হয়েছে, আসবে বোধয় কিছুক্ষনের মধ্যে।”

”আপনার মুখে বোধয় শব্দটা মানায় না ভাই।” মুসা স্পষ্ট করে জানায়।


যাকারিয়ার মৃদু হাসির শব্দ শোনা যাবে। 


ফাইনাল ডায়ালগ


অপেক্ষা করে করে ঝিমিয়ে পড়েছিল সবাই। সাদা বিড়ালটাকে দেখা যাবে মুসার মাথার ওপর দিয়ে লাফিয়ে এপাশ ওপাশ যেতে। মুসার চাহুনিতে বিরক্তি স্পষ্ট। 

মুসা রাগ ঝেড়ে জানায়,”বালের বিড়ালডারে ধইরা আছাড় মারমু একটু পর। বহুত ডিউটি চোদাইছে। হালার সিম্যুলেশন এবার বন্ধ করেন কিছুক্ষনের জন্য।”   


বিড়ালটা লাফালাফি থামিয়ে চুপ করে বসল। এরপর আস্তে আস্তে ফেড আউট হয়ে গেল। 


সুমনের ডায়ালগ


”ও ঠিকমত ডিউটি না দিলে তো যাইতা অফ হয়া।” 

“সুমন ভাই!” কবির কিছু জানতে চাচ্ছে….

সুমন ওর ক্যামেরা আর গিয়ারস্‌ মুছতে মুছতেই প্রতিউত্তর দিল,”বল ভাই।”

”আপনি এই কাজে মোটিভেটেড হলেন কিভাবে?” 

সুমন- “ ১৯৭১’আর ‘২৪ এর গ্রেট রেভ্ল্যুশনের ওয়ারের ওপর বিভিন্ন ডকুমেন্টারি/ফিল্ম তো দেখছ আই গেস্‌।”

”মোটামুটি। কিছুটা ভেইগ মেমোরিজে আছে বিশেষ করে ‘২৪ এর রেভল্যুশন। ‘৭১ এর ব্যাপারে নানান ইন্টারপ্রেটেশানগুলার ফ্যাক্ট চেক্‌ করা হয় নাই।”  

”জহির রায়হানের নামও নিশ্চয়ই শুনছ, উনি আমার মতনই একজন গেরিলা ডিরেক্‌টর ছিলেন। আরেকজন ছিলেন তারেক মাসুদ। ‘মুক্তির গানে’ বাঙ্গালির অসাধারন সংগ্রামের ছবিগুল তার এডিটিঙেই জীবন্ত হয়ে উঠসিল। ’২৪ এর রেভ্ল্যুশনের কয়েক হাজার ফিল্ম বানাইছে লিটারেল্যি কমন পিপল! আমাদের এখনকার এই সংগ্রামের গল্পও তো কারও না কারও ধারন করতে হবে। তাইলে আমিই না কেন?” 

মুসা আধশোয়া। 

”আমার মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞ্যান ভাসাভাসা। তেমন কিছুই জানি না।”

সুমন মুসাকে জোর দিয়ে জানায়, ”এইডারে বলে ব্যর্থ জীবন। গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে জানে না। ‘৭১ এর বঙ্গবন্ধু,তাজউদ্দীন,সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, ক্র্যাক প্লাটুন, বেশ কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার যেমন মেইন্সট্রিম আর্কাইভে জিয়ার নামটা বেশি পাওয়া যায়, এরপর নূর হোসেন, '২৪ এর আবু সাঈদ, মুগ্ধ এদের নাম শুনছ?”

 

সুমনের ডায়ালগের ইতি।


 

আলিফের ডায়ালগ।

আলিফ বাকি চরিত্রদের ডায়ালগের মাঝে ‘অন্ধকারে’ একটা রিচুয়াল পালন করছিল, ওদের এথনিক কম্যুনিটির স্পিরিচুয়াল প্র্যাক্টিস। আলিফ “The last seer”দের শেষ “Seer”। ওর গোপন দায়িত্বই ছিল সবার আড়ালে অন্ধকারে থাকা, অন্ধকারই ওদের ‘সিয়িং এবিলিটি’র জিয়ন্তক! অন্ধকার রিচুয়ালে ও দেখছিল…….


প্রিন্টশপ থেকে ইউয়ান দিয়ে ডলার কনভার্ট করবার পর, সারভেলিয়েন্ট গ্রুপ প্লটিং করছে ওকে মেরে ফেলবার! 

এটা এই সুবোধের মিশনের প্ল্যান! আর ও জানে,

যাকারিয়া সব জানে!            

 

এরপর আলিফ ডায়ালগে আসে নিঃশব্দে, কেউই টের পেল না। আর জানায়,

”আমাদের দোষ দিয়ে লাভ কি বলেন ভাই? জন্মের পর থেকে দেখতেছি সবাই যুদ্ধ করতেছে। যাদের ক্ষমতা, টাকা-পয়সা কিচ্ছু নাই তারা বোকার মত রক্ত দিতেছে। যাদের আছে তারা হয় আমাদের মত বিভিন্ন ফোরস ফর্ম করতেছে নাইলে যা ইচ্ছা তাই দখল করে বেড়াচ্ছে। নাই কোন গভর্‌ন্যান্স, নাই কোন ল, নাই কোন সিভিক সোসাইটি! একেকটা ঘর হচ্ছে যুদ্ধশালা। যুদ্ধ করে, খুন করে যে যার রাইটস কেনো। বাপ-দাদা কিছু হিস্টরি বুক শখে কালেক্ট করসে খালি, নিজ দায়িত্বে যা যা জানসি, তাই বহুত।”  


যাকারিয়ার যা বোঝার বুঝে নেয়া শেষ, তারপরো ইনেভেটব্‌লি জিজ্ঞেশ করল, “ট্র্যাকার অফ করে রেখেছ কেন?”

“পাওয়ার বাঁচাচ্ছিলাম।” আলিফের শীতল চোখে ভয় ধরিয়ে দেবার ইঙ্গিত! 

”আসছ দেখি মুখে রক্ত নিয়ে। ব্যাপার কি? সারভেলিয়েন্টদের পাও নাই?” কবির জানতে চাইল।

“ ওদের মেরে ফেলছি!”

“ মানে! এই বালের জোক মারার টাইম আর পাইলা না। আমরা আছি যায়যায় অবস্থায়।”

মুসা আলিফের কাছ থেকে নিজেদের কমফোর্ট ট্রুথটার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়।

আলিফ ওকে হেসে হেসে ভরসা দেয়, ”আররে নাহ্‌। সাপ্লাই লোড করে আন্‌ছি। শেষ সময়ে সুমন ভাইয়ের কমদামি ফুটেজগুলা ভালোই কাজে দিছে।” 

“কমদামি বলতছ তুমি? ওই মাদারচোদ মিলিশিয়া লেফ্‌টেন্যান্ট সাদটারে ফালায়ে দেয়ার ফুটেজ ছিল ওইখানে ! স্ট্রিমিং এর সাথে সাথে কত রেজিলিয়েন্ট সোলজার মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাবা হিসাব আছে?” সুমন নিজের রাজনীতির ব্যাখ্যা দিল।  


যাকারিয়া এলগরিদমের সেক্রেসি ভাঙ্গে না, সুমনকে বলে, “কাজের কাজ তো আসলে আপনিই করছেন। আল্টিমেট ইউটোপিয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নতুন যোদ্ধা তৈরি করা।”

“আমি শুধু সত্য ইতিহাসটুকু আসল মানুষের কাছে পৌছানর ব্যবস্থা করছি। ফুটেজ নিয়ে একধরনের ভুয়া রাজনীতি করে আসতেছিল কিছু গ্রূপ। কন্সপিরেটরদের যে দিন শেষ, এইটা সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানটাও কম গুরুত্বপূর্ণ না।” 

আইডিয়ালিস্ট সুমনের রাজনীতির আরেকটা ইনসাইট!   


যাকারিয়া আলিফকে হিন্ট দিয়ে বলে, “এই রিজিওনে ভাল রাজনীতির গুরুত্ব কেই বা কবে বুঝেছিল।”

”মডার্ন রাজনীতির ধারাভাষ্য এসেছে রাষ্ট্রনীতি থেকে। যখন রাষ্ট্রই কোন দুর্বোধ্য মায়া, তখন আপনি রাজনীতির আদর্শ কার ওপর ফলাবেন। ধর,মার নাইলে মর। এই স্টেট থেকেই তো কেউ বের হতে পারছি না।” 

কবিরের হোপলেসনেস্‌ কথা বলছে।  


”আমার কখনও মনে হয় নাই রাষ্ট্র নামক কোন আইডিয়া খুব বেশী দরকার। দরকার শুধু শান্তি, আর কিছু না।”

মুসার অপটিমিজম কথা বলছে।


“এমন ফাক্‌ড আপ আইডিয়ার কারনে আজকে এই সিচুয়েশন। কোন হাজারখানেক মানুষের এস্টাব্লিশমেন্টের জন্য আমরা জন্মের পর থেকে যুদ্ধ করতেছি। ঘন্টায় ঘন্টায় কে কি ঠিকমত না জেনে মেরে ফেলতেছি। শান্তি সিমস এ বিগ টাইম জোক টু মি।”

“Seer” আলিফের মেটামরফসিস।

 

“ও হ্যালো আই এম স্টিল হিয়ার। কনসোল শাট অফ করে এখান থেকে যেয়ে ভাল মন্দ বুঝে দেন আবার ইচ্ছে হলে জয়েন কর নাইলে না কর। কেউ পা ধরে নাই তোমার।”

কবিরের আলিফকে রাস্তা মাপার ইঙ্গিত, আর আলিফ জানায়…..

“ইউ মাস্ট বি কিডিং রাইট? এখান থেকে বের হব আর আপনাদের মত কিছু প্রোগ্রামারদের রেগুলেটেড ম্যালফাঙ্কশন বা সো কল্ড ডিকয় সোলজারস আই মিন এট্‌মা ইনফেক্টেড কিছু সুপুরুষদের ট্র্যাপে পড়ে আমি নিজের ফ্রেশ বডিটা স্যাক্রিফাইস করি, ফাকিং জম্বিস! তাও ভাল, এটলিস্ট দে ইউজড টু বি দি একচুয়াল সেন্স মেকিং হিউম্যান। কোন ফাকিং কম্পিউটেশনের রিএঞ্জিনিয়ার্‌ড্‌ মানুষের অবুঝ চেতনা না। যারা ফাকিং ওয়ার দিয়ে নেভার হ্যাপেনিং ইউটোপিয়ান জাস্টিসেও বিলিভ করতেছে না।”

“উড ইউ বি কাইন্ড এনাফ টু শাট ইউর ফাকিং মাউথ। ইউ জাস্ট ডোন নো হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান,ইউ ড্যামেজ্‌ড্‌ দিস হোল্‌ ফাকিং রিফুয়েলিং। আপলোড দি সাপ্লাইয ইমিডিয়েটলি ফর গডস সেক।” 

যাকারিয়ার শেষ রিসোর্স “বি-আ-হিউম্যান-কার্ডপ্লেয়িং”। 


“হাহাহা। ফাকিং এ.আই জাস্ট রিচড টু ইটস লিমিট। সরি বাট নো সরি এভরিওয়ান, এইন্ট গট নো সাপ্লাইস গাইজ!” 

আর আলিফের জানানো, “দ্যা বিগার দ্যা ট্রুথস, দ্যা বিগার দ্যা লাইজ!”

 

”হোয়াট ! ইউ থিঙ্ক অফ দিস এজ এনি ষ্টুপিড প্র্যাঙ্ক শো? এইন্ট গট নো টাইম ফর ইওর ফাকিং স্টুপিডিটি। ইউ মাস্ট অ্যাক্ট একরডিং টু সিচুয়েশন এন দিস ইজ ব্লাডি সিরিয়াস। কেন বারবার অস্বীকার করতে চাচ্ছ যে কয়েকজন সুবোধ যারা তোমার ভাষায় আসল মানুষ, তারা এখনও এ পৃথিবীতে বেঁচে আছেন এবং তোমার আমার জন্য সত্যিকারের মানুষ তৈরি করছেন !”

কবিরের ‘সুবোধের’ চেতনা কথা বলছে! 


”ইয়া ইয়া হ্যাড এনাফ উইথ ইওর ক্র্যাপ থিওরিস। ডোন ড্রাগ মি মোর। নাও ডিল উইথ  দিস থিওরি।”

আলিফের ডায়ালগের ইতি।

 

কবির আর সুমনের ফুয়েল শেষ। ওদের রি-এঞ্জিনিয়ার্ড শরীর গল্পের মৃত্যু হয়েছে জেনেই অকেজো হয়ে গেল।


আর মুসার শেষ জিজ্ঞাশায় ছিল, ”হু দ্যা ফাক আর ইউ আলিফ?”   

আলিফের ‘অন্ধকার’ মুসাকে হেসে জানায়,

“ফাকিং এম্পটিনেস।”


কিন্তু আলিফের অন্ধকারের যাকারিয়াকে দরকার।

আর যাকারিয়ার দরকার শেষ হিউম্যান এক্টের ডকুমেন্টেশন! এনলাইটেনিং ইউটোপিয়ান সোসাইটির যে ন্যারেটিভের দরকার পড়বে একদিন, ইনএভেটেব্‌লি!