১।
গত মাসের কথা। ঢাকা গেছি। দুপুরের পর মিটিং। সেজন্য দেরিতে উঠা। মাঝে মাঝে দেরিতে ওঠার এই বিলাসিতা খুব উপভোগ্য লাগে। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি। সকালের নাস্তার টাইম শেষ। একেবারে সকাল ও দুপুরের জন্য কিছু খেয়ে মিটিং এ ঢুকবো।
বয়কে জিজ্ঞেস করলাম, কি আছে?
-'পোলাও-খিচুড়ি'। সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির নায়করা দ্রুত ও ক্ষিপ্রতার সাথে ভিলেনের পতন ঘটায়। বয়ের জবাব তার চেয়েও গতিময়, কিন্তু কিঞ্চিৎ কর্কশ।
-পোলাও-খিচুড়ি নতুন আইটেম। আগে খাইনি। এক প্লেট দেন।
-আরে ভাই, পোলাও আলাদা, খিচুড়ি আলাদা। কি খাবেন?
-খিচুড়ির সাথে কি আছে?
-ডিম খিচুড়ি আর মাটন খিচুড়ি।
সকালে খাইনি। লম্বা মিটিং এ বসতে হবে। ভালো কিছু খাওয়া দরকার।
-মাটন খিচুড়ি দেন।
হাত মুখ ধুয়ে বসে আছি। খিচুড়ি দিয়ে গেলো। ছেলেটার আর খবর নাই। মাটন কখন দিবে?
অবশেষে তাঁকে দেখতে পেয়ে ডাকি।
-আরে ভাই, খিচুড়ি দিলেন। মাটন কই?
-আপনি কানা নাকি! খিচুড়ির মধ্যে মাটন আছে।
-হাত দিয়ে দেখি, সে মিথ্যে বলেনি।
আর কোন কথা বাড়াই না। চুপচাপ খেতে শুরু করি।
২।
১৯৯২ সালের কথা। প্রথমবার ঢাকা গেছি। ঐ সময়ে অজপাড়ার একটা ছেলের ঢাকা দেখে কি অনুভূতি হবে? আমারও তাই হয়েছে। ঢাকা দেখে নয়, যেন বিশ্ব জয় করে নিজ এলাকায় ফিরেছি। বন্ধুদের কাছে সেই লেভেলের গল্পবাজি। কত বড় শহর, উঁচু উঁচু বিল্ডিং, বিশাল বিশাল মার্কেট। একদিন দুইদিনে সেই গল্প শেষ হয় না। বন্ধুদের মাঝে তখনও কেউ ঢাকা দেখেনি। অথচ আমি ঘুরে এসেছি। কি এক এলাহি কাণ্ড।
ঐ সময়ে এলাকায় হয়ত সাকুল্যে ১০/১৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক ছিল। সেও ৮-১০ ফুট চওড়া। সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা (মানিক মিয়া এভিনিউ) দেখে অবাক হয়ে যাই। তখনও মানিক মিয়ার মাঝে ডিভাইডার বসেনি।
-ঢাকায় একটা রাস্তা আছে, এই পাশ থেকে ঐ পাশ দেখা যায় না।
-তাই নাকি? উৎসুক চোখে ওদের বিস্ময় কাটেনা।
- কি আর বলবো। ঐ রাস্তা পার হইতে দিন শেষ। আর ঢাকা দেখতে কয়েক বছর লাগবে।
-বাপরে, এত বড় ঢাকা? আচ্ছা, ওখানে হোটেলে গরুর মাংস চাইলে নাকি মানুষের মাংস খাওয়ায়?
-যা বেটা, আমার বড় ভাইকে ঠকাইতে পারে ওরা!!
৩।
ভানু সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ দেখেছিল কিনা তার প্রমাণ নেই। অথচ গল্প করে বেড়াত, বাঘের লেজই ছিল ২০ হাত লম্বা। ওসব গল্প বলে ভানু কত খ্যাতি পেয়েছে।
মানিক মিয়া দেখে গল্পবাজি করা সেই আমি খিচুড়িতে মাটন খুঁজে পাইনা।
মেধার কি নিদারুণ অপচয়!!