Posts

সমালোচনা

বঙ্গদেশের পুনর্গঠন

September 3, 2024

মাহদি হাসান

কিছুদিন পূর্বের সরকার পতনে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিনা বলতে পারিনা। স্বাধীনতা শব্দটি যথেষ্ট জটিল ও আপেক্ষিক। স্বাধীনতা মানে আর যাই হোক, যা তা করে বেড়াবার ক্ষমতা নয়। তবে এ ঘটনার পর থেকেই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশের পুনর্গঠন এবং এবিষয়ে সর্বস্তরের মানুষের দাবি ও পরামর্শসমহূ। এ বিষয়েই কিছু ব্যক্তিগত চিন্তা তুলে ধরলাম। 

প্রথমত, একটি রাষ্ট্রের প্রাণই হলো জনগণ। ভৌগলিক বাসিন্দাদের উপরই সম্পূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকে । কাজেই রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পূর্বশর্তই হলো জনমানবের পুনর্গঠন। তরল সাবানকে যে রূপ ছাঁচে ঢেলে নতুন আকৃতি দেয়া হয় আমাদের মানুষকেও তাই করতে হবে । তাই বলে এটি বোঝাতে চাইনি যে প্রত্যেকেই প্রত্যেককে ছাঁচে ঢেলে ঠিক করবে । পরিবর্তন ও সংস্কারের সেই ছাঁচের কাঠামো ও আকৃতি আমাদের বেশিরভাগেরই জানা। যার নাম মনুষ্যত্ব। তবে প্রথম সমস্যাটি হলো আমরা নিজেরা সেই ছাঁচে গলে না গিয়ে অপরকে সে টাতে গলিয়ে নতুন আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের গঠনটা নিজেদের কাছে খুবই কঠোর তবে অপরের টা কোমল, সহজেই পরিবর্তনীয়। কাজেই প্রায় সকলের অবচেতন মনের সুপ্ত ভাবনা এই যে , আমি যদি সেই ছাঁচ পড়িয়ে সমাজের অন্য সকলকে ঠিক করে ফেলতে পারি তবে তাদের সহচর্যে আমরা এমনি ঠিক হয়ে যাবো। 

অন্যের ভুল ধরা ও তা শোধরাবার উপায় বলে দিতে পারলে বোধহয় আমরা সর্বাধিক আত্মতৃপ্তি পাই। তবে আমরা যে জিনিসটা স্মরণে রাখি না তা হল অন্যের দোষ আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতেও যোগ্যতার দরকার হয়। আমরা নীতি -নৈতিকতার একটি বৃহৎ অংশকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করে আরেকটি ক্ষুদ্র অংশকে এতটা বাড়িয়ে তুলি যে তার ছায়াতলে অনেক বড় বড় দোষও অনায়াসে লুকায়িত থাকতে পারে । সে ই ক্ষুদ্র অংশটির জোরেই আমরা ন্যায়ের দাবি জানাই, অধিকার চাই। অর্থাৎ নিয়ম-নীতির যে অংশটিতে আমাদের নিজেদের লাভ এবং যা আমাদের মনের অনকূলে থাকে সেটিই সবচেয়ে প্রাধান্য পায় আমাদের নিকট। অথচ অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্ণূরূপে পরস্পরের সম্পরূক দূুটি শব্দ। রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো সঠিকরূপে পালন না করা পর্যন্ত আমাদের ‘অধিকার’ শব্দটি উচ্চারণেরও অধিকার নেই। আমাদের অধিকাংশের কেবল নিজ স্বার্থ হাসিলের মনোভাবও আমাদের নিচু অবস্থানের জন্য দায়ী। যদি এমন একটি জাহাজ বা নৌকো থাকে যে টিতে চড়লে আমাদের ব্যক্তি স্বার্থ পূরণ হবে তবে নিঃসন্দেহে সেখানে আমাদের সবাই উঠতে চেষ্টা করব। আর এভাবেই আমরা নিজেদেরকে যেমন ডুবাই, গোটা দেশকেও সমান তালে পিছিয়ে রাখি । সামষ্টিক উন্নতির ধারণা আমাদের অতি অল্পজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। 

নিজেদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে প্রকৃত শিক্ষা দরকার আজ সেটি জাদঘুরে রক্ষণের উপযোগী বস্তু। প্রকৃত ও মুক্ত জ্ঞানচর্চা এখন কজন করে ? আমাদের দেশে কজন প্রকৃত শিক্ষক আছেন? ঘরে ঘরে প্রকৃত ছাত্র তবে গঠিতই হবে কিরূপে ? প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি আমাদের পাঠ্যসূচিতে পড়ানো হয় ঠিকই। সেটি পড়াতে গিয়েও একদল শিক্ষক নামধারীকে বলতে দেখেছি , ‘গদ্যের পাঠপরিচিতিটি মুখস্ত পড়া দাও’। সত্যিই, হাস্যকর নয় কি ? তবে আমার ব্যক্তি জীবনে কয়েকজন প্রকৃত শিক্ষককে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে , আমার বিশ্বাস তারা তাদের প্রাথমিক জীবনে প্রকৃত ছাত্র না হলে আজ প্রকৃত শিক্ষক হতে পারতেন না। 

পরিশেষে যা বলতে চাই তা হলো: রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কল্যাণযাত্রার প্রথম ধাপটি যেন হয় ব্যক্তি পর্যায়ের সংস্কার। বিশেষ ক্ষেত্রসমূহে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনেকেই সেটিকে সে জায়গায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে অক্ষম। আমাদের যার যা দায়িত্ব সেটিকে সঠিকরূপে অনুধাবন করে প্রত্যেকে স্ব স্ব স্থানে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলে বঙ্গদেশ কেনো, যে কোনো ভুূখণ্ডই যে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বচ্চ পর্যায়ে পৌছে যাবে , সে সত্যতা একজন অন্ধ ব্যক্তিও স্বীকার করতে বাধ্য। 

~Mahdi Hasan

Comments

    Please login to post comment. Login