শেষ অবধি আমরা কেবল নিজেদের অন্তিম পরিণতি দেখার জন্যেই বেঁচে থাকি। জীবনের দিকে যখন আমরা পিছনে ফিরে তাকাই তখন কেবল ফেলে আসা দিনেরই প্রতিচ্ছবি স্পষ্টতর হতে থাকে। মানুষ মাত্রই স্মৃতিকাঁতুরে। আমরা জর্জরিত হ’তে থাকি জীবনে না হওয়া সবকিছু ভেবে, অথচ বেঁচে থাকার জন্যে বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের মধ্যে খুব কম সময়ই কাজ করে।
মানবজীবন আমাদের অভিজ্ঞতার সমষ্টি। দিনাবশেষে আমরা আজকের দিনের কথা না ভেবে পরের দিন নিয়েই চিন্তিত বলে আমাদের জীবনের সব বিপত্তি বিষফোঁড়ায় রূপ নিয়ে থাকে। এখানে শূন্যতা আছে। নিশ্চুপ নিস্তব্ধতা আছে। আমাদের থেমে যাওয়া বলতে আমরা পরাজয় বুঝি বলে জীবনের বাঁকে কেবল বিশ্রামহীন পড়ে থাকি।
একটি একটি দিনের হিসেব কষে পুরো এক মানবজীবন কবে শেষ হয়ে যায় তা আমাদের হিসেবের বাইরে থেকে যায়। জাগতিক ব্যস্ততা আমাদের ভালো থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হতে আমরা ভুলবশত জীবনের কাছেই ফিরতে পারি না অবশেষে। নিজেদের এসব অন্তঃসারশূন্যতা আমাদের ধ্বংস করে রোজ। আমরা তবু আরেকটি দিনের অপেক্ষায় থাকি। আরেকটু ভালো থাকার চেষ্টা করি।
অপেক্ষার ভিতরে ক্রমশ পথ চলতে চলতে যখন আমরা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাই, তখন যা করার থাকে তা কেবল বিপরীতমুখী কর্মসাধনের নিছক ভাবনা। জীবনের একমাত্র বিপত্তি হচ্ছে এটি ফুরিয়ে আসে। সময় এবং কাজের ব্যবধানে আমরা কেবল অন্তরালবর্তী দূরত্বে এখানে টিকে থাকি। যা কিছু সম্ভাবনাময়, মানুষের তা সাধন করা শেষ, শুধু মৃত্যুই এখনো অমীমাংসিত।