চরকিতে একটা নতুন সিরিজ এসেছে,
শাটিকাপ- ঘাপটি মেরে পড়ে থাক,
৩ পর্ব দেখেতেই রাত দেড়টা।
পরদিন সময় সকাল ৮ টা- বাথরুমে গোসলে। তখনও হয়নি শেভ।
ততক্ষণে ৩ তিনটা মিসড্ কল-
ব্যাক করলে যথারীতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ- "কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে, জনাব?"
-"স্যার, জ্বী স্যার, অবশ্যই স্যার।
রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি, এক্ষুনি।"
এমন সময় সাইট থেকে ফোন, "বিটুমিনাস কাজে ডাস্ট নাই, স্যার।"
ঠিকাদারকে ফোন দিই, "হ্যালো, হ্যালো... শুনতে পাচ্ছেন...পাচ্ছেন না?"
ঠিকাদার মোলায়েম সুরে- "নেটওয়ার্ক বড়োও ঝামেলা করছে, স্যার।
আমি মনে মনে বলি, তাঁর নিজের নেটওয়ার্কই তো সবচেয়ে ঝামেলার।
শর্ট, এফএম, মিডিয়াম, লং কোন ওয়েভই তার এন্টিনায় ধরে না।
তিনি যোগ করেন .... ডাস্টের বিষয়টা আমি দেখছি, স্যার...
বলে দিনভর চলে ডাস্ট ছাড়াই কাজ"।
আলাপটা তখনও শেষ হয়নি, ওয়েটিং এ মন্ত্রনালয়ের AO সাহেব।
পান কিংবা পানি চিবিয়ে খেতে খেতে বলেন, "আপনার time extension প্রস্তাবে আছে অনেক ভুল।
উহু! বৎসর ব-ৎ-স-র নয়, লিখতে হবে ব-ছ-র। "
অফিস সহায়ক হান্নান জানায়, ওয়েটিংরুমে অনেকক্ষণ বসে "দৈনিক নিশিজাগরনের" আক্কাচ সাব।
ভিতরে আসতে বলি।
-"আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, বিটুমিন যথেষ্ট কালো নয়, আঠালো, তবে আঠা নেই।"
-"টেস্ট রিপোর্ট তো সেটা বলছেনা।"
- না, মানে আপনি কাজ করেন, অসুবিধা নাই।
হচ্ছে কি বড়ভাই, আগামী ৭ তারিখে নিশিজাগরনের জন্মদিন। একটু দেইখেন।"
বেলা গড়িয়ে গড়ের মাঠে- বাসা থেকে ফোন,
"খেতে আসবে কখন, ২ দুই বার খাবার গরম করেছি। আর কিন্তু পারবো না।
আর শোন, সাতকাহনের লাইভে একটা গাদোয়াল পছন্দ হয়েছে।"
- "আচ্ছা রাখো, এসে কথা বলবো নে।"
- "সারাক্ষণ মোবাইলে বিজি, শুধু আমার কথা শোনার টাইম নাই।"
ডিসি অফিসে ত্রাণ ও দুর্যোগ কমিটির সভা- সেকশন থেকে ফোন- "স্যার, মিটিং শুরু হলো, কেউ কি আসছে?"
- "হ্যালো, দুরুল হুদা, এটেন্ড করো তো।"
- "স্যার, আমি তো হিকমতের সাইটে, আসবো কি?"
- "না থাক, তুমি হিকমত নিয়ে ওখানেই থাক, দেখি অন্য কাউকে পাই কি না?"
এমন সময় একজন ডটডটডট, "এক্সেন সাব, আমার ছেলে-পুলেগুলো দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ওদের একটু দেইখেন।"
এর মধ্যে আরও একটা ফোন আসে, "পরশুদিন ডিপিইসি সভা, দেখে শুনে প্রেজেন্টেশন রেডি কইরো। তোমরা এ যুগের যারা, অল্প শোকে কাতর। আরে, আমরা যখন এক্সেন ছিলাম, ও সব ছিলো বা হাতের খেল।"
ঘ্যারঘ্যার করে আবারও মোবাইল বেজে ওঠে। আতকে উঠি, সকালের সেই রিপোর্ট এখনও হলো না দেয়া।
না, অন্য একটি ফোন। ওপার থেকে আওয়াজ আসে, লিচুর সিজন তো চলে এলো। আপনার ওখানে কোন সার্ভিস টা ভালো? এসএ পরিবহন না সুন্দরবন কুরিয়ার?"
অন্য এক সাইট থেকে ফোন, "থিকনেস নিয়ে বেশ ঝামেলা করছে, স্যার!"
আরেকটা ফোন আসলে সাইটের ফোন সাইড করে ধরি AO সাহেবের কল, শোনেন, সামান্য একটা খন্ড ত (ৎ), তাও এখনও ঠিক করে দিলেন না?"
সেকশন থেকে জানালো, এখনও ত্রাণ ও দুর্যোগের মিটিং এ কেউ যায় নি। মনে মনে কই, "নিজেই তো দুর্যোগে আছি, আমারে বাঁচাবে কোন লখিন্দর?"
ডটডটডট এইবার ধমকের সুরে, "এক্সেন সাব, আমার এন্টি গ্রুপের লোকেরা সব কাজ পেয়ে যাচ্ছে। একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে দায়-দায়িত্ব কিন্তু আপনাকে নিতে হবে, বলে দিলাম।"
অফিসের বড় বাবু জানালো, "মন্ডা-মিঠাই উৎসবের লোকজন দেখা করতে এসেছে। মিঠাই না হোক মন্ডা ওদের খাওয়াতেই হবে।"
"তুই তো ভিআইপি হয়ে গেছিস দোস্ত, ফোন করলে ধরিস না, কলব্যাকও করিস না" এলাকার বন্ধু অভিযোগ দিল একগাদা।
বাড়ি থেকে মায়ের ফোন, "তোরা সবাই ভালো আছিস, বাবা? ডায়ালাইসিস করেও
তোর বাবার কিডনির উন্নতি হচ্ছেনা। নাতি-নাতনি, বউমাকে নিয়ে একবার বেড়িয়ে যা। উপরওয়ালা জানেন, কখন কি হয়!" মায়ের ফোনে হঠাৎ মনে হয়, সারাদিন এক মিথ্যে মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছি। এবার বোধহয় একটু থামা দরকার।
মাথাটাই কেমন ভনভন করে ঘোরে, ঠিক চরকির মত। এই চরকিতে ১৩৭ এর নয়, চলছে হাজার ৩৭ এর অভিনয়।
আমার এই হাজার ৩৭ কনটেন্ট বিক্রি করবো রেদোয়ান রনির চরকির কাছে।
ভাবছি নাম দিবো, শাটি শাটিকাপ-ঘাপটি মেরে পড়ে পড়ে থাক।
নওগাঁ
২৮ জানুয়ারি ২০২২