Posts

গল্প

কপি পেস্ট

May 6, 2024

এইচ এম নাজমুল আলম

Original Author এইচ এম নাজমুল আলম

১.
-হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছেন?
-জ্বি ভালো আছি, আপনি?
-আমিও ভালো আছি। ভাইয়া আপনার লেখা অনেক ভালো লাগে। আমি সব সময়ই পড়ি। 
-তাই নাকি! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে৷ 
-ভাইয়া, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমি আপনার একটা লেখা নিতে চাই।
-লেখা নিতে চান?
-হ্যা, একটা অনলাইন ম্যাগাজিনে গল্প লেখার কম্পিটিশন চলছে। আপনার একটা লেখা আমি নিজের নামে দিতে চাই৷ প্লিজ ভাইয়া না করবেন না!

এ ধরণের অদ্ভুত আবদার শুনে একই সাথে প্রচন্ড বিরক্ত এবং অবাক হলাম। আরেকজনের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে কম্পিটিশন এ অংশ নেয়া কোন পর্যায়ের ছ্যাচরামি হতে পারে সেটি ভাবতে ভাবতে ব্লক করে দিলাম।  

২.
কয়েকদিন পরের কথা। আমার বেশ কয়েকটা লেখার নিচে এক ব্যক্তি মন্তব্য করে যাচ্ছেন- ভাইয়া, আপনার লেখা সেই-লেখাটা নিলাম। প্রথম দিকে খুব একটা পাত্তা না দিলেও একদিন দেখলাম উনি মন্তব্য করেছেন- আপনার লেখা আমি সব সময়ই কপি করি৷ 

কৌতুহল এড়াতে না পেরে তার প্রোফাইলে গেলাম। বিভিন্ন সময়ে আমার বিভিন্ন লেখা তিনি কপি করেছেন। তবে সেখানে আসল লেখকের নাম উল্লেখ নেই৷ সব লেখাই নিজের নামে চালিয়ে দেয়া৷ তার ফ্যান ফলোয়ার্স নেহাতই কম নয়৷ তারাও সেই নকল লেখককে বাহবা দিয়ে প্রশংসা আর স্তুতিতে ভাসিয়ে দেন। তিনি যে কত বড় মাপের লেখক এসব মন্তব্যে তিনি প্রতিনিয়তই আপ্লুত হন৷  

মানুষ অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর হয়। আমি শোক, দুঃখ, বেদনার অনুভূতি ভুলে কংক্রিট হয়ে গেলাম। মহান লেখককে ভার্চুয়াল লাথির মাধ্যমে বিদায় করলাম। 

৩.
সামাজিক সমস্যা নিয়ে বেশ ঝরঝরে এক লেখা প্রকাশ করার মিনিটখানেক পরই জনৈক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা লেখাটি কপি করলেন। এবং লেখকের নাম এড়িয়ে নিজের নামেই লেখাটি সাটিয়ে দিলেন তার ওয়ালে৷ তার চ্যালা চামুন্ডারা ঝাপিয়ে পড়লো মন্তব্যের ঘরে৷ 

-ভাই আপনি সেরা
-সহমত ভাই
-ঠিক বলেছেন ভাই
-আপনি সব সময়ই সত্য কথা বলেন ভাই
-সময়ের সাহসী সন্তান 
-সত্যের নির্ভীক সৈন্য

অন্য সব ছোট খাটো লেখা-চোর ছ্যাচড়াদের হয়তো ঝেটিয়ে বিদায় করা যায়। কিন্তু এ ধরণের জনপ্রিয় ছ্যাচড়া লেখা-চোর ছাত্রনেতাদের জব্দ করা আমারা সাধ্যের বাইরে৷ তাও মেনে নিতে কষ্ট হয়। প্রতিটা লেখাই লেখকের সন্তানতূল্য। 

ফেক আইডি দিয়ে পরপর বেশ কয়েকদিন জ্বালাময়ী কিছু লেখা লিখলাম। লেখার শেষে সেই ছাত্রনেতার নাম দিয়ে দিলাম। তার কিছু চ্যালা চামুন্ডারা সেই লেখা কপি করে নেতার নামে চালাতে লাগলো। নেতাও সম্ভবত মনে মনে খুশি হচ্ছিলো। বিনা পরিশ্রমে প্রশংসায় কে না খুশি হয়!

সময় সুযোগ বুঝে একদিন মোক্ষম অস্ত্রটা প্রয়োগ করলাম৷ সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে মিডিয়ায় সমালোচিত হওয়া এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় একটা স্ট্যাটাস লিখে ফেললাম৷ লেখার নিচে সেই ছাত্রনেতার নাম জুড়ে দিলাম। নেতার চ্যালা চামুন্ডারা তাদের নেতাকে সময়ের সাহসী সন্তান, রাজপথের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হিসেবে সেই লেখা শেয়ার করতে লাগলো দলে দলে। আমি সুযোগ বুঝে ফেক আইডি থেকে লেখাটি মুছে ফেললাম। এখন আর স্ট্যাটাসটার উৎপত্তি নিয়ে কোন ধরণের প্রমাণ রইলো না। 

সরকারদলীয় ছাত্রনেতার সমালোচনামুখর সেই লেখা বেশ ভাইরাল হলো৷ এক সময় মন্ত্রীর এপিএসের চোখ গেলো সেই লেখায়। উনি মন্ত্রীকে দেখালেন। সাংবাদিক কিংবা বিরোধীদলের সমালোচনা সহ্য করা যায়, তাই বলে নিজ দলীয় ছাত্রনেতার সমালোচনা তার সহ্য হলো না। 

সরাসরি মামলা হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। দলের চেইন অফ কমান্ড এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিস্কার হলো সেই ছাত্রনেতা৷ 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জনপ্রিয় সেই ছাত্রনেতাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে...

Comments

    Please login to post comment. Login