"দোস্ত, মা মারা যাবার পর থেকে নিজের পছন্দমত খাবার রান্না করে খেতে পারি না। বাবা সব সময় চিৎকার চেঁচামেচি করে। তুই তো একা থাকিস-একটা গ্যাসের চুলা ম্যানেজ কর। আমি মাঝেমধ্যে তোর বাসায় গিয়ে রান্না করে খাব। না হয় তোর সাথে আমিও চুলা কেনায় শেয়ারে থাকলাম।"
রফিকের কথা শুনে মিলন কিছু সময়ের জন্য উদাস হয়ে গেল।
রফিক চুপচাপ বসে রইল। "চল, এখনই চুলা কিনে আনি"- মিলন চট করে লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্টটা পরে নিল৷
নিউমার্কেটে গিয়ে অনেক দেখে শুনে রফিক আর মিলন ভাগাভাগি করে অবশেষে গ্যাসের চুলা কিনে ফেলল।
ঘরে নতুন কিছু কেনা হলে সবারই ভাল লাগে। মিলনের ভালো লাগছে না৷ তার মায়ের কথা মনে পড়ছে৷
মা বেঁচে থাকতে একটা মোবাইল ফোন আর টিভি কেনায় কিছু টাকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে নি মিলন। ভেবেছিল আস্তে আস্তে মাকে সংসারের সবকিছু গুছিয়ে দেবে । কিন্তু সে সময়টুকু আর সে পায় নি।
ছোটোবেলা থেকেই মিলন দেখে এসেছে মা কষ্ট করে রান্না করত। নিজেই কুড়াল দিয়ে কাঠ কেটে সেই কাঠে রান্না করত। মাকে সুযোগ পেলেই বলত- "একটা গ্যাসের চুলা কিনে ফেলো তো মা, কতই বা আর দাম!"
"এই তো সামনের মাসেই ম্যানেজ করব।" মা হাসে।
কিন্তু সেই সামনের মাস আর কখনো আসে নি।
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় তাদের কাছে একটা গ্যাসের চুলা বিলাসিতা।
মিলনের মনে আছে, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিরা সুযোগ পেলেই শুনিয়ে দিত-তোর মা কৃপণ। ইচ্ছা করেই কিছু কেনে না।
মিলনের মনে পড়ছে- মাস খানেক আগেও মা কেঁদে কেঁদে ফোনে বলেছিল "ওরে আমার বাসায় আসতে বলে কে? দরকার নাই ওর মত আত্মীয় আমার।"
"কি হয়েছে?"
"ও জানে না আমার আয় রোজগার কেমন? তারপরেও প্রতিবার বাড়িতে এসে শুনিয়ে যায়-আমি নাকি কৃপণ লোক। ঘরের কয়েকটা জিনিস কিনতে কি বেশি টাকা লাগে নাকি!"
"তারপর?"
"টাকাটা যে কোথা থেকে আসে তা তো তুই জানিস। এতগুলা সমিতির কিস্তি। তোর আব্বার অই কয়টা পেনশনের টাকা। তোর অফিসের অবস্থাও ভাল না। তোকে যে কয়েকটা টাকা পাঠাব, তাও পারি না৷ সংসার সাজাব কিভাবে!"
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন চলে গেল।
সেদিন রাত তখন ৯টা বাজে। মিলন অফিসে কাজ করছিল। হঠাৎ ফোন বাজল। শরীফ ভাই ফোন করেছেন।
"কই তুই? খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আয় তো। তোর মা খুব অসুস্থ। হাসপাতালে যেতে হবে।"
কি এক অজানা কারণে সারাটা দিন মনটা ভয়ানক বিষন্ন ছিল মিলনের। অফিস থেকে ছুটি নিয়েই সে বাসার দিকে ছুটল। বাসায় ঢুকতে পারে নি- এমন সময় পথেই দেখতে পায় তার খালাতো ভাইয়েরা মোটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছে।
"কি হইছে আম্মার?"
"তেমন কিছু না। একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালে আছে, অক্সিজেন চলছে। জ্ঞান নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যা, রাতের বাস ধরতে হবে।"
মিলন একে একে আত্মীয় স্বজন সবাইকে ফোন দিল। সবাই একি কথা বলছে।
ঢাকা থেকে নেত্রকোনা যেতে হবে।
মিলনের মাকে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মন বলছে- এখন হয়ত জ্ঞান নেই। তবে সে গেলেই মা সুস্থ হয়ে যাবে।
সকালে বাস থেকে নেমে রিক্সায় উঠল মিলন। শরীফ ভাই আবার ফোন দিয়েছেন। শেষরাতেই মা তাকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে দূর অজানায়। যেখানে সে রিকশা নিয়ে পৌছাতে পারবে না। আর মায়ের ঘুমও ভাঙাতে পারবে না।
সারারাত বাসে বসে মিলন ভাবছিল মা হয়তো ঘুমিয়ে আছে। সে ডাকলেই মায়ের ঘুম ভাঙবে। কিন্তু শেষবারের মতো সে মা বলে ডাকতে পারে নি।
"মায়ের এখন আর সীমাহীন কষ্ট করতে হয় না। বেঁচে থাকলে হয়ত এখনো কষ্ট করেই যেতো"- মিলন ভাবতে লাগল।
গ্যাসের চুলায় শো শো করে আগুন জ্বলছে। মায়ের না কিনতে পারা সেই গ্যাসের চুলা।
রফিকের কথা শুনে মিলন কিছু সময়ের জন্য উদাস হয়ে গেল।
রফিক চুপচাপ বসে রইল। "চল, এখনই চুলা কিনে আনি"- মিলন চট করে লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্টটা পরে নিল৷
নিউমার্কেটে গিয়ে অনেক দেখে শুনে রফিক আর মিলন ভাগাভাগি করে অবশেষে গ্যাসের চুলা কিনে ফেলল।
ঘরে নতুন কিছু কেনা হলে সবারই ভাল লাগে। মিলনের ভালো লাগছে না৷ তার মায়ের কথা মনে পড়ছে৷
মা বেঁচে থাকতে একটা মোবাইল ফোন আর টিভি কেনায় কিছু টাকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে নি মিলন। ভেবেছিল আস্তে আস্তে মাকে সংসারের সবকিছু গুছিয়ে দেবে । কিন্তু সে সময়টুকু আর সে পায় নি।
ছোটোবেলা থেকেই মিলন দেখে এসেছে মা কষ্ট করে রান্না করত। নিজেই কুড়াল দিয়ে কাঠ কেটে সেই কাঠে রান্না করত। মাকে সুযোগ পেলেই বলত- "একটা গ্যাসের চুলা কিনে ফেলো তো মা, কতই বা আর দাম!"
"এই তো সামনের মাসেই ম্যানেজ করব।" মা হাসে।
কিন্তু সেই সামনের মাস আর কখনো আসে নি।
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় তাদের কাছে একটা গ্যাসের চুলা বিলাসিতা।
মিলনের মনে আছে, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিরা সুযোগ পেলেই শুনিয়ে দিত-তোর মা কৃপণ। ইচ্ছা করেই কিছু কেনে না।
মিলনের মনে পড়ছে- মাস খানেক আগেও মা কেঁদে কেঁদে ফোনে বলেছিল "ওরে আমার বাসায় আসতে বলে কে? দরকার নাই ওর মত আত্মীয় আমার।"
"কি হয়েছে?"
"ও জানে না আমার আয় রোজগার কেমন? তারপরেও প্রতিবার বাড়িতে এসে শুনিয়ে যায়-আমি নাকি কৃপণ লোক। ঘরের কয়েকটা জিনিস কিনতে কি বেশি টাকা লাগে নাকি!"
"তারপর?"
"টাকাটা যে কোথা থেকে আসে তা তো তুই জানিস। এতগুলা সমিতির কিস্তি। তোর আব্বার অই কয়টা পেনশনের টাকা। তোর অফিসের অবস্থাও ভাল না। তোকে যে কয়েকটা টাকা পাঠাব, তাও পারি না৷ সংসার সাজাব কিভাবে!"
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন চলে গেল।
সেদিন রাত তখন ৯টা বাজে। মিলন অফিসে কাজ করছিল। হঠাৎ ফোন বাজল। শরীফ ভাই ফোন করেছেন।
"কই তুই? খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আয় তো। তোর মা খুব অসুস্থ। হাসপাতালে যেতে হবে।"
কি এক অজানা কারণে সারাটা দিন মনটা ভয়ানক বিষন্ন ছিল মিলনের। অফিস থেকে ছুটি নিয়েই সে বাসার দিকে ছুটল। বাসায় ঢুকতে পারে নি- এমন সময় পথেই দেখতে পায় তার খালাতো ভাইয়েরা মোটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছে।
"কি হইছে আম্মার?"
"তেমন কিছু না। একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালে আছে, অক্সিজেন চলছে। জ্ঞান নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যা, রাতের বাস ধরতে হবে।"
মিলন একে একে আত্মীয় স্বজন সবাইকে ফোন দিল। সবাই একি কথা বলছে।
ঢাকা থেকে নেত্রকোনা যেতে হবে।
মিলনের মাকে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মন বলছে- এখন হয়ত জ্ঞান নেই। তবে সে গেলেই মা সুস্থ হয়ে যাবে।
সকালে বাস থেকে নেমে রিক্সায় উঠল মিলন। শরীফ ভাই আবার ফোন দিয়েছেন। শেষরাতেই মা তাকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে দূর অজানায়। যেখানে সে রিকশা নিয়ে পৌছাতে পারবে না। আর মায়ের ঘুমও ভাঙাতে পারবে না।
সারারাত বাসে বসে মিলন ভাবছিল মা হয়তো ঘুমিয়ে আছে। সে ডাকলেই মায়ের ঘুম ভাঙবে। কিন্তু শেষবারের মতো সে মা বলে ডাকতে পারে নি।
"মায়ের এখন আর সীমাহীন কষ্ট করতে হয় না। বেঁচে থাকলে হয়ত এখনো কষ্ট করেই যেতো"- মিলন ভাবতে লাগল।
গ্যাসের চুলায় শো শো করে আগুন জ্বলছে। মায়ের না কিনতে পারা সেই গ্যাসের চুলা।