পোস্টস

গল্প

অর্ধমৃত

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাসুদ হোসেন

মূল লেখক সাকিব

অনুবাদক Masud Hosen

১। সমুদ্রের মাঝখানে এক জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রানখুলে ধন্যবাদ জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়।কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো।এরই মধ্যে সে সমুদ্রতীরে তার জন্যে একটা ছোট ঘর তৈরী করে ফেললো। সমুদ্রের মাছ ধরে এবং বন থেকে ফলমূল শিকার সে বেঁচে থাকলো।

এরই মধ্যে সে একদিন খাবারের খোঁজে বনের মধ্যে গেল। বন থেকে সে যখন ফিরে এলো তখন দেখলো যে তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগে পুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং তার কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে।লোকটি চিৎকার করে উঠলো,‘হায় আল্লাহ,তুমি আমার ভাগ্যে এটাও রেখেছিলে!’

পরদিন সকালে এক জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভাঙলো।জাহাজটি সেই দ্বীপের দিকে তাকে উদ্ধার করার জন্যই আসছিলো। সে অবাক হয়ে বললো,‘তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এখানে আটকা পরে আছি!’
জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো,‘তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখে।'
 

২। বিশাল এক পাহাড়ের উপরে এক ঈগল বাসা বানিয়েছিলো। ঈগলের বাসায় ছিলো তার চার চারটি ডিম। প্রতিদিন সকালে সে এগুলো রেখে খাবারের খোঁজে উড়ে যেত।

একদিন ঈগল যখন বাসার বাইরে ছিলো তখন ভূমিকম্পে গোটা পাহাড় নড়ে উঠলো। এতে ঈগলের একটি ডিম বাসা থেকে ছিটকে পরে গেল। গড়াতে গড়াতে সেই ডিম এসে পড়লো পাহাড়ের নিচের এক মুরগীর বাসার উঠোনে ।

মুরগী সেই ডিমটিকে নিজের বাসায় নিয়ে এলো। অন্যান্য ডিমের সাথে রাখলো। যত্ন করে তা দিতে থাক...লো। একদিন সেই ডিম ফুটে ঈগলের একটি সুন্দর বাচ্চাও বের হলো। মুরগীর বাচ্চাদের সাথেই ঈগলের বাচ্চাটি বড় হয়ে উঠতে লাগলো।

কিন্তু সে ভেতর থেকে যে সবসময় অন্য কিছু অনুভব করতো। আকাশে একদিন ঈগলের একটা ঝাঁককে উড়ে বেড়াতে দেখে সে মুরগীকে বললো, ইস, যদি আমিও তাদের মত উড়ে বেড়াতে পারতাম। মুরগী হেসে উত্তর দিলো, তুমি কিভাবে উড়বে? তুমি তো মুরগী এবং মুরগী কখনো উড়ে না।

ঈগল মাঝে মাঝেই তার স্বগোত্রীয়দের উড়ে বেড়াতে দেখতো এবং স্বপ্ন দেখতো সেও তাদের মতই উড়ে বেড়াবে।

কিন্তু প্রতিবার সে তার স্বপ্নের কথা জানালে মুরগী বলতো যে এটা একেবারেই অসম্ভব। মুরগীর এই কথাটিই ঈগল বিশ্বাস করতে শিখলো এবং তার জীবনটা বাকী মুরগীদের মতই কাটিয়ে দিলো। অনেক দিন এভাবে কাটানোর পর একদিন সে মারাও গেল।

আসলে আমাদের জীবনেও এটা চরমতম সত্য। তুমি যা বিশ্বাস করতে শেখো একদিন তুমি তাই হয়ে উঠবে। তাই তুমি যদি ঈগলের মত উড়ার স্বপ্ন দেখো, তবে সেই স্বপ্নকেই অনুসরন করো। মুরগীর কথায় কান দিতে যেও না.


৩। অনেক বড় এক কোম্পানী হঠাৎ করে ব্যবসায় লোকসান করে বসলো।এক দুপুরে সেই কোম্পানীর কর্মচারীরা বাইরের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে ফেরার সময় অফিসের প্রবেশমুখে একটি নোটিশ দেখতে পেল।নোটিশে লেখা ছিল,'আমাদের কোম্পানীর লোকসানের জন্য যে ব্যক্তিটি দায়ী যে গতকাল মারা গেছে।সেমিনার রুমে একটি কফিনে তার লাশ রাখা হয়েছে।যে কেউ তা দেখতে চাইলে আমন্ত্রিত।'
একজন সহকর্মীর মত্যুর খবর শুনে প্রথমে লোকেরা দুঃখ পেল।তবে এরপর তারা কৌতুহলী হয়ে উঠলো এই ভেবে যে আসলে কে হতে পারে সেই ব্যক্তি।

তারা সবাই সেমিনার রুমে এসে একত্রিত হলো,সবাই ভাবতে লাগলো,'আসলে কে সেই লোক যে আমাদের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল? তবে সে যেই হোক, এখন অন্তত সে আর বেঁচে নেই।
একে একে তারা যখন কফিনের কাছে গেল এবং ভেতরে তাকালো হঠাৎ তারা কেমন যেন বাকশূন্য হয়ে গেল, হতভম্ভ হয়ে গেল। যেন তাদের খুব আপন কারো লাশ সেখানে রাখা ছিল।
কফিনের ভেতর আসলে রাখা ছিল একটা আয়না।যেই ভেতরে তাকিয়েছিলো সে তার নিজে চেহারাই দেখতে পাচ্ছিলো।আয়নার একপাশে একটা কাগজে লেখা ছিল,
তোমার সাফল্যের পথে বাধা দিতে সক্ষম শুধুমাত্র একজনই আছে গোটা পৃথিবীতে, আর সে হচ্ছো 'তুমি' নিজে।

তুমিই সেই একমাত্র ব্যক্তি যে তোমার জীবন পরিবর্তন আনতে পারে, তোমাকে সুখী করতে পারে, তোমাকে সাহায্য করতে পারো,সুখী করতে পারো।তোমার জীবন তখন বদলে যায় না যখন তোমার অফিসের বস বদলায়,যখন তোমার অভিভাবক বদলায়,তোমার বন্ধুরা বদলায়, তোমার জীবন তখনই বদলায় যখন তুমি নিজে বদলাও।তোমার সক্ষমতা সম্পর্কে তোমার নিজের বিশ্বাসের সীমাটা যখন তুমি অতিক্রম করতে পারো, শুধু তখনই তোমার জীবন বদলায়,পূরন হয় জীবনের লক্ষ্য গুলো।। নিজের আলোয় আলোকিত করো চারপাশ।।
 

৪। রূপকথার এক গ্রামের নদীর ধারে একটি ঘর ছিল যার নাম ছিল "এক হাজার আয়নার ঘর"।
সেই গ্রামে সুন্দর হাসি মাখা মুখের একটি ছোট্ট মেয়ে ছিল।মেয়েটি একদিন তার বাবা মা'র মুখে শুনতে পায়, তাদের গ্রামের "আয়না ঘর" এর কথা। এর আগে মেয়েটি কোন দিন ঘর থেকে বের হয় নি। সে প্রকৃতি দেখেনি,দেখেনি কোনও বাস্তবতা।তো সে একদিন চিন্তা করলো যে সে ঐ আয়নার ঘর দেখতে যাবে।কিন্তূ একা একা যেতে সাহস না হওয়াই সে তার সমবয়সী আরেকটি মেয়েকে সাথে নিয়ে গেলো। আয়নার ঘরের সামনে হাজির হয়ে প্রথম মেয়েটি ভাবলো যে আগে সে ঐ ঘরে ঢুকবে আর সব কিছু দেখে এসে বাইরে এলে তবেই ঐ দ্বিতীয় মেয়েটি ঢুকবে।

কথামতো প্রথম মেয়েটি ঐ ঘরের ভেতর ঢুকলো।ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আশ্চর্য সব রঙ্গিন কারুকাজ দেখে মেয়েটির মুখ আনন্দে ভরে উঠলো।সে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে সেই একহাজার আয়নার ঘরে প্রবেশ করলো।ঘরে ঢুকেই তার চোখ ছানাবড়া। মেয়েটি দেখলো সেখানে ঠিক তারই মতো দেখতে আরও একহাজার মেয়ে হাস্যোজ্জল মুখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে যা করছে বাকিরাও ঠিক তাই তাই করছে।

মেয়েটি এবারে সব কিছু দেখে অনেক মজা পেয়ে বাইরে চলে এল এবং তার সাথীকে সব ব্যাপারে খুলে বলল এবং বলল যে "এমন সুন্দর জায়গা আমি আগে কখনো দেখেনি।সুযোগ পেলেই এবার থেকে আমি এই জায়গায় চলে আসবো।"

সব কথা শুনে এবারে দ্বিতীয় মেয়েটি কিছুটা ভয় ভয় মন নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো। ঘুরতে ঘুরতে আতংকিত মনে সেও এবারে সেই "এক হাজার আয়নার" ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে মেয়েটি ভয় পেয়ে উঠলো। ভয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো, আতঙ্কিত হয়ে উঠলো চোখ। সে খেয়াল করলো ঠিক তারই মতো দেখতে আরও এক হাজার মেয়ে আতঙ্কিত আর ভয়ার্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি যেই ভয়েতে দুই হাত তুলে বলছে -তোমারা কারা- সাথে সাথে বাকী এক হাজার মেয়েও দুই হাত তুলে ওর দিকে নজর দিচ্ছে। এবারে মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল এবং প্রথম মেয়েটিকে বলল,"শীগগিরই বাড়ি চল,এটা খুব বাজে জায়গা।আমি আর কোনওদিন এই জায়গায় আসব না"

শিক্ষাঃ জীবনটাও একটা আয়না স্বরূপ। আপনি যেভাবে জীবনকে দেখবেন, সেও ঠিক সে ভাবেই আপনার কাছে ধরা দিবে। যারা সাহসিকতা, ভালোবাসা, উৎসাহ, জয় করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, জীবন তাদের কাছে অনেক সহজ ও আনন্দ ময় হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু যারা, হতাশা, ভয়, মানসিক অবসাদ নিয়ে সামনে এগুতে চায়, তাদের চোখে সাফল্য যেন মরীচিকা । জীবন হয়ে উঠে ক্লান্তিকর, বিষণ্ণময়। বাস্তবতাকে আপনি যেভাবে দেখবেন, আপনার সামনে তা সেভাবেই ধরা দিবে।
 

৫। অনেক দিন আগে এক স্বার্থপর লোক ছিলো।অন্যের সম্পদে ভাগ বসানোর জন্যে সে সবসময় সুযোগ খুঁজতো। কিন্তু সে তার নিজের সম্পদের এক আনাও কারো সাথে শেয়ার করতে রাজি ছিলো না-তার বন্ধুদের সাথেও না,গরীবদের সাথেও না। একদিন লোকটি রাস্তায় তার ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে ফেললো।তার এক বন্ধু তার এই স্বর্নমুদ্রা হারানোর কথা শুনলো।সে আবার ছিলো খুব দয়ালু একজন মানুষ।

ঘটনাক্রমে বন্ধুটির মেয়ে রাস্তায় এই ত্রিশটি স্বর্নমদ্রা কুড়িয়ে পেল। সে বাড়িতে ফিরে এই কথা জানালে তার বাবা বলে যে এটা নিশ্চয় তার বন্ধুর হারিয়ে যাওয়া সেই স্বর্নমদ্রা।তাই সে লোকটির কাছে গেল তাকে মুদ্রাগুলো ফিরিয়ে দিতে।

কিন্তু তার স্বার্থপর বন্ধুটি যখন শুনলো যে তার মেয়ে এই মুদ্রা কুড়িয়ে পেয়েছে তখন সে বললো যে ‘আমার মোট চল্লিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিলো।তোমার মেয়ে নিশ্চয়ই এখান থেকে দশটি মুদ্রা সরিয়েছে।আমাকে তোমার চল্লিশটি মুদ্রাই দিতে হবে।’

একথা শুনে লোকটি রেগে গেল এবং মুদ্রাগুলো সেখানে রেখে চলে গেল।কিন্তু স্বার্থপর বন্ধুটি ছিলো নাছোরবান্দা। সে বিচার নিয়ে আদালতে।

বিচারক তার অভিযোগ মন দিয়ে শুনলো এবং সেই বাবা ও তার মেয়েকে ডেকে পাঠালো।যখন তাদের নিয়ে আসা হলো তখন সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো যে সে কতটি মুদ্রা পেয়েছিলো?মেয়েটি জানালো যে ত্রিশটি স্বর্ণমুদ্রা।বিচারক আবার স্বার্থপর লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো সে কতটি মুদ্রা হারিয়েছিল?লোকটি জানালো যে ‘মোট চল্লিশটি স্বণ মুদ্রা’।

বিচারক এবার লোকটিকে জানালো যে মেয়েটি যে মুদ্রা কুড়িয়ে পেয়েছে সেগুলো তার নয় কারন মেয়েটি পেয়েছে ত্রিশটি মুদ্রা কিন্তু সে হারিয়েছে চল্লিশটি মুদ্রা। সে মেয়েটিকে এই মুদ্রাগুলো তার সাথে নিয়ে চলে যেতে বললো এবং জানালো যে যদি কেউ জানায় যে ত্রিশটি মুদ্রা হারিয়েছে তবে তাকে আবার ডেকে পাঠাবে।

বিচারক লোকটিকেও বললো যে কেউ যদি খবর দেয় যে সে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছে তবে তাকে ডেকে পাঠানো হবে।তখন সাথে সাথে স্বার্থপর লোকটি স্বীকার করলো যে সে মিথ্যা বলেছিলো এবং আসলে সে ত্রিশটি স্বর্ণমুদ্রাই হারিয়ছে।তাই তাকে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু বিচারক তার কোনো কথাই শুনলো না।

৬। একদিন ছেলেটি তার মা'র কাছে গিয়ে একটা বিল জমা দিল...

মা ছেলের দেয়া চিরকুটটা পড়লেন...

ছেলে লিখেছেঃ

১. গাছে পানি দেয়াঃ ১০ টাকা

২. দোকান থেকে এটা-ওটা কিনে দেয়াঃ ১৫টাকা

৩. ছোট ভাইকে কোলে রাখাঃ ৪০টাকা

৪. ডাস্টবিনে ময়লা ফেলাঃ ২০টাকা

৫. পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাঃ ৫০টাকা

৬. মশারী টানানোঃ ৫ টাকা

... মোটঃ ১৪০ টাকা!!

মা বিলটা পড়ে মুচকি হাসলেন...

তারপর তার আট বছরের ছেলের মুখের দিকে খানিকক্ষণ

তাকিয়ে রইলেন...

তার চোখে পানি চলে আসছে...

তিনি এক টুকরো কাগজ নিয়ে লিখতে লাগলেন....

১. তোমাকে ১০মাস পেটে ধারনঃ বিনা পয়সায়

২. তোমাকে দুগ্ধপান করানোঃ বিনা পয়সায়

৩. তোমার জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকাঃ বিনা পয়সায়

৪. তোমার অসুখ-বিসুখে তোমার জন্য দোয়াকরা, সেবা করা,

ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া,তোমার জন্য চোখের

পানি ফেলাঃ বিনা পয়সায়

৫. তোমাকে গোসল করানোঃ বিনা পয়সায়

৬. তোমাকে গল্প,গান,ছড়া শোনানোঃ বিনা পয়সায়

৭. তোমার জন্য খেলনা, কাপড় চোপড় কেনাঃবিনা পয়সায়

৮. তোমার কাথা ধোওয়া, শুকানো, বদলে দেওয়াঃ বিনা পয়সায়

৯. তোমাকে লেখাপড়া শেখানোঃ বিনা পয়সায়

১০. এবং তোমাকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসাঃ সম্পূর্ন

বিনা পয়সায় …

অতঃপর সন্তান তার মার হাত থেকে বিল টা নিয়ে নিচে ছোট্ট

করে লিখে দিল=এ বিল জীবন দিয়েও পরিশোধ করাসম্ভব নয়।
 

৭। এক রাজা তার লোকেদের একবার একটি পুকুর বানাতে বললেন। পুকুর বানানো শেষ হলে রাজ্যে ঘোষনা দিয়ে দেয়া হলো সেদিন রাতেই যেন সবাই তাদের বাড়ি থেকে এক গ্লাস করে দুধ নিয়ে এসে সেই পুকুরে ঢেলে দেয়। রাজা সকালবেলা তার প্রাসাদের বারান্দা থেকে দুধের পুকুর দেখতে চান।
সবার কাছে রাজার এই নির্দেশ পৌছে দেয়া হলো। একলোক ভাবলো যে সবাইতো গ্লাসে করে দুধ নিয়ে যাবে, সে যদি রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে দুধের যায়গায় পুকুরে এক গ্লাস পানি দিয়ে আসে তবে কেউই তা বুঝবে না। তাই সে সকলের সাথে গিয়ে সবার অলক্ষ্যে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়ে এলো।
সকাল বেলা রাজা তার প্রাসাদের বারান্দায় এসে হাহাকার করে উঠলো। তার সাধের পুকুর শুধু পানি দিয়ে ভর্তি ছিল, সেখানে এক ফোঁটা দুধও ছিল না।
আসলে সবাই ভেবেছিলো যে- আমার আর দুধ নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই, অন্যরা তো পুকুরে দুধ ঢালবেই।

৮। এক মহিলা তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখলো উঠানের সামনে তিনজন বৃদ্ধ ব্যক্তি বসে আছেন।তিনি তাদের কাউকেই চিনতে পারলেন না। তাই বললেন, ‘আমি আপনাদের কাউকেই চিনতে পারলাম না,কিন্তু আপনারা হয়তো ক্ষুধার্ত। আপনারা ভেতরে আসুন,আমি আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি...‘তারা জিজ্ঞেস করলেন ‘ বাড়ির কর্তা কি আছেন?’ মহিলা বললেন,’না’। ‘তিনি বাইরে গেছেন।’ ‘তাহলে আমরা আসতে পারবো না।‘
সন্ধ্যায় যখন বাড়ির কর্তা ঘরে ফিরে সব শুনলেন তখন তিনি বললেন,'যাও তাদের বলো যে আমি ফিরেছি এবং তাদের ঘরে আসার জন্যে অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।‘
মহিলা বাইরে গেলেন এবং তাদের ভেতরে আসতে বললেন।কিন্তু তারা বললো,‘আমরা এভাবে যেতে পারি না।'
মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,’ কিন্তু কেন? আবার কি সমস্যা?’
বৃদ্ধ লোকেদের মধ্যে একজন বললেন,’আমাদের মধ্যে একজনের নাম সম্পদ।‘আরেক জনের দিকে নির্দেশ করে বললেন,’তার নাম সাফল্য এবং আমি ভালবাসা।এখন আপনি ভেতরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিন আমাদের কাকে আপনি ভেতরে ঢুকতে দেবেন।'
মহিলা যখন ভেতরে গিয়ে সব খুলে বললেন তখন তার স্বামী অত্যন্ত খুশি হয়ে গেলেন এবং বললেন,'আসাধারন! ­ চল আমরা সম্পদকে ডাকি,তাহলে আমরা ধনী হয়ে যাব!'

তার স্ত্রী এতে সম্মতি দিলেন না,’নাহ,আমার মনে হয় আমাদের সাফল্যকেই ডাকা উচিত।' তাদের মেয়ে ঘরের অন্য প্রান্তে বসে সব শুনছিলো। সে বলে উঠলো,'তোমাদের কি মনে হয় না আমাদের ভালবাসাকেই ডাকা উচিত? তাহলে আমাদের ঘর ভালবাসায় পূর্ন হয়ে উঠবে।' লোকটি বললো,‘ঠিক আছে আমরা তাহলে আমাদের মেয়ের কথাই শুনবো, তুমি বাইরে যাও এবং ভালবাসাকেই আমাদের অতিথি হিসেবে ডেকে নিয়ে এসো।‘
মহিলাটি বাইরে গেলেন এবং বললেন’আপনাদের মধ্যে ভালবাসা কার নাম? অনুগ্রহ করে তিনি ভেতরে আসুন,আপনিই আমাদের অতিথি।' ভালবাসা নামের বৃদ্ধ উঠে দাড়ালেন এবং বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলেন,বাকী দুজনও উঠে দাড়ালেন এবং তাকে অনুসরন করতে লাগলেন।
মহিলাটি এতে ভীষন অবাক হয়ে গেলেন এবং বললেন, 'আমিতো শুধু ভালবাসা নামের বৃদ্ধকে ভেতরে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছি,আপনারা ­ কেন তার সাথে আসছেন?’ বৃদ্ধ লোকেরা বললো,'আপনি যদি সম্পদ আর সাফল্যকে আমন্ত্রন করতেন তবে আমাদের বাকী দুজন বাইরেই থাকতাম, কিন্তু আপনি যেহেতু ভালবাসাকে আমন্ত্রন জানিয়েছেন,সে যেখানে যায়,আমরা দুইজনও সেখানেই যাই।

যেখানেই ভালবাসা থাকে,সেখানেই সম্পদ ও সাফল্যও থাকে।‘ ♥♥

৯। একদিন এক প্রসিদ্ধ ডাক্তার এক গ্রামে রোগী দেখতে গেলেন। খুব অসুস্থ একজন লোক হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলেন। তাকে পরীক্ষা শেষে বের হয়ে আসার সময় লোকটি ডাক্তারের হাত ধরলো,

- ডাক্তার, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই।মৃত্যুর পর কি আছে তুমি জানো?

-আমি আসলে জানি না।

লোকটি বললো,

-তুমি জানো না? তুমি কি ধর্ম মানো না?

ডাক্তার চুপ করে রইলো। এরপর সে মাথা ঘুড়িয়ে কেবিনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই দরজার ওপাশ থেকে ডাক্তারের পোষা এস্কিমো জাতের সাদা লোমের কুকুরটা লাফ দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লো। এসেই আনন্দে তার লেজ নাড়াতে লাগলো। জিভও বের করে রইলো।
এবার ডাক্তার তার রোগীর দিকে তাকালো।বললো, -তুমি কি আমার পোষা কুকুরটিকে দেখলে? সে এই রুমটিকে এর আগে কখনো দেখেনি। সে জানতোও না ভেতরে কি আছে। সে শুধু জানতো ভেতরে তার মালিক আছে। তাই আমি দরজা খোলার সাথে সাথে সে ভেতরে ছুটে আসে। নির্ভয়ে ।  মৃত্যুর ওপারে কি আছে তা আমিও খুব কম জানি,কিন্তু আমি একটা ব্যাপার জানি। আমি জানি যে আমার মালিক সেখানে রয়েছেন এবং সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট ।।

১০। এক লোক চুল কাটতে গেলো সেলুনে। সেলুনে চুল কাটার সময় সাধারনত যেমনটি হয়, তেমনি নরসুন্দরের সাথে লোকটির গল্প জমে গেলো। এ গল্প থেকে সে গল্প, এমন করে স্রষ্টা আছেন কি নাই এমন আলোচনায় চলে গেলো তারা।
হটাত করে নরসুন্দর বলে উঠলো, "আমি বিশ্বাস করি স্রষ্টা বলে কেউ নেই"।
লোকটি তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি এমনটি বললে কেন??"

নরসুন্দর লোকটি বললো, "তুমি অন্ধ নাকি?? শুধু এখান থেকে রাস্তায় গিয়ে দেখো, দেখবে স্রষ্টা বলে কেউ নেই। যদি এমন কেউ থাকতোই তবে এতো মানুষ অনাহারে কষ্ট পেতো না। আমাকে বল, স্রষ্টা বলে যদি আসলেই কেউ থাকতো তবে কি এতো মানুষ অসুখে কষ্ট পেতো??এমনকি দুধের শিশুরাও বাদ যায় না। যদি স্রষ্টা বলে আসলেই কেউ থাকতো , তবে কেউ কষ্টে থাকতো না। কষ্ট পেতো না। আমি বুঝি না, যদি কেউ স্রষ্টা বলে কেউ থাকতোই তবে নিজের সৃষ্টিকে এমন কষ্ট কেউ দিতে পারে কি করে??"
চুল কাটাতে আসা লোকটি একটু ভাবলো এবং চুপ করে থাকলো। সে কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাইলো না। চুল কাটা শেষ হলে লোকটি দোকানের বাহিরে আসলো।

বাহিরে আসার পর উস্কোখুস্কো লম্বা জট পাকানো ময়লা চুলের - দাড়ির এক লোককে দেখতে পেলো রাস্তায় দাড়িয়ে। দোকানে ফিরে লোকটি নরসুন্দরকে বললো, "তুমি জানো কি এ এলাকায় কোন নরসুন্দর নেই"।
নরসুন্দর অবাক হয়ে বললো, "কি সব বাজে বকছো?? এ এলাকায় নরসুন্দর থাকবে না কেন?? এই মাত্রই তো আমি তোমার চুল কেটে দিয়েছি"।
এবার লোকটি বাহিরের লম্বা জট পাকানো লোকটিকে দেখিয়ে বললো, "তাহলে নরসুন্দর থাকার পরও কিভাবে এমন নোংরা লম্বা জট পাকানো চুল নিয়ে এ এলাকায় কেউ থাকে??"
নরসুন্দর লোকটি জবাব দিলো, "তাকে তো আমার কাছে আসতে হবে চুল কাটতে।। নাকি??"

কেমন লাগল জানাবেন কিন্তু।আর ও জানা গল্প থাকলে দিবেন,আমি পোস্টে এড করে দিব।সামুতে এখন কম আসি,ব্লগিং এর আগ্রহ কেন জানি কমে যাচ্ছে।ভাল থাকবেন ধন্যবাদ..