পোস্টস

চিন্তা

সমাজ সংস্করণ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

দুর্গন্ধ সমাজকে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে সেই সামাজিক অবকাঠামোর ভিতরকার পচন ও অবক্ষয়ের ধারা। সমাজ যখন নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, এবং ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুত হয়, তখন তার ভেতরে জন্ম নেয় এক ধরনের অভ্যন্তরীণ দুর্গন্ধ, যা আস্তে আস্তে সেই সমাজের প্রতিটি স্তরকে গ্রাস করে। এই দুর্গন্ধ একেবারে সুকৌশলে ছড়িয়ে পড়ে, প্রথমে কেবল কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে, তারপর পুরো সমাজের চেতনা এবং নৈতিক অবকাঠামোকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়।

 

নৈতিক পতন ও স্বার্থপরতা:


দুর্গন্ধ সমাজ হলো এমন এক জগৎ, যেখানে ব্যক্তি স্বার্থ এবং ক্ষমতার লোভ সামাজিক নীতির ওপর প্রাধান্য পায়। এখানে মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য অন্যদের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না। সত্য ও মিথ্যার বিভেদ মুছে যায়, এবং মানুষ ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, এই ভঙ্গুর সামাজিক কাঠামোর মধ্যে টিকে থাকার জন্যই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া অপরিহার্য। এর ফলে, সমাজে অসততা এবং অসাম্যতার দুর্গন্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

 

 অবিচার ও বৈষম্যের রেশ:
 

যখন সমাজের একটি অংশ সম্পদ, শিক্ষা, এবং সুযোগ সুবিধার সবটুকু ভোগ করে, আর অন্য অংশ বঞ্চিত থাকে, তখন সেখানে বৈষম্য এবং অবিচারের পচন সৃষ্টি হয়। এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানসিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষয়ও ঘটায়। যাদের সুযোগ নেই, তারা হতাশায় ডুবে থাকে, আর যারা সুযোগ পেয়েছে, তারা নিজেদের প্রাধান্যকে চিরস্থায়ী করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে। এর ফলে, এই দুর্গন্ধ একসময় এতটাই প্রচণ্ড হয় যে, তা পুরো সমাজকে অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত ও দুর্বল করে দেয়।

 

নীরবতার করাল গ্রাস:
 

দুর্গন্ধ সমাজের আরেকটি ভয়াবহ দিক হলো নীরবতার গ্রাস। এখানে অধিকাংশ মানুষ অন্যায়, দুর্নীতি, এবং অবিচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায়। তারা মনে করে, যদি তারা কিছু বলে, তবে তারা নিজেরাই সমস্যায় পড়বে। তাই, এই নীরবতা সমাজের দুর্গন্ধকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। একটি সভ্যতার সংকট তখনই তীব্র হয়, যখন সেই সমাজে ন্যায়বিচারের পক্ষে কণ্ঠস্বর তেমন শোনা যায় না।

 

আশা ও পরিবর্তনের আলোকছটা:
 

তবে, এই দুর্গন্ধের মাঝেও একটি গভীর উপলব্ধি রয়েছে। যে কোনো পচন বা দুর্গন্ধ যখন চরমে পৌঁছায়, তখন তা এক ধরনের পরিবর্তনের দাবি তোলে। সমাজের ভেতরকার এই পচনই একসময় মানুষকে জাগিয়ে তোলে, তাদের মধ্যে একটি নতুন আলোর সন্ধান দেয়। মানুষ বুঝতে শুরু করে, এই অন্ধকার, এই অবক্ষয় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। সমাজের নীতি এবং সংস্কৃতিতে এক ধরনের নতুন জাগরণ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা সেই দুর্গন্ধকে দূর করে নতুন স্বচ্ছ বাতাস নিয়ে আসে।

 

দুর্গন্ধ সমাজ হলো এক অশুভ চক্র, যেখানে মানুষ নৈতিকতা, সত্য, এবং সততার পরিবর্তে ক্ষমতা ও স্বার্থকে বেছে নেয়। তবে এই অবক্ষয় চূড়ান্ত হলেও, তার ভেতরেই পরিবর্তনের সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। যেই মুহূর্তে সমাজের অধিকাংশ মানুষ এই দুর্গন্ধকে মেনে নিতে অস্বীকার করবে, সেদিন থেকেই শুরু হবে নতুন দিনের আগমন। এজন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, জবাবদিহি, এবং সক্রিয় নাগরিক সচেতনতা, যা এই দুর্গন্ধ সমাজকে শুদ্ধ করে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবে।