পোস্টস

গল্প

অন্তর্ধান: ছায়ার অন্তরালে এক গোপন রহস্য

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্রিপটিক ডেন

প্রথম দৃশ্য

১৯৯৮ সাল,ধানমন্ডির এক বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী খন্দকার শফিকুল সুলতান। সবাই তাকে সুলতান ভাই নামেই চিনতো। একদিন নিজের অফিস থেকে একটি মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ কি যে হলো, তাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে ৩ দিন হয়ে গেলো বাড়ির লোক খুবই চিন্তিত কেউ বুঝতে পারছে না কে.এস সুলতান কোথায় গেছেন কি হয়েছে তার।

 

দ্বিতীয় দৃশ্য

কে.এস সুলতানকে পাওয়া যাচ্ছে না তার ২৬ বছর হয়ে গেছে। পরিবারের লোকদের মধ্যে কে.এস সুলতানের মা গত হয়েছেন সুলতান গুম হওয়ার ২ বছর পরেই। তার স্ত্রীকে ছেলেমেয়েয়া দিয়ে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। স্ত্রীও মারা গেছেন ২০০১ সালে। আর তার দুজন ছেলেমেয়ে, দাদি মারা যাওয়া আর বাবার গুম হওয়া এসবের পরে সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে নেয় নিজেদের নামে। ছেলেটা ৩৪ বছর বয়স, নিজের স্ত্রী ও সন্তান সাথে এতবড় সম্পদ নিয়ে চলে যায় আমেরিকাতে।আর মেয়েটা? সে ২৮ বছর বয়সে হয়ে যায় ব্যাবসার মালিক। দাদি মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েরা মাকে দিয়ে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে আর ভাইও থাকে আমেরিকায় তাই মেয়েটা একাই হিয়ে যায় কে.এস সুলতানের ব্যাবসা, সম্পদ, ব্যাবসা জগতের রাজত্বের একমাত্র মালকিন। কে.এস সুলতানের ছেলে-মেয়ের নাম : আজওয়াদ খন্দকার (ছেলে), রিয়ানা ফাইরোজ অধরা(মেয়ে)।

 

তৃতীয় দৃশ্য 

রিয়ানা আজ নিজের অফিসে বসে কাজ করছিল।নিজের মনেই কি যেন ভেবে হাসছিল। কেন তিনি এমন খুশি খুশি মেজাজে ছিলেন জানতে চান নিশ্চয়ই? তাহলে শুনুন,অফিসের পাশেই এক প্রাইভেট জার্নাল কোম্পানি। সেখানের চিফ জার্নালিস্ট ইভান চৌধুরী।দেশসেরা ইন্ড্রাস্টির মালকিন রিয়ানার মিটিংয়ে জার্নালিস্টরা তো আসবেই তাই তিনমাস আগে ইভান চৌধুরী (৩০ বছর) এসেছিল এখানে।ভদ্র,নরম,সহজ-সরল এসব শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যাবে ইভানের ব্যাক্তিত্বকে। রিয়ানার জীবনে অনেকেই এসেছিল,এই ব্যাপারনিয়ে আলোচনার তুঙ্গে থাকে সে তবে তার কাছে এসব কোনো ম্যাটারই না। নিজের মাস্টারপ্লানগুলো দিয়ে ব্যাবসায় সফল সে তাই ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই রিয়ানার।যাইহোক,ইভানকে রিয়ানার অন্যরকম লেগেছে, ও এরকম মানুষ কমই দেখেছে বলে মনে হচ্ছে ওর।কতো ফরম্যালিটি,কতো জেন্টেলম্যানলি হতে পারে একজন এসব আকর্ষন করেছিল রিয়ানাকে।তাই এক প্রকার সেই সপ্তাহের মধ্যেই ইভানকে নিজের প্রিন্স চার্মিং ভেবে ফেলে সে।ফলস্বরূপ তিনমাস পর নিজের মনের কথা জানাতে ইভানকে ডেকে ফেলে নিজের অফিসে।

রিয়ানার অফিস কেবিনের দরজায় নক হলো 

“ম্যাডাম আসতে পারি?”- এক পুরুষালি কন্ঠ

“কাম ইন”- রিয়ানা বলল

কালো রঙের স্যুট পরা এক ৬ ফুট লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী লোক প্রবেশ করল রুমে।নিছক ভদ্রলোক,মাথা একটু নিচু করেই রেখেছে।

রিয়ানা: "গুড মর্নিং মি.ইভান।" ডেস্কের সামনের চেয়ারে ইংগীত করে রিয়ানা ইভানকে বসতে বলল তারপর।

ইভান: "গুড মর্নিং ম্যাডাম"

রিয়ানা:"তো কেমন যাচ্ছে আপনার দিনকাল?

ইভান: জ্বি ম্যাডাম ভালোই।আপনি কেমন আছেন? আর আমাকে হঠাৎ কল দিলেন,কোনো বিশেষ কিছু?

রিয়ানা: আপনাকে কল দেওয়ার কারণ আছে। আমি আসলে সরাসরিই বলি তাহলে।

ইভান: অবশ্যই ম্যাডাম বলুন কী ব্যাপার? এজেন্সি কোনো সমস্যা করে ফেলেছে?

রিয়ানা: বেশ প্রফেশনাল আপনি(মুচকি হেসে)। নাহ আমি কাজের কথা বলছি না ব্যাপারটা একটু….ব্যাক্তিগত

ইভান: (ব্যাক্তিগিত শুনে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে) কী এমন ব্যাপার ম্যাডাম? আমি কী কোনো ভুল করে ফেলেছি?

রিয়ানা: (হেসে) হাহাহা।আপনি অনেক বেশি সিরিয়াস দেখছি? নাহ নাহ আপনি কিছু করেননি। আর প্লিজ একটু রিলাক্স থাকুন আর হ্যা আমাকে ম্যাডাম বলার দরকার নেই।রিয়ানাই ডাকতে পারেন

ইভান: আচ্ছা ধন্যবাদ। যাহোক,কিযেন বলতে চাচ্ছিলেন?

রিয়ানা: হ্যা আসলে আপনার মধ্যে এমন দেখতে পেয়েছি যা আমি আগে কখনো কোনো ছেলের মধ্যে দেখিনি। আপনাকে সত্যি বলতে….আমার ভালো লেগে গেছে।কিশোরী হলে বলেই দিতাম লাভ ইউ তবে এখনই নয় আপনার উত্তরের অপেক্ষায়।

ইভান: কী?…কী বললেন ম্যাডাম?

রিয়ানা: হাহাহা। আপনি দেখি ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে গেলেন। যাইহোক,আমি কিন্তু সিরিয়াস।

ইভান: আচ্ছা ম্যাডাম(নিজেকে শান্ত করে)। আসলে আপনি একজন বিজনেস ম্যাগনেট আর আপনি বেটার কাউকে পাবেন।

রিয়ানা: আমার আপনাকেই সেই বেটারটা মনে হয়।

ইভান: ম্যাডাম আসলে…. আসলে আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হতে পারব না।আমার ফিয়ান্সে আছে,ইংগেজমেন্ট আমাদের আগামী সপ্তাহে।আমি খুবই দু:খিত।

রিয়ানা: রিয়ানা ফাইরোজকে রিজেক্ট করা মানে জানেনতো?

ইভান: ম্যাডাম আপনি কি বলছেন এসব? আপনি অনেক মানুষকেই পাবেন।এসব চিন্তা বাদ দিয়ে দিলেই ভালো হবে ম্যাডাম।

রিয়ানা: হাউ ডেয়ার ইউ টু টিচ মে হোয়াট টু ডু? আর রিয়ানা যা চেয়েছে সবই পেয়েছে সো ইভান সাবধান হও।

ইভান : ম্যাডাম আপনি কিন্তু এখন লিমিট ক্রস করছেন

রিয়ানা: তোমার ফিয়ান্সে আর তোমাকে.... আমি দেখে নিব, আর তোমার এই অতিরিক্ত সাহসের মাশুল তোমাকে দিতে হবে।তুমি ভালো করেই জানো আমি কি করতে পারি।

ইভান: ম্যাডাম আই এম সর‍্যি বাট আপনার যা মনে হয় আপনি করতে পারেন তবে আমি আপনার এই প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি হতে পারব না।

বলেই উঠে চলে গেল ইভান।

 

চতুর্থ দৃশ্য

ইভানের এনগেজমেন্ট দিন আজকে। স্যুট পরে সে চলে এসেছে মেয়ের বাড়িতে আত্মীয়দের নিয়ে।সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল।কিন্তু হঠাৎ কি যেন দেখে ইভানের বুক কেপে উঠল।

ইভান একজন ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আছে।ইনি হলেন মেয়ের বাবা। ভদ্রলোকটি সাদা পাঞ্জাবি পরে নিজের মেয়ের পাশে বসে আছে। কিন্তু ইভানের মনে হলো সে তাকে আগেও দেখেছে। কিন্তু কোথায়? হ্যা, এই লোকটির ছবিই তিনমাস আগে রিয়ানা ফাইরোজ অধরার অফিসে দেখেছে। এ ছিল রিয়ানা ফাইরোজের বাবা।কিন্তু রিয়ানারা দুইভাইবোন তাহলে এই লোক এখানে কেন? আর তার মেয়ে এই মেয়েটি কিভাবে? যেহেতু খন্দকার শফিকুল সুলতানের গুম হওয়ার ব্যাপারটি জানে সে তাই এখানে ব্যাপারটি দেখে ইভানের এটিই ধারনা যে,কে.এস সুলতান তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে ইলিনের সাথে এখানেই থাকে। আর ইভান বুঝতে পারছে সে কত বড় বিপদে পড়বে।কারণ, যেই রিয়ানা তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তার সৎ বোনের সাথেই বিয়ে করতে হবে ইভানকে। 

 

ইভানকি এই মূহুর্তে পিছিয়ে যাবে বিয়ে থেকে নাকি নিজের কথা রাখতে বিয়েতে আগাবে? আর রিয়ানা সে কী করতে পারে? 

এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রুমের লাইট চলে গেল। তারপর অনেক্ষণ পর লাইট আসলে দেখা যায় একদল কালো পোশাকের লোক ঘেরাও করে রেখেছে ইভানকে। রিয়ানা তার পাশেই অনেক সেজেগুজে এসেছে,সেম ড্রেসটা পড়েছে যেটা ইলিন পরেছিল তবে কালারটা একটু ভিন্ন। তার পাশেই নিজের মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে ভংকর হাসিতে মত্ত হয় কে.এস সুলতান।

ইভান বুঝতে পারে না আসলে হচ্ছে টা কী? ইনি নিজের মেয়ে ইলিনের সাথে বিয়ে দিতে চাইলো আবার নিজের প্রথম পক্ষের মেয়ে রিয়ানার সাথে একসাথে ইভানকে ঘেরাও করেছে খন্দকার শফিকুল সুলতান। 

 

কী উদ্দেশ্য তাদের? কেন এমন করছে? আর কেনই বা ২৬ বছর নিখোঁজ ছিল এই কে.এস সুলতান। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ইভানের।