পোস্টস

নন ফিকশন

"স্মৃতির সেতু”

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

এক ছোট্ট গ্রামে বাস করতেন বৃদ্ধ মানুষ মেহেদী। মেহেদী সাহেবের জীবনের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তার একমাত্র কন্যা, সুমা। সুমা ছোটবেলা থেকেই তার বাবার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, এবং একে অপরের জন্য জীবনের অমূল্য উপহার ছিলেন। সুমার মা মারা গিয়েছিল যখন সে ছিল মাত্র পাঁচ বছরের। সুমা ও তার বাবার সম্পর্ক ছিল একেবারে অতুলনীয়; তাদের প্রেম ছিল প্রকৃতির মতো নিঃস্বার্থ এবং বিশুদ্ধ।

একদিন সুমা বড় শহরে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে চলে যায়। মেহেদী সাহেব শহরে এসে তার মেয়ের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে চান, কিন্তু শহরের ব্যস্ততায় তার সময় কাটে না। সুমা প্রতি মাসে বাড়ি ফিরে তার বাবার সাথে সময় কাটাতো, কিন্তু সেই সময়ও দ্রুত কেটে যেত।

এক রাতে, মেহেদী সাহেবের ঘরের পাশে একটি ভাঙা পুরনো কাঠের সেতু ছিল। সেই সেতুর সাথে মেহেদীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে ছিল—সুমার ছোটবেলার হাসি, দুইজনের খেলাধুলা, আর প্রতিটি মুহূর্তের গল্প। সুমা যখন শহরে চলে যায়, সেতুটির প্রতি মেহেদী সাহেবের ভালোবাসা আরও গভীর হয়ে যায়। প্রতি বিকেলে তিনি সেতুর পাশে বসে সুমার সাথে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি ভাবতেন, চোখে পানি আসত।

একদিন মেহেদী সাহেব জানতে পারেন, তার শরীর খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে আসছে এবং তিনি খুব বেশি সময় বাঁচবেন না। তার হৃদয় ভেঙে যায়, কারণ তার কন্যার সাথে শেষবার দেখা করার সুযোগ তার হবে না। মেহেদী সাহেব সিদ্ধান্ত নেন, তার জীবনের শেষ দিনগুলো সেতুর পাশে কাটাবেন। তিনি জানতেন, তার পরিমাণ সময় খুবই কম।

মেহেদী সাহেব সেতুর পাড়ে প্রতিদিন বসে থাকতেন, আর সেতুতে বসে সুমার ছোটবেলার ছবি মনে করতেন। একদিন, সুমার কাছ থেকে একটি চিঠি আসে। সুমা চিঠিতে লিখেছে যে, সে আর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে। চিঠিটি পড়ার পর, মেহেদী সাহেব আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি চিঠি পড়ে সেতুতে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন।

দিনগুলো চলে যায়, কিন্তু সুমা ফিরে আসে না। একদিন, সেতুর পাশে বসে থাকা অবস্থায়, মেহেদী সাহেবের হৃদয় থেমে যায়। সেতুটির পাশে তার বসার স্থান, পুরনো স্মৃতি, আর সুমার খুশির হাসি রয়ে যায়। সেই রাতে সেতুর পাশে মেহেদী সাহেব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, কিন্তু তার পাশে রাখা চিঠিটি দেখে সুমার চোখে জল আসে।

সুমা যখন ফিরে আসে, তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার হৃদয় ভেঙে যায়। তিনি সেতুর পাশে এসে বসেন, যেখানে তার বাবা শেষবার বসেছিলেন। সেতুর পাশে বসে, সুমা তার বাবার স্মৃতি বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা করে। সেতুটিকে পুনরুদ্ধার করে, সুমা সেখানে একটি ছোট্ট মূর্তি স্থাপন করেন, যাতে সকলেই দেখতে পারে মেহেদী সাহেবের প্রেম এবং সেতুর প্রতি তার অটুট প্রেম।

মেহেদী সাহেবের মৃত্যু এবং সুমার প্রতি তার গভীর ভালোবাসার।