Posts

গল্প

নিয়তির হাতে: সবকিছু সমর্পণ"

September 24, 2024

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

60
View

গল্প: "নিয়তির খেলা"

সারা জীবন ধরে, প্রিয়াঙ্কার কাছে সাফল্য একটি অর্জন ছিল। সে সবসময় কঠোর পরিশ্রম করত, প্রচুর অধ্যয়ন করত এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করত। সবার মতো, তারও কিছু স্বপ্ন ছিল—বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া, ভালো চাকরি পাওয়া, আর পরিবারের মুখে হাসি ফেলা। তার সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন তার জীবন এলোমেলো হয়ে গেল।

প্রিয়াঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরের ছাত্রী। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, সে বাড়ি ফিরে এসে অপেক্ষা করছিল ফলাফল ঘোষণার। একটি শান্ত সন্ধ্যায়, যখন সে ফলাফল দেখল, তখন তার মনে হলো, পৃথিবী তার উপরে ভেঙে পড়েছে। সে যে ফল পেয়ে প্রথম হতে চেয়েছিল, তাতে সে দ্বিতীয় হয়েছে। সারা জীবনের কঠোর পরিশ্রম, নিবেদন—সবকিছু যেন এক নিমেষে নষ্ট হয়ে গেল।

সেই রাতে ঘুমাতে পারল না। সে জানত, দ্বিতীয় হওয়া মানে কিছু নয়। কিন্তু তার মনে এ হতাশা কাটছিল না। পরের দিন সকালে, রাগ আর হতাশার মাঝে সে সিদ্ধান্ত নিল, জীবনে আর কোনো কিছু নিয়ে ভাববে না। সবকিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দেবে।

প্রিয়াঙ্কা তার নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত হলো। সে তার জীবনের লক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করল এবং স্থির করল যে সে আর কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করবে না। সে রাস্তায় চলতে শুরু করল, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। মানুষের মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে অনুভব করল, তারা প্রত্যেকে নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে, আর সে নিজেকে নিয়তির স্রোতের মধ্যে ভাসিয়ে দিচ্ছে।

একদিন, প্রিয়াঙ্কা পার্কে হাঁটতে গিয়ে একটি ছোট্ট শিশু দেখল। শিশুটি খেলছে, হাসছে—এমনকি কোনো লক্ষ্য ছাড়াই। শিশুর খেলার মধ্যে যে আনন্দ ছিল, তা তাকে ভাবতে বাধ্য করল। সে ভাবল, জীবনের এই ছোট ছোট সুখগুলোও তো রয়েছে। সেখান থেকেই তার মনে হলো, যদি সে সবকিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দেয়, তবে সে ছোট ছোট সুখগুলোও পেতে পারে।

এভাবেই প্রিয়াঙ্কার জীবন ধীরে ধীরে বদলাতে লাগল। সে সন্ধ্যাবেলায় বই পড়া শুরু করল, যেগুলো তাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল। কবিতা, সাহিত্য, আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে গিয়ে সে বুঝতে পারল যে, জীবনের মৌলিক সত্যগুলি কখনোই পরিকল্পনার বাইরে নয়।

একদিন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, যিনি তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে গাইড ছিলেন, তাকে ডাকলেন। অধ্যাপক বললেন, “প্রিয়াঙ্কা, তুমি কেন এত চিন্তিত? তোমার জীবন তো তোমার হাতে। নিয়তি সবসময় তোমার পাশে থাকবে, কিন্তু কাজটা তোমাকে করতে হবে।”

এই কথাগুলো প্রিয়াঙ্কার মনে গেঁথে গেল। সে বুঝতে পারল, নিয়তির হাতে সবকিছু ছেড়ে দেয়া মানে জীবনের সব কিছুই ত্যাগ করা নয়। বরং, নিয়তি মানুষের জীবনের কিছু অংশ হলেও, আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং কর্ম আমাদের ভবিষ্যত তৈরি করে।

এরপর থেকে প্রিয়াঙ্কা সিদ্ধান্ত নিল যে সে নিয়তির খেলায় অংশ নেবে। কিন্তু সে নিজে সচেতন হবে। সে যখন যা করবে, তার জন্য দায়ী থাকবে। সাফল্যের প্রতি তার ক্ষুধা আবার জেগে উঠল। সে আবার পড়াশোনা শুরু করল, নিজের পরিকল্পনা তৈরি করল, কিন্তু এবার সে চাপ না নিয়ে, আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করল।

সময়ের সাথে সাথে, সে আবার পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করল। এবার সে জানত, সে সফল হতে না পারলেও, জীবনটা উপভোগ করা সম্ভব। একদিন আবার ফলাফল আসল। এইবার সে প্রথম হলো। সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, এর চেয়ে বড় সাফল্য কিছু হতে পারে না। কিন্তু এই সাফল্যের মূল কারণ ছিল তার মনের পরিবর্তন। সে জানত, নিয়তি সবসময় আমাদের সাথে থাকে, কিন্তু আমাদেরও কাজ করতে হয়।

প্রিয়াঙ্কা আজকের জন্য সুখী ছিল। সে বুঝতে পারল যে, জীবন পরিকল্পনা ও নিয়তির সমন্বয়ে তৈরি। নিয়তি আমাদের কিছু দেয়, কিন্তু আমাদের কাজ, প্রচেষ্টা ও মনের শান্তি জীবনের মূল উপাদান।

সুতরাং, যখন জীবন আমাদের পথে বাঁক নেয়, তখন আমাদের উচিত তা গ্রহণ করা। জীবনটা নিয়তির খেলার মতো—কখনো জিতি, কখনো হারি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা কিভাবে সেগুলোকে গ্রহণ করি।

এভাবেই প্রিয়াঙ্কা বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা—সাফল্য, ব্যর্থতা, ভালোবাসা, একাকীত্ব—সবকিছু নিয়তির খেলায় অংশগ্রহণ। আর নিয়তি কখনো নিরাশ করেনি, বরং তাকে তার নিজের জীবনকে নতুনভাবে দেখা শিখিয়েছে।


---

মূল বার্তা: জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো, সফলতা এবং ব্যর্থতা, সবই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়তি আমাদের পথ দেখায়, কিন্তু আমাদেরও সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। জীবন মানেই পরিকল্পনার পাশাপাশি আনন্দের সাথে পথচলা।

Comments

    Please login to post comment. Login