পোস্টস

গল্প

কর্মের আলোয় নিয়তির ছায়া"

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

গল্প: "নিয়তি ও কর্মের সন্ধান"

শহরের এক প্রান্তে একটি ছোট্ট গাঁ আছে, যেখানে একটি শিক্ষার্থী ছিল, নাম তার আরিফ। আরিফ ছিল একটি সাধারণ পরিবারের ছেলে। তার বাবা ছিলেন একজন চাষী এবং মা গৃহিণী। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। সে সবসময় ভালো ফলাফল করতে চাইত, কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে অনেক সময় তার পড়াশোনায় বাধা আসত।

আরিফের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একজন ডাক্তার হওয়া। সে জানত, ডাক্তার হওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু গাঁয়ের পরিস্থিতি তাকে বারবার হতাশ করত। তার বন্ধুরা বলত, “আরে, এসব কি? নিয়তি তোমার সাথে খেলা করছে।”

একদিন, আরিফের শিক্ষক, স্যার আব্দুল্লাহ, তাকে বললেন, “আরিফ, নিয়তির হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ো না। তোমার কাজ তোমার ভাগ্য গড়তে পারে।” এই কথাগুলো তার মনে গভীরভাবে গেঁথে গেল।

আরিফ ঠিক করল, সে আর কোন কিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দেবে না। সে তার পড়াশোনায় মনোযোগী হবে এবং প্রতিদিন সকালে উঠবে। সে পড়ালেখা শুরু করল, নিজের হাতে লেখা নোট তৈরি করতে লাগল, এবং প্রতিদিন স্কুলের বই পড়তে লাগল।

সময় পেরিয়ে গেল। আরিফের কঠোর পরিশ্রম ফল দিতে শুরু করল। সে পরীক্ষায় ভালো ফল করল এবং একদিন ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেল। কিন্তু মেডিকেল কলেজের খরচ এবং জীবনযাত্রার চাপ তাকে আবার হতাশ করে তুলল।

একদিন, কলেজের এক বন্ধুর সাথে কথা বলার সময়, তার বন্ধু বলল, “কী করছ, আরিফ? নিয়তি কি তোমার পথে বাধা তৈরি করছে?”

আরিফ উত্তর দিল, “না, আমি এখন নিয়তির দিকে তাকাচ্ছি না। আমি আমার কর্মের উপর বিশ্বাস রাখছি।” সে বুঝতে পারল, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, সে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

কিছুদিন পর, আরিফ কলেজের ক্যানটিনে বসে ছিল। তখন সে একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখল, যেখানে লেখা ছিল “প্রতিভাবান ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ।” আরিফ আগ্রহী হয়ে উঠল। সে আবেদন করল এবং তার কঠোর পরিশ্রমের জন্য স্কলারশিপ পেল। এই সংবাদ তার জীবনে নতুন আশার আলো ছড়াল।

কিছু বছর পর, আরিফ ডাক্তার হয়ে উঠল। সে মনে মনে ভাবল, “এটা আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন, কিন্তু সবকিছু আমার নিজস্ব প্রচেষ্টার জন্যই সম্ভব হয়েছে।” সে বুঝতে পারল, নিয়তি কিছুটা ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু তার সাফল্যের মূল কারণ ছিল তার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়।

একদিন, যখন আরিফ তার গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করতে গেল, তখন সে তার বাবাকে ডাক্তার হিসেবে দেখে খুব গর্বিত হলো। গ্রামের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে ছিল এবং তার বাবার চোখে গর্বের ঝিলিক দেখল।

তবে, আরিফ জানত, তার সাফল্য শুধু তার নয়, বরং তার পরিবারের, তার শিক্ষকদের এবং তার বন্ধুরাও। তাদের সহযোগিতার জন্যই সে আজ এখানে এসেছে।

গ্রামে ফিরে গিয়ে, আরিফ তার পুরনো বন্ধুদের সাথে কথা বলতে শুরু করল। তাদেরকে সে বলল, “দেখো, নিয়তি এবং কর্ম দুটোরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিয়তি আমাদের পথ দেখাতে পারে, কিন্তু আমাদের কাজই আমাদের ভাগ্য তৈরি করে।”

বন্ধুরা বুঝতে পারল, জীবন কখনো সহজ নয়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।

আরিফ একদিন তার পিতাকে বলল, “বাবা, আমি আজ যা কিছু অর্জন করেছি, তা তোমাদের জন্য। আমি চাই, এই গ্রামে সকলের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে।” তার বাবা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।

এভাবে, আরিফ গ্রামের মানুষের জন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করল, যেখানে সব শ্রেণির মানুষ সেবা পেত। সে সেখানে ছাত্রদের জন্য একটি ক্লিনিকাল প্রশিক্ষণও শুরু করল।

এখন, আরিফ বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি আমাদের কিছু শেখায়। নিয়তি কখনো আমাদের পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু আমাদের কর্মকাণ্ডই সেই বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

সুতরাং, এই গল্পের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি যে, আমাদের জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাঝে নিয়তি ও কর্মের একটি সমন্বয় প্রয়োজন। আমাদের কাজ আমাদের নিয়তির চেয়ে বড় হতে পারে। আরিফের মতো আমরা সবাই যদি নিজেদের লক্ষ্য স্থির করি এবং সঠিক পথে চলি, তবে আমাদের স্বপ্নগুলো সত্যি হতে পারে।

উপসংহার: নিয়তি এবং কর্মের মাঝে একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। সাফল্যের জন্য আমাদের দুটির সমন্বয় প্রয়োজন। আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং অধ্যবসায়ই আমাদের নিয়তি পরিবর্তন করতে পারে।