পোস্টস

চিন্তা

নিস্তব্ধতার রহস্য"

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

মূল লেখক হিমেল

গভীর নিস্তব্ধতা

 

১৫ টা ১০ হবে। একদিনের পরিশ্রম শেষে, যখন বিকেল বেলা আসে, তখন পৃথিবী যেন কিছুক্ষণ থেমে যায়। এই সময়টাতে জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করার সুযোগ আসে। পরিবেশের মধ্যে একটি বিশেষ নৈঃশব্দ অনুভূত হয়, যেন প্রকৃতি নিজেই সব কিছু ম্লান করে দিয়েছে। সেদিন, আমি একটি পার্কে বসে ছিলাম, চারপাশে নিস্তব্ধতার ছায়া। সূর্যের আলো পাতার ফাঁকে ফাঁকে এসে পড়ে, কিন্তু কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। শুধু পাখিরা মাঝে মাঝে গান গাইছে, যা নিস্তব্ধতা ভেদ করে মিষ্টি সুরে ভরে তোলে।

নিস্তব্ধতার এই মুহূর্তে, আমার মন চলে যায় এক ভিন্ন জগতে। আমি ভাবতে শুরু করি, কিভাবে জীবনের বিভিন্ন দিক আমাদের প্রভাবিত করে। এই নিস্তব্ধতা যেন আমাকে আত্মমগ্ন হওয়ার সুযোগ দেয়, যেখানে আমি আমার চিন্তা ও অনুভূতিগুলোর সঙ্গে একত্রিত হতে পারি। এই সময়টাতে, মনে হচ্ছিল যেন আমি সময়ের যাত্রা ছেড়ে এক স্থির অবস্থানে এসে পৌঁছেছি।

নিস্তব্ধতা এবং solitude (একাকিত্ব) একে অপরের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। যখন আমরা একা থাকি, তখন আমাদের মনের ভিতরের গভীরতা উপলব্ধি করার সুযোগ আসে। একাকিত্বের এই অনুভূতি কখনও কখনও ভয়াবহ হতে পারে, তবে যখন তা নিস্তব্ধতার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তা একটি সুন্দর অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। আমি অনুভব করলাম, এই নিস্তব্ধতা যেন আমাকে আমার ভেতরের সত্যিকারের আমি চিনতে সাহায্য করছে।

আমার মনে পড়ে গেল প্লেটো এর কথা, “একাকীত্বের মধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান মেলে।” আমাদের সমাজের এই দ্রুত গতিতে, কখনও কখনও একাকিত্বকে ভয়াবহ বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটি আমাদের উপলব্ধি করার একটি মাধ্যম হতে পারে। জীবনটাকে জানার জন্য, নিজের ভেতরের দিকে তাকানো প্রয়োজন। নিস্তব্ধতা আমাদের স্বরূপের সন্ধান দেয়।

এই গভীর নিস্তব্ধতা যখন আমাকে আচ্ছাদিত করছিল, তখন আমি ভাবতে শুরু করলাম আমাদের চারপাশের পরিবেশ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। শহরের ব্যস্ততা, মানুষের ক্লান্তি, আর সবকিছু মিলে একটি জটিল চিত্র তৈরি করছে। কিন্তু প্রকৃতি তখনও তার নিস্তব্ধতা ধরে রেখেছে। সে যেন জানিয়ে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে থেমে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী আমাদের কাজের চাপ, তাড়া এবং উদ্বেগের মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেয়।

আমার সামনে থাকা সেই পার্কের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবলাম, “এই বেঞ্চে কতজন মানুষ বসেছে, কত গল্প এখানে কাটা হয়েছে।” আমাদের জীবন একেকটি গল্পের মতো। আমরা সবাই নিজেদের নীরবতা নিয়ে চলি, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যে কত গল্প লুকিয়ে আছে। কত মানুষের হাসি, কান্না, আশা এবং স্বপ্ন এখানে গড়ে উঠেছে।

নিস্তব্ধতার এই অনুভূতি এক ধরণের মুক্তির। যখন আমরা একা থাকি, তখন আমাদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধগুলোর সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করতে পারি। প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয়গুলো, যেমন একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা কিংবা নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখানো, সেগুলো আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। কিন্তু এই নিস্তব্ধতায় আমরা বুঝতে পারি, আসলে আমাদের কতো কিছু শেখার আছে।

একটি জনপ্রিয় উক্তি মনে পড়ছে, “নিশ্চুপতা কখনও কখনও সবচেয়ে মিষ্টি সুর।” এই উক্তিটি যেন সত্যিই মিলে যায় সেই মুহূর্তের সঙ্গে। আমি বুঝতে পারলাম, কখনও কখনও শান্তি আর নীরবতার মধ্যে থাকা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। নিস্তব্ধতা আমাদের চিন্তার গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং নতুন আইডিয়া ও প্রেরণা দেয়।

সময় গড়িয়ে যেতে লাগল, আর আমি অনুভব করলাম, এই একাকী সময়টা আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। একাকিত্ব মানেই যে কষ্ট, তা নয়; এটি হতে পারে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ। যখন আমরা নিজেদের দিকে তাকাই, তখন নিজেদের ভুলগুলোও দেখতে পাই। তাই, নিস্তব্ধতার মাঝে কিভাবে ভাবতে হয়, তা শেখা প্রয়োজন।

মনে হচ্ছে, ১৫ টা ১০ এ দাঁড়িয়ে থাকা এই নিস্তব্ধতার মাঝে, জীবনের অমূল্য শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসব। যখন আমরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, তখনই আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে।

নিস্তব্ধতা আমাকে শেখালো, “বাঁচার জন্য হট্টগোলের প্রয়োজন নেই।” আমরা আমাদের ভেতরে থাকা অনুভূতিগুলোকে খুঁজে বের করতে পারি। নিজেকে চিনে নেওয়ার জন্য, মাঝে মাঝে একা থাকা জরুরি। এই সময়টা আমাদের নিজেদের চিন্তাকে স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে।

যখন আমি উঠে দাঁড়ালাম, মনে হলো আমি নতুন করে বেড়িয়ে আসলাম। এই নিস্তব্ধতা যেন আমাকে শক্তি দিয়েছে, যা আমাকে পরবর্তী পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি জানি, জীবনের এই মুহূর্তগুলো আমাদের অমূল্য। নিস্তব্ধতা এবং একাকিত্বের মধ্যে যে বিশালতা লুকিয়ে আছে, তা বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব, ১৫ টা ১০ এর নিস্তব্ধতা যেন আমার হৃদয়ে একটি নতুন আশা জন্ম দিল। এটি আমাকে শিখিয়েছে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে, নিজের কাছে ফিরে যেতে এবং নতুন সম্ভাবনার দিকে তাকাতে। নিস্তব্ধতা একবার নয়, বারবার আমাদের শিক্ষা দেয়—“নিজেকে চিনে নেওয়া হচ্ছে জীবন।”