নিজ দ্বারা জগতের সব মঙ্গলসাধন সম্ভব, এমন মতবাদে আস্থা রাখি। কারণ, চিরকাল আমরা নিজের কাছেই ফিরে এসে জগতের যাবতীয় সকল কার্যসাধন করে থাকি। নিজের অনুরাগে অন্যের অনুরাগী হয়ে বেঁচে থাকা সুন্দর।
সক্রেটিসের নিজেকে জানার গভীরত্ব নিয়ে আমরা যত বেশী ভাবি, ঠিক ততবেশী আমাদের উচিত নিজেকে জানার চেষ্টার পাশাপাশি নিজেকে খুঁজে বের করা। কিন্তু, অভিযোগের অন্তরালে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গ্লানির বাইরে এসে আমাদের যতদূর বাঁচা হয় তা সর্বসাকুল্যে পরমানন্দের কিনা তা আদতে ভাববার বিষয়।
নবীজি বললেন, মানুষের কর্মের ফলাফল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আবার, বুদ্ধ বললেন, আমরা কেবল আমাদের ভাবনারই সমষ্টি। এই দুই উদ্ধৃতির আত্মকেন্দ্রতেই যে “নিজ” প্রসঙ্গ বিদ্যমান, ঠিক তার ব্যবচ্ছেদেই মানুষের নিজেকে নিয়ে সদা কাজ করা উচিত। নিজের মতো সবই মানুষ ভালোবাসে। অথচ, নিজের জন্য এই জগতে আমরাই সবচেয়ে কম কার্যসাধন করে থাকি। পার্থিব মোহের বাইরে আমাদের বেঁচে থাকার পরিমাপে কেবল অন্তঃসারশূন্যতা পড়ে থাকে। দৃশ্যমান সবকিছুতেই আমাদের উপেক্ষা আর অবজ্ঞায় বাধা পড়ে যায় নিজ জীবনের মায়া। আমাদের যতটুকু নিজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা প্রয়োজন, আমরা ঠিক ততটুকু নিজের প্রতি চিরকালই উদাসীন।
আত্মজ্ঞানমাহাত্মের এক কোণে আমাদের ভালোবাসাহীন বেড়ে ওঠা পুরোপুরিভাবেই অর্থহীন। আমাদের নিজেদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে প্রতীয়মান অন্তঃসারশূন্যতা একটি সুস্পষ্ট প্রতিবন্ধকতা। কেবল জীবনের আত্মকেন্দ্রিকতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের সার্বজনীনতার পরমানন্দ।