পোস্টস

প্রবন্ধ

ইলুমিনাতি কি, কারা ও কেন তা জানুন

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লবেরু

ইলুমিনাতি বলতে একটা দল বা গোষ্ঠীকে বোঝায় যারা নিজেদেরকে অস্বাভাবিকভাবে আলোকিত মনে করে। ল্যাটিন শব্দ Illuminati থেকে নেওয়া যার অর্থ আলোকিত। 

প্রতিষ্ঠাতা

ইলুমিনাতি এর ঐতিহাসিক নাম ব্যাভারীয় ইলুমিনাতি। ধারণা করা হয় এটি একটি গুপ্ত সংগঠন। ১৭৭৬ সালের ১ মে জার্মানির ব্যাভারিয়াতে আডাম ভাইসহাউপ্ট কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে তিনি তাঁর সংঘের নাম রাখলেন “বুন্ট ডা পের্ফেক্টিবিলিস্টেন” (Bund der Perfektibilisten); কিন্তু অদ্ভুত শুনায় বিধায় নামটি পরিবর্তন করেন। আডাম আর তাঁর চার ছাত্র মিলে এই সংগঠন শুরু করলেন। আর "আউল অফ মিনার্ভা" ছিলো তাদের প্রতীক। আডাম সদস্যদের জন্য ছদ্মনামের ব্যবস্থা করেন। আডামের নিজের নাম হলো স্পার্টাকাস। তাঁর চার ছাত্র- মাসেনহাউসেনের (Massenhausen) নাম হলো আজাক্স, মের্ৎসের (Merz) নাম হলো আগাথন এবং সুটোরের (Sutor) নাম হলো ইরাসমাস রোটারোডেইমাস। কিন্তু সুটোরকে তিনি পরে বহিষ্কার করে দেন, কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় যে সে ছিলো অলস। ১৭৭৮ সালের এপ্রিল মাসে এয় সংঘের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় "ইলুমিনাতি"। এটি একটি লাতিন শব্দ, যার অর্থ “যারা কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকিত বা জ্ঞানার্জনের দাবি করে”।

 

লক্ষ্য

এর লক্ষ্য ছিল কুসংস্কার, অস্পষ্টতা, জনজীবনে ধর্মীয় প্রভাব এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরোধিতা করা। তারা তাদের সাধারণ বিধিতে লিখেছিল, "অন্যায়ের প্রবর্তকদের ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটানো, তাদের উপর কর্তৃত্ব না করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। সমাজ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ ভেবে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ব্যাভারিয়ার তৎকালীন শাসক চার্লস থিওডোর তাঁর শাসিত অঞ্চলের সকল গুপ্ত সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৭৮৫ সালের ২ মার্চ এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। আডাম পালিয়ে যান আর ইলুমিনাতির প্রচুর গোপন নথিপত্র সরকারের হাতে এসে যায়, এবং দু’বছর বাদে সরকার সেগুলো প্রকাশ করে দেয়।

 

কারা এর সদস্য

সাধারণত চূড়ান্ত পর্যায়ের বুদ্ধিজীবী, সচ্চরিত্র খ্রিস্টানরা এই সোসাইটির সদস্য হতেন এবং সকল প্রকার ইহুদী এবং মূর্তিপূজকদের সদস্যপদ নিষিদ্ধ ছিলো। এমনকি নারী, ধর্মগুরু এবং অন্যান্য গুপ্ত সংগঠনের সদস্যরাও নিষিদ্ধ ছিলো। স্বাগত জানানো হত ধনী, শিক্ষানবিশ আর ১৮-৩০ বছরের তরুণদের।

 

বিশ্বাস

ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়ে ইলুমিনাতির শাখা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে ইলুমিনাতির অভ্যন্তরে ধর্মবিদ্বেষের সূচনা হয়। ইলুমিনাতি বিশ্বাস করতো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে। কিন্তু ইউরোপে রটে গেলো যে, ইলুমিনাতি একটি নাস্তিক এবং ধর্ম ও প্রচলিত সমাজব্যবস্থা-বিদ্বেষী সংগঠন। এমনকি ১৭৯৭ এবং ১৭৯৮ সালের মধ্যে, অগাস্টিন ব্যারুয়েলের Memoirs Illustrating the History of Jacobinism এবং জন রবিসন নামে Proofs of a Conspiracy এক বই লিখেন যেখানে দাবি করা হয় ইলুমিনাতি এখনও জোরসে বেঁচে আছে, বহাল তবিয়তে। অসম্ভব জনপ্রিয় হয় সে বই গুলো। দুটো বই প্রচুর বিক্রি হয়। বইতে বলা হয় অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগের সেই ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের পেছনের কলকাঠি নাকি আসলে ইলুমিনাতিই নেড়েছে।

 

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

ইলুমিনাতি নিয়ে প্রচুর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে। ইলুমিনাতিরাই মূলত এ বিশ্বের সকল ভূরাজনৈতিক কার্যক্রম "পরোক্ষভাবে" নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ-ফরাসি বিপ্লবের সূচনা ইলুমিনাতির হাতে। নেপোলিয়নের ওয়াটারলু যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে ইলুমিনাতি। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কেনেডির গুপ্তহত্যা আসলে ইলুমিনাতিই করিয়েছে, কারণ তিনি বাধা দিচ্ছিলেন তাদের কাজে। শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করে ইলুমিনাতি। হলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ইলুমিনাতির দখলে। এর মাধ্যমে ইলুমিনাতি আপনার অবচেতন মনে তাদের বিশ্বাসগুলো ঢুকিয়ে দিচ্ছে। 

 

প্রতীক

ইলুমিনাতিদের প্রতীক এক চোখ। ইহুদি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মতে, ইলুমিনাতির এক চোখা প্রতীক প্রমাণ করে যে, ইলুমিনাতি হলো সেই সংগঠন যারা একচোখা যার নাম "ঈশ্বরের সর্ব-দর্শী চোখ।

 

শয়তানের পূজা

তবে ইলুমিনাতি যে আসলেই শয়তানের পূজা করে বা এখন রয়েছে এর পোক্ত কোন প্রমান আজও পাওয়া যায়নি।

 

উদ্ভব কারণ

ইলুমিনাতির সঠিক উদ্ভব কারণ এখনও বিশ্লেষকদের কাছে পরিষ্কার নয়। তথাকথিত নতুন পৃথিবী গড়া তাঁদের মূল লক্ষ্য হলেও আপাতদৃষ্টিতে তাঁরা ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছান্ন সমাজের বিরুদ্ধে গুপ্তভাবে সোচ্চার। বিশেষভাবে ধারণা করা হয় মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার ধর্মীয় নৈতিক স্খলনগুলো এদের দ্বারাই প্রকাশ্যে আসে। ধারণা করা হয়, এই ঘটনাগুলির সূত্রপাত থেকে ঘটনাপ্রবাহে জনসম্মুখে আসা- সকল ক্ষেত্রেই অদৃশ্যভাবে ভূমিকা পালন করে। কিছু বিশেষজ্ঞ এরকম সংগঠনকে এবং এদের কার্যক্রমকে কাল্পনিক মনে করেন।