পোস্টস

ফিকশন

স্বপ্নের ডানা

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

মূল লেখক হিমেল

 গল্পটি এমন একটি পৃথিবীতে ঘটবে যেখানে বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে একে অপরের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এটি স্বপ্নের জগতে মানুষ কতটা স্বাধীন এবং বাস্তব জীবনে তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করবে। নীচের গল্পটি সেই সমস্ত অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করবে যেগুলি মানব হৃদয়ের গভীরে বাস করে—প্রেম, স্বপ্ন, এবং বিচ্ছেদ।


---

একদিন, খুব দূরের এক গ্রামে এক যুবক বাস করত যার নাম ছিল স্যামুয়েল। তার জীবন ছিল খুবই সাধারণ; সে একজন কারিগর ছিল, কাঠের জিনিসপত্র বানাতো এবং তার ছোট কুটিরে একাকী জীবন কাটাতো। তবে স্যামুয়েল ছিল এক অন্যরকম মানুষ। তার মধ্যে ছিল এমন এক আকাঙ্ক্ষা যা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতো, যা তাকে আরও দূরবর্তী পৃথিবীতে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, যেখানে সে তার স্বপ্নের মানুষ ইভলিনকে খুঁজে পেতে চেয়েছিল।

ইভলিন তার জীবনে প্রবেশ করেছিলো একটি ঝড়ের রাতে। একদা প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে ইভলিনকে তার গ্রামে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সেই তিন দিন তাদের মধ্যে যে বন্ধন তৈরি হয়েছিল তা ছিল এমন এক সম্পর্ক যা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্যামুয়েলের মতো ইভলিনও ছিল একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার হৃদয়েও বাস করতো পৃথিবীর বাইরের কোনো এক অতিপ্রাকৃত আকাঙ্ক্ষা। ঝড়ের পর ইভলিনকে আবার তার পথে পা বাড়াতে হয়েছিলো, কিন্তু যাওয়ার আগে সে স্যামুয়েলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে একদিন সে আবার ফিরে আসবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বহু বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণ হয়নি।

এই প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় স্যামুয়েল প্রতিদিন তার জীবনের মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করত। প্রতিদিন সন্ধ্যায়, যখন সূর্য ডুবে যেত এবং গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে যেত, স্যামুয়েল তার জানালার পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। তার চোখে দেখা যেতো এক অজানা অপেক্ষা। তিনি ইভলিনের কথা ভাবতেন, তার কথা যা হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত ছিল। তিনি কল্পনা করতেন, "যদি আমার ছোট দুটি ডানা থাকতো," তাহলে তিনি ইভলিনের কাছে উড়ে যেতেন।

এই চিন্তাগুলো তাকে প্রতি রাতেই আচ্ছন্ন করে রাখত। তবে এসব চিন্তায় একটি ব্যর্থতার স্বাদ ছিল। স্যামুয়েল জানতেন যে ডানা থাকা কেবল স্বপ্নের বিষয়। তবে তার স্বপ্নগুলো ছিল এক অসাধারণ বাস্তবতার সঙ্গে মিশে যাওয়া। প্রতিদিন তিনি যখন ঘুমাতেন, তখন তিনি স্বপ্নে দেখতে পেতেন যে তিনি পাখির মতো উড়ে যাচ্ছেন সেই দূরের পৃথিবীতে যেখানে ইভলিন অপেক্ষা করছিলেন। সেই স্বপ্নে তারা একসাথে সময় কাটাতো, একে অপরকে বুঝত এবং নীরবভাবে একে অপরের উপস্থিতি অনুভব করত।

এসব স্বপ্ন তাকে নতুন শক্তি দিত, কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে যেত। বাস্তব জীবনে তিনি নিঃসঙ্গ ছিলেন। আবারও তিনি একা, সম্পূর্ণভাবে একাকীত্বে ডুবে যেতেন। "যখন ঘুম ভাঙে, আমি কোথায়?" তিনি নিজের মনেই প্রশ্ন করতেন, এবং সেই একাকীত্বের বোধ তাকে আরও গভীরভাবে স্পর্শ করত।

এইভাবে তার দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছিল, কিন্তু তার স্বপ্নগুলো তার কাছে একটা আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার স্বপ্নের জগতে, পৃথিবী একান্ত তার নিজের ছিল। সেখানে কোনো সীমা ছিল না, কোনো বাধা ছিল না যা তাকে তার প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিত। প্রতিদিন সে নতুন করে স্বপ্ন দেখতো, নতুনভাবে ইভলিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতো।

তবে একদিন, কিছু অস্বাভাবিক ঘটলো। সেই রাতে তার স্বপ্নগুলো ছিল বিশেষভাবে বাস্তব। ইভলিন তার কাছে এসেছিলো এবং তাকে বলেছিলো, "এসো, সময় এসেছে।" স্যামুয়েল তার হৃদয়ের গভীরে অনুভব করেছিল যে কিছু সত্যিই পরিবর্তন হচ্ছে। তার দেহের প্রতিটি শিরায় এক শক্তি বয়ে যাচ্ছিলো, যেন কোনো অদ্ভুত ক্ষমতা তাকে ডেকে নিচ্ছে।

পরের দিন সকালে, তিনি সেই অদ্ভুত অনুভূতির সঙ্গে জেগে উঠলেন। আকাশ ছিল পরিষ্কার এবং তার মনে হলো যেন কোনো অদৃশ্য ডাকে তাকে ডেকে নিচ্ছে। তিনি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার হৃদয় থেকে আবার সেই শব্দ উচ্চারণ করলেন: "যদি আমার ছোট দুটি ডানা থাকতো..."

এবং তখনই ঘটে গেল সেই অসাধারণ ঘটনা। একটি আলো ধীরে ধীরে তার চারপাশে উদ্ভাসিত হতে লাগল, এবং তিনি অনুভব করলেন তার হাতে ছোট ছোট পালক জন্ম নিচ্ছে। তিনি তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে তার ডানা তৈরি হচ্ছিলো।

ডানা পাওয়ার সাথে সাথে স্যামুয়েল আকাশে উড়ে গেলেন। তার সামনে ছিল এক বিস্তৃত পৃথিবী—পাহাড়, বন, নদী সবকিছু পার হয়ে তিনি চলতে থাকলেন সেই দূরের দুর্গের দিকে, যেখানে ইভলিন তাকে অপেক্ষা করছিলেন। তার হৃদয় ছিল আলোয় পরিপূর্ণ এবং তাকে চালিত করছিল সেই অনন্ত ভালোবাসা।

একদিন তিনি সেই দুর্গে পৌঁছালেন, যেখানে ইভলিন দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখে ছিল অশ্রু, হৃদয়ে ছিল ভালোবাসার গভীরতা। তারা একে অপরের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। তাদের পুনর্মিলন যেন এক নতুন পৃথিবীর দরজা খুলে দিলো, যেখানে সীমাহীনতা এবং বাধা আর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

এখন, যখন তারা একে অপরের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল, স্যামুয়েল বুঝতে পারলেন যে তার স্বপ্নগুলো শুধু স্বপ্ন ছিল না। সেগুলো ছিল তার ভাগ্যের পথনির্দেশিকা। সেই পাখির ডানাগুলো তাকে মুক্তি দিয়েছিলো, তাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো।

এবং সেই মুহূর্তে, পৃথিবীর সমস্ত নিঃসঙ্গতা, সমস্ত সীমাবদ্ধতা একসাথে ভেঙে পড়লো, এবং তারা চিরকাল একসাথে থাকতে শুরু করলো, এক নতুন জগতে যেখানে ভালোবাসা এবং স্বপ্ন এক হয়ে গেছে।


---

উপলব্ধি:

এই গল্পটি আমাদের দেখায় যে কখনও কখনও ভালোবাসা এবং স্বপ্ন বাস্তবতার চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে। স্যামুয়েল তার স্বপ্ন এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে সেই ডানা তৈরি করতে পেরেছিলো যা তাকে তার ভালোবাসার কাছে নিয়ে গেছে।