(১)
আমার মৃত্যুর আজ ৭ বছর পূর্ণ হলো। খুব মনে পড়ছে বেঁচে থাকার দিনগুলোর অনুভূতি। আজ হাজারো জীবন্ত মানুষ চারিদিকে আর তাদের পৃষ্ঠতলে পিষ্ট হচ্ছে মৃত মানুষ গুলির অর্ধ ক্ষয়ে যাওয়া হাড়গুলি। আমি না রক্ত মাংসের মানুষ না মৃত মানুষ। আমি অস্তিত্বহীন একটা অনুভূতি। মৃত্যুর ৭ বছর পূর্ণ বললে ভুল হবে তবে বলা যায় নতুন জীবনের শুরু ৭ বছর।আমি আসলেই জানি না আমি কে। আমার ব্রেন ডেড হয়েছিলো কত বছর বয়সে মনে নাই আর আমার সম্পর্কে যে কারোর কাছে শুনবো তারও কোনো উপায় ছিলো না, কারণ যখন আমি সুস্থ হই তখন আমার আপন জন কেউ ছিলো না পাশে।পরেও কাউকে খুঁজে পায়নি আর কেউ আমাকে খুঁজতেও আসেনি। খুঁজতাম ও বা কি করে! যখন আমার হুস ফেরে তখন ডাক্তার রাজান জানান, আমাকে কিছু লোক মাছ ধরতে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত নৌকায় খুঁজে পায়। তখন আমার জ্ঞান ছিলো না আর ব্রেন ডেড হলে যেভাবে একটি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা হয় তার সব ব্যবস্থা করা ছিলো নৌকাটিতে। ডাক্তাররা জানতে পারেনি আমার কবে থেকে এমন অবস্থা। নৌকায় খুঁজে পাওয়া জিনিস গুলোর ভিতরে আমার একটি ড্রইং বুকে আমার নাম এবং আমার জন্ম তারিখ লেখা ছিলো ২৬ অক্টোবর ২০৩৪ খ্রিঃ। সে অনুযায়ী আমি সুস্থ হই আমার ১০ বছর ৪ মাস ২১ দিন বয়সে। অনেক অল্প বয়স আর না জানি তারও কত আগে থেকে অসুস্থ আমি। কিছুই মনে ছিলো না আমার সুস্থ হওয়ার আগের জীবনের। সুস্থ হওয়ার চার মাস পর আমাকে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। বাসার সবাই আমাকে দেখে খুশি কিন্তু আমি সেই পরিস্থিতিতে কি করবো জানতাম না।এজন্য ভদ্র বাচ্চাদের মতো চুপ করে ছিলাম। পরে জানতে পেরেছিলাম হাসপাতাল থেকে যে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তারা আমাকে দত্তক নিয়েছিলো। যে চ্যারেটি আমার হাসপাতালের সমস্ত খরচ বহন করেছিলো তারাই আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছিলো। এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলো না। তাদের একটি ৭ বছরের ছেলে সন্তান ছিলো তবে তাদের চাওয়া ছিলো একটি মেয়ে সন্তানের। শারিরীক কিছু জটিলতার কারণে দম্পতি আর সন্তান নিতে পারবে না বলে তারা আমাকে দত্তক নেয়। বাসায় দম্পতিটি তাদের ছেলে ও একজন মেড ছাড়া আর কেউ থাকতো না। প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগতো কিন্তু পরে আর সমস্যা হয়নি। তারা সবাই খুব ভালো। ছোট্ট ছেলেটি চুপচাপ স্বভাবের তবে সেটা অন্যদের কাছে আমার কাছে নয়। সে অনেক গল্প করে আমার সাথে। আমাকে খুব পছন্দ করে সে।আমিও তাকে বড় বোনের মতো করে আগলে রাখি। আস্তে আস্তে আমি সবার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এখন আমি তাদের নিজের মা বাবা-ই ভাবি। ছোট ভাইটিকে প্যানি বলে ডাকি। আমাদের মেডের নাম মিসেস. ছামনা। তিনি আমার আর আমার ভাইকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেন। তারও একটি ছোট্ট মেয়ে আছে ৪ বছরের। মাঝে মাঝে তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। আমি আর আমার ভাই তার সাথে খেলি। চ্যারিটি থেকে হসপিটাল থেকে আমাকে দেখতে আসে আমি কেমন আছি। তাদের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ভালো লাগে। ভালো সময় গুলো কেমন দ্রুত চলে যায়।পরিবারের সাথে ছুটির দিন গুলো অনেক ভালো ভাবে কাটে সবার সাথে। আমার বয়স আর কয়েক মাস পরে বারো বছর হয়ে যাবে। তার আগে প্যানির কতো রকম প্ল্যান আমার জন্মদিন নিয়ে। আসলে তার জন্মদিনে এবার তেমন মানুষ আসতে পারেনি প্রচুর বৃষ্টির কারণে। তাই আমার জন্মদিনে কতো মজা করবে তাই ঘিরে তার সারাদিন জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। দেখতে দেখতে দিন কাটলো মাস পার হলো আর সময় তার সাথে নিয়ে এলো আমার জন্মদিন। প্রতিবেশী রিলেটিভ ফ্যামেলি ফ্রেন্ড সবাইকে নিয়ে জমজমাট পরিবেশটা। প্যানি অনেক মজা করলো নিমন্ত্রিত অতিথিদের ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে। খেলার মাঝে হঠাৎ দৌড়ে এসে আমার কানে ফিসফিস করে বললো আজ সব গিফট বক্স সে খুলতে চাই। আমিও তাকে হ্যাঁ সূচক মুচকি হাসি দিলাম।সে খুশি হয়ে আবার খেলতে চলে গেলো। অতিথিদের বিদায় নিতে নিতে রাত ২টা বেজে গেলো।প্যানি এখনো জেগে আছে তবে অনুষ্ঠানের মাঝে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছিলো। অন্য সময় হলে ওকে জোর করে ঘুম পড়ানো হতো কিন্তু আজ ওকে কেউ কিছু বলবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্যানি এক এক করে সব গিফট বক্স খুললো। ও খুব খুশি আজ। ওকে বললাম ওর যা যা পছন্দ তাই নিতে পারে গিফট থেকে। মা বাবা মানা করছিলো এগুলো আমাকে গিফট দেওয়া হয়েছে তাই। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলাম না। আমাদেরকে রেখে তারা নিজের ঘরে চলে গেলো। প্যানি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব গুলো গিফট পর্যবেক্ষণ করছে বিজ্ঞদের মতো। আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি রাতের তারা দেখছি। হঠাৎ ডাক্তার রাজানের একটি কথা মনে পড়লো কিন্তু সেই বয়সে সেটার মর্ম বা অর্থ কিছুই বোঝার ক্ষমতা ছিলো না আমার। তার ভাষ্য মতে আমার মস্তিষ্কের একটি ক্ষুদ্রাংশ অনুপস্থিত ছিলো যখন তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন। আর আমার মস্তিষ্কে আলফা রিদম সব সময় নাকি চলতে থাকে। এসব চিন্তা করছি হঠাৎ আমার চিন্তার জগতে প্যানি বিঘ্ন ঘটিয়ে গুঙিয়ে উঠলো। তাকিয়ে দেখলাম একটি সুন্দর পাহাড়ের আকৃতিতে কালো কিছু একটা যার গায়ে ফাটল ধরা ডিজাইনের নীলচে বর্ণের আভা যা কম আলোয় আরও আলোকিত হয়ে উঠে। হঠাৎ রুমের আলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঐটা দেখে প্যানি গুঙিয়ে ওঠে। উঠে লাইটের সুইচে জোরে চাপ দিতেই আবার আলোকিত হয়ে যায় রুমটা। গত কয়েকদিন আগে থেকে এমন সমস্যা হচ্ছে কিন্তু কেনো জানি না বাবা মাকে জানানো হয়ে ওঠেনি। প্রথমে ভয় পেলেও প্যানি ঐ জিনিসটা নিয়ে খুবি উৎসুক। আমার দিকে ওর তাকানো দেখেই বুঝলাম ঐ জিনিসটা ওর চাই আর আমিও ওকে মানা করলাম না। প্যানিকে ওর রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে চলে আসলাম। এসে টেবিলের উপর থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে জন্মদিনের ভিডিওটা দেখতেছিলাম।প্রতি মুহুর্তের স্মৃতি দেখছি আর ভাবছি কেমন করে সময় অতিবাহিত হয় বোঝা যায় না, বিশেষ করে সুন্দর সময় গুলো। এই কিছু সময় আগে প্যানি কত মজা করছিলো সমস্ত বাড়ি জুড়ে আর এখন কেমন নিস্তব্ধতা। সময়কে নাকি ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না বাঁধা দেওয়া যায় না কিন্তু অতীতের সময় গুলো কিভাবে ক্যামেরা বন্দী হয়ে আছে। এই তো মিসেস. ছামনা কেক তৈরি করছে সে মুহুর্তের চিত্র আর এখন সে কেক হজম হয়ে গেছে তারপরও সেই মুহুর্তটাকে দেখতে পাচ্ছি। কেমন হতো যদি সেই ক্যামেরা বন্দী মুহুর্ত গুলো আবার বাস্তবে উপভোগ করতে পারতাম। আসলেই তো ক্যামেরা বন্দী মানুষ গুলো তো ঐ একটা নির্দিষ্ট সময় আবদ্ধ। তারা মানুষ না তাদের প্রতিকৃতি, তারা চলতে পারে তবে জীবন নেই। আমার প্রিয় কার্টুনও তো চলতে পারে। একটা নির্দিষ্ট গল্পের মাঝে আবদ্ধ। তবে সে তো মানুষের প্রতিকৃতি নয়, সে তো মানুষের চিন্তা শক্তি। মানুষ যেমন চাই তাকে তেমন ভাবে পরিচালনা করতে পারে। কুমিরকে দিয়ে খাইয়েও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। কি অদ্ভুত! কিন্তু বাবা আরও একটা বিষয়ের কথা বলছিলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সেটা তৈরি হওয়ার পর তাকে কষ্ট করে মানুষ দ্বারা পরিচালনা করা লাগে না, সে নিজের বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে পারে। ইস্ আমি যদি ক্যামেরা বন্দী মানুষের মতো সেই আবদ্ধ সময়টাতে থাকতে পারতাম আর কার্টুনের মতো অমর, যেকোনো আকৃতির হতে পারতাম কখনো সার্কেল বা কখনো স্কয়ার বা কখনো লিকুইড। আর সেখানে তো আমার মস্তিষ্ক নিয়ে যেতে পারবো না তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি তখন পেতাম আমার আয়ত্তে তাহলে ঐ ক্যামেরা বন্দী মুহুর্ত গুলো নিজের মতো করে সাজাতে পারতাম আর আমি হতাম সেই আবদ্ধ মুহুর্তে অমর, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রক।
উদ্ভট চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙলো নিল তেজস্ক্রিয় আলোর তাপে। হঠাৎ চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেলো। একটু আলোর কিরণ দেখতে পেলাম। আস্তে আস্তে সবকিছু স্পষ্ট হতে লাগলো। কিন্তু একি! আমি তো আমাদের বাসার নিচে গ্যারেজে বাবার প্রিয় গাড়িটার পিছনে! কিন্তু গাড়িটা তো চুরি হয়ে গেছিলো গত ২৪শে অক্টোবর! তাহলে কি বাবা গাড়িটা উদ্ধার করতে পেরেছে! হঠাৎ আমার গলায় কারো আওয়াজ শুনতে পেলাম " প্যানি যেয়ো না ওদিকে, বাবা বকবে, আর বাবার ঘড়িটা নিয়ে খেলা করছিলে সেটা কই দিয়ে যাও। বাবার কিন্তু গোসল প্রায় শেষ আর অফিসের টাইম হয়ে গেছে। " কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না। এটা তো আমিই কয়েকদিন আগে প্যানিকে বলেছিলাম। ঘড়িটা ফিরিয়ে দিয়ে গেছিলো তবে ভাঙা অবস্থায়। আমি নিজের নামে দোষটা নিয়েছিলাম বলে ঐ যাত্রায় প্যানি বকা খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছিলো। বাবা আমাকে বকা দেইনি কখনো আর ঘড়ি ভাঙার জন্যও কিছু বলেননি সেদিন।শুধু বলেছিলো কাজ গুলো একটু দেখেশুনে করবা মাই প্রিন্সেস। কিন্তু এই ঘটনা আবার ঘটছে কেনো! তাহলে কি আমি.......!
(২)
গ্যারেজের জানালা থেকে বাইরে দেখলাম। হুবুহু আমার মতো একজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার মতো না, ঐটা আমিই। বন্দী হয়ে গেছি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে। নিজের এই নতুন জগৎ কে উপভোগ করবো নাকি এই জগৎ থেকে কি করে মুক্তি পাবো এই নিয়ে চিন্তা করবো কিছুই বুঝতেছি না এই মুহুর্তে। রাতের উদ্ভট কল্পনা কিভাবে বাস্তব হলো আর বাস্তবই যদি হয় তাহলে ২৫শে অক্টোবর সন্ধ্যার পরের মুহুর্তে তো আমার থাকার কথা কারণ সবকিছু যদি আমার চিন্তাশক্তির ফল হয় তাহলে জন্মদিনের আগের মুহুর্তে ঐ ক্যামেরা বন্দী সময়টাতে থাকার কথা। কিন্তু আমি ২৪শে অক্টোবর গাড়ি চুরির আগের সময়টাতে কিভাবে পৌঁছালাম! ওহ্ সবকিছু ঠিক হয়েছে শুধু সময়টা ভুল কিন্তু এই সময়টাকে কি কেউ ক্যামেরা বন্দী করেছে বলে মনে পড়ছে না। ওহ্ হ্যাঁ! এটা তো বাবার ল্যাপটপে দেখেছিলাম ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে। চোরকে শনাক্ত করার জন্য ঐ দিনের ভিডিও ফুটেজ কয়েক বার দেখেছি বাবা-মা আর আমি। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা! যদি তাই হয় তাহলে আমি তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে বন্দী না! বাসার ছয়টি ক্যামেরাই তো সব সময় চলছে আর সবকিছু রেকর্ড হচ্ছে। তাহলে এ জগতের শেষ কোথায়! প্রতি সেকেন্ডই তো রেকর্ড হচ্ছে। আর কেউ যদি ভুল করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ধারণকৃত ফুটেজ মুছে ফেলে তাহলে তো আমিও মুছে যাবো। যদিও এটা আমি না কিন্তু যদি না ফিরতে পারি তাহলে আসল আমি কিভাবে স্বাভাবিক হবো! সমস্ত শরীর বর্তমানে কিন্তু আমার স্মৃতি আমার বুদ্ধিমত্তা এই অতীতের মাঝে বন্দী। আমাকে যখন প্রায় দুই বছর আগে জেলেরা খুঁজে পায় একটি নৌকায় তখন তো আমাকে ব্রেন ডেড অবস্থায় পাওয়া গেছিলো বলে ডাক্তার রাজান জানান। কিন্তু ব্রেন ডেড আসলে কিভাবে হয়েছিলো তার কোনো কারণ খুঁজে পায়নি ডাক্তাররা হাজার পরীক্ষা করেও। তাহলে কি সেটা ব্রেন ডেড ছিলো না! আমি তাহলে আগেও এমন অতীতে ভ্রমণ করেছি! আমাকে খুঁজে পাওয়ার পর ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসায় আমি সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু আমার শারিরীক কন্ডিশন ব্রেন ডেড এর পর্যায় ছিলো। তাহলে তো প্রাথমিক চিকিৎসায় আমার সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা না যদি ব্রেন ডেড হয়ে থাকে অতীতে! নৌকায়, একজন ব্রেন ডেড রুগীর যা যা সরঞ্জাম থাকা দরকার তাই ছিলো। তার মানে আমার চিকিৎসা হয়েছিলো কিন্তু তখন সুস্থ হয়নি কেনো আর এখানে এসেই বা কেনো সুস্থ হলাম একদিনও লাগলো না! অতীতে যদি আগেও ভ্রমণ করে থাকি তাহলে তার স্মৃতি মনে পড়ছে না কেনো! আর আমার আসল বাবা মা পরিবারই বা কই।অতীতে কি এমন কিছু করেছি যার কারণে আমার পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে!এমন কোনো ভুল যেটা এখন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ মুছে দিলে আমার অস্তিত্ব মুছে যাবে, ঠিক তেমন কোনো ঘটনা কি অতীতে ঘটেছে বা আমি ঘটিয়েছি যার কারণে আমার পরিবারের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে! আর তাদের সাথে কি আমারও অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিলো যার জন্য আমার স্মৃতি বুদ্ধিমত্তার মৃত্যু ঘটে অতীতের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সাথে! তার ফলে কি আমার ব্রেড ডেড হয়! আমি কি তাহলে দ্বায়ী আমার পরিবারের গুম হয়ে যাওয়ার পিছনে? অতীতে যদি আমার অস্তিত্ব নিশ্চিহ্নও হয়ে যায় তাহলে এখানে এসে ডাক্তারদের প্রাথমিক চিকিৎসায়ও বা কেনো সুস্থ হলাম হঠাৎ করে! না না আর কিছু ভাবতে পারছি না কান্না চলে আসছে। কেনো হলো এমনটা আমার সাথে। কিসের যেনো শব্দ হলো হঠাৎ। পিছন ফিরে দেখি একজন মানুষ মুখে মুখোশ পড়ে গ্যারেজে ঢুকে পড়েছে। আমি ভয়ে লুকিয়ে পড়লাম। হটাৎ কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি। লোকটাকে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি এমন খারাপ মানুষ কেনো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ যদি এদের কে খুঁজে খুঁজে আগে থেকে জেলে ভরে রাখতো কোনো অপকর্ম করার আগে তাহলে এতো অপরাধ হতো না। কল্পনা শেষ হয়নি তার আগে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বাজার শব্দ শোনা গেলো। অল্প কিছু সময়ের মাঝে গ্যারেজের দরজা কয়েকজন মিলে খুললো কিন্তু তার মাঝে মুখোশ পড়া লোকটা গ্যারেজের কোনায় পড়ে থাকা ময়লার কালো বড় পলিথিনের মাঝে ঢুকে পড়লো। খুঁজে পেলো না তাকে। কেনো জানি না সবার সামনে আসতে আমার ভয় লাগছিলো। কিন্তু জানাতে ইচ্ছা করছিলো লোকটা ওখানে লুকিয়ে আছে। বাবা সহ পুলিশ সদস্যরা যখন ফিরে যেতে ঘুরে দাঁড়ালো তাকে খুঁজে না পেয়ে তখনি তাদের মাঝে একজন পুলিশ হটাৎ কালো পলিথিনে লাঠি দিয়ে জোরে একটা আঘাত করলো। পলিথিনের মাঝে লোকটা গুঙিয়ে উঠলো আঘাত পেয়ে। তখন পুলিশ সদস্যরা তাকে টানতে টানতে গাড়িতে উঠালো। বাবার সাথে কথা বলে পুলিশরা যখন রওনা দিবে তখন গ্যারেজ থেকে দেখলাম আমার পোষা বিড়াল পিসু গাড়িতে লাফ দিয়ে উঠে গেলো। দৌড়ে ও পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই গাড়িটা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলো। পিসুটার জন্য খারাপ লাগলো। আমার অনেক প্রিয় ও। ওর ফিরে আসার কল্পনার সাথে সাথে পিসু আমার সামনে হাজির কিন্তু আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে। জানি না কেনো। এতো আমার রাতের কল্পনার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো। পরিস্থিতি নিজের মতো করে তৈরি করতে পারছি। বিষয়টা আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য পরিস্থিতি কল্পনা করলাম পিসু এখন কুকুর হয়ে যাবে। পলক ফেলানোর আগেই পিসু কুকুরে রূপান্তরিত হয়ে গেলো।কিন্তু আমি তো কুকুরকে অনেক ভয় পায়। ও পিসু হোক বা পিসুর আত্মা, আমি কিছু না ভেবেই ভয়ে দৌড়ে আবার গ্যারেজে গিয়ে গেট বন্ধ করে দিলাম। যেমন ভয়ও করছে তেমন রোমাঞ্চকরও লাগছে সবকিছু। হঠাৎ কি মতো হলো এমনি মনে মনে কল্পনা করলাম আমার ছোট্টভাই প্যানির পোষা টিয়াপাখিটা আবার জীবিত হয়ে আমার কাছে চলে আসুক। কিন্তু আসলো না। গ্যারেজে খুঁজে পেলাম একদল পিঁপড়ার দল। একটা পিঁপড়াকে আঙুল দিয়ে পিসে দিয়ে মনে মনে কল্পনা করলাম আবার বেঁচে ফিরে আসুক পিঁপড়াটা কিন্তু আসলো না। এক বক্স ভ্যানিলা আইসক্রিমের কথা কল্পনা করার সাথে সাথে চলে আসলো সামনে। সবকিছু করতে পারতেছি কিন্তু মৃত জিনিস জীবিত করতে পারতেছি না। ঠান্ডা জিনিস খাওয়া মানা আছে তাই অনেক মন চাইলেও আইসক্রিমটা খেলাম না যদি মা বকা দেয়। মায়ের কথা আমি সবসময় রাখার চেষ্টা করি। সে আমার আপন মা না কিন্তু মা বলতে তাকেই চিনি আর তাকে অনেক ভালোবাসি। হঠাৎ একটা জিনিস মাথায় আসলো আর আমি সাথে সাথে দৌঁড়ে বাবার রুমে চলে গেলাম। ভাগ্য ভালো কেউ দেখেনি আমাকে। বাবার ল্যাপটপটা অন করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বের করলাম আর কল্পনা করলাম ২৬শে অক্টোবর ভোর ৬টা পর্যন্ত ফুটেজের। আর সাথে সাথে ভিডিওর দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলো এক নিমিষেই। একবার গভীর ভাবে নিশ্বাস নিয়ে ফুটেজটা ২৬শে অক্টোবর ভোর ৬টা পর্যন্ত এক ক্লিকে টেনে দিলাম যেনো বর্তমান পরিস্থিতি সেই মুহূর্ত পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে যায় আর আমার অস্তিত্ব চলে যাক সেই সময়ে। হঠাৎ সবকিছু ঘুরতে লাগলো।মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমাদের বাড়িটা কাগজের মতো করে দুমড়েমুচড়ে ভাজ করছে।
"দরজা খোলো মা, কি হয়েছে চিৎকার করো কেনো!" বাবার ডাক শুনে আমার রুমের দরজা খুলে বাবাকে বললাম বাবা প্লিজ আর কিছু সময় পরে ডেকো আমায়, অনেক ঘুম পাচ্ছে। পিছনে কোথা থেকে যেনো মা বললো আচ্ছা তুমি ঘুম পড়ো, মনে হয় ভয়ের স্বপ্ন দেখে চিৎকার করেছো। কথা গুলো অর্ধ ঘুমের মাঝে শুনে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম দরজা না বন্ধ করেই।
বাবা মাথায় হাত বোলানোয় ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠলাম। মাথাটা একটু ব্যাথা করছে। রাতে ঘুমিয়েছিলাম তারপর হঠাৎ কিসের একটা আলো তারপর আর কিছু মনে পড়ছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০টা ৩৪ বাজে। বাবা বললো" কি হয়েছে মা! রাত কি অনেক জেগেছিস! এতোক্ষণ তো তুই ঘুম পড়িস না। শরীর ঠিক আছে তো তোর! " হ্যাঁ বাবা ঠিক আছি শুধু একটু ক্লান্ত লাগছে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। ব্রাশ করতে করতে পিসু পিসু বলে ডাকছি হঠাৎ পিসুর গায়ের রঙের মতো একটা কুকুর আমাদের বাসায় ঢুকে পড়লো। আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। বাবা মা প্যানি সবাই চিৎকার শুনে আমার কাছে চলে আসলো। কুকুরটাকে দূরে সরাতে সরাতে বাবা বললো গত পরশু গাড়ি চোরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পিসুকে পাওয়া যাচ্ছে না। তুই-ই তো কান্না করলি ওকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে। তাহলে আবার ওকে ডাকছিলি কেনো! আর এই কুকুরটাও পিসু হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে যাচ্ছে না। বাবার কথা শুনে যেনো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বাবার গাড়ি তো চুরি হয়ে গেছে। আর গতকালও পুলিশ কিছু ইনফরমেশন নিতে বাবার কাছে এসেছিলো।তারপর জন্মদিনের পার্টি শুরু হলো সন্ধ্যার সময় আর রাত ১২টায় কেক কাটার সময়ও তো পিসু আমার পায়ের কাছে ঘুরছিলো। তাহলে গত পরশু কি করে হারালো পিসু! বাবাকে বললাম কথা গুলো কিন্তু বাবা হেসে মাকে ডেকে বললো দেখো আমাদের মেয়ে পাগল হয়ে গেছে কিসব বলে। বাবা বললো চোর তো চুরি করতে এসেই ধরা পড়ছিলো। আমি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে গ্যারেজে দৌঁড়ে গেলাম। দেখলাম সত্যিই তো গাড়িটা তার নিজের জায়গায় স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে ঠিক আগের মতো। গ্যারেজ থেকে বেড়িয়ে আসার সময় পায়ের সাথে আইসক্রিমের একটা কৌটা বাধলো। সেটা ডাস্টবিনে ফেলে বাসায় ফিরছি আর সবকিছু মেলানোর চেষ্টা করছি কি হচ্ছে এসব। দূর থেকে কে একজন মনে হলো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।তাকিয়ে দেখলাম সেই কুকুরটা যাকে পিসু বলে ডাকলেই চলে আসে।
(৩)
অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা আমাকে তার মাঝে আবদ্ধ করে রেখেছে। ঘটনা প্রবাহের যনজাট যেনো আমার মস্তিষ্ককে তার স্বাভাবিক গতি পথকে অবরুদ্ধ করতে না পারে সেজন্য রাতে তারাতাড়ি ঘুমাতে গেলাম। জন্মদিনের জন্য বাবা - মা আমাকে ২দিন স্কুল থেকে ছুটি নিতে বলেছিলো। ২ দিনের ছুটি কাটিয়ে আমি বাবার সাথে স্কুলের পথে রওনা হয়েছি। আমি আর আমার ভাই প্যানি একি স্কুলে পড়ি। ও ক্লাস টু'তে এবং আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। যদিও ব্রেন ডেড থেকে স্বাভাবিক হওয়ার পরে কিছুই মনে ছিলো না তবুও কয়েক মাসের ভিতর আমি ক্লাস ফাইভের আগের ক্লাস গুলোর সব পাঠ চুকিয়ে নিয়েছিলাম। বয়স অনুযায়ী আমাকে ফাইভের উপরের ক্লাসে এডমিট হওয়ার পারমিশন পাওয়া যায়নি বলে আমাকে ক্লাস ফাইভে ভর্তি করা হয়। প্যানি অসুস্থতার কারণে আমাদের সাথে স্কুলে আসেনি। বাবা গাড়িটা পার্কিং করে আমাকে নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করলো। আমার স্কুলে তেমন ফ্রেন্ড নেই। তেমন বলতে ফ্রেন্ড -ই নেই। তবে একজন আছে, সে মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলার আগ্রহ দেখায় কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি পরিপূর্ণ বাক্যও আমাকে বলেনি। তার ভালো নাম কি জানি না, সবাই মাফি বলে তাকে ডাকে। ক্লাসে ঢুকে দেখি ম্যাম আগে থেকে ক্লাসে উপস্থিত। পারমিশন নিয়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করলাম। আমাদের আজকের টপিক "অমরত্ব লাভ করা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে"। আমি প্রতিটা ক্লাস মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করি তবে বিজ্ঞান ক্লাসে একটু বেশিই মনোযোগ দিয়ে থাকি কারণ এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় সাবজেক্ট। ম্যাম যথারিতি তার পাঠ দান শুরু করলেন। "অমরত্ব লাভ করা মানে হলো মৃত্যুকে জয় করা।কিন্তু আজ পর্যন্ত এমনকিছু চিন্তা বা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি যা মানুষকে তার যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করবে অর্থাৎ বার্ধক্য আসতে দিবে না। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা একটি জিনিসের উপর রিসার্চ করে যাচ্ছে যে কিভাবে মানুষের স্মৃতি এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে ট্রান্সফার করা যায়। আসলে আমি বলতে আমার স্মৃতি।জন্ম থেকে এই পর্যন্ত সকল ঘটনা আমার মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে আছে। এখন আমার এই বৃদ্ধার স্মৃতি যদি একজন অল্প বয়স্ক কারো মস্তিষ্কে ট্রান্সফার করা যায় তাহলে সেই নবীন শরীরে আমার স্মৃতি নিয়ে আরও অনেক বছর বেঁচে থাকতে পারবো এই দুনিয়ায়।শরীর একটা শুধু মাধ্যম কিন্তু আমাদের স্মৃতিটাই সবকিছু। অন্য শরীরে আমার স্মৃতি স্থাপন করার পর যদি আমাকে ম্যাম বলে ডাকো তাহলে আমি তো তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো কারণ আমার স্মৃতি জানে তোমরা আমাকে ম্যাম বলে সম্মোধন করো। একজন নিরক্ষরের শরীরে আমার স্মৃতি স্থাপন করলে সেই বডিটাও সাইন্সের ক্লাস নিতে পারবে কারণ তখন ঐ পুরো বডিটা আমার বুদ্ধিমত্তা আমার স্মৃতি দিয়ে পরিচালিত।কিন্তু এখানে কিছু জটিলতা আছে। কেউ কি আমাকে বলতে পারবে কি কি জটিলতা হতে পারে ?" "ম্যাম,আমি" "ধন্যবাদ তোমাকে।আচ্ছা বলো তো কি কি সমস্যা হতে পারে বলে তোমার মনে হয়?" একটু চিন্তা করে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যামের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করলাম-" প্রথম সমস্যা হলো মৃত মানুষের শরীরে স্মৃতি ট্রান্সফার করে তো লাভ হবে না, তাই লাগবে জীবিত মানুষ। কিন্তু কোন মানুষ রাজি হবে তার স্মৃতি সব মুছে ফেলে বা ড্যামেজ করে অন্য কাউকে তার শরীরটা দিয়ে দিতে! এক কথায় তো সেটা হবে সুইসাইড আর যদি কেউ সম্মতিও দেয় তার শরীর দিতে তারপরও সমস্যা হলো এটা হিউম্যান রাইটস্ এর বিপরীতে। আইন এটা মানবে না। আরও একটি সমস্যা হলো যার শরীরে স্মৃতি প্রবেশ করবে তার যদি এক্সিডেন্টাল ডেড হয় তাহলে তো তার সাথে সাথে আপনার স্মৃতিও মরে যাবে।" "হ্যাঁ ধন্যবাদ তোমাকে। বসো। এইজন্য রিসার্চটা মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের উপর করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে যেনো কোনো পরিক্ষা করার জন্য কোনো নির্দোষ মানুষের জীবন না চলে যায়। এখনো সেটার আইনী সমাধান আসেনি। আর একটা ভালো পয়েন্ট বলেছো অ্যাক্সিডেন্টাল ডেড যদি হয় তাহলে অমরত্ব তো লাভ করা যাবে না। তবে কিছু কিছু নিউরো-সাইন্টিস্ট দাবি করেছেন একের অধিক মানুষের মস্তিষ্কে যদি মাইক্রোচিপ অনুপ্রবেশ করানো যায় যেগুলো একটি নির্দিষ্ট সিগনাল পাওয়ার পর ঐ মানুষের স্মৃতি একটি কৃত্রিম আবরণ দ্বারা ব্যষ্টিত রাখবে অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট নিউরনকে আবদ্ধ রেখে নতুন স্মৃতি মস্তিষ্কে সঠিকভাবে সঞ্চালন করতে সাহায্য করবে তাহলে হঠাৎ একজনের মৃত্যু হলে সেই সিগনাল অন্য ব্যক্তির মস্তিষ্কে প্রবেশ করবে যার ব্রেনে আগে থেকে মাইক্রোচিপ ইনপুট করে রাখা। একটি শরীর মরে গেলে অন্য শরীরে প্রবেশ করার পর আরও নতুন একজনের মস্তিষ্কে সেটা ইনপুট করতে হবে। এটা একটা ভয়ংকর প্রোসেস। এর অর্থ হলো একজনের অস্তিত্ব ভিতর থেকে শেষ করে দিয়ে তার শরীর নিজের বেঁচে থাকার জন্য ব্যবহার করা। এই ধারণার সূত্রপাত ঘটে ১৯৬০ এর দশকে একজন বিজ্ঞানী জেমস্ ভি. ম্যাককনেল এবং আরও কিছু মানুষের প্রস্তাবিত একটি বিশেষ জৈবিক প্রক্রিয়া যাকে স্মৃতি স্থানান্তর বা মেমোরি ট্রান্সফার বা মেমোরি আরএনএ- ও বলা হয়ে থাকে। পরবর্তী ক্লাসে তার প্রক্রিয়াকে মেমোরি আরএনএ বলা হয় কেনো তা নিয়ে একটি বিস্তারিত ক্লাস করবো। সবাইকে ধৈর্য সহকারে ক্লাস করার জন্য ধন্যবাদ।" বাসায় ফিরে দেখি প্যানি ঘুমাচ্ছে। কিজন্য অসুস্থ হয়েছে বোঝা যায়নি তবে এখন আগের থেকে কিছুটা সুস্থ। প্যানিকে দেখে নিজের রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। লাঞ্চ করছি কিন্তু মনোযোগ খাওয়ার থেকে আমার আজকের ক্লাসের টপিকটার উপর অনেক বেশি। হঠাৎ বাইরে আওয়াজ শুনলাম। খাওয়া রেখে বাইরে গিয়ে দেখি আমার বিড়াল পিসু হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে যে কুকুরটাকে আমাদের বাসার আসেপাশে দেখা যাচ্ছে সেটা প্যানির নতুন টিয়াপাখিটির খাঁচা নিচে নামানোর চেষ্টা করছে। প্যানি জানালা থেকে ওর ছোট পাহাড় আকৃতির বস্তুটা কুকুরটিকে তাক করে ছুড়ে মারলো, সেটি গিয়ে টিয়াপাখির খাঁচায় লেগে খাঁচাটি আঙটা থেকে খুলে নিচে কুকুরটির মাথায় পড়লো। নিচে খাঁচা পড়ার কারণে খাঁচার দরজা খুলে গেলো আর সাথে সাথে পাখিটি অদ্ভুত রকমের ছটফট করতে করতে আমাদের প্রতিবেশী আঙ্কেল জো'র বাসার পিছনে গিয়ে পড়লো। আমি দৌড়ে গিয়ে পাখিটিকে তুললাম নিচে থেকে। পাখিটি তুলতেই সে পিসু পিসু বলে ডাকতে শুরু করলো। হাত থেকে উড়ে আমার ঘাড়ে বসে আমার গলার সাথে ওর মাথা ঘষসে। আর দূরে তাকিয়ে দেখি কুকুরটা লাফিয়ে লাফিয়ে কি করার চেষ্টা করছে।আর নিচে পড়ে থাকা পাখির খাবার গুলো ঠিক পাখিদের মতো ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না। প্যানির ছুড়ে দেওয়া বস্তুটা হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠলো বারান্দার পাশে। টিয়া পাখিটা নতুন আনা হয়েছিলো এখনো পোষ মানেনি কিন্তু হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেনো! ফিরে আসার সময় আঙ্কেল জো'র জানালার দিকে নজর গেলো। কি অদ্ভুত ব্যাপার আঙ্কেল জো'র প্রিয় কুকুরের মাথাটা টেবিলের উপর পড়ে আছে আর আঙ্কেল জো যেনো কি রান্না করছে শিস্ বাজাতে বাজাতে। গন্ধটা তো মাংসের কিন্তু আঙ্কেল জো তো ভেজিটেরিয়ান উনি তো দু চোখে মাংস দেখতে পারেন না আর সেখানে কিনা তিনি...! আমার বার্থডে পার্টি থেকে আঙ্কেল জো বের হওয়ার সময় বলছিলেন এখান থেকে সে সোজা তার বন্ধু নিউরোসার্জন জন লি'র বাসায় যাবেন। অনেক দিন পর তাদের দেখা হবে। কবে ফিরলেন আঙ্কেল জো আর বাইরে থেকে ফিরলে তো আমাদের বাসায় একবার আসেন প্যানি আর আমার সাথে দেখা করতে! ভয় ভয় করতে লাগলো ঘটনা গুলো দেখে। বাসায় ফিরে দেখি বাবা টিভি দেখছে। নিউজের হেড লাইন হলো বিখ্যাত নিউরোসার্জন জন'লির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে গতকাল রাত আনুমানিক ২টায়। তাহলে কি আঙ্কেল জোর মাঝে এখন জন'লির স্মৃতি! ক্লাসে ম্যামের বলা প্রতিটা কথা মনে পড়তে লাগলো। কিন্তু টিয়া পাখি আর কুকুরটার কি হলো! দুজনের আচরণ তো পাল্টে গেছে। অদ্ভুত ঐ জিনিসটা আসলে কি! নীল আলোই বা হঠাৎ বিকিরিত হলো কেনো!কে দিয়েছিলো ওটা! যদি ওটার কারণে টিয়াপাখি কুকুরটার মাঝে মেমোরি অদলবদল হয়! কিন্তু আঙ্কেল জো'র ঘটনা তো সম্পূর্ণ ভিন্ন! দৌড়ে গিয়ে স্টোর রুম থেকে বক্সটা বের করলাম যেটায় করে ঐ অদ্ভুত জিনিসটি দেওয়া হয়েছিলো আমাকে জন্মদিনের গিফট্ হিসেবে। বক্সের গায়ে স্পষ্ট করে লেখা উপহারটি জেমস্ ভি. ম্যাককনেলের পক্ষ থেকে। কিন্তু তিনি তো ৯ এপ্রিল ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন!
(৪)
আমাদের প্রতিবেশি, আঙ্কেল জো অনেক ভালো মানুষ। তার পরিবার বলতে একটি ছেলে আছে যে জাপানে থাকে। সেখানে সে একটি অটোমোবাইল কোম্পানিতে কর্মরত আছে। তাকে আমি কখনো দেখিনি। আঙ্কেল জো এখানে একাই থাকেন। আমি এবং আমার ভাই প্যানি মাঝে মাঝে তার বাসায় যায়। তিনি আমাদেরকে অনেক যত্ন করেন। তিনি মূলত কি চাকরি করেন জানি না তবে বাবা বলে তিনি ব্যাংকে জব করে আর তাকেও জিজ্ঞাসা করছি একবার তিনিও তাই বলেন। তবে তার চালচলন, ফোনে কথোপকথন, তার জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তার রহস্যময় হাসি আমাকে বিশ্বাস করতে দেয় না তিনি ব্যাংকে জব করেন। এই তো কয়েকদিন আগে তার মানি ব্যাগ থেকে একটি টোকেন পড়ে গেছিলো। টোকেনে Cellebrite's UFED, Pegasus spyware লেখা ছিলো। পরে বাসায় ফিরে এসে সার্চ ইঞ্জিনে ঐ গুলো আসলে কি তার তথ্য কালেক্ট করছিলাম। এক পর্যায়ে ইসরায়েল সম্পর্কে জানলাম যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ২০২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত ছিলো আর এখন তো ২০৪৬ খ্রিঃ। সেই সময়কার কিছু তথ্যচিত্র দেখছিলাম। হঠাৎ একটি ছবি দেখে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ এই মহিলার ছবি তো আমি আঙ্কেল জো'র বাড়িতে দেখেছি। ইনার সম্পর্কে আঙ্কেল জো কখনো কিছু বলেননি। টোকেনে লেখা দুইটা জিনিসের একটা ডিভাইসের সকল তথ্য বের করতে সক্ষম যদি লক করা থাকে তারপরও আর অপরটা ডিভাইসের সকল কার্যক্রম স্পাই এর মতো নিঃশব্দে কালেক্ট করতে পারে এমনকি কন্ট্রোলও করতে পারে। প্রাথমিক তথ্য নিয়ে আমি সন্তুষ্ট থাকিনি অবশ্য। পরে সুযোগ বুঝে আঙ্কেল জো'র ল্যাপটপে সার্চ দিয়ে দেখেছি সেখানে স্পষ্ট করে ঐ দুইটার ব্যবহার বিধি পয়েন্ট বাই পয়েন্ট ডিটেইলসে দেওয়া আছে। তার ল্যাপটপ অবশ্য লক করা থাকে কিন্তু আমি একবার পাসওয়ার্ড দিতে দেখেছিলাম তাকে। এই ঘটনার পর থেকে আমি আঙ্কেল জো যে ব্যাংকে জব করে সেটা মানতে পারি না। পরে অবশ্য মাথা ঘামায়নি বিষয়টা নিয়ে কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জেমস্ ভি. ম্যাককনেলের প্রস্তাবিত জৈবিক প্রক্রিয়া মেমোরি আরএনএ - এর সম্ভাবনাটা এখনো মাথা থেকে যায়নি। তার থিউরি থেকে কনসেপ্টটা নিয়ে বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান যে পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে আঙ্কেল জো'র হঠাৎ পরিবর্তন আর তার বন্ধু নিউরোসার্জন জন'লির অস্বাভাবিক মৃত্যু যে দুইটি পৃথক ঘটনা সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। দুইটি ঘটনা একি সুত্রে গাঁথা এটা আমার বিশ্বাস। তাহলে কি স্মৃতি একজন থেকে অন্যজনের মাঝে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়াটা আবিষ্কার হয়ে গেছে! প্রক্রিয়াটির অপব্যবহার হলে তো ভয়ংকর সময় আসবে সামনে! এটা আমাকেই থামাতেই হবে। যেখানে আঙ্কেল জো ভেজিটেরিয়ান তার উপর সে কিনা তার প্রিয় কুকুরকে হত্যা করে রান্না করছে! এটা তো কল্পনারও বাইরে কিন্তু সেটা এখন বাস্তবে ঘটছে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাবা আর আমি প্যানির টিয়া পাখিটার নিচে পড়ে যাওয়া খাঁচা ঠিক করে পাখিটাকে ওখানে রেখে আসলাম। টিয়া পাখিটি পিসু পিসু বলে ডাকতেই আছে। টিয়াপাখি আর কুকুরটার ইন্সিডেন্টের পর থেকে কুকুরটিকে আর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। রাতের খাবারটা মিসেস. ছামনা আমার রুমে দিয়ে গেলো। রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম বলে মা তাকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে আর বলেছে একটু পর এসে তিনি দেখে যাবেন আমি খেয়েছি কিনা। খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম। ভোর সাড়ে ৫টার এলার্মে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে ছুটে গেলাম আঙ্কেল জো'র বাড়ির পিছনে। সেখানে একটি গুপ্ত পথ আছে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। আমি আর প্যানি একদিন খেলার সময় এই পথটি আবিষ্কার করেছিলাম। পথটি সোজা ড্রইংরুমের সোফার পিছনে গিয়ে শেষ হয়। রুমে ঢুকেই দেখলাম সোফার সামনের টেবিলটার উপর একটি ম্যাপ। রেড সার্কেল দিয়ে ম্যাপটিতে আমাদের লুক্সেমবার্গের প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামকে মার্ক করা আর লুক্সেমবার্গ এর উপর টিক দেওয়া। টেবিলের উপর আরও কয়েকটি জিনিস ছিলো। Cellebrite's UFED, নিউরোসার্জন জন লি'র একটি ছবি তাতে ক্রস চিহ্ন দেওয়া আর পিছনে নোট লেখা ব্রেক ফেল মিশন পারফেক্টলি ডান। তার মানে আমার ধারণা ভুল। মেমোরি ট্রান্সফার না, এটা তো পরিকল্পিত খুন! আরও একটি ছবি সাথে, একটি বিল্ডিংয়ের ছবি। এ ছবির পিছনেও নোট লেখা 'বেলজিয়াম/১০২, অ্যালুমিনিয়াম+মার্কিউরি+..' শেষে অস্পষ্ট কিছু লেখা বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ কিছু একটার আওয়াজ হলো।আমি দ্রুত সোফার পিছনে লুকিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকার পর কাউকে আসতে না দেখে Cellebrite's UFED টা নিয়ে আঙ্কেল জো'র বেড রুমের দিকে গেলাম তার ফোনটা নিতে। আঙ্কেল জো এখনো ঘুমাচ্ছে আর পাশে পড়ে আছে বিয়ারের বোতল। উনি মনে হয় রাতে একটু বেশি ড্রিংক করেছেন সেজন্য তার সিক্রেট ডকুমেন্টস গুলো ওভাবে পড়ে আছে ড্রইংরুমে। হঠাৎ কেউ পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে বলে অনুভব হলো। পিছন ফিরতেই দেখি উনি আর কেউ না সেই বিখ্যাত নিউরোসার্জন জন লি' স্বয়ং দাড়িয়ে আছে। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছি না। হ্যাঁ এটা সত্যি উনি জন লি। আমি কিছু বলার আগেই উনি বললো আমার সাথে এদিকে এসো। কোনো উপায় না দেখে তার পিছু পিছু গেলাম। উনি যেতে যেতে বলা শুরু করলো " তুমি নিশ্চয়ই জো'র সেই ইনটেলিজেন্ট প্রতিবেশী যার কথা জো'র মুখে অনেকবার শুনেছি।" আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। "জো তোমাকে আর তোমার ভাইকে নিজের সন্তানের মতো দেখে। যা-ই হোক মূলকথায় আসি। তোমার সম্পর্কে জো'র মুখে যতোটুকু শুনেছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে নিশ্চয়ই তুমি এখানে এসে যা যা দেখেছো তাতে অনেক কিছু বুঝে গেছো। ভয় নেই তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। এখানে বসো। একটা জিনিস দেখায় তোমাকে। এইটায় অ্যালুমিনিয়াম আর এই পাত্রে মার্কিউরি। দেখো তো দুইটা একসাথে মেশালে কি তৈরি হয়! অদ্ভুত না! এটা সবাই জানে কিন্তু একটা জিনিস জানে না,সেটা হলো আমার আবিষ্কার। অ্যালুমিনিয়াম, মার্কিউরি আর তার সাথে সামান্য পরিমাণ এইটা মেশালে কি ঘটবে জানো! এই জিনিসটা আমার আবিষ্কার। সবাই জানে আমি একজন নিউরোসার্জন কিন্তু আমি এসব পদার্থ নিয়ে সব সময় গবেষণা করি। তোমাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলাম তুমি কি কি করছো তাই। বেলজিয়ামের ঐ বিল্ডিংয়ের ছবিটা তো নিশ্চয়ই দেখেছো। ঐটা আমরা ধ্বংস করবো। এই অ্যালুমিনিয়াম আর মার্কিউরির সাথে আমার ল্যাবে তৈরিকৃত এই যৌগটা যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশিয়ে ফর্টি সেভেন ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বিল্ডিংয়ের নিচে খনন করে ঢেলে দি তাহলে বিল্ডিংয়ের নিচের অর্ধেক অংশ জুড়ে ফেনা তৈরি হবে যেটা কাঁচ আগুনে গলিয়ে নরম হলে তার একফোঁটা পানিতে ফেললে যেমন অভঙ্গুর পদার্থ তৈরি হয় তেমন হবে। তারপর ধীরে ধীরে ফেনা পরিমাণে বাড়তে থাকবে। বিল্ডিংয়ের পিছনের অংশ অনেক উচু হয়ে গেলে সেটা সামনের দিকে মুখ থুবড়ে পড়বে আর বিল্ডিংয়ের সবাই ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা পড়বে। প্রক্রিয়াটা এমনভাবে চলতে থাকবে যে কেউ সহজে বুঝতে পারবে না আর বিল্ডিং ধ্বংস হওয়ার আগেই আমি লুক্সেমবার্গে ফিরে আসবো। যেহেতু আমি এখন সবার কাছে মৃত আর নকল পরিচয়ে যাবো সেজন্য কখনো সন্দেহের তীর আমার দিকে আসবে না।" এটা বলেই জন লি হো হো করে হাসা শুরু করলেন। আমি উঠে ড্রইংরুম থেকে আঙ্কেল জো'র পাশে দাঁড়ানো সেই মহিলাটার ছবি নিয়ে আসলাম যার ছবি আমি ইসরায়েলের তথ্যচিত্র দেখার সময় দেখেছিলাম আর জিজ্ঞাসা করলাম ইনিকে আর কেনোই বা আপনারা এসব করছেন। "ইনিই তো সবকিছুর মূল কারণ। জানো ইনি কে! জো' বলেনি ওঁর সম্পর্কে! আমার স্ত্রী লাইমিন আর তোমার আঙ্কেল জো'র একমাত্র বোন। জাপানে যে ছেলেটা থাকে সেটা আমার ছেলে। আমার আর জো'কে সে অভিমান রাগ বললে ভুল হবে ঘৃণা করে। ঘৃণা করাটাই স্বাভাবিক। ওর মায়ের মৃত্যুর জন্য আমরা দুজন দায়ী। ১৩ বছরের সম্পর্ক যখন বিয়েতে পরিণত হয় তার কিছু বছর পরে আমাদের সন্তান জাইনের জন্ম হয়। তখন আমরা জার্মানিতে থাকতাম। আমার স্ত্রী জাতিসংঘের একটি অঙ্গ সংগঠনে কাজ করতো। হঠাৎ একদিন মেইল আসে ওকে কিছু কর্মসূচী পালনের জন্য ফিলিস্তিনে যেতে হবে। তখন ফিলিস্তিন আর ইসরায়েলের মাঝে যুদ্ধ চলছে। ওঁ প্রথমে যেতে চাইনি কিন্তু আমার জোরাজুরিতে যেতে রাজি হয়। আমি কি তখন বুঝেছিলাম ঐটাই ওর শেষ যাওয়া আর ফিরবে না! ওকে বুঝিয়েছিলাম যে দ্বায়িত্ব থেকে পিছ পা হতে নেই।তারপর জাইন আর আমাকে রেখে তার ২দিন পরে সে চলে যায় ফিলিস্তিনে। তার এক সপ্তাহ পর বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে জো আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। তাকে দেখে আমি বিচলিত হয়ে যায় কি হয়েছে জানার জন্য। তখন জো ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক গবেষণাগারে কর্মরত ছিলো। সে ঘটনা গুলো এইভাবে বলে যে তারা একটা গবেষণা করছিলো কিছু বছর যাবৎ।গবেষণাটা ছিলো এই বিষয়ের উপর যে একটা নির্দিষ্ট লোকেশন টার্গেট করে সে অঞ্চলটা একটি কৃত্রিম চৌম্বকীয় আবরণে আবদ্ধ রাখবে সেটা থাকবে পজেটিভ আর আকাশে কোনো বস্তুকে টার্গেট করে তাকে নেগেটিভ কৃত্রিম চৌম্বকীয় আবরণে আবদ্ধ করে একটি সিগনাল পাঠাবে যা দুইটি বস্তুর মাঝে আকর্ষন শক্তি বাড়িয়ে দিয়ে একে অপরের দিকে নিজেদের টানার চেষ্টা করবে। তারপর গবেষণার শেষ পর্যায়ে আমরা পরীক্ষা করার জন্য একটি মালবাহী প্লেনের সাথে লোকেশনটা কানেক্ট করি। এই পুরো পরীক্ষাটার হেড ছিলাম আমি। আমার তত্বাবধানে সবকিছু করা হয়। লোকেশনটা ছিলো ফিলিস্তিনের একটি শহর। সেদিন প্রায় সাড়ে ছয়শো মানুষ হতাহত হয়। হেড অফিস থেকে ফিরতেছি তখন একটা মেসেজ আসে। ইসরায়েল কতৃপক্ষ যে লোকেশনটায় অপারেশন করতে বলেছিলো সেটি আসলে ইসরায়েল ঘষিত একটি সেফ এরিয়া। তারা ফিলিস্তিনিদের বলেছিলো ওখানে যারা আশ্রয় নিবে তাদেরকে কোনো ক্ষতি করা হবে না। কিন্তু তারা চেয়েছিলো ঘোষণাটা শুনে ফিলিস্তিনবাসিরা যখন ওখানে অধিক পরিমাণে জমায়েত হবে তখন তাদেরকে হত্যা করা হবে। বিষয়টা অনেক সিক্রেট ছিলো।হঠাৎ জাতিসংঘের একটি অঙ্গ সংগঠন ওখানে নিজেদের কর্মসূচি পালন করতে যায় কিন্তু নিউজটা আমাদের পর্যন্ত আসতে একটু দেরি করে ফেলে। ঐ ঘটনায় জাতিসংঘের ৬ জন কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করে তার মাঝে লাইমিনও ছিলো। আমি জানি না জন লি' তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো। এই বলে তোমার জো আঙ্কেল কান্নায় ভেঙে পড়ে। তখন কি করবো কি বলবো কিছুই বুঝতেছিলাম না। পরে যখন সবকিছু জাইন জানতে পারে তখন সে আমার আর জো'র কাছে থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছি আর ছেলেটা থেকেও নেই।তারপর আমরা দুজনে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে আমরা এর প্রতিশোধ নিবো। এখনো কিছু ইসরায়েলের সাবেক কর্মকর্তা বেঁচে আছে তারা ঐ বিল্ডিংটায় থাকে যেটা যুক্তরাষ্ট্র কতৃপক্ষের কাছে থেকে উপহার পেয়েছে। "
"কিন্তু মি. জন লি ওখানে তো শুধু ঐ কর্মকর্তারা থাকবে না আরও তো নিরীহ মানুষ থাকতে পারে!" "হ্যাঁ, তো! সেটা আমার মাথা ব্যাথা না। সবাইকে একদিন মরতে হবে। কেউ আগে মরবে কেউ পরে। এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না।" "আপনার স্ত্রী তো ইসরায়েলের টার্গেট ছিলো না তারপরও তাকে জীবন দিতে হলো, ঠিক এমনটাই তো আপনারা করতে যাচ্ছেন!" "থামো তুমি। যা বুঝো না তা নিয়ে বলতে যেও না। আমি কি যন্ত্রণায় ভুগছি সেটা আমি জানি।" জন লি'র কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিংবেলের আওয়াজ হলো। "দেখো গিয়ে কে আসলো। আর আমার সম্পর্কে কাউকে জানানোর ভুল যেনো করতে যেও না। তাহলে তার ফল তোমার পরিবার ভুগবে।" এমনভাবে কথা গুলো বললো শরীরে যেনো শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। দরজা খুলতেই দেখি বাবা দাড়িয়ে আছে। "মা তুমি এখানে আর আমরা তোমাকে খুঁজতেছি সেই কখন থেকে। চলো স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে প্রায়। আর এতো সকালে আঙ্কেল জো'র বাসায় কি কাজ তোমার!" বাবার কথা গুলো শুনে বের হয়ে আসছি তখন পিছন ঘুরে দেখলাম দরজার আড়ালে তিনি দাঁড়িয়ে আছে। যে করে হোক তার এ কাজকে থামাতে হবে নাহলে তার প্রতিশোধের আগুনে দোষীদের সাথে সাথে অনেক নিরিহ মানুষও মারা যাবে। তাকে যে বোঝাবো কিছু মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক নির্দোষ মানুষকেও সে খুন করতে যাচ্ছে তাহলে তার আর ইসরায়েলি গোষ্ঠীর মাঝে পার্থক্যটা কি থাকলো! কিন্তু তার মানুষিক অবস্থা তা বোঝার পর্যায়ে নেই। আর চাই না পুলিশকে খবর দিয়ে নিজের পরিবারকে বিপদের সম্মুখীন করায়। তাহলে কি করবো আমি! উপায় এখন একটায় কিন্তু সেটা তো ভয়ংকর।
(৫)
বাসায় ফিরে বাবাকে বললাম সকালে দ্রুত ঘুম ভেঙে গেছে, অসুস্থ বোধ করছিলাম তাই হয়তো।কিছুক্ষণ পর আঙ্কেল জো'র বাসা থেকে আওয়াজ পেয়েছিলাম তাই দেখতে গিয়েছিলাম উনি ঠিক আছেন কিনা।তোমরা ঘুমাচ্ছিলে তাই ডিস্টার্ব করিনি।গিয়ে দেখি বাসার দরজা খোলা আর ফ্লোরে কাচের টুকরা ছড়ানো ছিটানো। আঙ্কেলকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে গিয়ে দেখি উনি বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। উনি মনে হয় একটু বেশি খেয়েছেন নলে নিজে অজান্তে কাঁচের কিছু জিনিস মনে হয় ভেঙে ফেলেছেন। বাবা আজ স্কুলে আমি না যায় প্লিজ, অনেক মাথা ব্যাথা করছে। মিথ্যা কথা গুলো বলে খারাপ লাগছে কিন্তু আমার আর উপায় ছিলো না। আমি স্কুল ফাঁকি দেওয়ার মতো মেয়ে না বরং অনেক আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যায়। হয়তো সেজন্য বাবা আর জোর করলো না স্কুলে যাওয়ার জন্য। রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বললো। রুমে যাওয়ার সময় বাবার পার্সোনাল লাইব্রেরি থেকে একটা বই নিয়ে নিজের রুমে গেলাম। বইটার উপরে ধুলা জমে গেছে। ধুলা পরিষ্কার করার পর কোয়ান্টাম ফিজিক্স নামটা এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বইটা পুরনো। আগে অবশ্য একবার পড়েছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়া হয়ে ওঠেনি বিভিন্ন কারণে। বাবার কাছে থেকে শুনেছি বইটা যে বিষয়ের উপর লেখা সেটার থিউরি ব্যবহার করে যখন মানুষ নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করা শুরু করলো বিশেষ করে নিউক্লিয়ার বোমা তারপর থেকে এই বিষয়ের ফান্ডামেন্টাল পর্যায়ে মানুষ আর তেমন গবেষণা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেললো। বইটা অনেক সময় ধরে মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। এর মাঝে মিসেস ছামনা এসে সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে। মা কয়েকবার দেখে গেছে এখন কেমন বোধ করছি তাই। বই পড়তে নিষেধ করলো চোখে প্রেশার পড়লে আরও মাথা ব্যাথা করবে তাই। লাঞ্চ টাইমে বাবা অফিস থেকে ফিরে আমাদের সাথে কোনোরকমে খেয়ে আবার চলে গেলো।
রুমে ফিরে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কিছু পয়েন্ট ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। কোনো বস্তু বা পদার্থের যতো গভীরে যাওয়া হয় তখন অণু পরমাণুগুলোর আচরণ অনেক রহস্যজনক হয়ে থাকে। পদার্থের অতিক্ষুদ্র পর্যায়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘূর্ণমান ইলেকট্রন ত্রিমাত্রিক ইমেজে অবস্থান করে থাকে। যখন পরীক্ষা করা হয় তখন দেখা যায় সাব এটমিক পার্টিকেল গুলো ওয়েভ বা ঢেইয়ের মতো অবস্থান করে। অর্থাৎ সাব এটমিক পার্টিকেল গুলো একি সময়ে একাধিক জায়গায় থাকতে পারে। কিন্তু যখন পরীক্ষার সময় সাব এটমিক পার্টিকেল গুলোর আচরণ লক্ষ্য করা হয় তখন তারা একি সময়ে একাধিক জায়গায় নয় বরং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে। মূল কথা হলো পৃথিবীর সবকিছু আমরা যেমনটা দেখি তেমন না। কোনোকিছুই সলিড না।সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো পৃথিবীর সবকিছু একে অপরের সাথে সংযুক্ত। কিন্তু আমরা যখন নির্দিষ্ট করে কোনো কিছুকে লক্ষ্য করি সেটা তখন ঢেউয়ের মতো আচরণ না করে তার নির্দিষ্ট অবকাঠামোতে পরিণত হয়। কোয়ান্টাম সিস্টেমে সাব এটমিক পার্টিকেল গুলো কোনো এক বাহ্যিক আচরণের কারণে বুঝতে পারে তাদের উপর লক্ষ্য করা হচ্ছে তখনি তারা তাদের নির্দিষ্ট অবকাঠামোতে পরিলক্ষিত হয়। কোয়ান্টাম সিস্টেমে স্পিন জিরো আর তা থেকে যদি দুইটা ফোটন বের করা হয় তাহলে একটি আপ স্পিন (+1) এবং অপরটি অবশ্যই ডাউন স্পিন (-1) হবেই কারণ শক্তির সংরক্ষণশীলতা নিতি অনুযায়ী মোট শক্তি সংরক্ষিত থাকবে অর্থাৎ কোয়ান্টাম সিস্টেম স্পিন জিরো হওয়ায় ফোটন দুইটির মোট স্পিন জিরো হবে। ক্যালকুলেশন হবে (+1) + (-1)=0। ফোটন দুইটি মহাবিশ্বের যেকোনো জায়গায় থাকলেও একি আচরণ করবে একটি +1 হলে অপরটি -1 হবেই। এই পদ্ধতি আলোর গতিশক্তিকেও হার মানায়। একই স্থান থেকে সৃষ্ট ফোটন দুইটির একটি এখানে আরেকটি মহাবিশ্বের অপর প্রান্তে থাকলেও দুইটি একি সাথে বিপরীত স্পিন শো করবে। অর্থাৎ একটার সাথে আরেকটার সংযোগ অনেক দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত। আমি এখন এখানে কিন্তু আমার অস্তিত্ব সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। আমাকে যদি সমুদ্রের সাথে তুলনা করি আর আমার শরীরের সাব এটমিক পার্টিকেল গুলোকে পানি ভাবি তাহলে ফোটনের মতো একটার সাথে আরেকটার যোগাযোগ আলোর গতির চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করবে।তাহলে নিমিষেই আমি সমুদ্রের এক তীর থেকে নিজেকে ঢেউয়ের মতো হটাৎ মিশিয়ে দিয়ে অন্য তীরে অন্য একটা ঢেউকে নিজের অস্তিত্ব বানিয়ে আমার নির্দিষ্ট অবকাঠামোতে পরিণত হতে পারবো।পৃথিবী জুড়ে একই সময়ে লক্ষ লক্ষ ঢেউয়ের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো ঢেউকে নিজের অস্তিত্ব বানাতে পারবো নিমিষেই।অর্থাৎ আমি জ্বীন ফেরেস্তাদের মতো টেলিপোর্টেশন শক্তি ধারণ করতে পারবো কিন্তু তা করতে হলে তাদের মতো নিজের শরীরের সম্পূর্ণ এটমিক পার্টিকেল গুলোকে আলাদা করতে শিখতে হবে তা না হলে ওয়েভের মতো আচরণ করা সম্ভব হবে না আর এটাও রপ্ত করতে হবে কেউ আমাকে লক্ষ্য করলেও আমি না চাওয়া পর্যন্ত বা আমার গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত নিজের নির্দিষ্ট অবকাঠামোতে ফিরে না আসি। কিন্তু এটা কি আদেও সম্ভব আমার পক্ষে! আর কিছু বিজ্ঞানীর মতে টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব যদি আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন হওয়া যায় যেটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু দুইটি ফোটনের মাঝে কি সম্পর্ক বিদ্যমান যার ফলে নিমিষেই আলোর গতির চেয়ে অনেক দ্রুত একজন আপ স্পিন শো করলে অন্যজন ডাউন স্পিন শো করে তা যদি জানা যেতো তাহলে টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব হতো আর অতীতে এমন কিছু কাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে আসা যেতো যার ফলে নিউরোসার্জন জন লি' এবং আঙ্কেল জো'র মানুষিক অবস্থা বর্তমানের মতো এমন হতো না কিন্তু সময়ের সাথে খেললে বর্তমানে এমন কিছু ঘটতে পারে যা আমার ধারণার বাইরে কারণ মহাবিশ্বের প্রতিটা জিনিস একে অপরের সাথে সংযুক্ত। তাই যে করে হোক টেলিপোর্টেশন শক্তি আমাকে আবিষ্কার করতেই হবে। এইটা ইনভেনশন না এইটা ডিসকাভার কারণ অতীতে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে নিমিষেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। হঠাৎ কি মনে হলো আমি উঠে প্যানির রুমে গেলাম। গিয়ে সেই পাহাড় আকৃতির কালো ছোট বস্তুটা যেটার গায়ে ফাটল ধরা ডিজাইনের মাঝে নীল আভা বেরিয়ে আসছে ঐটা নিলাম। অতীতে যত উদ্ভট ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে তখন এই জিনিসটা কোনো না কোনো ভাবে ঐ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো বলে আমার মনে হয়। ঐটা সামনে রেখে চিন্তা করছি এমন সময় দেখি আমার শরীর ধীরে ধীরে ধূলিকণা হয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। এক সময় সমস্ত শরীর ধুলিকণায় পরিণত হলো। সত্যিই এইটা কাজ করছে। আমি না চাইতেও আমার কল্পনায় আঙ্কেল জো'র বাড়িতে এখন কি হচ্ছে সেটা দেখার ইচ্ছা হলো আমি সাথে সাথে আঙ্কেল জো'র ড্রইংরুমে চলে গেলাম। কিচেন থেকে জন লি চিৎকার দিয়ে উঠলো তুমি এখানে আবার কি করে! চিৎকার শুনে ভয়ে সাথে সাথে আমি লুকিয়ে পড়ার চিন্তা করলাম নিমিষেই আমি আমার রুমের আলমারিতে পৌঁছে গেলাম। আলমারি লক করা আমি ভিতর থেকে চিৎকার করতে থাকলাম, মা আমার চিৎকার শুনে আমার রুমে এসে আলমারি খুলতেই আমি বেড়িয়ে আসলাম। মা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করছে কিভাবে লক করা আলমারির মাঝে আমি। আরও কিছু জিজ্ঞাসা করার আগে আমি বললাম মা পরে বলছি আমাকে এখনি বেলজিয়াম যেতে হবে। কথা শেষ করা আগেই আমি কোনো এক জনবহুল শহরের ভীরের মাঝে মিশে গেলাম। এ আমি কোথায় সেই বিল্ডিংটাও বা কোথায়। কল্পনা আর বাস্তবতার মাঝে সামন্য সময়টুকু আমি পাচ্ছি না ঠিক করে ভাবার। ছবিতে যে বিল্ডিংটা দেখেছিলাম তার সামনে এখন আমি কিন্তু কি করে চিনবো সেই ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের।যদি তাদেরকে আগে দেখতে পেতাম।চিন্তার বাস্তবতা সামনেই পরিলক্ষিত হলো। দেখলাম আমি বিধ্বস্ত একটা শহরের মাঝে।আশেপাশে কোনো মানুষ নাই। দূরে দেখি একটা বাচ্চার হাত ছিড়ে পড়ে আছে কিন্তু আশেপাশে কোনো মানুষ নাই। হঠাৎ দূর থেকে পাঁচ ছয় জন মিলিটারির ড্রেস পরিহিতরা আমার দিকে বন্দুক তাক করে এগিয়ে আসছে আর চিৎকার করে কি ভাষায় আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে আমি বুঝতেছি না। আমি লুক্সেমবার্গীয় ভাষায় নিজের পরিচয় দিতে যাচ্ছি তখন তাদের মাঝে একজন ইংরেজিতে বললো তোমাকে দেখে তো ফিলিস্তিনি মনে হচ্ছে না।তুমি কে! তাদের নিজেদের মাঝে কথপোকথন চলছে কিন্তু তাদের ভাষা বুঝছি না।তাদের কথার মাঝে ইসরায়েল কথাটা শুধু বুঝতে পারলাম।বুঝতে আর বাকি রইলো না আমি অতীতে চলে আসছি ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধের সময়টাতে। এরাই মনে হয় সেই কর্মকর্তারা যাদের চিন্তা একটু আগেই করেছিলাম। কোনো ঝামেলায় জড়ানোর আগে আমি ওখান থেকে আবার বেলজিয়াম যেতে মন স্থির করলাম কিন্তু অতীতের বেলজিয়ামে চলে গেছিলাম কারণ আমি তখন অতীত সময়ে আটকে আছি যখন ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছিলো। আবার বিল্ডিংটার কথা আরো অনেক চিন্তা মস্তিষ্কের মাঝে একি সাথে ঘুরছে। আসলে আমি জানতাম না কিভাবে পরিস্থিতিটা ঠিক করবো। পূর্বপরিকল্পনার আগেই আমি টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে সময়ের মাঝে ঘুরছি। নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমার চিন্তাকে টেলিপোর্টেশনকে আর জানিও না কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো সবকিছু। অল্প সময়ের মাঝে আমি এতো জায়গায় ভ্রমণ করেছি যে টেলিপোর্টেশনের সময় আমার নির্দিষ্ট অবকাঠামোর কিছু সাব এটমিক পার্টিকেল একেক স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে, যা অন্যস্থানে যাওয়ার আগে অবকাঠামোতে সমস্ত সাব এটমিক পার্টিকেল গুলো যুক্ত হওয়ার আগেই চলে আসছি তাই অবকাঠামোতে যুক্ত হতে না পেরে সাব এটমিক পার্টিকেল গুলো আমার ভ্রমণের একেক স্থানে রয়ে গেছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে এখন আর আমি আর আগের মতো রূপ ধারণ করতে পারছি না। যত ভয় করছে ততোই যেনো আমি যে সামান্যটুকু নিয়ন্ত্রণ ছিলো টেলিপোর্টেশনে তাও হারিয়ে ফেলছি। যতসময় যাচ্ছে ততোই আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। কিছুই করার ক্ষমতা আমার আর নাই শুধু জানি আমি আছি। ব্যস এতোটুকুই। এভাবে কেটে গেলো ৭টি বছর। আজও আমার অনেক কিছু অজানা রয়ে গেলো। এই দুনিয়াতেই আছি তবে এই দুনিয়ার মাঝে অদৃশ্য একটি জগতে। সে জগতে সবকিছু চিন্তা করা যায় সময় গননা করা যায় শুধু মস্তিষ্ক জীবিত আপেক্ষিক ভাবে তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। আসলে এখন বুঝতে পারি ঐ কালো ছোট পাহাড়ের আকৃতির বস্তুটা কি। ঐটা উপহার দেওয়ার সময় যে দিয়েছিলো সে বলেছিলো ঐটার নাম ব্ল্যাক ব্লু হিল।একটা অতি ক্ষমতা সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।এ কথাটা আমার খেয়ালই ছিলো না পরে। আমার চিন্তাকে সে পড়তে পারতো আর সে অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবকিছু তৈরি করতো। যেমনটা টিয়াপাখি আর কুকুরটার মাঝে মেমোরি ট্রান্সফার প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করেছিলো। কেনোই বা আমি কোয়ান্টাম ফিজিক্সে কোয়ান্টাম মেকানিক্স কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট এসব বিষয় নিয়ে ছেলেমানুষী করলাম। বইটার একটা লাইন এখনো মনে পড়ে 'সময় নিয়ে খেলো না এটা তোমার সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি।'
সেপ্টেম্বর ২৯,২০২৪ ইং, 2:30pm
এই যে আপনার জেমস্ ভি. ম্যাককনেল স্টুডিও। আপনার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি। ট্যাক্সির ভাড়াটা মিটিয়ে স্টুডিওটা খুললাম।
কনফারেন্স থেকে স্টুডিও তে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো। চারিদিকে সব ওলটপালট হয়ে আছে। অগোছালো জিনিস গুলো কম্পিউটারের পাশ থেকে সরিয়ে রাখতে গিয়ে একটু টাচ লাগলো কম্পিউটারের গায়ে। একি কম্পিউটার এখনো ঠান্ডা হয়নি! সেই বিকালে কনফারেন্সে গিয়েছিলাম তারপর তো এটা ব্যবহার করাই হয়নি। স্টুডিও তো লক করা ছিলো আর এখানের তো একটাই চাবি যেটা আমার কাছে থাকে। কম্পিউটারটা অন করে চেক করতেই দেখি যে হার্ডডিস্ক প্রায় খালি অবস্থায় রেখে গেছিলাম সেটা প্রায় পূর্ণ। আর অল্প কিছু স্টোরেজ আছে না থাকার মতো। কোন ফাইল এতো জায়গা খেলো তা চেক করতে গিয়ে অবাক হতে হলো। এটা তো আমার নতুন গেম! যেটার কনসেপ্ট গতকাল ভেবে গেমের জন্য কয়েকটা ক্যারেক্টার তৈরি করে এই ফাইলে রেখেছিলাম। প্যানি, ডা. রাজান, মিসেস. ছামনা, আঙ্কেল জো, জন লি আরও কতো ক্যারেক্টার তৈরি করেছিলাম। কিন্তু সেগুলোর ফাইল সাইজ তো কয়েক গিগাবাইট। তাহলে এতো স্টোরেজ এরা কভার করলো কি করে! ফাইলে ক্লিক করলে ঢোকা যাচ্ছে না। কি সমস্যা হলো! আর ব্যাক গ্রাউন্ডে আমার তৈরি পাওয়ার ফুল এআই 'ব্যাক ব্লু হিল' তো রান করছে। তাহলে কি এআই-টি ক্যারেক্টার গুলো নিয়ে একটি ফিকশন ওয়ার্ল্ড ক্রিয়েট করেছে?
(সমাপ্ত)