একটা গল্প পড়ছি। জীবনানন্দ দাশের লেখা গল্প। পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো। এতে লেখা আছে, “প্রত্যেক স্বাধীন মানুষেরই পৃথিবীটাকে নিজের বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝে দেখবার অধিকার আছে। তারপর নিজের ধর্ম সে নিজেই তৈরি করে।”— আমি ভাবতে লাগলাম যে এমনটা আসলে হয় কিনা, কিন্তু কূলকিনারা পেলাম না।
কো-এক্সিস্টেন্স বলতে আদতে আসলে পৃথিবীতে যা আছে তা মূলত সীমিত পরিসরে এগিয়ে গিয়ে বৃহদাকার ধারণ করে। আমরা নিজ নিজ জায়গা হতে নিজ নিজ মানুষের জন্য কাজ করি। এর বাইরের গণ্ডিতে আমাদের পদার্পণ সবসময় কম। পৃথিবী ঠিক কতটুকু মানুষের জন্য আবাসস্থল হিসেবে উপযোগী তা সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই আন্দাজ করা যায়। নিজের আশেপাশের মানুষ বাদে আমরা আদতে কারো জন্যেই এগিয়ে আসতে চাই না। মাদার টেরেসা বললেন, তুমি পৃথিবী পাল্টাতে চাইলে বাসায় গিয়ে নিজের পরিবারকে ভালোবাসো। আবার, সক্রেটিস বললেন, নিজেকে জানো। এসব মোরালের একটি এথিক্স হওয়া উচিত এমন ভাবার সুযোগ নেই। এখানে “নিজ” বলতে “আত্মকেন্দ্রিকতা” বোঝানো হয়নি, বরং নিজের মধ্য থেকে বড় পরিসরে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া হচ্ছে।
কো-এক্সিস্টেন্সের পথ ধরে আমরা যদি ধর্মের দিকেও লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে ইসলাম ধর্মের আল কুরআনে আছে পূর্নাঙ্গ দ্বীন। ভগবৎ গীতায় আছে খারাপকে পরাজিত করে ভালোর জয়। বাইবেলে মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা। আবার বুদ্ধধর্মমতে আছে নির্বাণের পথ। সব ধর্মেই নিজ নিজ অনুসারীদের জন্যে আছে পূর্ণাঙ্গ মুক্তির পথ ও নিদর্শন। নিজেদের এসব পরিপূর্ণতা আমাদের জন্য সবসময় মঙ্গলময়। আমাদের এই পৃথিবীতে স্টিফেন হকিংয়ের বিগ ব্যাং থিওরি আছে আবার বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায়ে পৃথিবী সৃষ্টির কথাও আছে— এখানে, ব্যক্তিভেদে বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ আলাদা হলেও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এ দুটোই কো-এক্সিস্ট করে। কিন্তু, মানুষের কো-এক্সিস্টেন্স নিজেদের মধ্যে যে মনস্বাত্তিক দ্বন্দ দ্বারা পরিচালিত হয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে তা মূলত আমাদের সত্যিকারের জটিলতা।
পৃথিবীর বয়স ঢের বৃদ্ধি পেয়েছে। সভ্যতার বয়সও প্রবীণ। কিন্তু, আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ এখনো বিদ্যমান বলে অযাচিত বিষয়ে কো-এক্সিস্টেন্সে আমাদের অগাধ সমস্যা। যতদিন নিজেরা সবকিছুর বাইরে এসে সহনশীলতা দিয়ে ভালোবাসা শুরু করতে পারবো না ততদিন আমারের কো-এক্সিস্টেন্সে খামাখা বিবাদ লেগেই থাকবে।