পোস্টস

সমালোচনা

ছাত্রদল বনাম ছাত্রশিবির: নেতৃত্বের সংকট এবং শৃঙ্খলার প্রতিযোগিতা"

৫ অক্টোবর ২০২৪

তাহসিন আরিফ হিমেল(INNOVA JOURNAL)

মূল লেখক হিমেল

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র সংগঠন, কিন্তু সময়ের সাথে তাদের ভূমিকায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ছাত্রদল, বিএনপির অঙ্গসংগঠন হিসেবে একসময় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের কার্যক্রম কমে গেছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির দৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো এবং আদর্শিক চেতনা দিয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলকে দুর্বল এবং ছন্নছাড়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে ছাত্রশিবির শিক্ষাঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

ছাত্রদলের পতন: অযৌক্তিক আচরণ ও নেতৃত্বের সংকট

এক সময় ছাত্রদল ছিল বিএনপির মূল চালিকাশক্তি। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক সংগ্রামে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যা বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলনে শক্তি জুগিয়েছিল। তবে, গত ১৫ বছরে ছাত্রদল তাদের সেই শক্তি এবং প্রভাব হারিয়ে ফেলেছে। ছাত্রদল এখন আর মাঠে সক্রিয় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না, এবং তাদের অযৌক্তিক আচরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও নেতৃত্বের সংকট তাদের এই দুরবস্থার মূল কারণ। পুরনো ও বয়স্ক নেতাদের আধিপত্য এবং তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে জায়গা না দেওয়ার প্রবণতা সংগঠনটিকে ক্রমাগত দুর্বল করে ফেলেছে। সাধারণত ছাত্র সংগঠনের নেতারা তরুণ ও উদ্যমী হয়ে থাকেন, যারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ছাত্রদলে এই চিত্রটি বেশ ভিন্ন। বয়স্ক নেতারা সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার কারণে তাদের মধ্যে উদ্দীপনা কমে গেছে, যা তাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলেছে।

এছাড়া, ছাত্রদলের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অনৈক্যও তাদের দুর্বলতা তৈরি করেছে। গত এক দশকের মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে সংকট দেখা দেওয়ার পর ছাত্রদলও তার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। তারা সক্রিয়ভাবে কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ছাত্র সংগঠন হিসেবে তাদের ব্যর্থতার একটি প্রমাণ।

ছাত্রশিবিরের উত্থান: শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা

অন্যদিকে, ছাত্রশিবির ধারাবাহিকভাবে একটি সক্রিয় এবং সুসংগঠিত ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে। তাদের সাংগঠনিক কাঠামো এবং আদর্শিক চেতনা তাদেরকে দেশের অন্যতম সেরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ছাত্রশিবির তাদের আদর্শিক ভিত্তির উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং ধর্মীয় চেতনা তাদের কর্মসূচিকে প্রভাবিত করে।

ছাত্রশিবিরের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের কঠোর শৃঙ্খলা এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা। তাদের নেতৃত্বে সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটে এবং তারা নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার সুযোগ তৈরি করে। তরুণ নেতারা তাদের মধ্যে নেতৃত্বের সুযোগ পায় এবং ধীরে ধীরে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা এবং সময়মতো পরিবর্তনের কারণে ছাত্রশিবির তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পেরেছে।

ছাত্রশিবির কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং তারা শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তারা ছাত্রদের মাঝে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার প্রচার করে এবং তাদের মধ্যে একটি ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে। তাদের এই আদর্শিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।

ছাত্রশিবির ডিজিটাল মাধ্যমেও নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে নিজেদের বক্তব্য প্রচার করে এবং তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় ও আদর্শিক চেতনায় উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে। এই কারণে তারা কেবলমাত্র ছাত্র রাজনীতিতেই নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

ছাত্রদলের দুর্বলতা: নেতৃত্বের অভাব এবং আদর্শহীনতা

ছাত্রদল তার আদর্শিক ও নেতৃত্বের সংকটের কারণে ক্রমশ পতনের দিকে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের সঠিক গঠন ও উন্নয়নের অভাব রয়েছে, যা সংগঠনকে দুর্বল করে তুলেছে। তারা তাদের কার্যক্রমে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এর ফলে, তারা ছাত্রসমাজের মধ্যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারছে না।

ছাত্রদল যে এক সময়ের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন ছিল, সেটি এখন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারছে না, বরং রাজনৈতিক সংকট ও নেতৃত্বের অভাবে তারা নিজেদেরকে আরও বেশি কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে গেছে। বয়স্ক নেতাদের নেতৃত্ব এবং তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণের অভাব তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলেছে, যা তাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমকে অকার্যকর করে তুলেছে।

ছাত্রদলের ভেতরকার আদর্শিক শূন্যতাও তাদের এই দুরবস্থার অন্যতম কারণ। তারা রাজনৈতিক আদর্শ এবং সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে, যা সংগঠনের কার্যকারিতা ও প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তারা আদর্শিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং সঠিকভাবে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ছাত্রশিবির: সেরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত

ছাত্রশিবির তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের নেতৃত্বের কাঠামো এবং সংগঠনের কার্যকারিতার জন্য তারা দেশের সেরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তারা প্রতিটি সময়ের সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য দায়িত্বের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

ছাত্রশিবির ধর্মীয় আদর্শের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যা তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করেছে। তারা শিক্ষার প্রচার, সামাজিক উন্নয়ন এবং নৈতিক মূল্যবোধের চর্চায় নিবেদিত রয়েছে। এই দিকগুলো তাদের সংগঠনকে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের চেয়ে আলাদা করেছে এবং তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

 

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে যে পার্থক্য, তা তাদের সাংগঠনিক কাঠামো, নেতৃত্বের ধরন এবং আদর্শিক ভিত্তির মধ্যে প্রতিফলিত হয়। ছাত্রদল একসময় প্রভাবশালী হলেও, নেতৃত্ব সংকট এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির তাদের ধারাবাহিক নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, এবং আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে সেরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো এবং আদর্শিক দিকনির্দেশনার কারণে তারা দেশের ছাত্র রাজনীতিতে প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছে, যা তাদেরকে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের চেয়ে আলাদা করেছে।