২০২৪সালের একটি রাত। ঢাকার ব্যস্ত শহর সবে শান্ত হয়েছে, কিন্তু একটি পুরনো বহুতল ভবনে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। ভবনটি এখন জনশূন্য, প্রায় ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত। তবে বিজ্ঞানী আরাফাতের মতে, এখানে এমন কিছু আছে যা মানুষ এখনও বুঝতে পারে না।
আরাফাত ছিলেন একজন পদার্থবিদ, যিনি ভূত নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন যখন তার বন্ধু রায়হান এক রাতে এই ভবনে কিছু অদ্ভুত ছায়া দেখতে পান। সেই ছায়া মানুষের মতোই, কিন্তু শরীর নেই। যন্ত্রপাতি সেট করে তিনি সন্ধ্যা ৭টায় ভবনে প্রবেশ করেন, হাতে ছোট্ট একটা ড্রোন ক্যামেরা এবং একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সর ডিভাইস।
আরাফাতের লক্ষ্য ছিল ভবনের চতুর্থ তলায়, যেখানে সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। সেখানে পৌঁছে তিনি ডিভাইসটি চালু করলেন। হঠাৎ সেন্সর অদ্ভুত কিছু তরঙ্গ ধরল, যা সাধারণত মানুষ থেকে পাওয়া যায় না। তার ড্রোন ক্যামেরায়ও কিছু অস্বাভাবিক আলো ধরা পড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে, বাতাসে একটা শীতল অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরল, যেন কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন, এবং তখনই দেখলেন একটি ছায়া আকৃতির অবয়ব। সেটি যেন মানুষ নয়, আবার ঠিক কল্পনা বলেও মনে হচ্ছিল না। ছায়াটি হঠাৎ করে মিলিয়ে গেল, কিন্তু এর আগে আরাফাত শুনতে পেল একটুকরো ফিসফিসানি—“তোমরা যা খুঁজছ, তা আসলে অন্য জগতে।”
আরাফাত বুঝতে পারলেন যে, এখানে কিছু অজানা বৈজ্ঞানিক রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আমাদের ধারণার বাইরে। হয়তো এই ভবনের ভৌতিক কাহিনির পেছনে কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক সত্য রয়েছে। তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আরাফাত অনুভব করলেন, এবার তাকে অন্য জগতের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
আরাফাত রাতভর ঘুমাতে পারেননি। ভৌতিক সেই ছায়া এবং ফিসফিসানি বারবার তার মনে ভেসে উঠছিল। পরদিন সকালে, তিনি তার গবেষণাগারে ফিরে এসে নতুন একটি পরিকল্পনা তৈরি করলেন। তিনি ঠিক করলেন, ভবনের চতুর্থ তলার সেই অদ্ভুত তরঙ্গের উৎস খুঁজে বের করতে একটি বিশেষ ডিভাইস তৈরি করবেন, যা পার্থিব জগতের বাইরের কম্পন সনাক্ত করতে পারবে।
দুই সপ্তাহ পর, ডিভাইসটি প্রস্তুত হলো। এটি ছিল এক ধরনের কোয়ান্টাম সেন্সর, যা স্থান-কাল ভেদ করে অন্য মাত্রা বা জগতের কম্পন শনাক্ত করতে সক্ষম। যন্ত্রটি নিয়ে আরাফাত আবার সেই পরিত্যক্ত ভবনে গেলেন। এবার তার সাথে ছিল রায়হানও, যিনি আরাফাতের পরিকল্পনায় সাহায্য করার জন্য রাজি হয়েছিলেন।
ভবনের চতুর্থ তলায় পৌঁছে তারা ডিভাইসটি চালু করল। প্রথমে কিছুই ঘটল না। কিন্তু রাত ১০টার দিকে ডিভাইসটি হঠাৎ অস্বাভাবিক কম্পন সনাক্ত করতে শুরু করল। তরঙ্গগুলো যেন অন্য কোনো জগতের এক ধরনের সংকেত পাঠাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে, ভবনের একটি দরজা হালকা কেঁপে উঠল এবং খুলে গেল। দরজার ওপারে যেন একটি অস্পষ্ট আলোর রেখা দেখা যাচ্ছিল।
আরাফাত ও রায়হান দরজার ভেতরে প্রবেশ করতেই তাদের সামনে এমন একটি দৃশ্যের উদ্ভব হলো, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। তারা দেখতে পেল অন্য এক জগতের পরিবেশ, যেখানে সময় এবং স্থান একসাথে বিকৃত হচ্ছে। সেই জগতের মধ্যে কিছু অদ্ভুত ছায়ামূর্তি চলাচল করছিল। তারা সবাই যেন একই ভাষায় কিছু বলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু শব্দগুলো ছিল অস্পষ্ট।
হঠাৎ, এক ছায়ামূর্তি আরাফাতের সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, "আমরা এই জগতের সীমান্ত রক্ষক। তোমাদের জগতের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা আমাদের জগতকে প্রভাবিত করছে। তোমরা যা করছো, তার ফলাফল ভয়ানক হতে পারে।"
আরাফাত অবাক হয়ে বলল, "আপনারা কি ভূত? নাকি অন্য কোনো প্রাণী?"
ছায়ামূর্তি উত্তর দিল, "আমরা প্রাণী নই, আবার ভূতও নই। আমরা একধরনের শক্তির রূপ, যা তোমাদের জগত এবং আমাদের জগতের মধ্যে সমান্তরাল অস্তিত্ব নিয়ে আছে। তোমাদের বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই আমাদেরকে তোমাদের কাছে ভূত হিসেবে প্রকাশ করেছে।"
আরাফাত বুঝতে পারলেন, বিজ্ঞান হয়তো প্রকৃতির সব রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। তার এবং রায়হানের সামনে এখন এক নতুন অধ্যায় খুলে গেল—অজানা জগতের সাথে যোগাযোগ এবং তার প্রভাব বোঝা। তবে এই নতুন তথ্য তাদের জন্য কি নতুন সুযোগ এনে দেবে, নাকি আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা সময়ই বলে দেবে।
আরাফাত ও রায়হান দাঁড়িয়ে ছিল সেই অজানা জগতের প্রবেশদ্বারে, যেখানে সময় ও স্থান একসাথে বিকৃত হচ্ছিল। তাদের সামনে থাকা ছায়ামূর্তিগুলো হঠাৎ করে মিলিয়ে যেতে শুরু করল, আর চারপাশের পরিবেশ ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। আরাফাতের কোয়ান্টাম সেন্সর হঠাৎ বিশৃঙ্খল সংকেত ধরতে শুরু করল, যা দেখিয়ে দিচ্ছিল যে এই দুই জগতের মধ্যে কোনও শক্তিশালী শক্তির সংঘর্ষ ঘটতে চলেছে।
হঠাৎ করেই, এক প্রবল কম্পনের মাধ্যমে সেই অজানা জগতের পরিবেশ বদলে গেল। আরাফাত ও রায়হান নিজেদের একটি বিশাল, ঘূর্ণায়মান শক্তির বলয়ের মধ্যে আবিষ্কার করল। সেই শক্তির মধ্য থেকে এক অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শোনা গেল: "তোমাদের জগত ও আমাদের জগতের সীমান্ত ভেঙে যাচ্ছে। তোমাদের প্রযুক্তির ভুল প্রয়োগ আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে। এই সংঘর্ষ থামাতে হবে।"
আরাফাত তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন, তাদের এই ডিভাইসই হয়তো দুই জগতের শক্তির ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করেছে। তিনি ডিভাইসটি বন্ধ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু শক্তির বলয় এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ঠিক সেই মুহূর্তে, রায়হান আরাফাতের দিকে একটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বলল, "এটা বন্ধ করতে হবে, নাহলে আমাদের জগত ধ্বংস হয়ে যাবে!"
আরাফাত বুঝতে পারলেন, ডিভাইসটি ধ্বংস না করলে এই শক্তির বলয় থামানো যাবে না। তিনি দ্রুত একটি পরিকল্পনা করলেন—ডিভাইসটি ওভারলোড করে সেটিকে বিস্ফোরিত করবেন, যাতে শক্তির এই অস্থিরতা থামানো যায়। রায়হান তার সাথে একমত হলো এবং ডিভাইসের কেন্দ্রীয় কোরে ম্যানুয়াল ওভারলোড করার প্রস্তুতি নিল।
শেষ মুহূর্তে, যখন ডিভাইসটি ওভারলোড হয়ে যাচ্ছিল, তখন সেই অদৃশ্য কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল, "তোমরা যদি এই সংঘর্ষ বন্ধ করতে পার, তবে সীমান্ত রক্ষিত থাকবে। কিন্তু মনে রেখ, আমাদের জগতের সাথে তোমাদের বিজ্ঞান বরাবরই সংশ্লিষ্ট থাকবে।"
ডিভাইসটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশে প্রচণ্ড আলো ঝলসে উঠল, আর আরাফাত ও রায়হান চেতনা হারিয়ে ফেলে মাটিতে পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা জ্ঞান ফিরে পায় এবং দেখে, তারা আবার সেই পুরনো ভবনের চতুর্থ তলায় রয়েছে। চারপাশে কোনো অদ্ভুত জগতের চিহ্ন নেই, কেবল নিস্তব্ধতা। ডিভাইসটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু আরাফাতের হাতে কোয়ান্টাম সেন্সরের একটি অংশ অক্ষত ছিল, যেখানে কিছু রহস্যময় তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়েছে।
আরাফাত ও রায়হান ধীরে ধীরে ভবন থেকে বের হয়ে এল। এই অভিজ্ঞতা তাদের মনে একটি গভীর ছাপ ফেলেছে। তারা জানে, বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৃতির রহস্য আবিষ্কার করা গেলেও সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু যে সীমান্তের ওপারে তারা একবার পা রেখেছিল, সেই সীমান্ত আবার কখনও খুলে যেতে পারে।
তারা ভবন ছেড়ে চলে গেল, কিন্তু তাদের সাথে রয়ে গেল একটিই প্রশ্ন—আমাদের জগতের বাইরে কি আরও কিছু আছে, যা আমরা এখনও বুঝতে পারি না?