পোস্টস

গল্প

স্মার্টফোনঃ একটি মিনি কম্পিউটার

১৫ অক্টোবর ২০২৪

নুর হোসেন ভূঁইয়া

যেভাবে এলো মোবাইল ফোন, কে বলেছিলেন প্রথম কথা?

 

এক ছোট্ট গ্রাম ছিল, যেখানে বুড়োদের থেকে তরুণরা অনেক বেশি প্রযুক্তিপ্রেমী। প্রযুক্তি প্রবেশের আগে গ্রামের জীবন ছিল সহজ, শান্তিপূর্ণ। একদিন সেখানে শহর থেকে এক ব্যক্তি এসে স্মার্টফোনের বিস্ময়কর গল্প শোনাতে লাগল। স্মার্টফোনের মাধ্যমে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে, বিশ্বজুড়ে খবর পেতে পারে, কাজ করতে পারে এবং নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারে। গ্রামবাসীরা মুগ্ধ হয়ে ভাবল, সত্যিই যদি এমন কিছু হয়, তবে জীবন কত সহজ হয়ে যাবে!

 

 উপকারিতা 

তরুণরা একে একে স্মার্টফোন কিনতে শুরু করল। তারা নতুন নতুন অ্যাপ ডাউনলোড করল, গুগল থেকে জ্ঞান আহরণ করল, পরিবারের সাথে দূরে থেকেও ভিডিও কল করল। তারা দেখল স্মার্টফোনের মাধ্যমে তারা ব্যবসা করতে পারে, শিক্ষামূলক তথ্য পেতে পারে, এমনকি গ্রামের কৃষিকাজের উন্নতির জন্য নতুন প্রযুক্তিও শিখতে পারে। 

তরুণদের মধ্যে একজন, রাফি, স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিজের জীবনে সফল হতে লাগল। সে একটি ছোট্ট অনলাইন ব্যবসা শুরু করল, যেখানে গ্রামের পণ্য শহরে বিক্রি করত। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সে তার ব্যবসা সহজেই পরিচালনা করতে পারত। 

 

 অপকারিতা 

কিন্তু স্মার্টফোনের আড়ালে কিছু অন্ধকার দিকও ছিল। গ্রামের ছোট বাচ্চারা স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ল। তারা গেম খেলে সময় নষ্ট করতে লাগল, পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমতে থাকল। এমনকি গ্রামের কিছু বয়স্ক মানুষও দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাতে শুরু করল, যা তাদের সামাজিক জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে তুলল।

 

তরুণদের মধ্যে একজন, রাশেদ, স্মার্টফোনে এত আসক্ত হয়ে পড়ল যে, তার পড়াশোনা নষ্ট হয়ে গেল। তার সময়ের বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভিডিও গেমে, এবং অনলাইন চ্যাটে ব্যয় হত। তার পরিবার এবং বন্ধুরা তাকে অনেকবার সতর্ক করলেও সে নিজেকে শুধরাতে পারছিল না।

 

 সফলতা এবং ব্যর্থতা 

রাফি, যিনি স্মার্টফোনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল, এখন গ্রামের অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে লাগল। তার উদাহরণ দেখে অন্যরাও স্মার্টফোনের ইতিবাচক ব্যবহারে উৎসাহী হল। অন্যদিকে, রাশেদ স্মার্টফোনের অপব্যবহারের কারণে পড়াশোনা এবং নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে ফেলল। তার পরিবার তাকে শিক্ষার জন্য শহরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সে বারবার অনলাইনে সময় নষ্ট করে সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলল।

 

 আবিষ্কার এবং বিকল্প 

স্মার্টফোন আবিষ্কারের পেছনে প্রযুক্তির উন্নয়ন ছিল এক বড় মাইলফলক। পৃথিবীর সকল তথ্যকে হাতে এনে দিলো এটি। তবে গ্রামে একজন বয়স্ক লোক, করিম চাচা, বললেন, "তোমাদের স্মার্টফোন ছাড়াও প্রযুক্তির বিকল্প আছে। স্মার্টফোন জীবনের সব কিছু নয়। দরকার কেবল ভারসাম্য।" করিম চাচা অনেক পুরানো প্রযুক্তি যেমন রেডিও, বই এবং মানবিক যোগাযোগের ওপর জোর দিতেন।

 

 ভবিষ্যৎ 

একদিন রাফি আর করিম চাচা গ্রামের লোকদের বললেন, "প্রযুক্তি উপকার এবং অপকার দুটোই করতে পারে। স্মার্টফোন আমাদের জীবনে বিপ্লব এনে দিয়েছে, তবে এটা আমাদের মানবিক সংযোগকে হ্রাস করছে। ভবিষ্যতে স্মার্টফোন আরো উন্নত হবে, কিন্তু আমাদের উচিত এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা।"

 

গ্রামের মানুষজন নতুন করে ভাবতে শুরু করল, এবং স্মার্টফোনের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন পরিচালনা করতে লাগল। স্মার্টফোন তাদের জীবনে সুখ এবং সাফল্য এনে দিল, কিন্তু তারা এটাও বুঝতে পারল যে প্রযুক্তির চেয়ে মানবিক সম্পর্কই আসল।