পোস্টস

গল্প

প্রযুক্তিহীন একটি গাঁ

১৫ অক্টোবর ২০২৪

নুর হোসেন ভূঁইয়া

নুর একটি ছোট গ্রামে বাস করত, যেখানে প্রযুক্তির নামমাত্র ব্যবহার ছিল। এই গ্রামটি ছিল শান্ত, সবুজে ভরপুর, যেখানে গ্রামের লোকেরা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখত। নুরের বাবা-মা কৃষক ছিলেন এবং গ্রামবাসীরা নিজেদের খামারে কাজ করে দিনযাপন করত। সেখানকার জীবনযাত্রা ছিল সহজ, কিন্তু গভীর সম্পর্ক ও মানবিকতা ছিল প্রবল।

একদিন, শহর থেকে এক ব্যক্তি এসে গ্রামের লোকেদের স্মার্টফোনের কথা বলল। সে বলল, "স্মার্টফোনের মাধ্যমে তোমরা মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে, খবর পাবে, এবং নতুন কিছু শিখতে পারবে।" গ্রামবাসীরা সেইসব শুনে মুগ্ধ হলো। তবে, নুর ভাবতে লাগল, “যদি প্রযুক্তি আসে, তবে আমাদের সহজ জীবনটা বদলে যাবে।”

গ্রামের তরুণরা স্মার্টফোন কিনতে শুরু করল। তারা নতুন নতুন অ্যাপ ডাউনলোড করতে লাগল এবং গুগল থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে লাগল। নুরও তার বন্ধুদের সঙ্গে এসব করতে লাগল। কিন্তু সে উপলব্ধি করল, স্মার্টফোনের কারণে গ্রামের শান্তি কিছুটা বিঘ্নিত হতে শুরু করেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা গেম খেলতে সময় কাটাতে লাগল, আর বয়স্ক মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় মগ্ন হয়ে পড়লেন।

একদিন, নুরের বন্ধু রাশেদ এতটাই স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে গেল যে, তার পড়াশোনা নষ্ট হয়ে গেল। সে দিনরাত গেম খেলার মধ্যে ব্যস্ত থাকল। নুর দুঃখ প্রকাশ করে ভাবল, "এটি কি প্রযুক্তির ফল?"

কিন্তু, অন্যদিকে নুরের আরেক বন্ধু রাফি স্মার্টফোনের মাধ্যমে একটি সফল অনলাইন ব্যবসা শুরু করল। সে শহরে গ্রামের পণ্য বিক্রি করত এবং তার উদাহরণ দেখে অন্যান্য তরুণরাও উৎসাহিত হলো। নুর বুঝতে পারল, প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি সত্যিই জীবনে উন্নতি আনতে পারে।

গ্রামের একজন বয়স্ক ব্যক্তি করিম চাচা বললেন, "তোমরা স্মার্টফোন নিয়ে ভাবছো, কিন্তু আমাদের উচিত প্রযুক্তির সঙ্গে মানবিক সম্পর্ককেও বজায় রাখা। প্রযুক্তি আসলে আমাদের উন্নতি করতে পারে, তবে আমাদের সামাজিক জীবনকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।"

নুর সেই কথাগুলো মনে রাখল। সে এবং গ্রামের মানুষজন সিদ্ধান্ত নিলেন, স্মার্টফোনের পাশাপাশি নিজেদের মানবিক সম্পর্ককে সঠিকভাবে বজায় রাখবেন। প্রযুক্তি তাদের জীবনে সুখ এবং সাফল্য আনতে পারলেও, প্রকৃতি এবং সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রামে প্রযুক্তিহীন জীবনের শান্তি এবং সম্পর্কের গভীরতা ছিল। স্মার্টফোনের আগমনে কিছু পরিবর্তন এসেছিল, কিন্তু নুর বুঝতে পারল যে, প্রযুক্তি এবং মানবিকতা একসঙ্গে চলতে পারে, এবং সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত।