Posts

গল্প

"নেসি এক জলে দানব"

October 20, 2024

md jahidul islam

Original Author জাহিদুল ইসলাম

196
View

শহরের বাইরে একটি ছোট্ট গ্রামে ছিলো নেসি নামের এক জলদানব। নেসি থাকত একটি গভীর হ্রদে, যার নাম ছিলো "অন্ধকারের হ্রদ।" এই হ্রদ ছিলো এতটাই গভীর যে দিনের আলোও সেখানে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারত না। অনেক বছর ধরে, গ্রামের মানুষজন বলত নেসির অস্তিত্ব শুধুই এক রূপকথা, কিন্তু মাঝে মাঝে হ্রদের কাছে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যেত।

একদিন, রাতের আঁধারে একটি ঝড় উঠল। বজ্রপাতের আলোয় হ্রদের পানি হঠাৎ করে উথলে উঠল, আর সেই পানির ভেতর থেকে দেখা গেলো নেসির বিশাল মাথা। তার লম্বা গলা ও লেজ ছিলো যেন অজগরের মতো পাকিয়ে আছে। লালচে চোখ দিয়ে সে গ্রামের দিকে তাকাল, আর একটা বিকট গর্জন করে উঠল। সেই গর্জনে যেন পুরো গ্রাম কেঁপে উঠল।

এদিকে, গ্রামের ছোট্ট মেয়ে এলিজা, যে খুবই সাহসী আর কৌতূহলী ছিলো, সবসময় নেসির গল্প শুনে ভাবত, যদি সত্যিই নেসি থাকে, তবে সে দেখতে কেমন হতে পারে? সে ঠিক করল, ভয়কে জয় করে হ্রদের কাছে যাবে এবং নেসির রহস্য উন্মোচন করবে।

রাতের অন্ধকারে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল, এলিজা চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। তার হাতে ছিলো শুধু একটি লন্ঠন আর একটি পুরনো মানচিত্র, যেখানে অন্ধকারের হ্রদের এক গোপন পথের কথা লেখা ছিলো। এলিজা সেই পথ ধরে ধীরে ধীরে হ্রদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

হ্রদের কাছে পৌঁছে এলিজা দেখে, পানির উপর থেকে ঘন কুয়াশা উঠে আসছে। চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু মাঝে মাঝে হ্রদের পানি নড়ে উঠছে অদ্ভুতভাবে। এলিজা আরও কাছে গিয়ে একটি পাথরের ওপর বসল। তখনই তার সামনে থেকে বিশাল একটি ছায়া ভেসে উঠল। নেসির সেই বিশাল চোখ দুটি এবার তার খুব কাছে।

এলিজা ভয় পেয়ে গেলেও পিছিয়ে এল না। সে সাহস করে বলল, "তুমি কি সত্যিই নেসি? তুমি কি আসলে ভয়ানক, নাকি সবাই তোমার সম্পর্কে ভুল ধারণা করেছে?"

নেসি তার বিশাল মুখ খুলল, কিন্তু শব্দ বেরোল না। হঠাৎ, হ্রদের গভীর থেকে আরেকটি আওয়াজ শোনা গেলো—এবার যেন আরেকটি প্রাণীও সেখানে রয়েছে। নেসি এলিজার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ছিল, যেন তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে।

এলিজা বুঝতে পারল, হ্রদের নিচে আরও ভয়ঙ্কর কিছু লুকিয়ে আছে, যা নেসির থেকেও ভয়ানক। নেসি আসলে সেই অন্ধকারের হ্রদে বন্দী, এবং সে এক মায়াবী রহস্যে আবদ্ধ।

এলিজা বুঝতে পারল যে, হ্রদের নিচে লুকিয়ে থাকা কোনো শক্তি নেসিকে বন্দী করে রেখেছে। নেসির চোখে সে এক অদ্ভুত দুঃখ আর যন্ত্রণার ছাপ দেখতে পেলো। যেন সে কথা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু পারে না। এলিজা সাহস সঞ্চয় করে বলল, "আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। কীভাবে তোমাকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেবো?"

ঠিক তখনই, হ্রদের গভীর থেকে এক গভীর গর্জন শোনা গেলো। পানির নিচে যেন কিছু একটা নড়ে উঠছে। হঠাৎ, নেসি তীব্রভাবে নড়ে উঠল, এবং তার লেজ দিয়ে পানি আছড়ে পড়ল। পুরো হ্রদ যেন কাঁপতে শুরু করল। এলিজা টের পেলো, পানি যেন কোনো আকর্ষণ শক্তির মতো তাকে টেনে নিচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি পাথর ধরে নিজেকে সামলে নিলো, কিন্তু পানি থেকে ভেসে উঠল বিশাল একটি কালো আকার।

কালো ছায়াটি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল, আর তার বিশাল মুখ থেকে বেরিয়ে এলো এক কর্কশ কণ্ঠস্বর, "তুমি কেন এখানে এসেছো, মানুষ কন্যা? এই হ্রদে তোমার কোনো জায়গা নেই।"

এলিজা সাহস করে বলল, "আমি নেসিকে সাহায্য করতে চাই। সে তোমার ক্রীতদাস হয়ে বন্দী আছে।"

কণ্ঠস্বরটি হেসে উঠল, "নেসি আমার দাস নয়, সে আমার অভিশাপের শিকার। আমি এই হ্রদের প্রাচীন অভিভাবক, এবং নেসি সেই অভিশপ্ত চুক্তির বন্দী।"

এলিজা জানতে চাইল, "কী সেই চুক্তি? কীভাবে আমি নেসিকে মুক্ত করতে পারি?"

অভিভাবক বলল, "অনেক বছর আগে, নেসি নিজেই আমাকে ডেকেছিলো যখন এই হ্রদের পানির নীচে একটি প্রাচীন শক্তি সক্রিয় হয়। সে চেয়েছিলো গ্রামকে রক্ষা করতে, কিন্তু বিনিময়ে তাকে আমার শর্ত মানতে হয়। সে চিরকাল এই হ্রদে বন্দী থাকবে, আর আমি তার আত্মার উপর আধিপত্য বজায় রাখবো।"

এলিজা এই কথা শুনে গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। তার মনে পড়ল পুরনো মানচিত্রে লেখা কিছু প্রাচীন বাক্য, যা সে তার দাদীর কাছ থেকে শিখেছিল। কথাগুলো ছিল একধরনের মন্ত্র, যা অভিশাপের শৃঙ্খল ভাঙতে পারে।

তবে, মন্ত্রটি বলার জন্য এলিজাকে হ্রদের কেন্দ্রে যেতে হবে, যেখানে অভিশাপের মূল শক্তি বাসা বেঁধে আছে। নেসি তাকিয়ে ছিল তার দিকে, যেন তার একমাত্র আশা এলিজার উপর নির্ভর করছে। এলিজা স্থির সিদ্ধান্ত নিলো যে সে হ্রদের কেন্দ্রে গিয়ে মন্ত্রটি পাঠ করবে, যা হয়তো নেসিকে মুক্ত করবে অথবা তাকে নিজের জীবন দিয়ে এই রহস্যময় যুদ্ধে অংশ নিতে হবে।

সে ধীরে ধীরে হ্রদের ঠান্ডা পানিতে পা বাড়াল।

এলিজা ঠান্ডা পানিতে পা রাখতেই যেন একটা শীতল স্রোত তার শরীর বেয়ে বয়ে গেল। কিন্তু সে তার ভয় দমিয়ে রাখল এবং হ্রদের গভীর দিকে এগিয়ে চলল। পানির নিচে অদ্ভুত সব আলো ঝলমল করছিল, যেন কোনো রহস্যময় জগতের প্রবেশপথ।

হ্রদের কেন্দ্রে পৌঁছে এলিজা দেখতে পেলো একটি বিশাল পাথরের বেদী, যা হ্রদের তলদেশ থেকে উঠে এসেছে। বেদীর চারপাশে খোদাই করা ছিলো প্রাচীন লিপি, যেগুলো হয়তো সেই অভিশাপের কথাই জানাচ্ছিল।

এলিজা তার দাদীর শেখানো প্রাচীন মন্ত্রটি স্মরণ করে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করল। প্রথমে কিছুই ঘটল না, কিন্তু ধীরে ধীরে হ্রদের পানি যেন আরও গভীরভাবে কাঁপতে লাগল। হঠাৎ, অন্ধকারের অভিভাবক আবার আবির্ভূত হলো। তার কালো ছায়া এবার আরও ঘন হয়ে এলিজার চারপাশে ঘুরতে লাগল, যেন সে তাকে থামাতে চাচ্ছে।

অভিভাবক হেসে বলল, "তুমি বুঝতে পারছো না, মানুষ কন্যা। এই মন্ত্র আমার শক্তিকে ক্ষতি করতে পারবে না। নেসি এখানে বন্দী থাকবে চিরকাল, এবং তুমিও আজ এই হ্রদেই হারিয়ে যাবে!"

এলিজা তবুও মন্ত্রপাঠ থামাল না। তার কণ্ঠে আরও জোর এনে বলল, "এই অভিশাপ ভাঙতে আমার সমস্ত শক্তি আমি উৎসর্গ করছি। যদি প্রয়োজন হয়, আমার জীবন দিতেও প্রস্তুত।"

ঠিক সেই মুহূর্তে, নেসি হ্রদের গভীর থেকে উঠে এল। তার বিশাল শরীর দিয়ে অভিভাবকের দিকে আঘাত করল, যেন সে এলিজাকে রক্ষা করতে চাইছে। নেসির আঘাতে অভিভাবকের ছায়া ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু তারপরেই ছায়াটি আবার জড়ো হয়ে গর্জন করতে লাগল।

এলিজা মন্ত্রের শেষ লাইন বলার সাথে সাথেই বেদী থেকে এক তীব্র আলো বেরিয়ে এল। সেই আলো নেসিকে ঘিরে ধরল এবং ধীরে ধীরে তার শরীর থেকে কালো শৃঙ্খল গলে যেতে লাগল। নেসির শরীর হালকা হয়ে উঠল, এবং তার চোখে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হলো।

অভিভাবক তখনও হাল ছাড়েনি। সে আবারও আঘাত করার চেষ্টা করল, কিন্তু এবার নেসি তার শক্তি ফিরে পেয়ে এক তীব্র গর্জনে অভিভাবককে আঘাত করল। সেই গর্জন যেন পুরো হ্রদকে কাঁপিয়ে দিলো এবং অভিভাবকের ছায়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

নেসি মুক্তি পেয়েছিল, কিন্তু এলিজা তখনও বেদীর উপর অচেতন পড়ে ছিল। নেসি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেল এবং তার মাথা নুইয়ে এলিজার স্পর্শ করল। হঠাৎ, বেদীর আলোর ছটা এলিজাকে ঘিরে ধরল, এবং তার শরীরে ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরতে শুরু করল।

এলিজা চোখ খুলে দেখল, নেসি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এবার আর কোনো ভয়ানক জলদানবের মতো নয়; বরং তার চোখে মমতা আর কৃতজ্ঞতার ছাপ ছিল। নেসি হালকা কণ্ঠে বলল, "তুমি আমাকে মুক্ত করেছো, মানুষ কন্যা। আমি চিরকাল তোমার ঋণী থাকব।"

এলিজা মৃদু হাসল এবং বলল, "এখন তুমি মুক্ত। কিন্তু এই হ্রদে আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে, এবং হয়তো আমাদের আবারও একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।"

নেসি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো, এবং এলিজা হ্রদের পাড়ে ফিরে এলো, নতুন করে শুরু করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে।

সাইন্স ফিকশন ও মজার গল্প এবং বিজ্ঞানের রহস্যময় কিছু জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন”

Comments

    Please login to post comment. Login