সঠিক পদ্ধতিতে জমি না মাপলে জমি কেনার সময় আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ নিশ্চিত৷
হতে পারে আপনি জমির দাম দিলেন ২০ কাঠার, খাতাকলমে লেখাও আছে ২০ কাঠা কিন্তু একচুয়ালি আপনার জমিটা ২০ কাঠার চেয়ে কম আছে৷
জমির হিসাব দেখলেন সেটাও গানিতিক হিসাবে কোন ভুল নেই৷ তাহলে মাঝখানে আপনার বাকি জমিটুকু কোথায় গেলো?
বলতে পারেন, ভাইরে এতো ভয় দেখান কেন? আজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িনি তাই বলে আপনি আমাকে এভাবে ভয় দেখাতে পারেন না৷ এসব ঝামেলা থেকে বাঁচার উপায় বলেন৷
হ্যাঁ সেটা বলার জন্যই তো এই বিস্তারিত পোস্টটা আপনাদের জন্য লেখা৷
জানেন তো বাঁচতে হলে জানতে হবে, জানার কোন বিকল্প নাই৷
তাহলে কি করতে হবে?
১) জমি মাপার সময় ডিজিটাল সার্ভে করুন৷
সমস্যা
ভাই টাকা নেই, বা আমি যেখানে থাকি ওখানে এসব কাজের লোক পাওয়া যায় না৷
সমাধান
২) অভিজ্ঞ সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সার্ভেয়ার দিয়ে কাজ করান৷
সমস্যা
ভাই এতো ভালো সার্ভেয়ারও আমাদের এখানে নেই, দু একজন ভালো মাপ বোঝে তারাই এসব করে৷
সমাধান
ভাই কি বলবো বলেন, এতো সমস্যা হলে তো চিন্তার বিষয়৷
তাহলে পুরো পোস্ট টা মনোযোগ দিয়ে একবার, দুইবার, তিনবার যতক্ষন না বুঝতে পারেন পড়তে থাকেন৷
যদি আপনার জমি ভদ্র টাইপ হয়৷ মানে সহজ সরল হয় তাহলে আপনার কপাল অনেক ভালো৷
১) সহজ সরল জমি চেনার উপায়
এরা আয়তকার, বা বর্গাকার হবে৷ জমির সব কোনা রাইট এঙ্গেল বা সমকোণী হবে৷
উদাহরণ
জমি লম্বা ৪৫'
চওড়া ৩২'
মোট জমি = ৪৫'×৩২'= ১৪৪০ স্কয়ার ফিট বা ১৪৪০/৭২০= ২কাঠা৷
আহা কি নম্র, ভদ্র, শান্ত, সহজ সরল গোবেচারা জমি৷
পৃথিবীতে যেমন আপনার আমার মতো ভালো লোক কম, হাতে গোনা কয়েকজন, এই ধরনের জমিও তেমন, সহজে এমন জমি পাবেন না৷
২) ত্যাড়া জমি
এই সব জমির সবই ঠিক আছে দেখা গেলো একটা বাহু মানে জমির একটা সাইড একটু বাঁকা মানে ত্যাড়া আরকি৷
এখন আর আগের মতে সরল অংক করে এই জমি মাপতে পারবেন না। জমির সব মাপ নিয়ে ভালো কোন সার্ভেয়ার বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিন৷
৩) ঘাড়ত্যাড়া জমি
মানুষের মতো এরাও ঘাড় ত্যাড়া হতে পারে৷ এদের কোন কিছুরই ঠিক নেই৷ জমির চারবাহু যে যার মতো সাইজের, চার বাহুর চার রকমের মাপ৷ কারও এঙ্গেলেরও কোন ঠিক নেই৷ যে যেদিক ইচ্ছে বাঁকা হয়ে বসে আছে৷ এমন ঘাড় ত্যাড়া জমি আপনার কপালে থাকলে আপনার ঘাড়ে শনি ভর করবে৷ এই জমিগুলো সবচেয়ে ঝামেলার৷ তবে আপনি যখন এই পোস্টে এসেই পড়েছেন তো আপনাকে শনির কোপ থেকে বাঁচাতে হবে৷
এই জন্য আপনাকে স্মরণ করতে হবে মহাভারতের মহা যোদ্ধা কর্ণ কে ৷ একমাত্র কর্ণই আপনার জমির কর্ণধার হয়ে আপনাকে রক্ষা করতে পারে৷
যা হোক এই ধরনের জমিতে চার বাহুর পাশাপাশি কোনাকুনি, বা কর্ণের মাপও নিয়ে রাখতে হবে৷
এবার এই ইনফরমেশন গুলো নিয়ে ভালো কোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভেয়ারের পরামর্শ নিলে উনি কম্পিউটার এ অটোক্যাড বা হিসাব করে বলে দিবেন আপনার জমির ক্ষেত্রফল কতো।
এই মোটামুটি ৩ প্রকারের জমির পরিমাপ, জমি মাপার পদ্ধতি ছবিসহ উদাহরণ দেবো মনোযোগ দিয়ে দেখেন এবং বোঝেন৷
প্রয়োজনীয় সুত্র
১) আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বের করার সুত্র = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ
২) ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র = ১/২ × ভূমি ×উচ্চতা
৩) ইরেগুলার ট্রাঙ্গেলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র
Area = √( s(s-a)(s-b)(s-c) )
s = (a+b+c)/2
১) সহজ সরল জমি
৪৫'×৩২'= ১৪৪০ স্কয়ার ফিট বা ১৪৪০/৭২০= ২কাঠা৷
২) ত্যাড়া জমি
আয়তকার অংশ
৩০'× ৪০' = ১২০০ স্কয়ার ফিট
ত্রিভুজাকার অংশ
১/২ × ভূমি × উচ্চতা ( ছেলেবেলার অংক)
০.৫× ২০' × ৩০' = ৩০০ স্কয়ার ফিট
মোট জমি
১২০০+৩০০= ১৫০০ স্কয়ার ফিট বা ১৫০০/৭২০= ২.০৮৩৩ কাঠা
৩) ঘাড়ত্যাড়া জমি
প্রচলিত জনপ্রিয় সহজ এভারেজ নিয়ম
দৈর্ঘ্য এভারেজ = (550+420)/2= 485 ফিট
প্রস্থ এভারেজ = ( 250+ 220) /2 = 235 ফিট
ক্ষেত্রফল = (485'× 235') = 113975 স্কয়ারফিট
আসল,সঠিক নিয়ম
s = (a+b+c)/2
Area = √( s(s-a)(s-b)(s-c)
এখানে আগে s এর মান বের করে নিতে হবে৷
আর a,b,c হলো ত্রিভুজের ৩ বাহুর মান৷
তাহলে
s1 ( ১ম ত্রিভুজের জন্য)
= ((250+550+552)÷2)
= 676
Area 1( ১ম ত্রিভুজের জন্য)
= √( s(s-a)(s-b)(s-c))
= √( 676(676-250)(676-550)(676-552))
= 67077.097 স্কয়ার ফিট।
s2 ( ২য় ত্রিভুজের জন্য)
= ((220+420+552)÷2)
= 596
Area ২ ( ২য় ত্রিভুজের জন্য)
= √( s(s-a)(s-b)(s-c))
= √( 596(596-220)(596-420)(596-552))
= 41658.125 স্কয়ার ফিট।
Total Area = (67077.097+41658.125)
= 108735.22 স্কয়ার ফিট।
এবারে আসুন পার্থক্য টা দেখি
এভারেজ নিয়ম - আসল নিয়ম
(113975 - 108735.22)= 5239.78 স্কয়ার ফিট বা 7.27 কাঠা
এভাবে সঠিক নিয়মে জমি না মাপলে আপনার ক্ষতি হবে 7.27 কাঠার মতো
প্রতি কাঠার দাম ২ লাখ টাকা হলেও ক্ষতি হবে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মতো৷
তাই আপনার কষ্টে অর্জিত টাকার সঠিক মূল্যায়ন পেতে, সঠিকভাবে জমি মাপুন বা প্রফেশনাল কনসালট্যান্টের পরামর্শ নিন৷
এতো বড় পোস্ট পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।