পোস্টস

চিন্তা

সুখ এবং শান্তি

২৬ অক্টোবর ২০২৪

মোঃ রাজিকুল ইসলাম

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা সুখী না দুঃখী, এটাই আজকের আলোচনার বিষয় ।আমরা প্রায় বলতে শুনি অমুক অনেক সুখে আছে, অমুক অনেক শান্তিতে আছে। এই যে সুখে কিংবা শান্তিতে থাকার যে ধারণা, এটা কতটুকু সত্য? এটা জানার জন্য আমাদের সুখ এবং শান্তি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হবে। সুখ কি?সুখের সংজ্ঞা যদি আপনি গুগলে খুঁজতে যান তাহলে হয়তো অনেক সংজ্ঞা কিংবা অর্থ খুঁজে পাবেন। এখানে আমি আমার ভাষায় যদি বলি তাহলে এভাবে বলা যায়.” যেখানে কোন দুঃখ কষ্ট নেই তাই সুখ”। ”শান্তি”, সুখ এবং শান্তি কে যদিও আমরা একই মনে করি কিন্তু বিষয়টা কিন্তু এক না। কিছুটা পার্থক্য আছে ,শান্তি যেটা আমাদের মনের সাথে সম্পর্কিত। কোন কাজ করে মনের ভেতর যখন ভালোলাগা কাজ করে সেটা  হল শান্তি বা মানসিক প্রশান্তি।

বেঁচে থাকার জন্য কোনটা প্রয়োজন  সুখ না শান্তি? প্রশ্নটা কিন্তু সত্যি অদ্ভুত,  আপনারা বলতেই পারেন এটা কি কোন প্রশ্ন হল? আসলে  জীবনকে গভীরভাবে বোঝার জন্য, জানার জন্য বিষয়গুলো আমাদের  ভাবা উচিত ।তাহলে হয়তো বা আমাদের জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমি যদি বলি আমার জীবনে সুখের প্রয়োজন। তাহলে আমাকে কি করতে হবে? এখন প্রশ্ন হলো সমাজে কারা সুখী? আমি যে সুখের সংজ্ঞা দিলাম সেটা যদি মেনে সুখী লোক খুঁজে বের করতে যাই, তাহলে মনে হয় একটা লোকের  পাবনা। কারণ তোমার শুধু সমাজে নয় বরং সারা দুনিয়ায় এমন কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না তার কোন দুঃখ কষ্ট নেই কিন্তু পাগল ব্যতীত। সবার জীবনেই কিছু না কিছু দুঃখ কষ্ট আছে। তাহলে কি আমরা সুখী লোক খুঁজে পাবো না?  অবশ্যই খুঁজে পাবো, কিন্তু সেটা একটু অন্যভাবে, আমরা যদি মানুষের বাহ্যিক দিক বিবেচনা করি তাহলে অনেক সুখী মানুষ  এর সন্ধান পাব। আর বর্তমান সময়ে সুখী লোক বা সুখী দেশ এই বাহ্যিক চাকচিক্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়। বর্তমানে শীর্ষ দশটি সুখী দেশের মধ্যে অন্যতম জাপান। কিন্তু দেখা যায় জাপানে আত্মহত্যার পরিমাণ অন্যান্য দেশের  তুলনায় অনেক বেশি। প্রশ্ন হল সুখী দেশের সুখী লোক তার আগে না আত্মহত্যা করবে? এই প্রশ্নের উত্তর হল তাদের ভিতর শান্তির অভাব।  তাদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ হলো ”বিষন্নতা “ । যেটা আসলে মনের সাথে সম্পর্কিত।আমরা সাধারণত সুখী লোক বলতে ঐ লোককে বোঝায় যার অঢেল টাকা পয়সা আছে, ক্ষমতা ,প্রভাব ,প্রতিপত্তি ইত্যাদি আছে। টাকায় যদি সকল সুখের মূল হয় তাহলে এখানে আরেকটা বিষয় চলে আসে ”অর্থই অনর্থের মূল”।অর্থ আপনাকে কি করবে যদি অর্থের সঠিক ব্যবহার করেন। আমার বন্ধু বলে যে, আমার পকেটে টাকা থাকলে ভালো, লাগে না থাকলে ভালো লাগেনা। সত্যি কি তাই? তার কার সাথে সুখে থাকা না থাকার সম্পর্ক।  আপনাদের কি ধারনা?

অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম আমার বন্ধুর কথা ভুল নয় ।আমিও এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছি যে আমার কাছে কোন টাকা নেই 15 দিন বিশ দিন যাবত এবং আমার এমন কিছু বন্ধু আছে একসময় তাদের কাছে কোন টাকা থাকতো না। তখন দেখেছি যে আসলেই টাকা না থাকলে কষ্ট হয় ,হতাশা কাজ করে, কোথাও যেতে মন চায় না, কিছু করতে ভালো লাগে না, আমরা  নাটক ,সিনেমা কিংবা  বিভিন্ন গল্প, উপন্যাসে এমন চরিত্র  দেখি যেখানে  টাকা ছাড়াই তারা অনেক সুখে আছে শান্তিতে আছে। এগুলা আসলে নাটক কিংবা সিনেমায় মানায় বাস্তব জীবনে মানায় না। তাহলে কি আমরা বলতে পারি জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সুখের প্রয়োজন এবং সুখের মূল উপাদান হলো টাকা ।তাই যদি হয় তাহলে সুখী দেশের সুখী মানুষ কেন আত্মহত্যা করছে? এর উত্তর আমি আগেই দিয়েছি ,শান্তির অভাব, টাকা দিয়ে আমরা সুখ কিনতে পারি কিন্তু টাকা দিয়ে শান্তি কেনা যায় না। শান্তি হলে মনের বিষয় । আসলে  মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে   ভিন্ন ভিন্ন কাজ করেমানসিক প্রশান্তি লাভ করে। কেউ শিক্ষকতা করে প্রশান্তি লাভ করে, কেউ  বিশ্বভ্রমণ করে শান্তি লাভ করে, কেউ বই পড়ে শান্তি লাভ করে, কেউ  বাবা-মার খেদমত করে শান্তি লাভ করে ,কেউ সমাজসেবা করে শান্তি লাভ করে ।

এখন যদি কেউ বলে  যে, আমার  জীবনে শান্তি দরকার ,সুখের দরকার নেই। এটা কি আদৌ সম্ভব  সুখ ছাড়া শান্তি। এরকম লোককে আদৌ সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে? সেটা কিন্তু অনেক জটিল। সমাজে এরকম লোক আছে কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন কারণ এখন সবাই সেই মরীচিকার পেছনেই  ছোটে মানে টাকার পেছনের ছোট কেউ শান্তি খুঁজে না। এই  শ্রেণীর লোক সম্পর্কে  কিছু কথা বলি তাহলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। প্রথমত এতে বড় কোন আশা আকাঙ্ক্ষা নেই, এরা ছোট ছোট কাজেই আনন্দ খুঁজে পায়, হয়তো দশ টাকার বাদাম খেয়ে এরা দিন পার করে দিল, দেখা গেল টাকাপয়সা গাড়ি বাড়ি ভালো জামা কাপড় এগুলোর দরকার নেই।চলার মত যৎসামান্য থাকলেই এরা অনেক খুশি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই শ্রেণীর লোক সমাজে নেই বললেই চলে।