একদিন রাতে আহিদ তার বাবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। সে কম্পিউটারের ওপর একটি গল্প শুনছিল। হঠাৎ আহিদর মাথায় এল, "আচ্ছা, এই কম্পিউটার কি মানুষের মতো?" সে ভাবলো, “যদি কম্পিউটারের অংশগুলো মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের মতো কাজ করতো, তাহলে কত মজার হতো!”
ঠিক তখনই কম্পিউটার থেকে ছোট্ট আওয়াজ আসলো। অবাক হয়ে আহিদ দেখলো যে স্ক্রিনে একটা কার্টুন কম্পিউটার বেরিয়ে এসেছে। তার নাম ছিলো "ক্লিকি।" ক্লিকি হেসে বললো, “হ্যাঁ আহিদ, আমি আসলে তোমার মতোই। আমারও হাত, পা, মাথা আর হৃদয় আছে, শুধু একটু অন্যভাবে!”
এবার ক্লিকি আহিদকে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশকে মানুষের শরীরের সাথে তুলনা করে মজার গল্প শুনাতে শুরু করলো।
কম্পিউটারের মাথা –প্রসেসর (CPU)
ক্লিকি বললো, “দেখো আহিদ, আমার মাথা হলো সিপিইউ (CPU), যাকে আমরা ‘প্রসেসর’ বলি। একে তুমি মানুষের মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করতে পারো। যেমন তোমার মস্তিষ্ক তোমার শরীরের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনই প্রসেসর কম্পিউটারের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আমাকে কিছু করার আদেশ দিলে, প্রথমেই আমার প্রসেসর সেটা গ্রহণ করে এবং কাজ শুরু করে।”
স্মৃতি –র্যাম (RAM) এবং হার্ডডিস্ক
এরপর ক্লিকি বললো, “আহিদ, মানুষের যেমন স্মৃতি আছে, আমারও আছে। তবে আমার স্মৃতি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটা হলো র্যাম (RAM), আর অন্যটা হলো হার্ডডিস্ক।
র্যাম (RAM): এটা হলো স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি। যেটা তুমি এখনই শিখছো বা ব্যবহার করছো। যেমন, তুমি কোনো খেলায় ব্যস্ত থাকলে, আমার র্যামই সেটার তথ্য ধরে রাখে, যাতে তুমি সহজে খেলতে পারো।
হার্ডডিস্ক: এটা হলো দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি, যেখানে আমি সব ফাইল, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণ করি। যেমন তোমার প্রিয় স্মৃতি মস্তিষ্কে থেকে যায়, আমারও হার্ডডিস্কে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে যায়।”
চোখ –মনিটর (Screen)
ক্লিকি তার স্ক্রিনের দিকে ইশারা করে বললো, “আমার স্ক্রিনটা তোমার চোখের মতো। তোমার চোখ যেভাবে তোমার সামনে সব কিছু দেখায়, তেমনই আমার স্ক্রিন তোমাকে সব তথ্য, ছবি, এবং লেখা দেখায়। আমার ভিতরে যা যা ঘটছে, তা দেখানোর কাজ আমার স্ক্রিনের।”
হাত – মাউস এবং কিবোর্ড
“এবার আমার হাতের কথা বলি,” ক্লিকি বললো। “তোমার হাত দিয়ে যেমন তুমি লিখতে পারো, ইশারা করতে পারো, তেমনই আমাকে চালানোর জন্য আছে মাউস এবং কিবোর্ড। কিবোর্ডে টাইপ করে তুমি আমাকে আদেশ দাও আর মাউস দিয়ে ক্লিক করে তুমি আমাকে নির্দেশ দাও।”
মুখ – স্পিকার
আহিদ খেয়াল করলো ক্লিকির আওয়াজ। ক্লিকি হেসে বললো, “আমার মুখ হলো স্পিকার। যেভাবে তুমি কথা বলো, আমিও আমার স্পিকারের মাধ্যমে তোমার সাথে কথা বলতে পারি, গান গাইতে পারি এবং আরও অনেক কিছু শোনাতে পারি।”
হৃদয় – পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply)
“আচ্ছা, তুমি কি জানো আমার হৃদয় কোথায়?” ক্লিকি বললো। আহিদ মাথা নাড়লো। “আমার হৃদয় হলো পাওয়ার সাপ্লাই,” ক্লিকি বললো। “তুমি যেমন খাওয়া-দাওয়া করে শক্তি পেয়ে বেঁচে থাকো, আমারও পাওয়ার সাপ্লাই থেকে শক্তি লাগে। আমি এই পাওয়ারে চলি, আর তোমার সাথে কাজ করতে পারি।”
শিরা-উপশিরা –কেবল ও ওয়্যার
ক্লিকি বললো, “তুমি কি জানো, মানুষের শরীরের শিরা-উপশিরায় রক্ত যেভাবে চলাচল করে, আমারও সেই রকম তার (wire) আছে। আমার ভিতরের প্রতিটি অংশ তারের মাধ্যমে সংযুক্ত, যাতে সব কাজ সঠিকভাবে চলতে পারে।”
আহিদর উপলব্ধি
আহিদ ক্লিকির সব কথা মন দিয়ে শুনলো এবং মুগ্ধ হলো। ক্লিকি বললো, “তুমি এখন বুঝতে পেরেছো, আমি তোমার মতোই কাজ করি। তফাত হলো, তুমি মানুষ আর আমি মেশিন। তুমি নিজে নিজে অনেক কিছু করতে পারো আর আমি তোমার নির্দেশ ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। তবে আমরা দুজনেই কাজে পারদর্শী, যদি আমাদের ঠিকঠাক ব্যবহার করো!”
উপসংহার
কম্পিউটারকে এখন থেকে আর শুধু একটি যন্ত্র হিসেবে না দেখে, আহিদ বুঝলো যে এটা একটি জটিল কিন্তু বন্ধু-সদৃশ যন্ত্র, যার মধ্যে আছে মানুষের শরীরের মতো বিভিন্ন অংশের সাথে তুলনীয় বিশেষ অঙ্গ। ক্লিকি আহিদকে কম্পিউটারের প্রতি আরও কৌতূহলী করে তুললো এবং সে ঠিক করলো, এই দারুণ যন্ত্রটি নিয়ে আরও কিছু জানবে।