দড়িতো শুধু একটা দড়ি নয়? এ হল কন্ট্রোল মেকানিজম। হিংস্র জীবের দড়ি ছিঁড়ে গেলে জন জীবনে আতঙ্ক তৈরি হয়। ঘুড়ির দড়ি ছিঁড়ে গেলে সে হারিয়ে যায়। মানুষও অদৃশ্য দড়ি দারা বাঁধা থাকে। গোয়ালের গরু যেমন থাকে, অনেকটাই সেরকম। মানুষের দড়ি ছিঁড়ে গেলেও হরেক রকম ঘটনা ঘটে। বিশদ ব্যাখ্যায় গেলাম না। শুধু ছোট করে বলে রাখি, যার ছিঁড়ে সেই বুঝে!
কয়েকদিন হল আমার উনারও দড়ি ছিঁড়ে গেছে। ঐ যে, যে দড়ি দিয়ে লাফায়-টাফায়, ব্যায়াম-ট্যায়াম করে, মানে স্কিপিং রোপ, সেটা। ছেড়া দড়িতে তো কাজ হয় না। বাজার থেকে নতুন দড়ি আনতে বলে। কিন্তু যথারীতি ভুলে যাই। এরপর একদিন মনে পড়ায় কাঁচা বাজারের পাশের কিছু দোকানে খুঁজি। কিন্তু ভাতের হোটেলে তো কেউ সোনা বেঁচে না। তাই দড়িও খুঁজে পাই না। হোটেলের কথা আসতেই আপনাদের মনে হয় হা*উ*ন আংকেলের কথা মনে পড়েছে? আপনাদের মনে পড়লে আমার কিছুই করার নেই। ভাইয়েরা আমার, আমি আছি ছেড়া দড়ির ঝামেলা নিয়ে। বাড়িওয়ালি এক দড়ির কথা কত আর বলে! আমিই বা আর কত শুনি! সুতরাং ছেড়া দড়ি বা দড়ি ছেড়ার কথা আবারও ভুলে যাই।
আর হবেই না কেন? আমরা পথে ঘাটে, মাঠে প্রান্তরে, রাস্তায়-বেকায়দায়, জলে-স্থলে থাকি। সরীসৃপের মত চলি। উটের মত মুখ গুঁজে কাজ করি। তাদের পায়ের নিচে মাটির বদলে কাটা বিছানোই থাকে বেশি। সেটা কখনও গরম তেলের মত থাকে, সেখান থেকে উত্তপ্ত কড়াই এ পড়তে হয়। তখন তো নিজের দড়ির খবর থাকে না, অন্যের দড়ির খোঁজ কিভাবে নেই!
তবু চাইলেই তো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যত বড় বীর হোন না কেন, যত বড় লাফ দেয়া শিখেন না কেন, শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। যতই সেয়ানা হোন না কেন, দিন শেষে ঘরে ফিরতে হয়। সবার তো হা*উ*ন আঙ্কেলের হোটেলে খাবার সুযোগ থাকে না। বাড়িওয়ালীর হোটেলেই খেতে হয়। তাই শেষ পর্যন্ত ছু-কিত-কিতের লম্বা দম দেয়। ছাই দিয়ে ধরে ফেলে। সরিষার তেল মেখেও কাজ হয় না।
এক শ্রীদেবী তো গেছে গ্যা। কিন্তু ঘরে ঘরে শ্রীদেবী আছে জানেন কি? পৌরাণিক কালে, বিশেষ করে, ইন্দোনেশিয়ায় ফসল উৎপাদনের জন্য এক বিশেষ দেবীর পূজা করা হত। সেই দেবীর নাম শ্রীদেবী। সেই থেকে ভাতের দেবীকে শ্রীদেবী বলা হয়।
পরিবারে তো বাড়িওয়ালী রাঁধে বাড়ে। সবাইকে খাওয়ায়।দেখলাম, এই তো সুযোগ!। শ্রীদেবী ডাকা শুরু করলাম। বেশ কাজ হল। বাসায় ফিরেই বলি, শ্রীদেবী, ভাত দাও। এই নতুন বোল বেশ কাজ করলো। ছোটখাট বিষয়ে টুকটাক খুটখাট থাকলো না।
কিন্তু সব বিষয়ে তো এক থিওরি চলে না। ছলে ডাক্তারের সিরাপ বা সফদার ডাক্তারের কুইনাইন দিয়ে সব রোগ সারে না। বাড়িওয়ালী একদিন ফের জিজ্ঞেস করল, দড়ি কই? আমি বেমালুম ভুলে গেছি। বললাম, কিসের দড়ি?
এইবার চাপা ক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে। বলতে শুনলাম, আমার ফাঁসের দড়ি। ওহ, ইউরেকা ইউরেকা করে বেশ একটা ভাণ ধরে বের হয়ে যাই। যেন বিশেষ কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছি। এরপর, স্কিপিং রোপ মানে লাফালাফির দড়ি নিয়ে ফিরে আসি।
এসে বলি, শ্রীদেবী, এই নাও তোমার ফাঁসের দড়ি।