পোস্টস

চিন্তা

আমরা কেন বই পড়ি না?

১৩ মে ২০২৪

Mahmudul Hasan

জ্ঞান অর্জন অনেক কঠিন। কারণ— জ্ঞানের জার্নিতে শুরুতেই একজনকে, তার ভেতরে থাকা অহংবোধ ও হীনমন্যতাকে বিসর্জন দিতে হয়। কেননা নিজের মধ্যে গেঁড়ে বসা অহংবোধ মানুষকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেয়, মস্তিষ্কের চারপাশে ফলস পাণ্ডিত্যের দেয়াল খাড়া করে। এ ফলস দেয়ালের প্রভাবে ব্যক্তি সত্যিকারের জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত হন।

একজন মানুষ ঠিক তখনই কোনো কিছু জানার প্রতি অগ্রসর হয়, যখন সে এটা স্বীকার করে যে, নির্দিষ্ট বিষয়ে সে-মূর্খ। একজন মানুষ তখনই প্রশ্ন করে, যখন সে ফিল করে সে জানে না। অর্থাৎ প্রশ্ন করার আগেই তাকে ফিল করতে হয় সে অজ্ঞ। আর নিজের মূর্খতাকে মেনে নিয়ে, একজন মানুষের জ্ঞানের রাজ্যে পদার্পণের সূচনা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। কাউকে জ্ঞানের অসীম সাগরে ডুব দিতে হলে, শুরুতেই নিজের অভ্যন্তরে থাকা মিথ্যা পাণ্ডিত্যের দেয়াল তাকে ভাঙতে হবে। যাতে জ্ঞানের আলো মস্তিষ্কের নিউরন পর্যন্ত পৌঁছায়। আর এ ভাঙার জার্নিটা শুরু হয় মূলত নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করার মধ্যদিয়ে। এজন্যই গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন— “সত্যিকারের জ্ঞানী হবার প্রক্রিয়াটি তখনই শুরু হবে, যখন আপনি জানবেন যে আপনি কিছুই জানেন না।” তবে নিজের অজ্ঞতাকে স্বীকার করার জন্য, সৎ সাহসের দরকার হয়। ভেতরে সত্যিকারের সততা থাকতে হয়। 

যারা নিজের অহংবোধকে স্বীকার করতে অপারগ, অর্থাৎ যাদের ভেতরে সৎ সাহস নেই, যাদের ভেতরে গোঁড়ামির বাস, তারাই নিজের মধ্যে বই পরার তাগিদ অনুভব করে না। খাবারের সন্ধান কারা করে? —যারা পেটে ক্ষুধা অনুভব করে। তেমনি বই পড়ার যাত্রাটা শুরু হয় মূলত নিজের মূর্খতা অনুভবের দ্বারা। আর মূর্খতাও একপ্রকার ক্ষুধা, তবে এটি পেটের ক্ষুধা নয়, মন বা আত্মার ক্ষুধা। খাবার যেমন পেটের ক্ষুধা নিবারণ করে, তেমনি বই আত্মার ক্ষুধা নিবারণ করে। কিন্তু সমস্যা হলো— পেটের ক্ষুধা অনুভবের জন্য আমাদের বেগ পেতে হয় না, সময় হলে আপনা আপনি আমরা এ ক্ষুধা টের পাই। পক্ষান্তরে, মন বা আত্মার ক্ষুধা ফিল করার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়, নিজের অহংবোধের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। 

বাংলাদেশের মানুষ কেন বই বিমুখ? কারণ— এখনো এদেশের মানুষ অন্তরের ক্ষুধা অনুভব করতে পারে নি। আর এটা এটাই প্রমান করে, এদেশের সিংহভাগ মানুষ নিজের অহংবোধের কাছে হেরে গেছে। অর্থাৎ তারা নিজের কাছেই পরাজিত। বই না পড়ার মধ্যদিয়ে মূলত, তারা নিজের অজ্ঞতা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যে নিজের অজ্ঞতার মুখোমুখি হতে ভয় পায়, নিঃসন্দেহে সে ভীতু। আর এমন ভীতু, আত্ম-পরাজিত জাতির দ্বারা দেশ ও সমাজের উন্নতি আশা করা স্রেফ বাতুলতা। বাংলাদেশে দিনকে-দিন ভীতুর চাষ বেড়েই চলেছে।