পোস্টস

গল্প

গ্রহান্তরের ছায়া- কল্প বিজ্ঞান

১০ নভেম্বর ২০২৪

সুজন ঢালী রাসেল

গল্পের নাম: **"গ্রহান্তরের ছায়া"**

 

গ্রহান্তরের ছায়া।

রিয়ানের বয়স মাত্র তেরো, কিন্তু তার কল্পনার শক্তি অতুলনীয়। সে পৃথিবীর একজন সাধারণ স্কুলের ছাত্র, কিন্তু তার মনে সর্বদাই নানান গ্রহ-নক্ষত্র ঘুরে বেড়ায়।

 

 আজও এক সন্ধ্যায় সে তার টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণ করছিল, হঠাৎ সে এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ করল - এক অদ্ভুত আলো, যা আকাশের অন্য সব তারাদের মতো স্থির নয়; যেন হঠাৎ করেই দিক পরিবর্তন করছে। এতদিন সে শুনে এসেছে যে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এই আলো যেন তাকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, পৃথিবীর বাইরে কেউ আছে।

 

পরের কয়েকদিন ধরে রিয়ান আলোটির গতিপথ লক্ষ্য করল। ক্রমে বোঝা গেল যে এটি এক রহস্যময় বস্তুর গতিবিধি। আলোটি যত কাছে আসতে থাকল, রিয়ানের কৌতূহল ততই বাড়তে থাকল। একদিন সে সাহস করে বন্ধু মিহিরকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল, গ্রামের পাশের ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় তারা রাত কাটাবে, কারণ সেখান থেকে আলোটি আরও স্পষ্ট দেখা যায়।

 

রাতে, তারা পাহাড়ে অপেক্ষা করছিল। মাঝরাতে হঠাৎই আলোটি তাদের সামনে এসে থেমে গেল। রিয়ান আর মিহির হতবাক হয়ে লক্ষ্য করল, আলোটি আসলে একটি অজানা যান, যা ধীরে ধীরে তাদের সামনে নামছে। যানের দরজা খুলে গেল এবং ভেতর থেকে এক অদ্ভুত প্রাণী বেরিয়ে এল। প্রাণীটি দেখতে মানুষের মতো হলেও তার ত্বক নীলাভ এবং চোখ দুটি যেন আকাশের মতো নীল।

 

প্রাণীটি শান্তভাবে বলল, "ভয় পেও না। আমি জিরাক। আমরা বহু আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ থেকে এসেছি, কিন্তু আমরা শান্তি ও বন্ধুত্বের উদ্দেশ্যে এসেছি।"

রিয়ান বিস্ময়ে বলল, "আপনারা কি আমাদের মতোই, মানে মানুষ?"

জিরাক বলল, "আমরা তোমাদের চেয়ে ভিন্ন, কিন্তু আমরা একই মহাবিশ্বের সন্তান। বহু আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা পৃথিবীতে এসেছিলেন, কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে সম্পর্ক হারিয়ে গেছে।"

এরপর জিরাক তাদেরকে মহাবিশ্বের নানা রহস্য এবং তাদের গ্রহের প্রযুক্তি সম্পর্কে অবাক করা তথ্য দিল। সে বলল, "আমাদের গ্রহে সময় এবং স্থান নিয়ন্ত্রণের এক বিশেষ প্রযুক্তি আছে। আমরা বিভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তাদের সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য।"

গল্পের শেষে, জিরাক রিয়ান ও মিহিরকে বলল, "তোমরা মহাবিশ্বের রক্ষক হও, পৃথিবীর মানুষদের সঠিক পথে চালিত করার দায়িত্ব তোমাদের। আমরা ভবিষ্যতে আবার দেখা করব।"

আলোটি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেল, আর রিয়ান ও মিহির মনে এক গভীর প্রতিজ্ঞা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এল। মহাবিশ্বের এত বড় রহস্য জানার পর তারা আর আগের মতো নেই।

 

**"গ্রহান্তরের ছায়া: দ্বিতীয় অধ্যায়"**

 

জিরাক চলে যাওয়ার পর, রিয়ান আর মিহিরের জীবনে যেন এক অদ্ভুত পরিবর্তন এলো। তারা আগের মতো স্কুলের পড়াশোনায় মন বসাতে পারছিল না। 

তাদের মনের গভীরে বদ্ধমূল হয়ে বসেছে মহাবিশ্বের এই অজানা রহস্য আর তাদের অদ্ভুত দায়িত্বের কথা। দু'জন মিলে রাতের বেলা আবারও পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করত, এই আশা নিয়ে যে হয়তো জিরাক আবার যোগাযোগ করবে।

এক সন্ধ্যায়, রিয়ান হঠাৎ লক্ষ্য করল, তার হাতে একটা ছোট নীল বিন্দুর মতো দাগ ফুটে উঠেছে।

 

 সে প্রথমে ভেবেছিল এটি কোনো মশার কামড়। কিন্তু কয়েক দিন পর দাগটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে এক অদ্ভুত আকার নিতে শুরু করল। রিয়ান বুঝতে পারল, এটি জিরাকের সঙ্গে সংযোগের কোনো সংকেত হতে পারে।

 

রাতে, পাহাড়ের চূড়ায় তারা আবার অপেক্ষা করল। হঠাৎই সেই আলোটি আবার আকাশ থেকে নেমে এল। এইবার আলোটি আরও উজ্জ্বল, আরও শক্তিশালী।

 রিয়ান আর মিহির বুঝতে পারল যে এইবার জিরাক শুধু দেখা করতে আসেনি, তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে এসেছে।

জিরাক তাদের জানাল, মহাবিশ্বে এমন কিছু গোষ্ঠী আছে যারা পৃথিবীর মতো গ্রহকে ধ্বংস করে শক্তি সংগ্রহ করে। 

 

এই বিপদের কথা রিয়ান আর মিহিরকে জানিয়ে জিরাক তাদের হাতে একটি ছোট ডিভাইস দিল, যার মাধ্যমে তারা এই ধরনের গোষ্ঠীকে সনাক্ত করতে পারবে। জিরাক বলল, "এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। তোমরা যদি সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করতে পার, পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে।"

 

রিয়ান আর মিহিরের জীবনে দায়িত্ব যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারল, এটি শুধু বন্ধুত্ব নয়, তাদের মিশন। জিরাক তাদের কাছ থেকে বিদায় নিল, কিন্তু সেই ডিভাইসটি রেখে গেল যা তাদের পৃথিবী ও মহাবিশ্বকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন।

 

এরপর, রিয়ান ও মিহির এই ডিভাইসের মাধ্যমে নানা সংকেত সংগ্রহ করতে শুরু করল এবং একের পর এক রহস্যময় ঘটনার মুখোমুখি হতে থাকল। পৃথিবীকে রক্ষা করতে তারা প্রস্তুত, কারণ তাদের পেছনে রয়েছে এক অজানা মহাজগতের শক্তি।