Posts

ফিকশন

আধুনিক হোটেল -সর্ষে-ইলিশ

November 19, 2024

সুজন ঢালী রাসেল

147
View

### **সর্ষে-ইলিশ**  

নদীর পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করেন খোকা শিকদার। বয়স ষাট পেরিয়েছে, কিন্তু মুখে সারাক্ষণ হাসি। তিনি শুধু গ্রামের সেরা ইলিশ মাছ ধরার জেলে নন, তার রান্নার হাতেরও খুব সুনাম। বিশেষত সর্ষে-ইলিশ। কেউ তাঁর সর্ষে-ইলিশ একবার খেলে সেই স্বাদ কখনো ভুলতে পারে না। 

একদিন গ্রামে আসেন এক রহস্যময় শহুরে ভদ্রলোক, নাম তন্ময় দত্ত। তিনি গবেষক, বাংলার হারিয়ে যাওয়া রান্নার রেসিপি নিয়ে কাজ করেন। গ্রাম থেকে গ্রাম ঘুরে তিনি ঐতিহ্যবাহী রান্নার খোঁজ করেন। খোকা শিকদারের সর্ষে-ইলিশের গল্প শুনে তিনি সেখানে উপস্থিত হন।  

তন্ময় প্রথমে বেশ অবাক হন। একটি মাটির ঘরে খোকা শিকদারের সরল জীবন দেখে তার মনে হয়, এমন একজন মানুষ কীভাবে এমন অনবদ্য রান্না তৈরি করেন। তবে খোকা শিকদার সহজেই রাজি হন তাঁকে রান্নার রহস্য শিখিয়ে দিতে।  

তন্ময়কে রান্না শেখানোর সময় খোকা শিকদার বলেন,  


"বুঝলি বাবু, ইলিশ মাছের স্বাদ শুধু রান্নায় নয়, মনেও ধরে রাখতে হয়। মাছ ধরার সময় নদীকে বোঝা লাগে। আর সর্ষে? এটা তো প্রাণ! হাতের মসলার সাথে হৃদয়ের টান না থাকলে আসল স্বাদ বেরোয় না।"  

তন্ময় অবাক হয়ে তাঁর কথা শোনেন। রান্না শেষ হলে এক ফোঁটা সর্ষে-ইলিশের ঝোল খেয়ে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়েন। এমন স্বাদ তিনি কোনোদিন পাননি।  

কিন্তু এখানেই গল্পের মোড়। রান্না শেষে তন্ময় খোকাকে জিজ্ঞেস করেন, "শিকদার মশাই, আপনি এই রেসিপি কি আমাকে দিয়ে দেবেন? আমি চাই এটা নিয়ে আরও অনেক মানুষ জানুক।"  

খোকা শিকদার একটু হাসলেন। তারপর বললেন, "বাবু, এই রেসিপি তো শুধু রান্নার মাপ-যোগের কথা নয়। এটা এক ধরণের আত্মার টান। নদী, সর্ষে, আর ইলিশ মিলে যে ভালোবাসা তৈরি হয়, সেটাই আসল রেসিপি। সেটা কি তুমি লোকে শেখাতে পারবে?"  

তন্ময় তখন বুঝলেন, রান্না আসলে কোনো কাগজে লেখা কিছু নয়। এটা হলো অনুভূতির এক মহাকাব্য। তিনি খোকা শিকদারের রান্নার কৌশল নোট করলেও সর্ষে-ইলিশের সেই আদি স্বাদ তিনি আর কোথাও খুঁজে পেলেন না।  

সেই সর্ষে-ইলিশ যেন এক স্বপ্ন হয়ে থেকে গেল, যা হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যের মতো।  

**শেষ।** 

Comments

    Please login to post comment. Login