পোস্টস

প্রবন্ধ

একবাল আহমেদ লেকচার: এ রাইটারস প্লেস ইন পলিটিকস (আংশিক)

১৪ মে ২০২৪

সাঈদ শ'

মূল লেখক অরুন্ধতী রায়

অনুবাদক সাঈদ শ'

একজন ভালো লেখক বা মহান লেখক কোনো দায়িত্ব বা নৈতিকতা মেনে নিতে অস্বীকার করতেই পারেন বা সমাজ তার উপর চাপায়ে দিতে পারে তিনি যে সমাজে বাস করেন। কিন্তু তবু তাদের মধ্যে সেরা এবং সর্বশ্রেষ্ঠরা জানেন যে এই কষ্টসাধ্য স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে এইটা কেবল খারাপ শিল্পের দিকেই পরিচালিত করবে। এই কঠোর নৈতিকতার এবং দায়বদ্ধতার একটা জটিল জাল আছে যা শিল্প বা লেখালিখি খোদ নিজেই লেখকের উপর চাপায়ে দেয়। এইটা একক বা স্বতন্ত্র, তবু এইটা ঘটেই। প্রকৃষ্টভাবেই এইটা আর্টিস্ট এবং মিডিয়ামের মধ্যেকার এক সূক্ষ্ম বন্ধন। বিচারবুদ্ধির সহযোগে এর গ্রহনযোগ্যতা শেষে খুব খারাপভাবেই এইটা একটা অসম্মান আর শোষণের সম্পর্কে উপনীত হয়। কিন্তু বাহ্যিক নিয়মের অনুপস্থিতি জিনিসগুলিকে জটিল করে তোলে। একটা খুব সরু রেখা আছে যা কল্পনার শক্তিশালী সত্য উজ্জ্বল পাখিটাকে কৃত্তিম কোলাহলের কলধ্বনি থেকে আলাদা করে রাখে। সেই রেখাটা কোথায়? আপনি রেখাটাকে কিভাবে চিনবেন? কিভাবে জানবেন আপনি এইটাকে ক্রস করে ফেলছেন?  রহস্যময় এবং আশ্চর্য শোনালেও আমি বলতে চাই, 'আপনি তা জানেন'। ব্যাপারটা হলো এইটা কেউ না, না কোন পাঠক, কোন পর্যালোচক, এজেন্ট, প্রকাশক, সহকর্মী, বন্ধু বা শত্রু কেউই আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না। লেখককে কেবল নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যতটা সম্ভব সৎভাবে এবং তার উত্তর দিতে হবে। এই রেখাটার যে বিষয় তা হলো, একবার এইটাকে যখন আপনি চিনতে শিখবেন, একবার এইটাকে যখন আপনি দেখবেন, এটাকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। আপনার আর কোন উপায় নাই এইটাকে নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া, এর ভেতর দিয়ে অনুসরণ করা ছাড়া। এর যাবতীয় জটিলতা, বৈপরীত্য ও চাহিদা আপনাকেই বহন করতে হবে। এবং এইটা সবসময় সহজ কাজ না। এইটা আপনাকে অচেনা অদ্ভুত বন্য জায়গায় নিয়ে যাইতে পারে। এইটা সবসময় প্রশংসা এবং করতালির দিকে নিয়ে যায় না। যেমন ধরেন, একটা রক্তাক্ত মিলিটারি কু-এর মাঝে, আপনি হয়তো মুগ্ধ হইতে পারেন একটা বেগুনি সূর্যপাখির যৌনসহবাস দৃশ্যে বা বন্দী গোল্ডফিশের গোপন জীবনে বা কোনো বৃদ্ধমাসি পাগল হয়ে যাইতেছেন অথবা এর বিপরীতে আমার মত একটা কল্পিত প্রশান্তির মধ্যে থেকেও, একটা নীরব যুদ্ধে হোঁচট খেয়ে পড়ার মত দূর্ভাগা হইতে পারেন। অসুবিধাটা হলো, আপনি যখন একবার রেখাটাকে দেখে ফেলেন, এরপরে আর রেখাটাকে না দেখে থাকতে পারেন না। এবং যখনি আপনি দেখে ফেলেন এবং চুপ করে থাকেন, কিছুই বলেন না, ব্যাপারটা ততই পলিটিক্যাল হয়ে ওঠে, কথা বলা যতটা পলিটিক্যাল। আপনি দায়বদ্ধ হলে এখানে কোনো সরলতার জায়গা নাই।  

[১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০০১-এ অরুন্ধতী রায় তৃতীয় বার্ষিক ইকবাল আহমেদ স্মারক বক্তৃতার জন্য "রাজনীতিতে লেখকের স্থান" শিরোনামে বক্তৃতা দেন।]