পোস্টস

গল্প

একনজরে এডওয়ার্ড স্নোডেন

২৫ নভেম্বর ২০২৪

Mezbin Tania

একনজরে এডওয়ার্ড স্নোডেন

 

আপনারা যারা বিশ্ব রাজনীতির মোটামুটি সব খবর রাখেন কিন্তু এডওয়ার্ড স্নোডেনকে চেনেন না,এমন মানুষ খুব কম আছে। যদিও সময়টা এক দশক আগের কথা তবুও তিনি বেশ আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলেন। আসুন একনজরে এডওয়ার্ড স্নোডেন সম্পর্কে আবার একটু জেনে নেই।

 

সময়টা ছিল ২০১৩,যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার নায়ক এডওয়ার্ড স্নোডেন (জন্ম ২১জুন,১৯৮৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোস্ট ওয়ানটেড আমেরিকান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। 

 

সেই সময়ে এডওয়ার্ড স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে গিয়ে দেশটির গোপন এক নজরদারি কর্মসূচির তথ্য বা গোমর ফাঁস করে দিয়েছিলেন। যার আওতায় মার্কিন নাগরিকসহ অন্যান্য দেশের মানুষজনের ওপর নজর রাখা হতো।

 

আপনারা কি জানেন পালিয়ে গিয়ে তিনি প্রথমে কোথায় ছিলেন? 

 

পালিয়ে গিয়ে ১ম চার বছর তিনি মস্কোতে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এই এডওয়ার্ড স্নোডেনের কি না ছিল? হাওয়াইতে সুন্দর একটা বাড়ি ছিল, দুই লাখ ডলারের বার্ষিক বেতনের চাকরি, বন্ধু, পরিবার -পরিজন সবই ছিল তার। 

এই সুখী জীবন ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার প্রধান কারণ এডওয়ার্ড স্নোডেন এর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ মামলা।

তার দেশের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবাই তাকে বিশ্বাসঘাতক, রাষ্ট্রদ্রোহী,রাশিয়ার চর,এমনকি চোর হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিল।

 

আপনারা জেনে থাকবেন, মার্কিন সরকার যতই তাকে মামলা দিক না কেনো, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ তাকে নায়ক মনে করে এবং সে নিজেও নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলে মনে করেন।

 

দেশের জন্য আত্মঘাতী এমন তথ্য তিনি কোন উদ্দেশ্যে ফাঁস করেছিলেন?? বর্তমানে তিনি কেমন আছেন? নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে।চলুন জেনে নিই,তার আগে ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

 

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি রিজার্ভের একটি বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্য ২০০৪ সালে আবেদন করেছিলেন ।প্রশিক্ষনের সময় এক দূর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। তার কারণে সেই বছরই প্রশিক্ষণ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

 

এরপর তিনি ২০০৫ সালে মেরিল্যান্ডের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট হিসেবে কিছু দিন কাজ করেন।আর এই গবেষণা কেন্দ্রটি এনএসএ দ্বারা পরিচালিত ছিল। 

২০০৬ এর মাঝামাঝি সময়ে একটি জব ফেয়ার থেকে স্নোডেন সিআইএ এর গ্লোবাল কমিউনিকেশন এর জন্য কাজ করার প্রস্তাব পান।সেটি তিনি গ্রহণও করেন।এখানে এসে তিনি বুঝতে পারেন,আইটিতে দক্ষতার জন্য রাস্ট্রের যেকোনো কাজের দরজা তার জন্য খুলে যাবে।

পরবর্তী সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২০০৭ সালে তিনি একটি আইটি দল নিয়ে গিয়েছিলেন। তার দায়িত্ব ছিল ব্যাংকিং,শিল্পখাত নিয়ে তথ্য দেওয়া। 

জেনেভাতেই তিনি সিআইএ এজেন্টের নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে ধারণা লাভ করেছিলেন। 

  • তিনি জানতে পেরেছিলেন এজেন্টরা কি পরিমাণ সোর্স রিক্রুট করছে।
  •  
  • এজেন্টরা টার্গেট করা লোকদের জোর করে মদ পাণ করিয়ে জেল, জরিমানা এমনকি জেল থেকে আবার তারাই বের করে আনতো। 
  • সেখানে স্নোডেনের সাথে এমন অনেক গুপ্তচরের সাথে কথা হয়েছিল যারা ইরাক মার্কিন নীতির বিরোধিতা করেছিল।

সিআইএর অফিসারদের স্বদেশে যেতে না দিয়ে তাদের দ্বারা কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্ক অপারেশন চালু রাখে।যাতে যুদ্ধের আগাগোড়া সব তথ্য নিয়ে যে কাউকে সুবিধানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। 

 

এসব দেখে তার মনে সিআইএর প্রতি ঘৃণা জন্মে।

২০০৯ সালে সিআইএর চাকরি ছেড়ে তিনি জাপানে মার্কিন সামরিক বেসে এনএসএর চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।জাপানের জীবনটা তা জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।

২০১২ সালে স্নোডেন জাপান ছেড়ে হাওয়াই চলে যান।সেখানে একটি দ্বীপে সেন্ট্রাল সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে যোগ দেন।সেখানেও তিনি কাজ করেন মার্কিন গোয়েন্দাদের পক্ষে। এনএসএ বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপর নজরদারি করতো,বিশেষ করে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে। শুধু তাই না,মার্কিন জনগণসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যালাপ গোপনে রেকর্ড করে এনএসএ।

 

এই রকম অভিজ্ঞতা থেকে তিনি নাগরিকদের স্বার্থে কিছু করা উচিৎ বলে মনে করলেন।আর ঠিক সেখান থেকে সিআইএ ও এনএসএর সব রকম অনৈতিক কাজ ফাঁস করার বিষয়টা মাথায় এনেছিলেন। 

এরপর নিজের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সাংবাদিকদের সঙ্গে নামে বেনামে যোগাযোগ করতে শুরু করলেন।

এর মধ্যে তিনি চিন্তা করলেন, সাধারণ মিডিয়ার হাতে তথ্য তুলে দেওয়া বড্ড বোকামি হবে।তাই তিনি স্বাধীনচেতা সাংবাদিক খুঁজতে লাগলেন।যারা প্রশাসনের ভুল ধরিয়ে দিয়ে লেখালেখি করতে পারে।

 

 এবং যারা ব্লগিং ও অন্যান্য সব সোশ্যাল মিডিয়ায় সিদ্ধহস্ত ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিশ্বস্ত তেমন সাংবাদিকদের কাছে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিবেন বলে মন স্থির করলেন। 

এরপর স্নোডেন গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডকে ঠিক করলেন যিনি একজন আমেরিকান আইনজীবী ও সাংবাদিক, আবার তিনি বৃটেনের দৈনিক গার্ডিয়ানে লিখতেন।

২০১২ সালে স্নোডেন বেনামে গ্রিনওয়াল্ডকে ই-মেইল করেন।তাতে তিনি শুধু লিখলেন, “আমার কাছে এমন কিছু আছে যেগুলো আপনি পছন্দ করবেন”। গ্রিনওয়াল্ড বেনামে আসা ই-মেইল এর জবাব দিলেন না।

 

যখন কোনোভাবে তিনি গ্রিনওয়াল্ডের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না, তখন তিনি গ্রিনওয়াল্ডের বন্ধু লরা পইত্রাসকে(যিনি অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা) ই-মেইল করলেন।

ই-মেইলে স্নোডেন লিখলেন, “I am a senior member of the intelligence community. This Won’t be a waste of your time.” তিনি এভাবে নিজেকে বড় মাপের সদস্য বলে পরিচয় দিলেন যাতে মেইল এর জবাব পান।এভাবে লরা পইত্রাসের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ চলতে থাকে।