ফারদিন ছিলো এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তার জীবন ছিল সংগ্রামের এক প্রতিচ্ছবি। পড়াশোনা শেষে একটি ছোট চাকরি নিয়ে তার দিন শুরু হয়। সংসারের দায়িত্ব, নিজের স্বপ্ন, এবং ভালোবাসার জন্য লড়াই করাই ছিল তার জীবনের মূলমন্ত্র।
অন্যদিকে অহনা ছিল এক দরিদ্র ঘরের মেয়ে। তার স্বপ্ন ছিলো একদিন ধনী কারো হাত ধরে জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাবে। জীবনে বিলাসিতা পাবে, অন্যের মতো দামি পোশাক, গাড়ি, আর স্বপ্নময় জীবনযাপন করবে।
বিয়ের শুরু:
একটি পারিবারিক ঘটনার মাধ্যমে ফারদিন আর অহনার পরিচয়। ফারদিনের মা অহনাকে খুব পছন্দ করেন। অহনার সরল চেহারা এবং নম্র ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। ফারদিনও অহনাকে একবার দেখেই ভালোবেসে ফেলে। এক মাসের মধ্যেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে তারা।
কিন্তু বিয়ের পরের জীবনটা ছিলো একদম ভিন্ন।
অহনা বুঝতে পারে, ফারদিনের জীবনটা ঠিক তেমন নয়, যেমনটা সে কল্পনা করেছিল। ছোট্ট ভাড়া করা বাসা, সীমিত আয়ের সংসার, এবং রুটিনমাফিক জীবন—এসব দেখে অহনার মনে হতাশা জন্ম নেয়। সে মনে মনে ভেবে বসে, "আমি কি ভুল করে ফেলেছি?"
ফারদিনের ভালোবাসা:
ফারদিন চেষ্টা করছিলো অহনাকে সুখে রাখতে। তার নিজের চাহিদাগুলোকে ভুলে গিয়ে অহনার স্বপ্ন পূরণের জন্য সে দিনরাত পরিশ্রম করত। দামি শাড়ি কিনে দিত, বিশেষ দিনে বাইরে খাওয়ার আয়োজন করত। কিন্তু তবুও যেন অহনার মন ভরছিলো না।
অহনার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করত। সে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধনী বন্ধুদের সুখী জীবন দেখে নিজেকে আরও বেশি অসহায় মনে করত। তার মনে হতে থাকে, "আমারও এমন জীবন হতে পারত, যদি আমি কাউকে ধনী বিয়ে করতাম।"
নতুন মোড়:
একদিন ফেসবুকে অহনার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজীব নামে এক ব্যক্তির। রাজীব এক ধনী ব্যবসায়ী। তার প্রোফাইল ভরা দামি গাড়ি, বিলাসবহুল হোটেলের ছবি, আর বিদেশ ভ্রমণের গল্পে। অহনা প্রথমে একটু দ্বিধায় থাকলেও রাজীবের চটকদার কথায় সে মুগ্ধ হয়ে যায়।
রাজীব অহনাকে প্রতিনিয়ত মেসেজ পাঠাতে থাকে। একসময় অহনার মনে হয়, রাজীব তাকে ভালোবাসে। তার জীবনে নতুন সুযোগ এনে দেবে।
ফারদিনের জন্য কঠিন সময়:
ফারদিন অহনার পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে বুঝতে পারে অহনার মধ্যে এক ধরনের দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। অহনা তাকে আগের মতো মনোযোগ দিচ্ছে না, কথা বলার সময় ঝগড়া করে।
একদিন ফারদিন অহনাকে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? আমি কি কিছু ভুল করেছি?”
অহনা ঠান্ডা গলায় বলে,
“আমাদের মধ্যে কোনো ম্যাচিং নেই। আমি ভুল করেছি তোমাকে বিয়ে করে।”
ফারদিন আঘাত পায়। তার কাছে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তবুও সে অহনাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অহনার সিদ্ধান্ত দৃঢ় হয়ে যায়। কয়েক মাসের মধ্যেই অহনা ফারদিনকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে। ফারদিন যতই বোঝানোর চেষ্টা করে, অহনার মন একটুও নরম হয় না। ডিভোর্সের পর অহনা রাজীবের সঙ্গে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে তার বাড়িতে চলে যায়।
প্রতারণার ফাঁদ:
রাজীবের জীবনে অহনা কেবলই ছিল এক নতুন শিকার। অহনা যখন তার বাড়িতে যায়, তখন সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, রাজীব যে ধনী দেখায়, তার বেশিরভাগই ছিল মিথ্যা। রাজীবের জীবনে অনেক নারী আছে, এবং সে অহনাকে নিয়ে কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে চায় না।
একদিন রাজীব সরাসরি অহনাকে বলে,
“তুমি খুব সহজ ছিলে। তোমাকে পেতে আমার সময় লাগেনি। কিন্তু তোমার থেকে বড় কিছু আমি চাই।”
অহনার জীবন আবারও অন্ধকারে ঢেকে যায়। তার কল্পনার রাজপ্রাসাদ মুহূর্তেই ধসে পড়ে।
শেষ পরিণতি:
অহনা নিজের ভুল বুঝতে পারে। সে ফারদিনের ভালোবাসা, তার ত্যাগ, আর আন্তরিকতাকে স্মরণ করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফারদিন তার জীবনে নেই।
অহনা একা হয়ে যায়। তার নিজের সিদ্ধান্ত তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। একদিন গভীর রাতে সে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফারদিনের হাসিমুখের একটি পুরনো ছবি দেখে ফেলে। তার কান্না থামাতে পারে না।
একটি চিঠি লিখে রেখে অহনা এক মুঠো ঘুমের ওষুধ খেয়ে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। চিঠিতে লেখা ছিল,
“ফারদিন, আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য ছিলাম না। তুমি ক্ষমা করো।”
ফারদিনের শেষ অনুভূতি:
অহনার মৃত্যুর খবর পেয়ে ফারদিন নির্বাক হয়ে যায়। তার ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম, কিন্তু জীবন তাকে পরাজিত করেছিল। তার চোখে জল থাকলেও, তার হৃদয়ে ছিল এক গভীর শূন্যতা।
এইভাবেই ভালোবাসা একবার হারায় অহনার লোভের কারণে, আর শেষবার হারায় অহনার অনুতাপের কারণে।