পুরুষ হওয়া অনেক চাপ ;
চব্বিশ পেরোলেই বাবা বলে এবার
নিজের রাস্তা মাপ, মনে মনে ভাবি,
কী নিষ্ঠুর আমার বাপ!
পুরুষ হওয়া অনেক চাপ ;
রোজ গালাগাল শুনে ঘুম ভাঙ্গে সকালে,
অবহেলা ছাড়া নেই যে কিছু কপালে।
মসজিদ-মন্দিরে কত মাথা ঠুকাঠুকি করে ;
জায়গা হলো না কোনো পাবলিক মহলে।
অবশেষে সব আক্ষেপ বুকে চেপে;
ভর্তি হলেম সরকারি কলেজে।
প্রতিদিন ফেসবুক-ইন্সটায়,
বন্ধুদের আড্ডায়; সোশ্যাল পোষ্টে,
মিছে মিছে লাভ রিয়েক্ট, দেই খুব কষ্টে।
বাবার বন্ধুর ছেলে, মায়ের বান্ধবীর মেয়ে
কেউ পড়ে ভার্সিটি, কেউ পড়ে ডাক্তারি;
কেউ বা আবার বিদেশ গিয়ে
কিনে ফেলেছে বাড়ি-গাড়ি।
পুরুষ হওয়া অনেক চাপ;
কেউ পাঁচ টাকা দিয়ে খায়, রং চা এক কাপ,
কেউ বা আবার শখের রমনী নিয়ে যায়
দামি রেস্তোরাঁয়, সে এক অন্য রকম ভাবসাব।
টেনেটুনে কোনো রকম হলেম গ্রাজুয়েট,
অকর্মণ্যের ঢেঁকি আমি,
আমার জন্য বোধহয় খোলা নেই
কোনো অফিস গেইট।
কেউ খুঁজে সোনার হরিণ,
কেউ খুঁজে কর্পোরেট ;
আমি খুঁজি ভাতের হোটেল,
নোংরা পরিবেশ, তবে খুব চিপ রেট।
দেয়ালে দেয়ালে হাজার বিজ্ঞাপনের ভীড়ে,
আমি খুঁজি টিউশনি,
কোনো বন্ধুর যদি একটু দয়া হয়,
থাকবো আজীবন ঋণী।
যখন ছাত্র ছিলাম, টগবগে যুবক;
আত্মীয় স্বজনেরা নিতেন খোঁজ;
দরকার হলেই ঝাপিয়ে পরতাম,
মনের আনন্দ ভরে।
এখন নেই কোনো আত্মীয় স্বজন,
নেই কোনো খোঁজ, আমি বোধহয়
এই সমাজের ভীষন বড় এক বোঝ।
বড্ড অপদার্থ আমি, প্রেমিকার কাছে,
বয়স্ক চাকুরিজীবী পাত্র ঢের ভালো আমার চেয়ে।
আমি বোধহয় ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ আমার সব
নেশায় মত্ত হয়েছি আমি ;
ধ্বংস আমার অনাগত ভবিষ্যৎ।
কারো আছে চাচা, কারো আছে মামা,
কারো আছে টাকা, কারো আছে সুযোগ ১৬ আনা;
আমি শূণ্য পকেট, আমার গন্তব্য অজানা।
এখানে সেখানে নানা অপমান, লাথি গুঁতো খেয়ে, চাকরি পেলাম অনেক বছর পর;
বয়স তো আর কম হলো না, সাজতে হবে বর
পাত্রী তেমন পাইনা খুঁজে চাকরি টা নড়বড়।
অনেক সাধনার পর, বাঁধলাম শখের ঘর,
বউ-বাচ্চার চাহিদা মেটাতে শরীরে উঠে জ্বর।
বাপ-মা শুধায় বাপু আমরা কী হয়ে গেছি পর?
বারবার নুয়ে যাই আমি, ভেঙে যাই আমি;
বাঁধতে সুখের ঘর, আমার কাঁধে যেন
এক আকাশ সম দায়িত্বের ভর।
পুরুষ হওয়া অনেক চাপ,
না পারি উচ্চে, না পারি নিম্নে
আমি মধ্যবিত্ত
ঘুরপাক খাই এক মরীচিকা বৃত্তে।