Posts

গল্প

একজন রাফিদের গল্প ...

December 3, 2024

অশ্রুজল

Original Author আশরাফুল ইসলাম

রাফিদ ছিল একজন সাধারন ছেলে, যে ছোটবেলা থেকে কখনও নিজের চেহারা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারেনি। তার চেহারা কালো, গায়ের রঙ সোনালি থেকে অনেকটা উজ্জ্বল। মুখে একটা ভারী রকমের কালো ত্বক, যা তার আত্মবিশ্বাসের চোর। কিন্তু তার হৃদয়ে ছিল এক অদম্য ভালোবাসার আগুন, যা প্রতিনিয়ত তাকে প্রেমে পড়তে উদ্বুদ্ধ করত।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে রাফিদ বুঝতে পারল যে, প্রেম একটি শক্তিশালী অনুভূতি, যা তার মনকে দোলা দেয়, কিন্তু এই অনুভূতিগুলো তার জীবনে কখনো সফলতা পায় না। যতবার সে কোনো মেয়ে পছন্দ করত, সেই মেয়ে কখনো তাকে পাত্তা দিত না। কারণ, তার চেহারার কালো ত্বকই একমাত্র বিষয় ছিল, যা সমাজের চোখে তাকে "অলাভজনক" মনে হতো।

একদিন, রাফিদ মীম নামের এক মেয়েকে ভালোবাসে। মীম ছিল অত্যন্ত সুন্দরী, উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। রাফিদ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল, তার হাসি, তার চাহনি, তার চোখের গহনতা সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু, কিছুদিন পরেই রাফিদ শুনল যে, মীম তারই এক বন্ধু, সোহেল, এর সাথে বিয়ে করতে যাচ্ছে। রাফিদ হতাশ হয়ে যায়। তার মন ভারী হয়ে ওঠে। তার মনে চিন্তা আসে, "আমি কি সব সময় পরাজিত হবো? কেন আমার প্রেম কখনো সফল হয় না?"

এরপর একে একে আরও দুইবার এমন ঘটনা ঘটে। প্রথমে সে আফরিন নামের এক মেয়ে পছন্দ করে, কিন্তু কিছুদিন পরেই আফরিনও অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর তিশা নামে এক মেয়ে, যাকে সে পছন্দ করেছিল, তাও কয়েক মাসের মধ্যে অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের বিয়ে হয়ে যায়। এই পরাজয়ে রাফিদ অনেক কষ্ট পায়, তার আত্মবিশ্বাস প্রায় ভেঙে পড়ে।

বন্ধুরা তাকে মজা করে বলত, “তুমি বিয়ে দিবে না, তবে বিয়ের কবিরাজ হবো!” রাফিদ বুঝতে পারে, এই হাস্যকর উপহাস তার আত্মসম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সে তখন স্থির করে যে, আর কোনোদিন সে কোনো মেয়ে পেছনে দৌড়াবে না। সুতরাং, একদিন রাফিদ একটা বড় সিদ্ধান্ত নেয়। সে মনের মধ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, “যতদিন না আমি সফল না হচ্ছি, ততদিন আমি নিজের মনোযোগ প্রেমে দেব না। আমাকে সাকসেস পেতে হবে। আমি যা করতে চাই, তা পূর্ণ মনোযোগ সহকারে করতে হবে।"

সে তার পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেয়। তার আগের প্রেমের যন্ত্রণা ও হতাশা তাকে এক নতুন রূপে ঢেলে দেয়। সে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে থাকে, এবং নিজের ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে অনেক বাধা আসলেও, সে সেগুলোকে জয় করতে থাকে। কিছুদিন পর, তার ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং রাফিদ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে।

দুই বছরের মধ্যে রাফিদ পুরোপুরি পাল্টে যায়। এখন তার হাতে ছিল সম্পদ, প্রতিপত্তি এবং আত্মবিশ্বাস। সে বুঝতে পারে, মেয়েরা তার চেহারার জন্য নয়, তার সক্ষমতার জন্য তাকে শ্রদ্ধা করবে। সে একদিন সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের পরিবারকে নিয়ে ভাববে, তারা কখনো তাকে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দেবে না। তার বাবা-মায়ের পরামর্শের গুরুত্ব সে এখন ভালোভাবে উপলব্ধি করে।

একদিন তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসে। তারা তার জন্য এক সুন্দরী মেয়ে নির্বাচন করে। মেয়ে, ইলমা, ছিল খুবই সুন্দরী এবং প্রতিভাবান। রাফিদ প্রথমে একটু দ্বিধান্বিত হয়েছিল, কারণ সে জানত না, কি হবে তার ভবিষ্যত। তবে, তার বাবা-মা তাকে বুঝিয়ে দেয়, “আমরা তোমার জন্য সঠিক পথই বেছে নেবো। তোমার ভালো মেয়ে পছন্দ করার চেয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক বড়।”

রাফিদ যখন ইলমার সাথে প্রথম দেখা করল, সে বুঝতে পারল যে, তাকে আর প্রেমের পিছনে দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রেমের চেয়ে আত্মবিশ্বাস এবং সফলতা অনেক বড়। ইলমাও রাফিদের সফলতা এবং অঙ্গীকারে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। তাদের মধ্যে এক গভীর বন্ধন গড়ে ওঠে, যেখানে প্রেমের জায়গা ছিল না, তবে ছিল বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা, এবং একে অপরকে আগলে রাখার প্রতিজ্ঞা।

রাফিদ আজ বুঝতে পারে, জীবনে প্রেমের চেয়ে বড় কিছু হলো সফলতা, এবং সফলতা পেতে গেলে কখনোই আপনাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হতে হবে না। সে তার বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছে এবং এখন তার জীবনে সুখ, শান্তি, এবং সফলতা রয়েছে। তার অনুভব ছিল, প্রেমে ব্যর্থতা আসলে জীবনের জন্য একটা মূল্যবান শিক্ষা।

এটাই ছিল রাফিদের গল্প, যে ভালোবাসার জন্য ছুটতে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছিল। যে শিক্ষা তাকে বুঝিয়েছে, বাবামায়েরা যখন সন্তানদের কাঁচা বয়সের প্রেম নিয়ে চিন্তা করেন, তখন তারা শুধুই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করেন, যাতে তারা ভুল সিদ্ধান্তে না পৌঁছায়।

Comments

    Please login to post comment. Login